• মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ
Samogro
শিশুতোষ গল্প

বনের আজব রাজা

by Admin September 24, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

এক বনে এক বাঘ ছিল। সে ছিল বনেরর রাজা। রাজা ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের। বলতে গেলে তার কোন রাগ ছিলনা। তাই বনের সব পশুরা তাকে একজন ভাল বনের রাজা হিসাবে জানত। কারনে অকারনে সবাই রাজার কাছে আসত, গল্প করে যেত। প

একদিন অন্য বন থেকে আরেকটি বাঘ এই বনে এল। এসে তো প্রচন্ড অবাক ! এই বনের কেউ তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে না! একদমই না ! অদ্ভুদ ব্যাপার তো! যেদিকে যায়, যে প্রানীর সাথে দেখা হয় যেন কেউ তাকে দেখেইনি ! এত বড় সাহস ! সে প্রচন্ড রেগে গেল। রেগে হুংকার দিল। সেই শব্দে সবাই চমকে গেল ! ভড়কে গেল! ছুটে পালাল। তাই দেখে বাঘটা মনে মনে হেসেই খুন।

অন্য বনের বাঘের চিৎকারে বনের রাজা তাকে দৌড়ে এসে দেখতে এল । দেখতে এসে মুখমুখি হতেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ! তারপর চারপাশে হেঁটে বেড়াল । তখন সেই অন্য বনের বাঘ বিরক্ত আর রাগী গলায় বলল,’তুমি এই বনের কে হে ? বিড়াল নাকি ?’

বনের রাজা তখন বাঘটার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল । তারপর হুংকার দিল । যেন মেঘ গর্জে উঠল । সেই শব্দে অন্য বনের বাঘটা ভয়ে , ‘বাবরে!’ বলে দৌড়ে ছুটে পালাল ।

রাজার চেনা হুংকারে সবাই ছুটে এল । এসে তারা সেই বাঘটাকে পালিয়ে যেতে দেখল। সবাই তখন এসে রাজার গায়ের সাথে গা ঘেষতে লাগল। আর আনন্দ করতে লাগল। করতেই লাগল !

(২০১১ সালের লেখা গল্পটা আমি বলেছিলাম তাসিনকে। সে আমার ছোট ভায়ের ছেল, যার বয়স তখন ছিল তিন। সে প্রাই এসে বলত , ‘চাচ্চু একতা গল্প বলতো?’ আমি হাসতে হাসতে বলি ,কি ধরনের গল্প বলব,কার গল্প বলব ?’ ও আগ্রহ নিয়ে লাফাতে লাফাতে বলেছিল , ‘বাঘের !’

September 24, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্প

পচা কথা

by Admin September 9, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

হরিণ একটা বিচার নিয়ে এলো বনের রাজা সিংহের কাছে। বনের রাজা সিংহকে সবাই সুবিচারক হিসাবেই জানে।

হরিণের অভিযোগ সাপের বিরুদ্ধে। সাপ বিশ্রী ভাষায় কথা বলে। কথা বলয়ার সময় ফোঁস ফোঁস করে গালি দেয়। খুবই বাজে সব গালি। যে কথায় কথায় অন্যকে গালি দিতেই থাকে। এত নোংরা সেই সব গালি যে শুনতে কষ্ট হয়। এই সব সহ্য করাটাই মুসকিল হয়ে গেছে। সাপের এই পচা কথা বলায় সবার কম বেশি এতে ক্ষতি হচ্ছে। শিশুরা খারাপ কথা শিখেছে। খারাপ গালি শিখছে। এতে বনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আর যে পচা ভাষায় কথা বলে, সে তো কারো বন্ধু হতে পারে না।

বনের রাজা সিংহ সব শুনলেন। তারপর খানিকটা হেসে বললেন, সাপ বিশ্রী ভাষায় কথা বলে, সেই বিচার হবে। কিন্তু তোমার মুখটা কেন মলিন হয়ে আছে। তুমি হরিণ। মলিনতা কি তোমাকে মানায়? আমি তো সব সময় হাসি খুশি থাক। আমার রাজ্যের প্রত্যেককে আমিবলি, নিজেকে হরিণ ভাবতে, হরিণের মতন হাসিখুশি থাকতে। আর সেই তুমি কিনা নিজেকে মলিন হয়ে আছ।’

এই কথায় হরিণ দ্রুত নিজেকে বদলে নিয়ে হেসে উঠল। তখন রাজা বলল, ‘দেখতো আকাশটাকে। তুমি হাসতেই আকাশ কি ঝকঝকে হয়ে গেল।’ সেই কথা শুনে হরিণ আকাশের দিকে তাকাল। তার হাসিটা আরো বেড়ে গেল।

বনের রাজা সিংহের সাথে আরো কিছু কথা হল। রাজা হরিণকে কিছু দিন অপেক্ষা করতে বললেন আর একটা তারিখ  দিয়ে হরিণ, সাপকে আসতে বললেন, আর বনের সবাইকে।

 অনেক দিন পর একটা  অভিযোগ এসেছে। বহুকাল এই বনে কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলেনি। কোন অভিযোগ নেই। সবাই শান্তিতে এই বনে বসবাস করে।

শেষ বিচারটা হয়েছিল মাছির বিরুদ্ধে। হাতি মাছির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল,  মাছি কেবলই সমালোচনা করে। কথায় কথায় অন্যের দোষ ধরে আর সমালোচনা করে। এই নিয়ে সারাক্ষণ ভন ভন করে। ভনভন করতে করতে এর কাছে যায়, তার কাছে যায়। এর কথা তাকে বলে। তার কথা আরেকজনকে বলে বেড়ায়। ফলে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল অনেকবার। শেষে একদিন এই নিয়ে হাতি অভিযোগ তুলেছিল রাজার কাছে। অভিযোগ পেয়ে বনের রাজা সিংহ অনেক ভাবলেন। তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝলেন আর ভেবে দেখলেন, দুষ্ট কখনো ভাল হয় না। আর মন্দকে ভাল করতে গেলে যে ভালো, মন্দের সাথে মিশে  সেও মন্দ হয়ে যায়। তাকে এড়িয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবুও রাজা মাছিকে সুযোগ দিল। কিন্তু সুযোগ পেয়ে লাভ হয় না। মাছি যেমন ছিল তেমনই রইল।

সিংহ এরপরে রায় দিল,’ তাকে সবাই এড়িয়ে চলবে।’ আর সেই থেকে মাছি এলেই সবাই তাকে তাড়ায়। সে কারো গায়ে বসে আরাম পায় না। সবাই রেগে তাকে তাড়িয়েই দেয়। তাই সে পালিয়েই  থাকে। কারো সামনে সহজে আসে না।

অবশেষে সাপের বিচারের সেই তারিখ এলো। সকাল বেলা রাজসভার শুরু। হরিণ আর সাপ এসেছে। এসেছে প্রত্যেক প্রাণী। অভিযোগ খুবই গুরুতর।

বনের রাজা সাপকে প্রশ্ন করলেন, কি হে এত অভিযোগ কেন তোমার বিরুদ্ধে?’

সাপ উত্তর দিল, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবই মিথ্যা। তবে হ্যা আমার রাগ বেশি। তাই কিছু কথা রেগে গিয়ে বলে ফেলি। এর বেশি কিছু না।‘   

সিংহ হাসলেন। তারপর হেসে হেসে বললেন, ‘তুমি তো কথা বলছ গুছিয়ে, সুন্দর ভাবেই। তাই না?’

সাপ বলল, ‘এই ইতরগুলো আমার বিরুদ্ধে নালিশ করেছে। এরা উল্টো আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলে। এদের সবগুলোর উপর প্রতিশোধ নিব। সবগুলোকে কামড় দিয়ে কাটব।’

সিংহ গম্ভীর হয়ে বলল,’আরে তুমি যে ভুলেই গেছ তুমি রাজার সামনে দাঁড়িয়ে। তুমি আচ্ছা পাঁজি তো! তুমি রাজার সামনে কথাগুলো বলছ!’

সাপ উত্তেজিত গলায় বলল, ‘আমার রাগ বেশি। রেগে গেলে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তাই তাদের গালি দেই। গালি দিতে দিতে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।’

রাজা বললেন, সেটা নিয়ন্ত্রণ করার জাদু আমার কাছে আছে। তুমি এই সব নিয়ে ভেব না। সেই জাদু দেখার পর তুমিও নিয়ন্ত্রত হবে।’

বনের রাজা বললেন, এই যে তুমি আমার সামনেই তাদের প্রতিশোধের কথা বললে, এতে এখানে উপস্থিত সবাই আঘাত পেয়েছে বা পাচ্ছে, এটা কি তোমার মনে হচ্ছে না? এমন করে কথা তমাকে বললে তুমি কি আঘর পাবে না, তুমি কি কষ্ট পাবে না? সেটা কি তোমার ভালো লাগবে?

সাপ চুপ করে আছে।

রাজা বলল, ‘তুমি কি মনে কর না, এগুলো পচা কথা?’

সাপ চুপ করে আছে।

বনের রাজা বলল, তোমার পচা কথায় কেউ আঘাত পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে, এটা যে বড় এক বিষয় তা কি তোমার মনে হচ্ছে না? দেখত তাকিয়ে প্রত্যেকের চেহারার দিকে?

সাপ কারো দিকে তাকাল না।

বনের রাজা বলল, কথা দিয়ে বন্ধুত্ব হয়। আবার কথা দিয়েই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। কথা দিয়ে কাউকে হাসানো যায়। আবার কথা দিয়েই কাউকে আঘাত করা যায়। এর মানে কি? এর মানে হল, কথা বলার সময় আমরা কোন কোন শব্দ বেছে নিব তার উপর কথার সৌন্দর্য বাড়ে বা কমে। আর তুমি কথা বলার সময় শক্ত শব্দগুলো বেছে নাও, খারাপ শব্দগুলো বেছে নাও। ফলে তোমার কথায় সবাই মন খারাপ করে, কেউ আঘাত পায়। তুমি কি তোমাকে বদলাতে চাও না?

সাপ কোন কথা বলল না।

বনের রাজা বলল, তুমি যদি নিজেকে সবার বন্ধু মনে কর, তবে সবার কাছে ক্ষমা চাও। ভুল হতেই পারে। কি ভুল হতে পারে না?

সাপ কোন কথা বলল না। তাকাল না।

রাজা বলল, ভুল করা থেকে সব শিখা যায়। নিজেকে বদলে নেওয়া যায়। আর প্রমিজ কর, নিজের কথা বলাটাকে ঠিক করে নিবে। মন্দ শব্দগুলো এড়িয়ে যাবে। বকা দিবে না। পচা কথা বলবে না। দেখবে তখন সবাই তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।

সাপ এবার রাগী গলায় বলল, আমি কাউকে পচা কথা বলি না, কষ্ট দেই না। আঘাত করে কথা বলি না। হরিণ আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’

বনের রাজা সিংহ একটা হুংকার দিল। সাপ সহ সব প্রানীরা ভয় পেয়ে গেল। সিংহ বলল,’ তুমি তো কেবল মন্দ না। তুমি মিথ্যাবাদীও। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ। আর তুমি উল্টো অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছ! ভয় দেখাচ্ছ, শাসাচ্ছ যে তাদের কামড় দিয়ে কাটবে। আর সেটা বনের রাজার সামনে। তুমি বলছ, তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে? মিথ্যা অভিযোগ করছে? তুমি কি মনে কর, আমি অভিযোগ শুনেই তোমাকে ডেকেছি। আমি বনের প্রায় সবার কাছে তোমার বিষয় খোঁজ নিয়েছি।’ বলে রাজা থামলেন।

চারদিকে সবাই চুপ। কোথাও কোন শব্দ নেই। একটা নিরবতা গ্রাস করেছে সবাইকে। সেদিকে তাকিয়ে বনের রাজা নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,’যে মিথ্যা বলে, সে তো যে কোন খারাপ কাজ করতে পারে। অন্যকে কষ্ট দিতে পারে। কষ্ট দিয়ে সে বলতেই পারে, আমি এই কাজ করিনি। এতে ঘটনা খারাপের দিকে যায়। ঝামেলা বাড়ে।  সমাজ নষ্ট হয়। কিন্তু যে সত্যবাদী মিথ্যা এড়িয়ে চলে। সে তার দোষ বা ভুল স্বীকার করে। এতে সহজ হয়ে যায় সবকিছুই।‘

সাপ বলল, ‘রাজা আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন। আমি মিথ্যাবাদী নই।‘    

রাজা হুংকার দিয়ে বলল, ‘ অভিযোগ সত্য কিনা তা যাচাই করতে বনের  সবার সাথে কথা বলেছি। সবাই একই কথাই বলেছে। রাজ্যের অধিকাংশই তোমার এই গালি দিবার বিষয় আর বিশ্রী ভাবে কথা বলার বিষয়টা আমাকে জানিয়েছেন।তুমি সারাক্ষণ পচা কথা বল। এবার বল মিথ্যা কে বলছে? তুমি নাকি বাকী সবাই? ‘

চারদিকের নিরবতা আরো বাড়ল। সবাই কঠিন শাস্তি আর ন্যায় বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে।

বনের রাজা সিংহ আরো জোরে তার রায় ঘোষণা করল, ‘সাপকে সবাই এড়িয়ে চল।’

আর সেই থেকে সাপ একাই চলে। কেউ তার সাথে কথা বলে না। তাকে দেখেও না দেখার ভান করে। তবুও সাপ বিশ্রী ভাবে কথা বলা ছাড়তে পারেনি। পচা কথা সে বলেই যায়। সে ফোঁস ফোঁস করে গালি দেয় সবাইকে দূর থেকে।

সে নিজেও বুঝে, যে নিজেকে মন্দ বানায় সে মন্দই থাকে। সে কারো বন্ধু হতে পারে না।

September 9, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

সব অংক

by Admin September 9, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

শিয়াল বলল, ‘তুমি অংক বুঝ?’

ইঁদুর মাথা দুলিয়ে বলল, ‘না। অংক তো বুঝি না।’

শিয়াল বলল, ‘তুমি একটা গরু।’

ইঁদুর চোখ নত করল। সে একটা ইঁদুর। সে কেন গরু হতে যাবে! কিন্তু মুখে কিছু বলল না। শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করা যায় না। শিক্ষক কেন কার সাথেই বেয়াদবি করা যায় না।

শিয়াল বলল, ‘তুমি অংকের কিছু বুঝ না? ‘

ইঁদুর বলল, ‘কিছু বুঝি, খুবই সামান্য।’

শিয়াল বলল, ‘তুমি কি জানো না, অংকই সব। এই যে দুনিয়া সব কিছু অংক দিয়ে আঁকা। বাতাস, পানি, আলো, আমি, তুমি, সে, সবই। মাথার উপরে সূর্যটার দিকে তাকাও তো?’

ইঁদুর সূর্যের দিকে তাকাল।

শিয়াল বলল, ‘সূর্য যদি এর চেয়ে আরো অনেক কাছে হত, সব পুড়ে শেষ হয়ে যেত। আবার যদি বেশি দূরে হত, সব বরফে ঠাণ্ডা হয়ে যেত। পৃথিবীতে প্রাণের কোন অস্তিত্ব থাকত না। আমরা এখন অংক দিয়ে বুঝি যিনি আমাদের বানিয়েছেন তিনি আমাদেরে মুগ্ধ হতেই এমন কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না বা এই বিষয়টি নিয়ে ভাবি না বলেই খেয়াল করি না বা বুঝি না। যিনি আমাদের বানিয়েছেন, তিনি সবকিছুই অংক দিয়ে বানিয়েছেন। তাই অংকের চেয়ে মজার এই দুনিয়ায় আর কিছু নেই। কিচ্ছু নেই।’

ইঁদুর মাথা চুলকালো। তার মাথায় কিছুই ঢুকেনি।

শিয়াল বলল, ‘তুমি কিছুই বুঝনি! তাই না?’

ইঁদুর অযথা হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আমি একটু পানি পান করব।’

শিয়াল বলল, পান কর, পান কর। পানি পান কর। যত ইচ্ছে পানি পান কর। পানি পানে বুদ্ধি বাড়ে। আমি সারা সকাল অংকের গুরুত্ব বুঝিয়েছি কিন্তু গরু কিচ্ছুই বুঝে না।’

ইঁদুর পিঠে ঝোলানো ব্যাগ থেকে পানির বোতল টেনে এনে। সবটুকু পানি খেয়ে নিল। শিক্ষক যখন বলেছেন, যত ইচ্ছে পানি পান করতে। তখন সবটুকু পান করাই ভালো।  ইঁদুর এক ঢোকে সবটুকু পানি পান করল।

শিয়াল অন্য দিকে তাকিয়ে আবার বলল,’ গরু!’

ইঁদুরের খুব লাগল। আচ্ছা পন্ডিত মশাই গরু নামে তাকে ডাকে কেন? তার কান্না পেয়ে গেল।

শিয়াল বলল, ‘তুমি কি আমার কথায় মজা পাও না? তাই না? আচ্ছা, আজ থাক। তুমি চলে যাও। আজ আর পড়াব না।’

ইঁদুর চমকে উঠল। ‘না না আমি পড়ব। না পড়লে আমি তো বড় হব না। আমি পড়তে চাই।’  

শিয়াল বলল, ‘আগ্রহ না থাকলে এই পৃথিবীতে কিছুই শিখা যায় না। বড় জোর মুখস্ত করা যায়, মুখস্ত করে পাশ করা যায়। কিন্তু মুখস্ত তো শিক্ষা না। আর অংক মুখস্তের বিষয় না। এটা বুঝা আর শিখার বিষয়। না বুঝলে, না শিখলে কোনই কাজে আসবে না। আমি তোমার মায়ের  সাথে কথা বলব যেন তিনি তোমার জন্য অন্য টিচার দেখে। আমার কাছে মুখস্ত করে অংক পড়া চলবে না।’

ইঁদুর বলল, ‘আমি পড়তে চাই। আমি যে অনেক বোকা তা তো সবাই জানে।  আপনিও জানেন। কিন্তু আমি পাড়ব। আমি অনেক বড় হতে চাই, হাতির চেয়েও  বড়।’  

শিয়াল বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে বাদ দিলাম না। তবে আজ যাও।’  

ইঁদুর শিয়ালের বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আসলো। বাড়ির সামনের মাঠটায় হাঁটতে লাগল এলোমেলো ভাবে। কেন সে এত বোকা! পড়ালেখা ভালো লাগে না। কেন সে শিক্ষকদের কথা বুঝতে পারে না। তার অস্থির লাগল। সে মাঠের ভিতর এলোমেলো হাঁটতেই লাগল।

হাঁটতে হাঁটতে সে মাঠে একটা ছোট্ট বল পড়ে থাকতে দেখল। তখনই সে দেখল বলটা থেকে বেশ দূরে একটা আম গাছ।  


ইঁদুর বল নিয়ে আম গাছটার বড় ডালটার দিকে একটা কিক করতেই  বলটা গাছের  বড় ডালে গিয়ে লাগল।  আর তখনই মনে হলো সব অংক। তার চোখ দূরত্ব মেপে নিতে পেরেছে বলেই বলটা সেই ডালে লেগেছে। সে বলটা আবার আগের জায়গায়  নিয়ে এলো। এবার ঠিক করল সে বড় ডালের পাশে ছোট ডালে বলটা লাগাবে। সে ভাল  করে তাকিয়ে একটা হিসাব কষে নিয়ে মারল কিক। এবার বলটা সত্যি সত্যি ছোট  ডালে লাগল।  

সে খানিকটা হাঁপাচ্ছে। তার ঠান্ডা লাগায় শ্বাস নিতে আর ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে। গেল বছরও তার ঠাণ্ডা লেগেছিল। ডাক্তার বলেছিল, তুমি একদম ঠান্ডা পানি খাবে না। ঠান্ডা পানির কারনে ছোটদের শ্বাস কষ্ট হতে পারে। আর শ্বাসের একটা অংকের হিসাব আছে। এটা কম বেশি হলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে যায়। আর শ্বাসের সমস্যা হলে বড় রোগ হয়। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে সব রোগের মা। এর জন্যই গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সুপ খেতে হবে। রাতে গরম পানি পান কারার অভ্যাস করতে হবে। এতে গলাটাও আরাম পাবে।

ইঁদুর বলটা আবার কাছে নিল। অবাক হয়ে াবতে লাগল, যিনি  আমাদের বানিয়েছেন, তিনি আমাদের কতই বুদ্ধির সাথে বানিয়েছেন। আর কত বুদ্ধিই না আমাদের দিয়েছেন। আর এইসব নিয়ে আমরা ভাবি না! কেন ভাবি না? কি আশ্চর্য, কি আশ্চর্য!  

ইঁদুর দৌড়াল শিয়াল পন্ডিতের বাড়িতে। দৌড়ে আসাতে সে হাঁপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে সে শিয়াল পন্ডিতের কাছে পৌছাল আর বলল, সব অংক, আমি বুঝে গেছি, আসলে সব অংক। সবই অংক। এখন আমাকে অংকে আর কেউ হারাতে পারবে না।

September 9, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্পগল্প

কোকিল আর এক কাক

by Admin September 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

খুব বিরক্ত হয়ে ঘাড় বাকিয়ে ছোট কোকিলটা বড় গাছের নিচে নাপিতের লাগানো নতুন দোকানটা দেখলো। সকাল থেকে বসে আছে সে গাছের ডালে। খাবার খুঁজতে বের হয়নি। সকালে এক নাপিত ঠুক ঠুক করে গাছে পেরেক মেরে যখন বড় একটা আয়না ঝুলালো, তা দেখে খুব মন খারাপ হলো তার। গাছের প্রতি মায়া নেই, এ কেমন মানুষ!

মানুষদের অত্যাচারে প্রতিদিন পাখিরা এই গ্রাম ছাড়ছে। গ্রাম থেকে প্রতিদিনই গাছ আর পাখি, দুইটি অদৃশ্য হচ্ছে। কেউ না কেউ গাছ কাটছে । আর সেই সব গাছের পাখিরা শোকে শোকে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। পাখিরা একটা মানুষও পেল না যে রুখে দাঁড়ায়, বাঁধা দেয় গাছ কাটায়! গাছ মানুষেরও বন্ধু, সে কথা মানুষ একেবারেই ভুলে গেছে। এই কথা প্রতিদিন আলোচনা হয় পাখিদের ভিতর। কিন্তু কিভাবে সেই সব কথা জানাবে মানুষকে!

পাশের গাছটা গত সপ্তাহে কাটা হয়েছে । কবে কখন এই গাছ কেটে ফেলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল এই গাছের পাখিরা ! সেই থেকে এক এক করে এই গাছের পাখিরাও চলে গেছে । শুধু ছোট কোকিল যায়নি। বয়সে সে অনেক ছোট ,অনেক বেশি উড়তে হলে কষ্ট হবে। তাই তার মা বলে গেছে , ‘তুমি তো ছোট ,তাই নতুন বাসা খুঁজে বের করার মতন কষ্ট করার তোমার প্রয়োজন নেই। আবার , বয়স এতটাও কম না যে ,আমার সাহায্য তোমার দরকার হবে। তাই তুমি এখানেই থাকো। খুব বেশি একটা দূরে যেও না। কাছাকাছি এলাকা থেকে খাবার সংগ্রহ করো। ভালো আর সুবিধা মতন বাসা পেলে তোমাকে নিয়ে যাব। নিজের দিকে খেয়াল রেখো আর যত্ন করো।’

সেই থেকে ছোট কোকিলটা একা থাকে এই গাছে।

সকাল থেকে সে দেখতে লাগল নাপিতের দোকান সাজানো । লোকজনের আনাগোনা । মন তার খুব খারাপ হয়েছে। তবে গাছ কেটে ফেলার চেয়ে এটা ভালো। এসব ভেবে ভেবে আর এসব শব্দ করে করে নিজেকে এটা সেটা বলে শুনিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো। লোকজন একেবারেই কমে গেল। কোকিলটা এক সময় দেখল আশেপাশে নাপিত ছাড়া আর কেউ নেই। এর একটু পরে নাপিতও দোকানের পাশে ঘুমিয়ে গেল। অনেক ভেবে কোকিলটা নিচে নেমে এলো , নাপিতের দোকানে। দোকানের কাছে আসতেই কোকিলের চোখে পড়ল আয়নায়। নিজেকে আয়নায় দেখে ঘাবড়ে গেল ! ভাবল অন্য কোন কোকিল ! আরে এই কোকিলটা , এখানে কখন এলো ! তারপর একটু পরেই বুঝল , এটা সে নিজেই ! কোকিলটা আরেক বার ঘুমন্ত নাপিতকে দেখল। তারপর চারপাশ দেখে আয়নার কাছাকাছি উড়ে এসে বসলো। তারপর নিজেকে দেখ্লো। দেখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল! আমি এত সুন্দর! এত সুন্দর! আরে কি আশ্চর্য ব্যাপার , আমি এতই সুন্দর !

সেই দিন থেকে ছোট কোকিল রোজ কয়েকবার উড়ে যায় আয়নার কাছ দিয়ে। আর চারপাশে কেউ না থাকলে উড়ে এসে বসে। নিজেকে দেখে। গর্বিত চাহনিতে নিজেকে দেখতেই থাকে। যেন নেশা কাটেনা এমনি ভাবে।

এভাবেই চলল বেশ কয়েকদিন । একদিন কোকিল নিচের এক ডালে বসে আছে। তখন একটা কাক এসে গাছের ডালে বসল। কাককে দেখতেই কোকিল কিছুটা রেগে বলে উঠল ,’একটু দূরে গিয়ে বসো, কি বিচ্ছিরি দেখতে !’

এ কথায় কাকের মন খারাপ হলো। তবে বেশি একটা না। কারন এমন কথা সে আগেও অনেক বার শুনেছে। তার জন্য এটা নতুন কিছু না । কাকটা বিরক্ত হয়ে বলল , ‘ তা ভাই ,তুমি নিজেকে নিশ্চয় অনেক সুন্দর ভাবছ ? বড় কিছু ভেবে নিচ্ছ?’

কোকিল বিস্ময়ের সাথে বলে উঠল , ‘ তুমি কি আমাকে বলছ ! আমাকে ? আমাকে বলছ কি ?’

কাক এদিক সেদিক তাকিয়ে কোকিলের দিকে তাকাল এবার । তারপর চাবিয়ে চাবিয়ে , ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলল,‘এখানে সম্ভবত আর কেউ তো নেই !’

কোকিলের ভীষণ মন খারাপ হল । মন খারাপ গলায় বলল, ‘ব্যাঙ্গ ছলে বললে বলে মনে হলো !’

কাক এবার শান্ত গলায় বলল,‘তোমার কি মনে হয় , আমি মিথ্যে কিছু কি বলেছি? ‘

কোকিল উত্তেজিত গলায় বলল,‘তোমার চোখে কোন অসুখ নেই তো।’

কাক নিরশ গলায় বলল,‘নাতো!’

কোকিল অবাক আর নীচু গলায় বলল,‘তবে তো তুমি আমাকে ভা্লো করে দেখনি ! ‘

‘ হতে পারে আমি তোমাকে ভালো করে দেখিনি । ঠিক আছে ,আমি তোমাকে দেখে নেই তবে। ‘

কোকিল বলল , ‘আমাদের এই এলাকায় যত পাখি ছিল ,আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর! যদিও ইদানিং আমি আমার মা কে ছাড়া চড়ুইদের আর অল্প কিছু পাখি ছাড়া কাউকে দেখিনি। তারপরও আমি নিশ্চিত , আমি দেখতে কল্পনাতীত সুন্দর!’

কাক কোকিলের কথায় অনেক বিরক্ত হলো। তারপরও অনেকখন কাক কোকিলকে দেখতে লাগল।

কাকের কথায় কোকিলের মন অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অসুন্দর কাক কি অদ্ভুত কথা বলে ! সে নাকি সুন্দর না! এবার নিশ্চয় ভালো করে দেখে , ঠিক করে বলবে ! কি অদ্ভুত সুন্দর আমি ! কি অপূর্ব সুন্দর চোখ ! কি অপূর্ব সুন্দর ঠোট ! কি অদ্ভুত সুন্দর তার ডানা ,আর ডানা মেলে ধরা ! নিজেকে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে অজস্রবার।

কাক কয়েক পা কোকিলের সামনে এগিয়ে এলো। কাক আনন্দহীন গলায় বলল , আমি তো বলিনি , তুমি অসুন্দর। কিন্তু তুমি ততো সুন্দর নও। তোমার চেয়ে ঢের সুন্দর পাখিদের আমি দেখি প্রতিদিন। সে কথা যাক, তুমি ছোট একটা পাখি , সুন্দর নিয়ে তুমি এত মাথা ঘামাচ্ছ কেন ! এতো একটা ফালতু বিষয়! তোমার আচরণ কেমন সুন্দর, সেটাই তো বড় বিষয়।’

কোকিল অস্থির গলায় বলল,‘ কাক তুমি আমাকে খেপাচ্ছ ‘?

কাক অবাক হয়ে বলল,‘কেন কেন, তোমাকে খেপাতে যাব কেন?’

কোকিল রাগ আর অভিমান মিশানো স্বরে বলল ,‘বাহরে ,তুমি যে ভুল বকে যাচ্ছ !’

‘আমি ! আমি ভুল বলে যাচ্ছি মানে কি! আর ভুল বা কি বললাম!

কোকিল ভারী গলায় বলল,‘তুমি আমাকে অপমান করছো! আর আমি তোমাকে শুরুতে বলেছিলাম, একটু দূরে গিয়ে বসো , কি বিচ্ছিরি দেখতে! এটা বলাতে তুমি যা ইচ্ছে তাই বলছ আমাকে?’

কাক গম্ভীর গলায় বলল ,‘ না তো। তবে শব্দ উচ্চারণে সতর্ক থাকা ভালো। বিচ্ছিরি শব্দটার চেয়ে অসুন্দর শব্দটা অনেক শুনতে ভালো লাগে। বিচ্ছিরি শব্দটা বড় শক্ত। আমাকে অসুন্দর বললেই হত।’

‘কাকের কথায় কোকিল লজ্জা পেল । সে অনুতপ্ত গলায় বলল, তোমাকে আঘাত দেবার জন্য আমি দুঃখিত!’

কাকটা এবার হেসে ফেলে বলল , ‘ আরে আমি এ নিয়ে মন খারাপ করিনি। কারন তোমার আচরণ তোমাকে ছোট করবে। তোমার ভুল শব্দ চয়ন তোমার ক্ষতি করবে, আমাকে নয়। তবে এই ভালো যে তুমি বুঝতে পেরেছ, অনুতপ্ত হয়েছ। আচ্ছা এবার বল ,তুমি উড়তে পার কেমন?’

এই দুইদিনে দেখলাম ভালো উড়তে পারছি। কেন বলত?’

কাক বলল, ‘ছোটদের বেশি দূরে যেতে নাই । তবুও তুমি আমার সাথে যেতে পার। যেখানে গেলে তোমার সুন্দর আর অসুন্দর নিয়ে ভুল টা ভাঙ্গবে।’

কোকিল বিস্ময়ের সাথে বলল , ‘সত্যি কি তুমি বলতে চাচ্ছ ,আমি তেমন সুন্দর নই !’

কাক হেসে বলল ,আমি উড়ে যাচ্ছিলাম। তোমার অসম্ভব সুন্দর গলার স্বর শুনে এই ডালে বসেছিলাম। তুমি সুন্দর এবং প্রত্যেকেই সুন্দর।’

একটু থামল কাক। যেন কিসব ভাবছে। তারপর তেমনি হেসে বলল, চল , এই দুই গ্রাম পরে একটা জঙ্গল আছে। সেখানে চল যাই। সেখানে অনেক অনেক পাখিরা থাকে। এখানে নিরাপদ না। এই জায়গাটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। আর মানুষের ভিতরে মায়া দয়া আগের মতন নেই। যার মায়া নেই, তার ভিতরটা শূন্য, কেবল সে বুঝতে পারে না। মানুষেরা ভয়ানক ভাবে বদলে যাচ্ছে। আহ! কেউ যদি তাদের বুঝাতে পারত!’

কোকিল বলল, তুমি তো ভারী সুন্দর করে কথা বলতে জানো!’

কাক বলল, একদিন তুমিও পারবে। আগে বড় হও। আর মায়া দিয়ে দেখ চারদিক। দেখবে সব আপন। সবই তোমার নিজের। মায়া তমার ভিতর বাসা বাঁধলেই তুমি যত্ন নিতে শিখবে, আদর করতে শিখবে, ভালোবাসতে শিখবে। আচ্ছা এবার আমার যাবার পালা। যদি সাহস কর ,তবে আমার পিছু নিতে পারো। তবে আমি তোমাকে জোর করব না। কারন জোর করে নিলে, পরে তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পা্রো। কিছুখন ভেবে তারপর ঠিক করো বা আমি আগামী কাল আসব। তখন ঠিক করে নিও কি করবে।’

বেশ কিছুক্ষণ পাশে থেকে কাক উড়ে গেল। কোকিল কয়েক মুহূর্ত কিসব ভাবলো। তারপর উড়ে গেল কাকের পিছু পিছু।

তখন বিকাল । যখন ওরা জঙ্গলে পৌছালো। কোকিল বিস্ময়ে আর মুগ্ধতার সাথে দেখল, কত বিচিত্র সব ছোট বড় পাখি ! কি অবিশ্বাস্য সুন্দর সুন্দর রং তাদের ! কি অপূর্ব সুন্দর সুন্দর সেই সব পাখি ! আর নানান ধরনের ছোট বড় অসংখ্য গাছ । হতভাগা দুষ্ট মানুষ কি জানে এই গাছের কথা ! জানলে তো সর্বনাশ ! এখানেও তারা পৌছে যাবে, কেটে ফেলব সব গাছ! কোকিল ভয় পেল। তবে চারদিকে তাকাতে তাকাতে মানুষের কথা ভুলে যেতে লাগল। যেন মানুষ নিয়ে ভাবনাটা ভাবল বটে তবে জঙ্গলের সৌন্দর্য ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল কয়েক মুহূর্ত পরেই।

সন্ধ্যা নেমে এলো। জঙ্গলের একটা গাছে কোকিল আর কাক আশ্রয় নিয়েছে । অচেনা জায়গার অন্ধকার কোকিলকে ভীত করতে পারেনি । তার মাথায় অনেক প্রশ্ন আর বিস্ময় নড়েচড়ে বেড়াতে লাগলো!

কোকিল চিন্তার জগতে ডুবে গেল। ভাবতে ভাবতে সে যেন হঠাৎ করে আবিস্কার করল, আমি সুন্দর বা কম সুন্দর, এসব ভাবনায় কি আসে যায় ! আমি তো আমাকে বানাইনি ! যা কিছু আমার বলে এতদিন ভেবেছি তাতো আসলে আমার নয়। আমার তো নয়! কেবল আমার কথা , কাজ আর আচরণ ছাড়া ! কাক দেখতে কতইনা অসুন্দর । অথচ সুন্দর করে কথা বলে। তবে তো সে ভালো। সে ভালো আমার চেয়ে । কারন আমি অসুন্দর করে ভাবি। বাজে বাজে শব্দে কথা বলি বা রেগে কথা বলি!

অন্ধকারে কাক প্রশ্ন করল , ‘ তুমি কি ভয় পাচ্ছ ?’

কোকিল অন্ধকারে কাক কে দেখতে পেল না । সে মৃদু হেসে বলল , ‘ না । ভয় কিসের! আমি ভাবছি ,আমি কি বোকা ছিলাম যে নিজেকে নিয়েই ভাবতে শিখেছিলাম। আমি আজ জেনেছি , নিজের দেখার মধ্যে বড় কোন আনন্দ নেই । নিজেরটা বড় করে ভাবার মধ্যে বড় কোন আনন্দ নেই। আনন্দ আসলে জানার মধ্যে, শিখার মধ্যে।’

কাক হেসে বলল , বাহ্যিক সৌন্দর্য হচ্ছে সৃষ্টকর্তার দান । আর অন্তরের সৌন্দর্য নিজের! বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই। এই যে তুমি সুন্দর সুন্দর পাখি দেখছ, তার মধ্যে বয়স্ক পাখিগুলোও দেখেছ। বয়স তাদের সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। এক সময় তোমার আমার সৌন্দর্যও কেড়ে নিবে। কিন্তু মনের যে শিক্ষা বা জ্ঞান তা কেউই কেড়ে নিতে পারবে না। একটু থমে কাক বলল , ‘এই যে বিশাল পৃথিবী তা আমাদের সব সময় জানায় , এসো , দেখো ! উপভোগ করো এই পৃথিবীর যত দুঃখ আর আনন্দগুলো তাই নিজের কথা নিয়ে পড়ে না থেকে উপরের আকাশটাকে মন ভরে দেখো!’

September 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
গল্প

রাজা আর চোর

by Admin August 28, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

এক দেশে দুই জন যমজ যুবক ছিল । তার নাম ছিল জাহিন আর মাহিন। একদিন  তার দেশে অনেক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তারা দুই ভাই একই জায়গায় চাকরি করত। আর একই সাথে তাদের চাকরি হারালো। একদিন দুইদিন করে অনেক দিন কেটে গেল কিন্তু কোন কাজ খুজে পেল না। অবশেষে তারা ঠিক করল , চুরি করবে।

এদিকে যায় , সেদিকে যায় । বুঝে উঠে পারল না কোথায় চুরি করবে! একদিন তারা ঠিক করল চুরি যদি করতেই হয় তবে রাজার বাড়িতে চুরি করবে। যেই বুঝা সেই কাজ ! তারা দুই জন মিলে বুদ্ধি বের করল আর রাজপ্রাসাদে চুরি করতে গিয়ে রাজার প্রিয় গলার মালা নিয়ে আসলো।

পরের দিন রাজ্যময় সবাই জানল, রাজার প্রিয় গলার মালা চুরি যাবার কথা। কিন্তু  অবাক কান্ড কিছু দিন পরে আবার রাজা নিজে তার বিছানায় গলার মালাটা পরে থাকতে দেখল! এ যে অবিশ্বাস্য! যে চুরি করেছে সে তা ফিরিয়ে দিয়েছে! এদিকে রাজা হুলংকার দিয়ে সবাইকে বললেন ,’’এত এত সৈন্য আর প্রহরীর মধ্য থেকে কিভাবে ঘটনাটা ঘটল!’’   

 তদন্ত পর তদন্ত হতে লাগল। কিন্তু তদন্তের ফলাফল শূন্য! রাজা ক্ষেপে গিয়ে বললেন ,’’এটা যে করেছে সে বা তারা তো রাজাকেও মেরে ফেলতে পারত ।‘’ রাজা সেদিনই আদেশ দিলেন নতুন রাজপ্রসাদ বানানোর জন্য। আরও নতুন নতুন কৌশল নিলেন এই ভয়ংকর চোর ধরার জন্য।

নতুন রাজপ্রাসাদ বানানো হল। রাজপ্রাসাদের চারদিকে বিশাল পুকুর খনন করা হল । বিশাল চওড়া করে বিত্ত আকারে সেই বিশাল পুকুরে অসংখ্য কুমির ছেড়ে দেওয়া হল। মাত্র কয়েকজন প্রহরী থাকে নতুন এই রাজপ্রাসাদে।

এরমধ্যে একটা খবর ছড়িয়ে গেল রাজা নাকি একটা হীরার টুকরো রেখেছেন নতুন রাজ প্রসাদের কোথাও । সে কথা জাহিন আর মাহিন শুনল। আরও শুনল বিশাল পুকুর আর কুমিরের কথা। তারা ভাবতে বসল কিভাবে আবার সবাই কে বোকা বানিয়ে হীরাটা চুরি করা যায়। যেই বুঝা সেই কাজ। সন্ধ্যার পর পর জাহিন হাজির হল রাজপ্রসাদে।

কিছুখন পরেই সে দেখতে পেল প্রাসাদের উচু জায়গা থেকে রাজাকে। রাজা পায়ে হেঁটে প্রাসাদের এক কোনায় একটি আলাদা বিশাল ঘর আছে। রাজা সেই ঘরে ঢুকলেন। এভাবে জাহিন পরপর দুই দিন সন্ধ্যার পরে এসে দেখল রাজা সেই বিশেষ কোনার ঘরটায় ঢুকেন । আর সেই ঘর থেকে বের হন অনেক রাতে ! জাহিনের সন্দেহ হল ,এটা কি সেই জায়গা যেখানে হীরাটা রাজা লুকিয়ে রেখেছেন ! হতে পারে , খুব হতে পারে !  

দ্বিতীয় দিনের রাতে সে দেখল রাজা ঢুকল কিন্তু দরজাটা একটু ফাঁকা ! সে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগল ! তারপর নেমে এলো প্রাসাদের ছাদ থেকে। তারপর ঢুকে গেল ঘরের ভিতর। ঘর তো নয় এ এক ভিন্ন ধরনের তিন তলা প্রাসাদ। এখানে আছে শুধু বই আর বই । এ যেন এক বই এর নগরী ! ছোট বড় আলমারিতে কেবলই বই । জাহিন তখনই শুনতে পাচ্ছে রাজার গলা। রাজার গলা সে অনেকবারই সে শুনেছে । প্রজাদের মধ্য অনেক বার গিয়েছেন রাজা। রাজার গলা শুনে জাহিন সব ভুলে এগিয়ে গেল নীচের দিকে । আরও স্পষ্ট ভাবে শুনল ,রাজা জোরে জোরে বলে যাচ্ছে , ‘’ অ ,আ ,ই ,ঈ ,ও ! অ,আ,ই,ঈ ,ও ! অ,আ,ই,ঈ,ও !’’

রাজা পড়ছেন ! জাহিন যতটা সম্ভব সাবধানে কাছে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখলেন ,রাজার পাশে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছেন। তিনি রাজা কে পড়াচ্ছেন। আর রাজার হাতে বই। তিনি পড়ে চলেছেন! দুই জনই খুব মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছেন বই এর দিকে !

জাহিন পড়াশুনা করেনি। কিন্তু মক্তব আর টোল দেখেছে । কিন্তু রাজা কি ছোট বাবু যে রাজা এসব পড়বে! তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে। জাহিন একটা আলমারির পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক খন ধরে। সে দেখল রাজার চলে যাওয়া।  আর দেখল বৃদ্ধ শিক্ষককে নীচে চলে যেতে। বৃদ্ধ শিক্ষক যেতেই সে বেড়িয়ে এলো। তারপর একটা করে বই এর পাতা উল্টাতে লাগল। নিশ্চয় এই ঘরের কোন এক বইতে বা আলমারির কোথাও লুকান থাকতে পারে হীরাটা।  

বেশ অনেক খন পেরিয়ে গেল হীরা পাওয়া গেল না। জাহিন বুঝল এই ঘরে হীরা নেই । এখান থেকে বেড়িয়ে মূল প্রাসাদে ঠুকবে বলে ঠিক করল। ঠিক তখনই বৃদ্ধ মানুষটির হেঁটে আসার শব্দ পেল । জাহিন দূর থেকে দেখল বৃদ্ধের হাতে একটা বই। বৃদ্ধ উঠে এলো। জাহিন লুকাল একটা আলমারির পিছনটায় । বৃদ্ধ বসল কাছের একটা টেবিলে , বই খুলে পড়তে লাগল। জাহিন বুঝল ,চট করে এখান থেকে বের হওয়া যাবে না। সে অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরল।

কে যেন ঘুম ভাঙ্গল তখন জাহিন দেখল তার হাত পা বাধা ! লাফিয়ে উঠতেই পরে গেল। দেখল বৃদ্ধকে আর পাশে দাঁড়িতে মিটি মিটি হাসছে রাজা । ভয়ে আবার লাফ দিতে গেল। রাজা সব শুনল। দুর্ভিক্ষের কারনে মানুষ চুরি ,ডাকাতি করছে জেনে মন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়ে সে এলাকায় নতুন কাজ যেন তৈরি হয় ,তার ব্যবস্থা করল।

এবার বিচারের জন্য রাজ দরবারে হাজির করা হল জাহিন কে। কি করে এই রাজ প্রসাদে ঢুকতে পারল তার ব্যাখ্যা দিল সে। শুনে রাজা সহ সবাই অবাক।  

জাহিন বলল , রাজ প্রসাদের উপরে এখন ঝুলে আছে একটা দড়ি। সেই দড়ির শুরুটা বহু দূরে। দড়ির শুরু লাগান আছে একটা বিশাল বট গাছে ।  

মন্ত্রী বলল ‘’রাজা মশাই ও এগুলো কি বলছে ,কিছুই বুঝতে পারছি না।‘’

জাহিন আবার শুরু করল ,আমরা দুই ভাই একটা ঘুড়ির দোকানে চাকরী করতাম।    একটা লম্বা মানুষ যতটা বড় আমাদের ঘুড়ি গুলো ততো বড় বড়। আমরা দুই ভায়ের কাজ ছিল ক্রেতাদের ঘুড়ি উড়িয়ে দেখানো। বড় গাছের সাথে বেঁধে ওগুলি নিয়ন্ত্রন  করতাম। আমার আরেক ভাই মাহিন গাছে দাঁড়িয়ে দড়ির গোড়ার ধরে হাত আর পা দিয়ে উড়তে থাকা ঘুরি নিয়ন্ত্রন করত। আর আমি ঘুড়ির সাথে উড়ে চলতাম। দড়ির  দুই হাত নীচে নীচে একটা করে গিট দেওয়া থাকত । তা দিয়ে আমি নীচে উপরে  আসতে পারি।  একদিন  তার দেশে অনেক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। আর আমরা চাকরী হারালাম। চাকরী হারিয়ে যখন ঠিক করলাম রাজার বাড়িতে চুরি করব। তখন এই পদ্ধতি কাজে লাগালাম। তবে রাজার গলার মালা চুরি করে আবার তা ফিরিয়ে দিলাম। আসলে আমরা চোর না। আমরা চুরি করেছি আমাদের গ্রাম গুলি খুব বড় ধরনের বিপদে আছে তা রাজা কে জানাতে। রাজার মনযোগ কাড়তে! সব শুনে রাজ সভার সবাই  যেন ভড়কেই গেল। এত বুদ্ধি মানুষের হয়!

সবাই রাজার কাছে মিনতি করল চোর কে ক্ষমা করার। রাজা সব ভেবে রাজা জাহিনকে আর মাহিনকে ক্ষমা করে ঠিকই কিন্তু তিন মাস একটা বাড়িতে বন্দী করে রেখে তাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিলেন।  

রাজা তাদের জ্ঞান বুদ্ধি সাহস নিয়ে ভাবতেই আবাক হলো। অবাক হলো তাদের চুরির কৌশল নিয়ে। আর ঠিক করল, তাদের রাজকর্মচারী হিসাবে নিয়োগ দিতে। রাজা মন্ত্রীদের সাথে এ নিয়ে অনেক আলোচনা করলেন।  আলোচনা করলেন বৃদ্ধ শিক্ষকের সাথেও।   

পরের দিন রাজা এলো জাহিন আর মাহিনকে দেখতে। রাজা বলল , আমাকে দেখেছ পড়তে । জাহিন আর মাহিন বলল ‘হ্যা ।‘  

রাজা এক গাল হেসে বলল , আমি রাজা! পড়াশুনা করি প্রজাদের সুখের জন্য।তাই আমি শুরু করেছি ,তোমরাও করো। এসো আমরা পড়াশুনা করি। আর সুখে থাকি ,এই সুখের রাজ্যে !

বেশ কয়েক দিন পরে জাহিন আর মাহিন প্রায় মুখস্ত করে ফেলেছে অ আ । জাহিন মাহিন কে বলল , দেখ ঠিক হয়েছে কিনা । অ আ ই ঈ উ ঊ !

মহিন আনন্দে হাত তালি দিয়ে উঠল ।।

August 28, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

আমার দেশ

by Admin August 26, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাজা শিকারে গেলেন । অনেক সৈন্য তার সাথে । তিনদিন পর রাজা যখন শিকার শেষে করে ফিরে আসবেন তখন তিনি সৈন্যদের থেকে জানলেন বনে একটা অনেক বড় হরিণেরর ঘুরে বেড়ানোর কথা।

রাজা সবাইকে জানালেন ,’’ আমার সঙ্গে কারো আসার প্রয়োজন নেই। তোমরা এগিয়ে যাও। আমি পরে তোমাদের সাথে যোগ দিব। আমি একাই হরিণটাকে ধরব।”

সৈন্যরা সবাই চলে গেলে রাজা বের হলেওন হরিণটাকে খুঁজ বের করতে। আর রাজা ঠিকই খুঁজে বের করলেন হরিণটাকে।

বহু দূর থেকে দেখলেন হরিণটা নদীর ধারে পানি পান করছে । রাজা ঘোড়াটা একটা গাছের সাথে বেঁধে তিনি অনেকটা পথ হেঁটে হরিণটার কাছাকছি চলে এ্লেন। একটা বড় গাছের আড়ালে এসে দাঁড়ালেন। তারপর তীর ধনুক ঠিক করে তাক করলেন। অপেক্ষা করতে লাগলেন প্রাণীটার পানি পান শেষ হওয়া পর্যন্ত। খুব তৃষ্ণার্ত হরিণটা। পানি পান যেন শেষ হচ্ছে না। বড় আরাম করে পান করে যাচ্ছে। রাজা অনুভব করলেন যেন সেই তৃষ্ণা মেটানো আরাম বোধটা হরিণের সাড়া অন্তর জুড়িয়ে দিয়ে গেল। তিনি ঠিক করলেন , অপেক্ষা করবেন । প্রানীটা পানি পান করে আগে ওখান থেকে উঠে আসুক । তিনি তাকিয়ে দেখতে লাগলেন হরিণটাকে। কিন্তু বিশাল বড় হরিণটাকে দেখতে দেখতে তিনি মায়ায় ডুবে গেলন যেন। তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলেন সুন্দর হরিণটাকে। অনেক সুন্দর হরিণটাকে তিনি মারবেন না বলে ঠিক করলেন। তিনি তীর ধনুক কিছুটা নামিয়ে নিলেন।

ঠিক এমন সময় ঘটল ঘটনাটা। রাজা শুনতে পেল তার নিজের ঘোড়াটার চিৎকারের শব্দটা ! রাজা দেখল হরিণটাও যেন শুনতে পেয়েছে । পানি পান করা ছেড়ে ভয়ে সে শব্দের উৎসের দিকে তাকাল। রাজা দ্রুত ধনুকটা পিঠে ঝুলিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে ছুটল পিছন দিকে। তিনি বুঝতেই পারেননি এতটা দূরে চলে এসেছেন ঘোড়াকে বেঁধে রেখে। যখন তিনি ফিরলেন ঘোড়া রেখে যাওয়া জায়গাটায়। দেখলেন বেশ কিছু মানুষ মিলে একটা ঘোড়ার গাড়ীতে করে তার প্রিয় ঘোড়াটা উঠিয়ে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে ! অনেক দূরে চলে গেছে তারা। তিনি পিছু পিছু দৌড়ে গেলেন। কোনই লাভ হলনা। দ্রুত চলাঘোড়া গাড়িটা বাতাসে যেন মিলিয়ে গেল।

একদিন কিংবা তারও বেশি রাজা জিনজির হাঁটলেন। ক্লান্ত , ক্ষুধার্ত হয়ে তিনি সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেললেন। তারপর দেখলেন অতি দূরে একটা কুঁড়ের ঘর। ঘর দেখা মাত্র ক্ষুধা যেন বেড়ে গেল। তিনি কখনই এভাবে কষ্টকে দেখেননি , করেননি । তিনি বারবার বললেন ,’’হে আল্লাহ, এই পরীক্ষায় আমাকে শক্তি দাও।”

তিনি যখন কুঁড়ের ঘরটার দরজায় ধাক্কা দিলেন। তা সহজে খুলে গেল। আর তিনি ভারসাম্য রাখতে না পেরে ঘরের ভিতর পরে গেলেন ,জ্ঞান হারালেন। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখলেন অনেক মানুষ চারদিকে। আর দুইজন মানুষ তার মাথায় পানি দিতে। তিনি ইশারায় পানি পান করতে চাইলেন। একটা ছোট ছেলে পানি আর খাবার নিয়ে এল । গোগ্রাসে তা খেতে খেতে মনে রাজার মনে হল , তিনি নিজের প্রাসাদেই আছেন !

ছেলেটি থেকে রাজা জানালো , তাদের কাছের এক গ্রামে অনেক দুষ্ট লোক বাস করে। দুষ্টরা তাদের ঘরের ধান নিয়ে গেছে। ওদেরও অভাব। আর আমাদেরও অভাব। কিছুদিন আগে তাদের দুইটা ঘোড়া ছিল তাও নিয়ে গেছে। রাজা মনে মনে ভাবলেন, এই আমার সোনার দেশের অবস্থা ! রাজা ছেলেটার কাছে সব শুনে বলল ,বাবা তুমি চিনবে ওদের এলাকাটা?”

তখন ছেলেটা মাথা নেড়ে ‘হ্যা’ বলল।

রাজা বলল ,তোমার বাবা মা তোমাকে কি নামে ডাকে ? ছেলেটা তার ফোকলা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল ‘’ ছোট রাজা।” রাজা খুব আনন্দ পেলেন। অতান্ত মিষ্টি করে ডাকলেন ,’’ ছোট রাজা !”

পরের দিন রাজার মনে হল তিনি সুস্থ । তিনি গেলেন ছোট রাজাকে নিয়ে পাহারের ওপাশের গ্রামটায়। গ্রামে ঢুকতেই রাজা তার বিশাল তরবারিটা নিয়ে হাত উঁচিয়ে হাটতে লাগল । ধীরে ধীরে লোকজন জমে গেল অনেক । রাজা দেখলেন লোকদের ভিড়ে সেই চোরদেরও ।

রাজা এক জায়গায় এসে থামলেন। ততোখনে অনেক মানুষ জমে গেছে। রাজা বললেন ,তোমরা তরবারি দেখে বুঝেছ ,আমি সাধারন লোক নই। আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের বিপদের কারণ হয়ে এ গ্রামে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।” রাজা থেমে চোরদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে যে আমার প্রিয় ঘোড়াটা আটকে রেখেছ ,তাদের আদেশ করছি ঘোড়াটা ফিরিয়ে দিতে । আর এই ছেলেটার বাবা মাকে ফিরিয়ে দিতে । আমি তাদের হয়ে তোমাদের সব পাওনা মিটিয়ে দিব।’

খুব দ্রুতই আরও অনেক মানুষ চলে এলো। এক বৃদ্ধ ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন। তিনি রাজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন ,‘’দুই দিন আগে আমরা এ গ্রামে একটা রাজকীয় ঘোড়া দেখতে পেয়েছি ,আজ তার মালিককে দেখতে পেলাম । আপনার ঘোড়া , তরবারি , বাজু আর ঘাড়ের কাল জন্ম দাগটাই বলে দেয় আপনি আমাদের রাজা !” একটু থেমে বৃদ্ধ মানুষটা ঘুরে ভিড়ের মধ্যে কথা বলা বলি করা মানুষদের দিকে তাকিয়ে অনেক জোরে চিৎকার করে বলার ,’’আমরা আমাদের রাজাকে আমাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি !”

এ কথা হতেই চারদিক নিরব হল। একেবারে নিরব ! রাজা জিনজির অবাক বিস্ময়ে দেখলেন , অনেক অর্ধহারী ,অনাহারী, অর্ধ উলঙ্গ বঞ্চিত মানুষ একত্রে অবাক বিস্ময়ে তার দিকে গভীর মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে ! তিনি অনেক কষ্ট নিয়ে চারদিকের মানুষগুলোর দিকে তাকালেন ! তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল । তিনি কেবলই মনে মনে ভাবলেন ,হায় আমার প্রজা ! একি অবস্থা আমার প্রজাদের। আর এদিকে আমি প্রাসাদ আর শিকার নিয়ে আছি! এই দুরবস্থা আমার প্রজাদের। এই আমার সোনার দেশ! আমার দেশ!

August 26, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
জানা অজানা

কিভাবে তেমুজিন হল চেঙ্গিস খান [পর্ব – ১]

by Admin August 5, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

খান, চেঙ্গিস খানের নাম শুনেছ? হুম, আমি জানি তোমরা সবাই চেঙ্গিস খানের নাম শুনেছ। ইতিহাস জানা প্রত্যেকেই তার নাম জানে। কারন তিনি ছিলেন ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত জেনারেল। তিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি অঞ্চল।  কিন্তু সব জয়ের পিছনের গল্প হয় খুব ভয়ানক সব ঘটনা। চেঙ্গিস খানের রাজ্য জয়ের পদ্ধতি ছিল খুবই ভয়াবহ। এই জয় করতে গিয়ে তিনি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন প্রায় ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষ। বলা যায়, তিনি তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১১% মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন।    

চেঙ্গিস খান তার মূল নাম নয়। ‘চেঙ্গিস খান’ এই নাম তার উপাধি। তার প্রকৃত নাম তেমুজিন। সেই অঞ্চলে তেমুজিন নামের অর্থ আয়রন ওয়ার্কার।

১১৬২ থেকে ১১৬৭ সালের মধ্যে কোন এক বছরে চেঙ্গিস খানের জন্ম মধ্য এশিয়ার দেশ মঙ্গোলিয়ায়। তোমরা যদি বিশ্ব মানচিত্রটি দেখ, তবে মঙ্গোলিয়া দেশটি দেখতে পাবে বর্তমান চীন আর রাশিয়ার মাঝখানে। তবে দেশটির ১ শতাংশের কম ভূমি চাষাবাদের উপযোগী বলে পৃথিবীর সব এলাকা থেকে এটি ভিন্ন রকমের জনপদ। প্রবল শীত,ধূলিঝড়, খড়া সহ নানা প্রতিকূল অবস্থা সব সময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের উপর ছায়া ফেলে রেখেছে। এখানে হাজার বছর ধরে  মানুষ যাযাবর। পশুপালনই তাদের মূল পেশা।    

সেই সময় বিশাল সেই তৃণ চরণ ভূখন্ডে একক কোন জাতি বসবাস করত না।  মানুষগুলো বিভক্ত ছিল গোত্রে গোত্রে, দলে উপদলে। তাতার, টারকিক, মঙ্গল গোত্রের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে। তেমুজিনের পিতা ছিলেন মঙ্গোল একগোত্র প্রধান। মঙ্গোল রীতি অনুসারে তের বছর বয়সে মঙ্গোলদের আরেক গোত্রের মেয়ে  বোর্তে সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় মঙ্গলদের   চিরশত্রু উপজাতীয় তাতার গোষ্ঠীর লোকেরা তেমুজিনের বাবা ইয়েসুগিলকে হত্যা করে। তেমুজিন শপথ নেয় চরম প্রতিশোধের এবং নিজেকে ঘোষনা করেন গোত্র প্রধানের। কিন্তু এই বালকে  নেতাকে মানতে নারাজ বলে তাদের পরিবারকে বিছিন্ন করে রাখা হয়। চরম অভাব অনটনে অবস্থা এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়  যে খাবার চুরির কারনে নিজের ভাইকে সে হত্যা করে।  

চরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তেমুজিন বড় হয়ে উঠে।  আর সে হয়ে উঠে দুর্ধর্ষ এক কিশোরে। ১৬ বছর বয়সে তেমুজিন বিয়ে করে নিয়ে আসে বোর্তেকে।  মাত্র ১৭ বছর বয়সে শুরু হয় তার বিজয় যাত্রা। তার ডাকে সাড়া দেয়  হাজার হাজার মঙ্গোল। তিনি সুসংগঠিত করেন বিশাল এক বাহিনী। উচ্চাভিলাষী তেমিজিন এই বাহিনীকে ১০জন, ১০০ জন, ১০০০জন, ১০,০০০জনের দলে ভাগ করে আধুনিক যুদ্ধ দলে সুসজ্জিত করেন। এই সময় প্রত্যেক সৈনিক নিজেদের রসদ বহন করত।   

 ১১৮৩ সালে মঙ্গলদের এক সমাবেশে তাদের গ্রেট খান ঘোষনা করে নাম দেওয়া হয় চেঙ্গিস খান। সেই থেকে তেমুজিন হয়ে উঠে চেঙ্গিস খান।  তাদের ভাষায় এই নামের অর্থ দামি যোদ্ধা। ১২০৬ সালে তাকে অভিহিত কর হয় খান অব খান্স বা কিং অব কিংস। এর পর থেকে চেঙ্গিস খান রাজ্য সম্প্রসারণে মন দেন।

August 5, 2019 6 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

ব্যাঙকুমারী

by Admin August 4, 2019
written by Admin

(শিশুতোষ গল্প)

মোঃ নোমান সরকার

পুকুর দেখতেই রাজা ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পরলো। সৈন্যদের থেকে অনেক  দূরে চলে এসেছে। যুদ্ধে জয় লাভ করতে খুবই কষ্ট হয়েছে এবার। রাজা পুকুর ধারে এসে দুই পা ভাঁজ করে বসলো।    

আহ! কি টলটলে পরিস্কার পানি!পানি দেখেই সে হেসে উঠলো। সে দ্রুত পানি স্পর্শ করলো।  তারা সাড়া শরীর ঠান্ডা আর শান্ত হয়ে গেল। আনন্দে তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। শরীরের সমস্ত ক্লান্তি যেন কমে যাচ্ছে। রাজা তরবারিটা পাশে রেখে পুকুর থেকে দু হাতে পানি নিয়ে মুখমণ্ডলে দিল।  আনন্দে তিনি বারবার ‘আহ! আহ!’ বলে উঠল। তারপর তরবারিটা পরিস্কারের জন্য পুকুর থেকে পানি হাতে নিল। ঠিক তখনই কেউ একজন কথা বলে উঠল,’আমাকে মেরো না ।’

রাজা অবাক বিস্ময়ে চারদিকে তাকালো। কোথাও কেউ নেই! বেশ একটু দূরে বিশাল পাহাড়। পাশে তৃণ ভূমি। আর মাথার উপর ঝকঝকে শেষ দুপুরের আকাশ। তিনি আবার তরবারিটা হাতে উঠালেন, একই ব্যাপার হলো। কেউ একজন চিৎকার করে বলল,’আমাকে মেরো না।’

রাজা চমকে উঠল। কোথাও কেউ নেই! রাজা চারটিয়েখুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। একটু বাদে রাজার চোখ আটকে গেল যেন। পিকিরের ধারে তার খুব কাছে একটা ব্যাঙ বসে, সে কথা বলে উঠছে বারবার! কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব! এ যে অবিশ্বাস!

 ব্যাঙ বলল,’আমি ব্যাঙকুমারী। আমাকে মের না,আমার প্রতি সহজ হও।‘ 

রাজা অবাক ,বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে ! এ ও কি সম্ভব! একটা ব্যাঙ কি করে কথা বলে! কোথাও কি ভুল হচ্ছে? সে অনেক খন ধরে টার দিকে তাকিয়ে থাকল।

তৃতীয়বার
ব্যাঙ বলে উঠল,’ আমি ব্যাঙকুমারী। আমাকে মের না,আমার প্রতি সহজ হও।‘ 

রাজা আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে নরম গলায় বলল, ‘মারব না,ভয় পেও না। আমি রাজা,কথা দিচ্ছি।‘

 ব্যাঙকুমারী শান্ত হল। রাজার কথায় ভরসা পেয়েছে যেন।    

ব্যাঙকুমারী বলল,’আমি পানির নীচের দেশের রাজকুমারী। এখান থেকে অনেক দূরে একটা নদী আছে। সেই নদীর নীচে আমাদের দেশ।

রাজা বলল, ‘নদীর নীচে! নাদীর নীচে! নদীর নীচে! নাদীর নীচে? ‘

ব্যাঙ বলল,‘নদীর তলায় যে মাটি, তার থেকে অনেক অনেক নীচে আমাদের দেশ।‘   

রাজা অবাক বিস্ময়ে বলল, ‘আচ্ছা!’

‘আমি আপনার মতন একজন মানুষ। যাদুকর আমাকে ব্যাঙ বানিয়ে রেখেছে।‘  

রাজা যেন নিজে নিজেই বলল, যাদুকর! আচ্ছা যাদুকর তোমাকে ব্যাঙ বানিয়ে দিলো। আচ্ছা?’

 রাজা যেন একবারেই বোকাই হয়ে গেল! সে এসব কি শুনছে ? এমন কি কখনও হতে পারে! নাকি অসুস্থ হয়ে গেল সে! যুদ্ধ করতে করতে আতিরিক্ত ক্লান্তি থেকেও হতে পারে ব্যপারটা।   

অনেকখন পর রাজা বুঝল,সে অসুস্থ না। যা সে দেখতে আর শুনতে পারছে, সব সত্যি! কিন্তু পুরো ঘটনাটাই বড় বেশী বিস্ময়কর! রাজা বারবার মাথা আর গাল চুলকাতে লাগল। কখনও এদিক সেদিক তাকাতে লাগল। রাজা ভ্রু কুচকে জানতে চাইল,’পানির নীচে দেশ আছে! মানুষ আছে! মানুষ! মানুষ থাকে! মানুষ পানির নীচে থাকে!’

 ব্যাঙকুমারী বলল,’নদীর একেবারে নীচে আছে যে মাটি তারও অনেক অনেক নীচে আছে অনেক অনেক দেশ। সেখানে মানুষ ছাড়া অন্য যে প্রানী আছে তা এখানকার মতন না। একেবারে ভিন্ন। তবে তোমাদের মতন নিষ্ঠুর কোন মানুষ বা প্রাণী নেই। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কাউকে কষ্ট দেয় না, আঘাত করে না, হত্যা করে না। গত কয়েক দিন আগে তো একদল ছেলে আমাকে পেয়ে পাথর ছুড়ে মেরেই ফেলেছিল। ভাগ্য ভালো ঘটনা সন্ধ্যায় বলে আমি লুকিয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। আমি যাদুকরকে যেমন ভয় পাই। মানুষ দেখলেও।‘

একটু থামল ব্যাঙকুমারী। তারপর আবার বলল,’ এ ছাড়া অনেক অনেক মিল আছে আপনাদের সাথে আমাদের। কিন্তু কেউ সেখানে নিষ্ঠুর নয় বলতে গেলে, যাদুকরের মতন অল্প কিছু দুষ্ট ছাড়া। ‘

রাজা আবার বলল, পানির নীচে দেশ! নদীর পানি নীচে দেশ, মানুষ, প্রাণী!

  ব্যাঙকুমারী বলল, নদীর পানি ঘোলা বলে পানির নীচে কিছু থাকতে পারে, এ নিয়ে আপনারা বিশ্বাস করেন না। আমি আপনার আগে আরো একজন মানুষের সাথে কথা বলেছিলাম। সে এই কথা আমাকে বলছিল। ‘

রাজা বলল, হ্যা তা হতে পারে। নদীর পানি ঘোলা। তাই তার একেবারে নীচে বা তারও নিচে কিছু থাকতে পারে, এটা আমিও সারা জীবনে ভাবিনি।’

ব্যাঙকুমারী বলল, কিছু কেন বলছেন। নদীর নীচে একের পর এক দেশ আছে, সেখানে মানুষ থাকে।

রাজা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ব্যাঙকুমারীর দিকে। কি চমৎকার কণ্ঠ এই ব্যাঙকুমারী! সত্যি কি সে মানুষ! সত্যি কি সে রাজকুমারী!

রাজা ব্যাঙেকুমারীর কথাটা নিজে নিজে বলল, ‘ সেখানে মানুষ ছাড়া অন্য যা প্রানী আছে তা এখানকার মতন না। একেবারে ভিন্ন। হুমমম !’ 

 রাজা মাথা চুলকাল। চিন্তিত গলায় বলল,‘তা তুমি কি করে এলে এখানে? বলে রাজা গভীর মনোযোগ দিয়ে ব্যাঙকুমারীকে দেখতে লাগল।

রাজার এ কথায় ব্যাঙকুমারী বলল,’ একটা ভূমিকম্প হয়েছিল। তারপর দেখি আমি এখানে। আমার সাথে আমাদের অনেকে মানুষ বেঁচে ছিল কিন্তু যাদুকর সবাই কে মেরে  ফেলেছে। মেরে ফেলেছে তোমাদের সেই মানুষটাকে যার সাথে আমার কথা হচ্ছিল। সে বিশ্বাসই করতে পারছিল না আমাদের।‘

রাজা বলল অশান্ত গলায় প্রশ্ন করল, ‘কেন?কেন যাদুকর মারলো কেন? কোন যাদুকর, কোথাকার যাদুকর?’

ব্যাঙকুমারী,খুবই হতাশ গলায় বলল, ‘ যাদুকর আমাদের দেশের। তবে দেশে এত ক্আষতি করার ক্মিষমতা তার ছিল না। কিন্তু এখানে এসে তার অনেক ক্ষমতা হয়ে গেছে। জানি না কেন সে আমাদের মারতে চায়! সে কি চায়! তাকে দেখেছি কেবল। সে আমাকে খুঁজছে! একদিন সকালে আমাকে দেখতেই ধরার চেষ্টা করতে লাগল। অবশেষ ধরতে না পেরে সে আমাকে ব্যাঙ বানিয়ে ফেললো।‘ তারপর  আবার থেমে উত্তেজিত গলায় বলল ,’সে আমাকে ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করবে।‘

রাজা চারদিকে ভালো করে তাকাল। তার খনে খনে মনে হতে লাগল, গোটা ঘটনাটা ঘটছে ঘুমের ভিতর স্বপ্নে। তারপর পরই মনে হলো না স্বপ্ন না।

রাজা বলল, ‘এখানে থাকাটা তবে নিরাপদ হবে না। যাবে তুমি আমার সাথে?’

ব্যাঙকুমারী লাফিয়ে বলল,’কোথায়?’

 রাজা বলল,’আমার দেশে, আমার প্রাসাদে?’

রাজার কথা শুনে ব্যাঙকুমারী কি যেন ভাবল। তারপর বলল,’আমি তোমার কাছে ব্যাঙ হিসাবেই থাকতে চাই। আমি কথা শুধু্ তোমার সাথেই বলতে চাই।‘

 রাজা বলল ,’ঠিক আছে তোমার পরিচয় কেউ জানবে না।‘

রাজা দেশে ফিরল ঠিকই কিন্তু আগের মতন রাজদরবারে যায়না। রাজ প্রাসাদেই সময় কাটায়। সবাই হতবাক! তবে এটা জানাজানি হয়ে গেল যে, রাজা ফিরেছেন একটা মস্ত বড় ব্যাঙ নিয়ে! ব্যাঙ কেন শোবার ঘরে থাকবে? এ ধরনের অনেক অনেক প্রশ্ন চারদিকে ছড়িয়ে গেল।

রাজা তার ঘরের এক কোনে কাঁচের ছোট একটা ঘর বানাতে আদেশ দিল। সেই ঘরের  ভিতরে অনেক গাছ থাকবে, একটা ছোট পুকুরও থাকবে। সেই ঘরের কাজ চললো রাত আর দিন । ঘরের কাজ চলার সাথে সাথে চারদিকে খবর ছড়িয়ে গেল ,রাজা অসুস্থ! পাগল প্রায়! আর ব্যাঙ নিয়ে হরেক রকম খবরও চালু হল। কেউ বলল,’ব্যাঙটার মাথায় একটা জিনিষ আছে ,যাকে বলে,সাত রাজার ধন।‘ আবার কেউ বলল,’ডাইনি ওটা,রাজা কে যাদু করেছে!’ এভাবেই চলল।

 গল্পের ডালপালা এগিয়ে যেতে লাগল বাতাসের সাথে সাথে। এর মধ্যে রাজা মন্ত্রী কে রাজ্য ভার বুঝিয়ে দিল। সবাই চিৎকার করে বলে উঠল,’গেল গেল! সব গেল! আমাদের প্রান প্রিয় রাজা গেল।‘

একদিন ব্যাঙেকুমারীর সেই যাদুকর এলো রাজ দরবারে। মন্ত্রীকে বলল রাজার সাথে দেখা করবে।

মন্ত্রী জানাল ,’তা সম্ভব না।‘  

যাদুকর সেই কথা অনেক হাসলো। তারপর অচেনা পাখি হয়ে রাজ প্রাসাদে ঢুকে পরলো। মন্ত্রী প্রত্যেক সৈন্যকে আদেশ দিল, দুষ্ট যাদুকর কে ধরার জন্য। কিন্তু  কোথায় সেই পাখি! যেন এটা বাতাসে মিলিয়ে গেছে! প্রাসাদের ভিতরে বাহিরে সবখানেই সৈন্যরা খুঁজতে লাগল পাখিটাকে।

এদিকে রাজা আর ব্যাঙকুমারী প্রাসাদে! রাজার কঠোর আদেশ প্রাসাদে ঘন্টা না বাজা পর্যন্ত এখানে কেউ যেন না আসে। মন্ত্রী, প্রত্যেক রাজকর্মচারী আর সৈন্য চিন্তিত হয়ে হন্য হয়ে পাখিটাকে খুঁজতে লাগল। মন্ত্রী আদেশ দিলো রাজার ঘর ছাড়া প্রাসাদের কোন জায়গা যেন বাদ না যায়।     

রাজা জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিল। হঠাত ঘরের ভিতর একটা শব্দে সে ফিরে তাকালো। একটা বিশাল বড় পাখী উড়ে এসে রাজার কাছকাছি চলে এলো। পাখিটা উড়ে এলো জানালার উল্টো দিক থেকে। যেন সে অদৃশ্য থেকে এসেছে। হঠাত করেই। কিভাবে পাখিটা ঢুকল তা নিয়ে রাজা বেশী একটা চিন্তিত হল না। সে  জানে, এটি পাখি না, যাদুকর। রাজা অপেক্ষাই করছিল যাদুকরের।

ব্যাঙকুমারী চিৎকার করে বলল,’রাজা এটা পাখি না ,এটা যাদুকর’ ! বিশাল পাখিটার দিকে দেখে রাজা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। সে দৌড়ে তার তরবারিটা বের করল। জাদুকর পাখি থেকে মানুষ হল।

রাজা দেখল , বিশাল এক মানুষ ! রাজা শান্ত গলায় বলল ,’তুমি সেই!’

যাদুকর বলল ,’আমার হাতে ব্যাঙটা তুলে দাও। এটা আমার ব্যাঙ।‘

রাজা হেসে বলল ,’তোমার?’

জাদুকর বিরক্ত গলায় বলল, ‘এই রাজকুমারী আমার দেশের। এর উপর আমার অধিকার।‘

রাজা গম্ভীর গলায় বলল,’তুমি ফিরে যাও।‘  

যাদুকর বলল,’তুমি বোকা। তুমি কি দেখনি, কিভাবে আমি তোমাকে দেখা দিয়েছি, একটা পাখি হয়ে। এর পরও কি তুমি কি আমার শক্তির ব্যাপারে উঁচু ধারনা করবে না।

রাজা হাসল। তারপর হাসতে হাসতে বলল,’ কাউকে দুর্বল ভাবা রাজার কাজ নয়।‘

যাদুকর বলল,’রাজা তো তবে বুদ্ধিমান আর আমার দুশ্চিন্তা করারও কিছু নেই।‘

রাজা এবার গম্ভীর হয়ে বলল,’ব্যাঙকুমার তোমার সাথে যেতে চাচ্ছে না। তাই তুমি একা ফিরে যাও।‘

যাদুকর কি যেন ভাবলো। এই অবসরে রাজা দু পা পিছিয়ে ব্যাঙকুমারীর কাছাকাছি আসলো।

ব্যাঙ বলল,’ জাদুকরের যাদু আমাদের উপর চলে। আপনাদেরও কেবল ভয় দেখাতে পারবে। এর বেশী কিছু না। সে আপনাদের যাদু করে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে সে একজন যোদ্ধা।‘

রাজা যাদুকরের বিশাল দেহটার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল, ‘যাদুকর কেমন যুদ্ধ করে?’

 ব্যাঙ বলল ,’ যুদ্ধে আপনার খুব কষ্ট হবে। তারচেয়ে ওর হাতে আমাকে দিয়ে দিন, আমার জন্য কেনই বা যুদ্ধ করবেন।‘

রাজা আবার দু পা এগিয়ে গেল।

যাদুকর বলল,’আমি আশা করছিলাম কোন ঝামেলা হবে না। কারন তুমি রাজা, প্রজাদের মঙ্গল কামনাই তুমি কর। কিন্তু…।‘

রাজা শক্তভাবে তরবারিটা ধরে বলল,’ফিরে যাও।‘

রাজা যাদুকরের কথাপথনের সময়টা খবর হল যে, রাজা রাজার ঘরে শত্রু ঢুকেছে। যে যেভাবে পারে দৌড়ে ছুটে এলো। এটা কি করে সম্ভব হল যে, শত্রু এত এত সৈন্য এড়িয়ে রাজপ্রসাদে রাজার ঘরে ঢুকলো! সবাই এসে দেখল যাদুকর কে।  সবাই অবাক বিস্মিত হল! কে কি করবে ভেবে পেল না। কিংবা কি করা উচিৎ  ভেবে পেল না!

জাদুকর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দু হাত তুললো। অমনি আকাশ থেকে  বিশাল বিশাল ভয়ানক পাখি প্রাসাদে ঢুকে পরল। ব্যাঙকুমারী চীৎকার করে বলল,’ জাদু দিয়ে শুধু ভয় তৈরি করতে পারবে। রাজা জাদুকরের দিকে খেয়াল রাখুন। ও  আপনাকে ক্ষতি করার সুযোগ খুজছে !’

পাখিগুলো দেখে ভয়ে সৈন্যরা চিৎকার শুরু করল। অধিকাংশ ছুটে পালাল। রাজা চিৎকার করে বলল, আমার সৈন্যরা তোমরা ভয় পেও না। যাদুকরের কোন শক্তি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।‘ 

কথা বলার সময় রাজার চোখ যাদুকরের দিকে থাকল। যাদুকর দুহাত নামিয়ে এবার সামনের দিকে বাড়াল, বাড়াতেই তার হাতে অদৃশ্য থেকে দুইটা তরবারি চলে এলো।

রাজার দুই ভ্রু উচু হল, হেসে আপন মনে বলল, ‘চমৎকার তো!’

সৈন্যরা যারা ছিল তারা গোল হয়ে দাড়িয়ে ,বিশাল বৃত্ত। রাজা আর জাদুকর যুদ্ধে মেতে উঠল। সেকি যুদ্ধ! দিন রাত যুদ্ধ চলল। যেন থামবে না, এমন ভাবে শব্দ হতে লাগল। যুদ্ধ দেখে সৈন্যরা কাঁদতে লাগলো। কারন তারা রাজাকে এত সময় নিয়ে যুদ্ধ করতে দেখেনি।

হঠাৎ করে যুদ্ধটা থামল, যেমনি ভাবে ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে । জাদুকরের হাত ফোঁসকে একটা তরবারি পরে গেল আর রাজার তরবারি ঢুকে গেল জাদুকরের বুকে। দুষ্ট যাদুকর মরে যেতেই ব্যাঙকুমারী মানুষ হয়ে গেল, রাজকুমারী। অপরূপ সুন্দরী! রাজা আর উপস্থিত অন্য সবাই মুগ্ধ আর বিস্ময়ের সাথে দেখতে লাগলো রাজকুমারীকে!

কেউ কেউ গালে হাত দিল বিস্ময়ে আর আনন্দে। অনেকে বলতে লাগল, এ যে ডানা কাটা এক পরী! গালে হাত দিয়ে অনেকেই ভাবতে লাগল এত সুন্দর রাজকুমারী! এত সুন্দর মানুষ হয়! এই রাজকুমারীকে যাদুকর কি করে ব্যাঙ বনিয়ে রেখেছিলো!  

August 4, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্প

কৃপণ (কিশোর গল্প)

by Admin August 3, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

এক গ্রামে এক কৃপণ লোক বাস করত। তা নাম জমির। সারাক্ষণ সে টাকা , আয়, ব্যয়, খরচ নিয়েই ভাবত। সে বিয়ে করেনি খরচের কথা ভেবে। ঘরে বউ এলে খাবার বেশী লাগবে আবার সন্তান হলে খরচ বেড়ে যাবে। তাই সে ঠিক করেছে, এ জীবনে আর বিয়েই করবেনা।

 গ্রামের মানুষদের সাথে এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয় , ঝগড়াও হয়। এই পর্যন্তই। সে তার মতন আছে। দূর থেকে গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। সে এসব গায়ে মাখেনা।

 একদিন ভোরে তার ঘুম ভেঙ্গেছে। হাই তুলতে তুলতে বিছানায় উঠে বসল। তারপর কিসব যেন ভাবল। তারপর খাট থেকে যেই পা নিচে মাটিতে ফেলতে গেল। তখনই কে যেন বলে উঠল ,’ পা উঠাও।‘  

খুব ধীরে, যেন কেউ বলল। খুব আস্তে শুনা গেলেও স্পষ্ট!

ঘরে কেউ নেই! জানালা বন্ধ, শীতের দিন। জমির সারা ঘরে তাকালো। টিনের একটা ঘরে সে একাই থাকে। গ্রামের এক কোনায় তার এই ঘর ,এদিকটায় তেমন কেউ আসেনা। সে ভয়ে ভয়ে আবার পা ফেলতে গেল। আবার সেই একই ধমকের সুরে  আদেশ। খুব ধীরে আর স্পষ্ট!

সে ভয়ানক চমকে দেখল তার খাটের শেষ মাথায় ক্ষুদ্র আলো। দুই আলো পাশাপাশি জ্বলছে! ধীরে ধীরে জমির কাছে গেল। শব্দটা সেই দিক থেকেই এসেছে। কাছে যেতেই বুঝল উজ্জ্বল এই দুই আলো হচ্ছে চোখ। আর চোখ দুইটি একটি পিঁপড়ার! বেশ বড় পিঁপড়া! 

 অবাক বিস্ময়ে দেখল এই পিঁপড়া কথা বলছে! জমিরের মুখ হা হয়ে গেলো। চোখ বড়  বড় হয়ে গেলো। দেখতে পিঁপড়ার চেয়ে একটু বড় পিঁপড়ারটা বলল ,’ আমি পিঁপড়াদের রাণী।‘    

 জমির হা করা মুখ আরও বড় হল। আর মুখ হা করে ঘরে প্রবেশ করা ভোরের  সামান্য আলোতে দেখলো, লাখ লাখ পিঁপড়া তার ঘরের মেঝেতে! এক লাফে সে বিছানায় উঠে এলো। সে প্রায় আর্তনাদ করে বলে উঠলো , ‘আমি এখনও ঘুমাচ্ছি ! স্বপ্ন দেখছি ! স্বপ্নের মধ্যে জেগে উঠেছি।‘

রাণী পিঁপড়া সেকথা শুনতে পেয়ে বলল ,’ এই মানুষ ! মোটেও তুমি ঘুমাচ্ছ না।‘

জমির বলল ,’ আমি স্বপ্নের মধ্যে জেগেছি ! এখন আমি স্বপ্নের মধ্য ঘুমাবো! এক্ষণই ঘুমাবো ‘!

জমির আর ঘুমাতে পারলনা। তারপর অনেক সময় কেটে গেল। একটা সময়ের পর সে বুঝল ,সে স্বপ্ন দেখছে না! যা ঘটছে তা বাস্তব!  

রাণী পিঁপড়া বলল ,’ আমরা প্রতি বছর বসন্তের প্রথম পূর্ণিমায় আগের ভোরে দলবল নিয়ে মাটির উপড়ে আসি। মধ্যরাত পর্যন্ত থাকি। তারপর আবার ফিরে যাই। আজকের রাতটা আমাদের উৎসবের রাত। বছরে একবারই আমরা মাটির উপরে উঠে আসি।‘   

জমির পিপড়ার রাণীর কথাগুলো শুনে ,শুনে যায়! কোন কথা বলে না , কথা খুঁজেও পায়না ! কি বলবে , কি বলা যেতে পারে! মাঝে মাঝে মাথার চুল টেনে ধরে। চোখ বন্ধ করে ওঁ ! ওঁ! ওঁ! করে। তারপর কেটে গেল অনেক সময়। জমিরের মনে হল যেন এক যুগ কেটে গেছে বা যুগের পর যুগ।  

যতই সময় যাচ্ছে জমিরের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সে বলতে থাকল ,’ আমাকে ছেড়ে দাও । আমাকে যেতে দাও। আমার আজ যে ক্ষতি হল তা সারা জীবনেও মিটবে না।‘

রাণী পিঁপড়া অবাক গলায় বলল ,’ প্রতি বছরই এই সময়ে একজন অথবা এক পরিবার আটকা পরে আমাদেরে আগমনে এমনটা খুব কমই হয়েছে। জঙ্গলেই আমরা উৎসব করা হয় এক দিন , একরাতের জন্য।  কিন্তু এমন কথা তো শুনিনি!  সবাই আমদের ভয়ে অস্থির থেকে টু শব্দটা করে না। আর তুমি বিরক্তই করে যাচ্ছ? আমরা ইচ্ছে করলে তোমাকে খেয়ে ফেলতে পারি। ভয় হচ্ছে না এতটুকু? ভারি অদ্ভুদ কথা! ভারি অদ্ভুদ কথা!’   

জমির কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘বর্গার কৃষকরা ধান ক্ষেতে এসে বসে থাকবে , তাদের আজকের দিনের টাকা বেহুদা আমাকে দিতে হবে। আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল যে। তোমরা এসব বুঝবেনা। তুমি আর কাউকে পেলে না। আমার এত বড় ক্ষতিটা করলে।‘

রাণী পিঁপড়া বলল ,’ এ আমরাই বা কোথায় এলাম! ভয় নেই এ মানুষটার! কি অদ্ভুদ ! এই তুমি থাম তো। আমাদের আনন্দ করতে দাও। আর ঘরে কোন খাবারই নেই কেন। চিনি থাকে না এমন ঘরে প্রথম এলাম।

জমির অশান্ত গলায় বলল,’ চিনির অনেক দাম। তাই আমি চিনি খাই না। আর অন্য জিনিসের ও অনেক দাম।‘

একটু পর পর জমির কাঁদতে কাঁদতে একই কথা বলে যেতে লাগল যে, আমার অনেক ক্ষতি হল।

তখন রাণী পিঁপড়া বলল , আমাদের আনন্দ করতে দাও। আর যাবার আগে তোমাকে তো সোনার মোহর দিব ,প্রত্যককেই তো দেই। এখন চুপ কর।‘

সোনার মোহরের কথা শুনে জমির একদম পাল্টে গেল। ‘সোনার মোহর! সোনার মোহর!’ বলে চেঁচাতে লাগল। 

রাণী পিঁপড়া মহা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুমি কি চুপ করবে? আমাদের আনন্দ করতে দিবে? আচ্ছা দাঁড়াও তোমাকে চুপ করাচ্ছি। এই যে তোমার ঘর, এই মাটির অনেক নিচে আছে এক সোনার নৌকা! তুমি কি তা জানো?  তুমি যদি চাও ওখানে যেতে পারো। কিন্তু আমাদের আনন্দ করতে দাও। তোমার চেঁচামেচিতে এই প্রথম আমরা কোন আনন্দই করতে পারছি না।‘  

জমির চুপ হলো।  

‘তোমার সেখানে যাওয়া উচিৎ। সোনার নৌকাটা দেখে হয়তবা তোমার ভালো লাগবে। আর আমরাও রেহাই পাব। কারন তুমি বড়ই বিরক্ত করছ। তুমি কি সেখানে যেতে চাও ?’   

জমিরের শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। বলে কি সোনার নৌকা! সোনার! বলে কি সোনার নৌকা! খুব উচু গলায় জমির চেঁচেয়ে বলল ,’আমি সোনার নৌকা দেখব! আমি সোনার নৌকা দেখব !’ বলতে বলতে থেমে গেল। তারপর ভ্রু কুচকে জানতে চাইল , মাটির নীচে সোনার নৌকা এলো কোথা থেকে?’    

রাণী পিঁপড়া রেগে গিয়ে বলল,’ তুমি কি চুপ করবে?’

জমির বলল, আগে বলো সোনার নৌকা কিভাবে খুজে পেলে? কিভাবে এলো?’

রাণী পিঁপড়া প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল, ইচ্ছে করছে তোমাকে খেয়েই ফেলি। তুমি আমাদের এত বিরক্ত করছ! এমনটা কখনো কোনদিন হয়নি।‘

জমির যেন শুনতে পেল না। সে অস্থির হয়ে জানতে চাইল,’ কিভাবে এলো আমার ঘরের নীচে সোনার নৌকা? তুমি কি করে তা জানো?‘    

রাণী পিঁপড়া উড়ে এসে তার নাকের উপর বসল। রেগে বলতে লাগল,’অনেক কাল আগে তোমার এই বাড়ির জায়গাটা ছিল নদীর তীর আর তখনকার রাজার ঘাট ছিল এটা। রাজার বড় নৌকার শখ ছিল। একদিন তিনি সোনার নৌকা তৈরির আদেশ দিলেন। নৌকা তৈরি করতে একোটা বিশাল গুহার মত ঘর তৈরি করা হলো। একদিন নৌকা তৈরি হয়ে গেল। তারপর পরই নদীর ভাঙ্গন শুরু হলো। ভাঙ্গনের কারণে এই  রাজার ঘাট ,রাজ বাড়ি সব নদীর নীচে চলে গেল। কিন্তু নদীর তীরের এই জায়গা ভাঙ্গল না, দেবে গেল সেই সোনার নৌকা সহ।‘         

জমির বলল,’ তুমি দেখছি অনেক খবর রাখ!’ 

রাণী পিঁপড়া বলল, ‘মানুষই কেবল তার নিজের কথাই ভাবে। মানুষ তো লোভী। তোমাদের প্রথম মানুষও লোভী ছিল। মানুষ ভয়ানক লোভী। তুমি যাও। এখানে থাকলে তোমার বিরক্তে আমাদের সব আনন্দ নষ্ট হইয়ে যাচ্ছে।‘

জমির লাফিয়ে উঠে বলল , ‘এখনি যেতে চাই।‘

‘অপেক্ষা কর তবে। সুরঙ্গ করতে বলে দিচ্ছি আমার সৈন্যদের। তবে একদম চুপ।‘

জমির চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো। 

জমির বালিশের নীচে থেকে টর্চটা নিলো। এটি তার সঙ্গী। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, এটি তার সঙ্গী। কারন বাড়ি ফিরতে প্রায়ই রাত হয়। এটি হাতে নিতেই তার সাহস পায় যেন। জমির টর্চ লাইট সঙ্গে নিলো।     

রাণী পিঁপড়া বলল, ‘এবার তুমি ঘুমাও। হায় মানুষ! তুমি এখানের আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলে !’

জমির দেখল তার ঘুম পাচ্ছে। আরে অস্তে অস্তে সে ঘুমে ঢলে পরছে। সে চোখ বড় বড় করে রাখার চেষ্টা করল। পারলো না । ঘুমিয়ে পরলো।  

ব্যথা পেয়ে ঘুম ভাঙ্গল জমিরের। মনে হল তার হাতে কোন পোকা কামড়ালো।  চারদিক অন্ধকার। দিন হলে তো বন্ধ জানালার ছিদ্রু দিয়ে আলো আসতো। কি সব অদ্ভুদ স্বপ্ন দেখছিল সে! লক্ষ লক্ষ পিঁপড়া, পিঁপড়া রাণী কথা বলছিল! কি অদ্ভূত স্বপ্ন!  

এমন অদ্ভুদ স্বপ্ন সে জীবনে দেখেনি , শুনেওনি ! তারপর তার ঘুমের আগের দৃশ্য মনে হল। সোনার নৌকার কথা মনে হতেই সে লাফিয়ে উঠে বসল। তখনই ব্যথাটা বাড়ছে যে টের পেল। হাতে কি কামড় দিল! মশা তো নয় ,অন্য কিছু।

একটা মশারি কেনা দরকার। অসুস্থ হলে ডাক্তারের পিছনে খরচ অনেক। আর ডাক্তাররা মানেই তো অনেক অনেক টাকা। নাহ , আজই বাজারে গিয়ে ছোট্ট একটা মশারি কিনতে হবে। পুড়ান মশারি পাওয়া গেলে ভালো হত। দাম আরও কম হত। সে শুয়ে পরল আবার। অতি ভোরে উঠে জমিতে যেতে হবে। প্রায় তিন মাইল হেঁটে যেতে হবে। অবস্য অর্ধেক পথ রিক্সায় যাওয়া যায়। কিন্তু রিক্সাওয়ালা সব ডাকাত  হয়ে গেছে। আর দরকারই বা কি। হাঁটলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে সোনার নৌকার কথা মনে হল। সোনার নৌকা ! আহ ! সত্যি যদি এমন হত ! ঠিক তখনই হাতে বলতে গেলে একই জায়গায় আরেকটা কামড় দিল কোন পোকা!  

‘আরে’ বলে আরেকটা হাত সরাতেই সে টের পেল টর্চটা! দ্রত হাতে নিতেই মনে হল এটা তো এখানে থাকার কথা না। টর্চ থাকে বালিশের নীচে। বালিশটা তবে গেল কোথায়?  

তখন আবার মনে হল টর্চ বালিশের নীচ থেকে হাতের কাছাকাছি এলো কিভাবে! তারমানে কি! খুব সোজা সে এখনও স্বপ্নের মধ্যেই আছে! তারমানে সে সবপ্নের মধ্যে উঠে ছিল। আবার সবপ্নের মধ্যে। সে একবার ঘুমিয়ে পরেছিল। আবার সেই সবপ্নের মধ্যে আবার জেগেছে! তার খুব হাসি পেল। এসব কি হচ্ছে! এসব কি ঘটছে! আরে ভোরে উঠতে না পারলে তো কৃষকদের খামখা টাকা দিতে হবে। তখনই মনে হল আবার সোনার নৌকার কথা। লাফিয়ে উঠে, হাতে টর্চ টা নিয়ে অন করল টর্চ। সে চমকে উঠল। বিশাল একটা গুহার শুয়ে আছে সে।  

জমির আলো ফেলে ফেলে সোনার নৌকা দেখতে লাগল। সে আনন্দে, অস্থিরতায় আত্মহারা হয়ে সোনার নৌকা স্পর্শ করতে লাগল।  

 বলতে গেলে প্রচন্ড আনন্দ সাথে নিয়ে একটা সময় জমির ঘুমিয়ে গেল। যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন সে আবার আবিস্কার করল সে অন্ধকারেই শুয়ে আছে। একে একে সব কথা তার মনে পড়ল। তখনই সে দেখল ক্ষুদ্র দুইটি আলো। সেই চোখ! পিঁপড়ার রাণী!

রাণী পিঁপড়া কথা বলে উঠতেই সেই কথার প্রতিধ্বনি হলো গুহাটায়। ‘সোনার নৌকা দেখে তোমার কেমন লাগল?’

জমির অস্থির গলায় বলল,’আমি সোনার নৌকাটি  নিতে চাই?’

‘হ্যা সেটা তোমাকে দেওয়া হবে। এটি তোমার।‘

‘আমার?’ জমির চিৎকার করে বলে উঠোলো।

‘হ্যা তোমার।‘  

জমিত প্রচণ্ড অস্থির গলায় বলল,‘আমি এটিকে কিভাবে উপরে নিয়ে যাব।‘

‘নিয়ে যাওয়া তো যাবে না।‘

‘তাহলে?’

 ‘তুমি এখানেই থাকবে। আমাদের সাথে।‘

August 3, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্প

বন্ধু (কিশোর গল্প)

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

মোরগ দাঁড়িয়ে আছে গাছের উঁচু ডালে। তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে।  সে দেখলো একটা তীব্র আলো, সাথে একজন আকাশ থেকে নীচে নামছে। আর অন্ধকার দূর হচ্ছে। ভোর নেমে আসছে পৃথিবীতে। মোরগ তা দেখতেই ডাকলো, ‘কুক কুরো কুক!
কুক কুরো কুক!’     

শিয়ালের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে চোখ খুলেই জোরে জোরেই বলল, সকাল হয়েছে বলেই কি এমন করে ডাকতে হবে? গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। চুরি করতে যাওয়া এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আর এই মোরগ সকাল হতেই এমন ডাকাডাকি করে, আমার ঘুমটাই দিল ভেঙ্গে। দুনিয়ায় সবাই যদি এভাবে শত্রুতা করে তাহলে চলবে কি করে? আহা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারতাম।

পাস দিয়ে যাচ্ছিল পিঁপড়ার দল। রাণী পিঁপড়া বলল, শিয়ল মশাই সবার দোষ ধরাই তোমার কাজ। মোরগের ডাক না শুনলে আমাদের সকালটাকে সকাল বলে মনে হয় না।        

শিয়াল বলল, তোমাদের যত আজে বাজে চিন্তা। সকাল হচ্ছে আরাম করে ঘুমানোর জন্য। এই সময় কেউ কাউকে বিরক্ত করতে নেই।

রাণী পিঁপড়া বলল, তুমি তোমার ছোট বাবুদের ফেলে দিয়েছ বলে তুমি তাদের স্কুলে নিবার কথা ভুলে গেছে। তুমি একটা পচা বাবা। তা কি তুমি বুঝ?  

শিয়াল বলল, তুমি চুপ থাক,ছোট প্রানী, ছোট ছোট কথা বলো। মোরগ হলো দিনের শত্রু। সে সবারই শত্রু।  

রাণী পিঁপড়া বলল,অযথা অন্যকে শত্রু ভেব না। অহংকার করো না। এই দিন পস্তাতে হবে।     

শিয়াল বলল, জ্ঞান দিতে হবে না, ভাগো এখান থেকে।            

শিয়াল দেখল, পিঁপড়ারা সরে গেল না। এদেরকে ভয়ই করে। খুব ছোট হোক, কিন্তু দলবদ্ধ হয়েই চলে। নিজেদের ভিতর ভুল বুঝাবুঝি নেই ওদের। কেউ কাউকে ছোট করে না, উঁচু নিচু ভাবে না। তাই একে অন্যকে অপমান করে না বলেই এদের নিজেদের ভিতর কোন শত্রুতা নেই। আর মিল থাকে। এদের সাথে শত্রুতা করতে চাইলে এরা তার সাথে শত্রুতা করে। কিন্তু ভদ্র বলেই নিজ থেকে শত্রুতা শুরু করে না। এরা ইচ্ছে করলে তাকে ঘিরে ফেলে খেয়ে ফেলতে পারে। শিয়াল  সরে গেল।  ভয় লাগছে এদের সাথে তর্ক করেছে বলে। কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করল না। সে এমন ভাবে সেখান থেকে সরে এলো যেন কিছুই হয়নি বা পিঁপড়ার রাণীর সাথে তার কোন কথাই হয়নি।

পিঁপড়ার রাণী বলল, তুমি কি চলে যাচ্ছ? তুমি ইচ্ছে করলে ঘুমাতে পার। আমরা  তোমাকে বিরক্ত করব না। আর কেউ এলে তাকে বিরক্ত করতেও দিব না।

শিয়াল হাসলো। না না আমি এখন আর ঘুমাব না। ঘুম ভেঙ্গেছে যখন তখন একটু বেড়িয়ে আসি।  

শিয়াল মনে মনে বলল, দূরে সরে থাকাই ভালো এই দলবদ্ধ প্রাণীদের থেকে। এদের ঘাড় না ভাঙ্গতে চাওয়াই ভালো।

শিয়াল হাঁটতে লাগল। তার ঘুমের প্রয়োজন। আজ রাতে আবার তাকে মুরগী চুরি করতে বের হতে হবে। কিন্তু কৃষকরা অনেক চালক হয়ে উঠেছে। এরা খাঁচা ভাঙ্গাবার কোন সুযোগ রাখেনি। কিন্তু মুরগী তো তার চাই ই চাই।

শিয়াল নদীর তীরে যেতেই দেখল কুমিরের দল। তারা বলল, আরে শিয়াল ভাইয়া যে, ‘এসো এসো।‘  

শিয়াল হাসি মুখে তাদের এড়িয়ে চলে গেলো গভীর বনে। কিন্তু সেখানে বাঘ শুয়ে আছে। সেও বলল, ‘এসো এসো।‘

শিয়ালের চোখ ছোটছোট হয়ে এসেছে সে আর পারছে না। ঘুমে মনে হয় পড়েই  যাবে।  

এমন সময় সে দেখল হরিণের দল। সে তাদের বলল যে গত রাতে পিঁপড়াদের যন্তণায় সে ঘুমাতে পারেনি। আর ভোর হতেই মোরগের ডাক। সে একের পর এক মিথ্যা বলেই যেতে লাগলো। অবশেষে তার কথা বিশ্বাস  করল হরিণের দল। তারা তাকে ঘিরে রাখল। আর গভীর ঘুমে তালিয়ে গেল শিয়াল।    

একটা ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গল। সে টের পেল প্রচন্ড রোদ তাকে ঘিরে আছে। তাকে ধাক্কাচ্ছে একটা হরিণ। সে বলল, ‘হায়নারা তাদের ঘিরে ধরতে যাচ্ছে, এখনই পালাতে হবে।‘  

শিয়াল দেখল নিমিশেই হরিনের পাল অদৃশ্য হয়ে গেল। সে শুনতে পেল হায়নাদের ডাক। 

শিয়াল দৌড়াল। হায়নারাও। ছুটতে ছুটতে সে এক সময় হাঁপিয়ে উঠল। সে  দেখল, হায়নার দল তাকে ঘিরে ফেলেছে। আর তখনই সে দেখতে পেল সে দিনের শুরুতে যে জায়গাটায় শুয়ে ছিল সেখানেই এসে দাড়িয়েছে বলা যায়।

হায়নারা তাকে ঘিরে ফেলে ধীরে ধীরে কাছে চলে আসছে। বৃত্ত ক্রমেই ছোট হচ্ছে। ঠিক তখন শিয়াল দেখল গাছের উপর থেকে মোরগটা ডেকে উঠল। একি! হায়নারা হঠাত করেই সরে যাচ্ছে।

মৃত্যু ভয় শিয়ালকে খেয়েই ফেলেছিল। কিন্তু হঠত করে হায়নাগুলো সরে যেতেই যেন জীবনের স্বাদ তাকে প্রচণ্ড আনন্দে ভাসালো। সে দেখতে পেলো হায়নাগুলো দ্রুত সরে যাচ্ছে, যেন তারা পালাচ্ছে! আর তখনই সে দেখলো অজস্র পিঁপড়া তাড়া করছে হায়নাদের। প্রতি নিয়ত পিপড়াদের রাজ্য বড় হচ্ছে। হায়ানাদের দৌড় আর দেখে কে!

শিয়াল কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে গাছে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোরগটাকে দেখল। আর তখন শুনতে পেলে রাণী পিঁপড়া বলছে, বললাম তুমি ইচ্ছে করলে ঘুমাতে পারো। আমরা তোমাকে বিরক্ত করব না। আর কেউ এলে তাকে বিরক্ত করতেও দিব না।

শিয়াল লজ্জিত হয়ে ভাবলো, যাকে বন্ধু বলতে লজ্জা হতো সে কিনা আজ জীবন বাঁচালো! সে মুখে কিছু বলল না। আর শুয়ে পড়ল। পরম নিশ্চিন্তে সে চোখ বন্ধ করলো।   

August 2, 2019 4 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্প

দাস (কিশোর গল্প)

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

বহু দিন পর আনেক গুলো হরিণ একত্রে এদিকটায় পানিতে নেমেছিল। কুমিরগুলো তার কয়েকটাকে ধরে খেতে পেরে খুবই আনন্দ করছে। কুমিরদের মাঝে যে বড়। সে বলে উঠল,’হরিণের পালটা সহজে আর এদিকটায় আসবে না। ওদের সাথে যাদেরই দেখা হবে, মানে অন্য প্রানীদের দেখা হবে, তাদেরই ওরা আমাদের কথা বলে দিবে। এদিকে সহজে কেউ আসবে না। চল,আমরা জায়গাটা বদলাই’।

তারা সবাই বড় কুমিরের কথা মেনে নিল । তারা নতুন যে জায়গাটা পছন্দ করল সেখানে পানি খুব একটা গভীর নয়। তবে রোদ পোহাবার জায়গাগুলো বেশ ভালো লেগেছে তাদের। একদিন সেখানে বাঘ এল পানি পান করতে। এসে দেখল কয়েকটা কুমির রোদ পোহাচ্ছে। বাঘ অবাক হল। কুমিরদের এ বনের আশে পাশে আগে কখনও দেখেনি ।

বাঘ বলল,’ আমার রাজ্যে একি আনাচার ! পানির প্রানী তোমরা পানিতেই থাকো, আমার রাজ্য থেকে চলে যাও ‘।

দূর থেকে বয়স্ক কুমির টা বাঘ দেখতেই সামনে চলে এলো। তারপর সাদা মাটা গলায় বলল,তুমি কে? জানতে পারি’?

বাঘ চারদিকে তাকাতে তাকাতে বলল, আমি বনের রাজা ।’

‘রাজা! চমৎকার ! আমরা খুবই আনন্দিত বনের রাজা কে আমাদের মাঝে পেয়ে। তা শুনেছি তোমাদের বনে আনেক গুলো হরিণের দল থাকে। হরিণ আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে ‘।

বাঘ বিস্মিত হল ! ‘তোমরা সবাই পানিতে নামো। নেমে যাও। আমার রাজ্যে এসব হবে টবে না। আমার রাজ্য ত্যাগ কর’।

বয়স্ক কু্মির শান্ত গলায় বলল,’হে মাটির রাজা ! আমাদের রাজ্য হচ্ছে পানি। আর আমি পানির রাজা। আমাকে তুমি মহা রাজা বলে ডাকতে পারো। আমি পানির মহা রাজা ঘোষণা করছি যে এখন থেকে তোমাদের বনের কেউ পানি পান করতে পারবে না, যতক্ষণ প্রতিদিন আমাদের সবার খাবার হরিণের ব্যবস্তা না হবে’।

বাঘ রেগে গেল। ‘এসবের মানে কি !’ হুলুংকার দিয়ে উঠল।

কুমির ভারী গলায় বলল,’তুমি বনের রাজা কিন্তু তুমিও পানি পান কারতে পারবে না। কারন মহা রাজার আদেশ করা হয়ে গেছে। বাঘ কুমিরের কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। বাঘ দেখল আজস্র কুমির পানিতে! চমকে উঠল! এ অবস্তায় পানি পান সম্ভব না। পানি না হলে কি চলে!

বাঘ সরে এলো জায়গা থেকে। এমন অদ্ভুত ধরনের বিপদে আগে কখনই পরেনি! কখনও শোনেনি! ভাবতে ভাবতে কেটে গেল আনেক সময়। প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। বাঘ গেল নদীর অন্য দিক টায় । সেখানেও কুমির ! বাঘ দেখল কুমিরের মহা রাজা কে ভেসে আসতে।

কুমিরের মহা রাজা হাসি ভরা গলায় বলল,’ কি ঠিক করলে?’ ‘ কি?’ বিরক্ত গলায় বাঘ বলল। ‘ যদি চাও পানি তবে দিতে হবে হরিণ ‘।

‘সেটা কি করে সম্ভব’ ? বাঘ উত্তেজিত হয়ে বলল।

‘তুমি হরিণের পালটাকে তাড়িয়ে আনবে, ব্যস’ ।

বাঘ আঁতকে উঠে ভলল,‘কি বকছ তোমরা !’

‘পানি চাইলে আমাদের প্রিয় খাবারতো দিতেই হবে। আরে তুমি তো কেবল হরিনের পালটা তাড়া দিয়ে আমাদের একটু সাহায্য করবে, এর বেশী কিছু কি চাচ্ছি না’।

বাঘ ঘাবড়ে গিয়ে বলল,‘বনের রাজাকে হুকুম করছ’ !

কুমির খুবই শান্ত গলায় বলল,‘এভাবে ব্যপারটা দেখছ কেন ! আমি কি বলেছি যে, এতদিন যে পানি পান করেছ, তার খাজনা দিতে হবে।’

বাঘ অনুরোধের স্বরে বলল,‘ আচ্ছা এখন আমাকে পানি খেতে দাও’।

‘রাজা কি তবে মহা রাজার হুকুম অমান্য করতে চাইছে ! আগে ভোজ তারপর পানি।’

বনের রাজা পানি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বনের চার দিকে ভাল করে দেখলো, গাছগুলোও দেখলো!

আর সেদিন থেকে তাই হল, বনের রাজা বাঘ, কুমীর মহা রাজার গোলাম হয়ে গেলো!

August 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

হাতির নাম ইলং

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

হাতির ছোট বাবুর নাম ইলং। হাতি তার সেই ছোট বাবু ইলংকে নিয়ে এসেছে শহর দেখাতে। শহর দেখে মুগ্ধ ইলং। তার ইচ্ছে হলো এই শহরেই থেকে যেতে। শহরে  এসে ইলং ইচ্ছে হলো একটা গাড়িতে উঠার। হাতি বলল, তুমি গাড়িতে কিভাবে উঠবে! গাড়িতে উঠতে টাকা লাগে। আমার কাছে তো কোন টাকা নেই।  

ইলং বলল, মা টাকা লাগে কেন?

হাতি বলল, তা তো জানি না। অধিকাংশ কেনর কোন উত্তর আমার জানা নেই। এই সব মানুষেরাই ভালো  জানে। তবে সব মানুষেরা জানে না। কিছু মানুষ জানে।

ইলং বলল, এটা আবার কেমন কথা! মানুষেরাই যদি জানে, তবে তো সব মানুষেরই তো জানার কথা। কিছু মানুষ জানবে কেন মা?         

হাতি বলল, আমি তো সেটাও জানি না। যা জানেছি তাই তোকে বললাম। তবে একজন মানুষের সাথে কথা হয়েছিল তো। সে বলছিল উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ যারা থাকে কেবল তারাই সব জানে।

ইলং মাথা উঁচু করে উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ দেখতে লাগল।  আরে এ যে পাহারের চেয়েও বড়! তারপর সে মায়ের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, তার মানে কি! উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ যারা থাকে কেবল তারাই সব জানে। তাহলে উঁচু উঁচু বিল্ডিংএ থাকা মানুষেরা ইচ্ছে করে অন্য সবাইকে সব কিছু জানতে দিচ্ছে না।    

হাতি বলল, চুপ থাকো। এই সব মানুষের বিষয়। এ নিয়ে আমরা জঙ্গলে ফিরে গিয়ে কথা বলবো। 

মা! আমার মনে তো অনেক প্রশ্ন!

হাতি বলল, তোমাকে আমার শহরে নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে, দেখছি।

ইলং বলল, মা আমি উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ থাকব।

হাতি খুবই বিরক্ত হলো। হাতির তার বাচ্চাদের সব বায়নাই মিটায় কিন্তু ইলং যা চাচ্ছে তা কি করে সম্ভব!

হঠাত হাতি দেখল বিশাল বড় একটা কুমির পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে।  

হাতি কিছুটা দৌড়ে গিয়ে তাকে থামালো।

কুমির বলল, আরে আরে আমাকে থামালে কেন? আমার খুব তাড়া আছে।

হাতি তাকে সব খুলে বলল।

কুমির বলল, ছোট বন্ধু, তুমি এদিকে এসো। আমি তোমার বায়না মিটাব। বলেই সে একটা টেক্সি ডাকল।

হাতি আর কুমির দৌড়াচ্ছে টেক্সির সাথে সাথে। হাতির ধারনা যে কোন সময় বাচ্চাটা আমার পড়ে যেতে পারে। কুমির যেদিকে যাবার কথা ছিল ,সেই দিকেই টেক্সিটা যাচ্ছে। 

একটা বিশাল বড় বিল্ডিং এর সামনে থামল টেক্সিটা। সাথে হাতি আর কুমিরও।

হাতি বলল, এখানে কি?

কুমির বলল, এটা আমি বানিয়েছি। এটা হচ্ছে এই দেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং। আর এখানেই থাকে এই দেশের সেরা সেরা জ্ঞানী মানুষেরা। যারা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।  

ইলং বলল, আমিও এই বিডিং এ থাকতে চাই।

কুমির হাসল। তারপর বলল, জ্ঞানীরা ছাড়া এখানে কেউ যে থাকতে পারে না। তুমিও এখানে থাকতে পারবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর এর জন্য আগে তোমাকে স্কুলে ভর্তি হতে হবে। আর পড়ালেখা খুবই মন দিয়ে শিখে নিতে হবে।

ইলং খুশি হয়ে রাজী হয়ে গেল। কিন্তু সে রাজী হলেই ত হবেনা, মাকে তো আগে রাজী হতে হবে।

হাতি বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, আগে জ্ঞান অর্জন, তারপর বাকী সব। ঠিক আছে আমি আজই তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিব। তবে শহরের স্কুলে না। আমাদের  জঙ্গলের স্কুলে। যেখানে আমার ছোঁয়া পেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাবে। আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। আমিও জেনে নিব কি কি শিখেচ্ছে তোমাকে।

কুমির বলল, সেটাই সবচেয়ে ভালো। যে শিশু কিশোরেরা মা বাবার ছোঁয়া পায় না তাদের অনেক বেশি কষ্ট। আর তারা অন্য সবার মতন আদর থেকে বঞ্চিত হয়। আদর ছাড়া বড় মাপের কেউ হতে পারে না। আগে মনকে তো বড় করতে দিতে হবে, তবেই মূল শিক্ষাটা মাথায় ঢুকবে।

ইলং খুশি হয়ে মায়ের গা ঘেঁসে দাঁড়াল।  

মা সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিংটার দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে বলল, কুমির তুমি দেখে নিও, একদিন ইলং এই বিল্ডিং থাকবে।

August 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

মা

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

সে অনেক অনেক দিন আগের কথা , আমাদের দেশে এক রাজা ছিল। তার   অনেকগুলো মন্ত্রী ছিল। এর মধ্যে তিনি একজন মন্ত্রীকে খুবই পছন্দ করতেন। আর যে কোন বিষয় তার সাথে আলোচনা করে নিতেন। তিনি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রী। 

এক দিন সকালে খাদ্য মন্ত্রী তার প্রাসাদ থেকে বের হতে যাবে তখন  মন্ত্রীর মা তার পথ আগলে দাঁড়ালেন। মন্ত্রী মাকে দরজায় এভাবে দাঁড়াতে দেখে অবাক। মা বলল ‘খোকা আজ তোর রাজদরবারে যাওয়া হবে না।‘

মন্ত্রী বলল,’মা কি বলছ ? রাজ দরবারে না গেলে কি চলবে! আমি মন্ত্রী না।‘

মা বলল , তা মন্ত্রী ! মায়ের মুখে মুখে কথা বলা খুব দেখি শিখেছ ?’

মন্ত্রী হাসতে হাসতে বলল ,’ মা তা কি আমি পারি !’

মা বলল ,আমি কখন কি তোকে বাধা দিয়েছি ? আজ দিচ্ছি । কারন আছে। আমি স্বপ্নে দেখেছি ,রাজা তোকে অনেক বকছে । তারপর দেখি রাজা তোকে মন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করছে। তারপর দেখি রাজা তোকে বন্দী করে রাজ দরবারে নিয়ে গেছে। আমার অনেক খারাপ লেগেছে স্বপ্ন দেখে। প্রতিদিনই তো রাজদরবারে যাস ,আমি তোকে কখনো কোন বিষয়ে বাঁধা দেইনি খোকা। বাবা , আজ তুই ঘরে থাক।‘

মন্ত্রী জানে, স্বপ্ন তো নিছক স্বপ্ন । তবুও মন্ত্রী মায়ের কথার উপর একটা কোন কথা  বলল না। মায়ের সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলে ঘরে চলে এলো। খুব চিন্তায় পরে  গেল।   তার কখনও এমন হয়নি যে সে রাজ দরবারে যায়নি। ভাবতে ভাবতে সে  বারেন্দায় এলো। তারপর সে একটা সুকানো গাছের পাতায় ময়ূরের পালক কালিতে ভিজিয়ে রাজাকে চিঠি লিখে জানাল যে আজ সে অসুস্থ তাই সে আজ রাজ দরবারে আসবে না। এ টুকু লিখে কবুতরের পায়ে বেঁধে কবুতর উড়িয়ে দিল।

রাজা সেই চিঠি পেয়ে খুব বিচলিত হলেন। তিনি রাজ কবিরাজ কে ডেকে পাঠালেন । আর মন্ত্রী বাড়িতে মন্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য বিশেষ পালকি পাঠালেন।

পালকি খালি এলো। মন্ত্রী এতই আসুস্থ যে রাজ পালকিতেও আসতে পারবেন না।  সেটা মন্ত্রী লিখে জানিয়েছেন।

রাজা রাজ দরবার ঘেষে থাকা পাঠাগার প্রাসাদে এলেন। চিঠিটার দিকে তিনি অনেক সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন। আগের চিঠি আর পরের চিঠি ভাল ভাবে দেখতে লাগলেন। এত ধীর ভাবে লেখা দেখে রাজার সন্দেহ হল । তাকে লেখা কয়েক বছরের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রীর সব চিঠি বের করে আনতে আদেশ দিলেন । তারপর নিজেই ডুবে গেলেন লেখার মধ্যে যেন । মন্ত্রী এর মধ্যে যতবার অসুস্থ হয়েছে সেই সময়ের চিঠি আর তার অক্ষরের মধ্যে যেন ডুবে গেলেন। প্রত্যেক অক্ষর ভাল করে দেখে বের করলেন কোনটা তাড়াহুড়া করে লেখা। কোনটা অস্থির ভাবে লেখা। আর কোনটা অসুস্থ থাকা কালীন লেখা। সব চিঠি অনেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অনেক খন পর রাজা চিৎকার করে বলল রাজ পালকিকে আবার পাঠাও ,জানাও রাজার আদেশ ,মন্ত্রীকে আসতেই হবে।

মন্ত্রী তবুও এল না!

রাজা হো হো করে হাসতে লাগল। হাসিতে সাড়া প্রাসাদ যেন কাঁপতে লাগল। কাঁপতে লাগল রাজ দরবারে থাকা সকল মন্ত্রী আর রাজ কর্মচারী। রাজা হাসে আর হাসে। তারপর গম্ভীর ভাবে আদেশ দিলেন ,’সিপাহী তুমি নিজে যাবে মন্ত্রীকে বন্দি করে নিয়ে আসবে।‘   

খাদ্য মন্ত্রীকে বন্দী করার সময় তার মা অনেক কাঁদলেন আর বললেন ,আমি এই  স্বপ্নই দেখেছিলাম। আমাকে আমার সন্তানের সাথে নিয়ে চল।‘

 কিন্তু কেউ মাকে নিলো না।

বিকাল ফুরিয়েছে তখন। রাজ দরবারে সকাল থেকে কেউ নড়ারও সাহস পায়নি ,শব্দ করা তো দুরের ব্যাপার ! মন্ত্রীকে বন্দী অবস্থায় হাজির করা হল।

রাজা গম্ভীর গলায় বলল ,’আসামীর কোন কথা থাকলে সে বলতে পারে।‘

মন্ত্রী সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফে্লল , মায়ের আদেশ পালন করতে গিয়ে জীবন গেলেও সে তার জন্য প্রস্তুত। তিনি সব খুলে বললেন।   

এ কথা শুনে রাজা আগের মতন হাসতে লাগলো। আর সবাই ভয়ে কাঁপতে লাগলো। রাজা হঠাৎ করে হাসি থামিয়ে রাগী গলায় বলল ,’মায়ের আদেশ যদি রাজ্যের বিরুদ্ধে হয় ,তখন কি করবে?’ 

আমার জীবন আপনার আর রাজ্যের জন্য কোরবানী হোক। জাঁহাপনা আপনি আমার মায়ের ত্যাগের কথা জানেন। মা রাজ্যের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না।

রাজা জোরে চিৎকার দিয়ে বলল ,রাজ কর্মচারীদের সবার খবর আমি রাখি । আমি তোমার কথা জানতে চেয়েছি ?”

আমার জীবন আপনার আর এ রাজ্যের জন্য কোরবানী হোক। যদি এমন আদেশ আসে তবে মাকে বুঝাব , মা অবশ্যই বুঝবে । আর যদি না বুঝে তবে আমি মাকে খুশি করা থেকে নিজেকে থামাব। তবুও রাজা আর রাজ্যের বিরুদ্ধ্বে যাব না।‘

রাজা আবার আট্ট হাসিতে ভেসে গেলেন। তিনি তরবারি বের করলেন। রাজা থেমে প্রশ্ন করলেন ,রাজার আদেশ অমন্য তো করে ফেলেছ, এখন কেমন বিচার আশা কর?’

মন্ত্রী ভয়ে ভয়ে বলল , ‘আমি রাজার ডাকে সাড়া দেইনি। আমি অপরাধী । এখন রাজা যদি দয়া করেন।‘    

রাজা তরবারি হাতে নেমে এল সিংহাসন থেকে । অতান্ত ধারাল তরবারি দিয়ে মন্ত্রীর কাছে এসে তার বাঁধনে স্পর্শ করতেই তা কেটে গেল। সবাই আবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল। সবাই ধরেই নিয়েছে আজ মন্ত্রীর জীবনটা যাবে। রাজা আনন্দের হাসি হাসতেই রাজ দরবারে প্রত্যেকে আনন্দে কেঁদে ফেললো। জীবন ফিরে পাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। জীবনের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। রাজদরবারের প্রতেকেই অনুভব করল, জীবন ফিরে পাবার স্বাদ। সেই সকাল থেকে কি ঘটবে তা নিয়ে প্রচন্ড ভয়ে ছিলেন প্রত্যকেই। কারন একটি মৃত্যু দিয়ে কোন গল্পই শেষ হয় না।

রাজা বলল ,নিয়ে এসো মাকে । আমার নিজের মাকে দেখিনা বহুকাল। মা তো চলে গেছে না ফিরার দেশে, আমি কতদিন মাকে দেখিনা।‘

তারপর মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল ,যে তার জীবনের চেয়ে মাকে ভালবাসে তাকে রাজা কি কোন শাস্তি দিতে পারে?’    

মন্ত্রী আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে রাজাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। সাহসে কুলালো না। কিন্তু রাজা যেন তা অনুভব করলেন। তাকে জড়িয়ে ধরলেন,যেন অনেক আদরে রাজা তা করলেন!

August 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

রাজকুমারী

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

সন্ধ্যা ফুরিয়ে গেছে অনেক আগেই। চাঁদ উঠেনি এখনো। রাজা ঘোড়ার পিঠ থেকে নামার আগে কোলে রাখা হরিণটা শাবক সামলে নিলো। তারপর ঘোড়ার পিঠ   থেকে  নেমে আকাশটা দেখে নিলো। হরিণটা কোল থেকে নামিয়ে নেওয়ার আগে একজন সৈনিক দৌড়ে ছুটে এসে হরিণটাকে কোলে তুলে নিয়ে  রাজপ্রাসাদ থেকে দূরে একটা প্রাসাদের দিকে ছুটে গেল। এটি রাজকুমারীর খেলাঘর।

রাজা আজ ভোরে শিকারে গিয়েছিল। এবার তিনি একাই গিয়েছিলেন। এমনটি  আগে কখনো হয়নি। যাবার আগে রাজকুমারীর কাছে জানতে চেয়েছিল, তার জন্য কি আনবে। রাজকুমারী বলেছিল একটা হরিণের কথা। শিকারে গিয়ে  রাজকুমারী  জন্য একটা হরিণ ধরতে না পারলেও একটা হরিণ শাবক ধরতে পেরেছিল। হরিণ শাবক  ধরে আনতে পেরে রাজা নিজেও খুশি।  

রাজপ্রাসাদটা বিশাল বড় একটা পুকুরের ঠিক মধ্যখানে। যাবার শুধু একটাই সুরু পথ। এখানে কেবল রাজা রানী আর রাজকুমারীই থাকে। কখনো কিছুর প্রয়োজন হলে একটা ঘণ্টা আছে তা বাজালেই একজন রাজ কর্মচারী ছুটে আসে। দুইটি ঘণ্টা বাজালে দুইজন ছুটে আসে।  

রাজা প্রাসাদে এসে দেখল রাজকুমারী ঘুমিয়ে গেছে। এই অবেলায় কেন ঘুমিয়েছে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে রাণীকে প্রশ্ন করল।  রাণী ইঙ্গিত করল, আসলে সে ঘুমায়নি   ঘুমের ভান করে আছে। রাজা জোরে হাসতে গিয়েও  থামাল। তারপর একটু  জোরেই বলল, ‘আমাকে এখনি বের হতে হবে রাণী। আমি চলে যাচ্ছি।‘     

এই শুনতেই ছোট্ট রাজকুমারী ঘুম ফেলে দৌড়ে ছুটে এলো। রাজা ইচ্ছে করে  অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। ছোট্ট রাজকুমারী দৌড়ে এসে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে রাজার এক পা জড়িয়ে ধরল। তারপর রাজার কোলে উঠে গেল এক লাফে। রাজা আর রাজকুমারী দুইজনই মহা খুশি। রাণী এসে বলল, ‘আরে তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে রাজকুমারী?’

 কেউ আর কোন কথা বলল না। তিনজনই হাসতে লাগল।   

 পরের দিন ভোরে রাজকুমারী চোখ মেলে দেখল একটা হরিন শাবক তার  কাছাকাছি হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর তার বিছানাটা ঘাসের উপরে। সে চারদিকে তাকিয়ে দেখল সে রাজপ্রাসাদের চারদিকে যে খোলা জায়গাটা সেখানে শুয়ে আছে। আরে প্রাসাদ থেকে তাকে এত দূরে নিয়ে এসেছে সে টেরই পায়নি। সে অবাক চোখে চারদিক দেখে হরিণটাকে দেখতে লাগল।

এখানে অন্য কেউ নেই। রাজা রানী বা রাজকর্মচারীরা কেউ নেই। সে আর হরিণটা কেবল। হরিণটা ঘাস খাচ্ছে। রাজকুমারী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল।

সকাল পেরিয়ে গেছে। রাজা রানী ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমারীর কাছে এলো। রাজকুমারী দৌড়ে ছুটে গেল তাদের কাছে। রাজা রানী ঘোড়ার পিঠ থেকে নামাতেই  রাজকুমারী বলল, ‘দেখ, দেখ বাবা হরিণটা কত সুন্দর!‘

রাজা হাসতে হাসতে বলল, পছন্দ হয়েছে?

‘হুম। অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে।‘

 ঘাসের উপরে বিশাল বিছানা। রাজা রানী এসে বসল সেখানে।

অনেক খন পরে রাজকুমারী নিরবতা ভেঙ্গে খুব ধীরে বলল,’ বাবা একটা কথা বলি?‘

রাজা বলল, ‘একটা নয় একশতটা বলতে পারো।‘

রাজকুমারী শান্ত গলায় বলল,’বাবা, ও তো অনেক ছোট। হরিণ বাবুটা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘাস খাচ্ছে কিন্তু কান্নাও করছে। ও কেঁদেছে বাবা, ও কেঁদেছে।‘ বলেই রাজকুমারী একটু চুপ হয়ে গেল।  

রাজা রাণী কেউ কোন কথা বলল না। রাজকুমারী এবার কান্না জড়ানো গলায় বলল, ওকে দেখতে না পেয়ে হরিণ বাবুর আব্বু আম্মু কাঁদবে, তাই না বাবা?‘   

রাজা এসে রাজকুমারীকে জড়িয়ে ধরল।   

রাজকুমারী বলল, ‘গতবার তুমি যখন শিকারে গিয়েছিলে তখন তুমি যে অনেক   দিন ছিলে না। আমার খুব কষ্ট লেগেছে তোমাকে না দেখতে পেয়ে। আমি একা একা অনেক কেঁদেছিলাম, এই হরিণ বাবুটার মতন।  এই হরিণটার চোখে পানি, দেখো বাবা, দেখো। ও নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে। পাচ্ছে না বাবা?’    

রাণী বলল,’ আমার মেয়ে অনেক বুদ্ধি হয়েছে তো। আমি অনেক খুশি।‘

রাজকুমারী বলল, বাবা আমরা ওকে ফিরিয়ে দিতে পারি ওর বাবা মায়ের কাছে। তাই না বাবা?’

রাজার চোখে পানি চলে আসলো।

August 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

কুমির আর কুমির ছানা

by Admin August 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

কুমির আর কুমির ছানা নদীর তীরে সকালের রোদ পোহাচ্ছে। চারদিক শান্ত।  কুমির ছানা বলল,‘বাবা একটা প্রশ্ন করি?’  

কুমির চোখ বন্ধ করেই বলল,‘করো।‘ 

কুমির ছানা বলল,‘বাবা আমরা কিছুদিন আগে একটা হাতির বাবুকে খেতে ফেলেছিলাম। সে নদীর তীরে পানি খেতে এসেছিল। আমরা তাকে টেনে নামিয়ে ছিলাম পানিতে। অনেক হাতি ছুটে এসেছিল। কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে নদীর ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম।‘

কুমির বলল, ‘হুম।‘  

‘বাবা হাতিরা আমাদের একা পেয়ে কি, এভাবে খেয়ে ফেলবে?’  

কুমির বলল,’ওরা তৃণ ভুজি ,ওরা মাংস খায় না।‘  

‘বাবা আমরা ওদের বাচ্চা খেয়ে ফেলছি। অরা প্রতিশোধ নিবে না।‘  

‘ওরা প্রতিশোধ নিতে পারে না।‘

‘কেন?’   

‘ওরা ভদ্র।‘

‘তাহলে বাবা আমরা?’      

 এবার কুমির চোখ খুললো। রাগে তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। কুমির রেগে বলল, ‘সব প্রশ্ন করতে নেই।‘   

বাবা, মাষ্টার মশাই বলেছেন,যারা প্রশ্নের উত্তর দেয় না,’তারা আসলে উত্তর লুকাতে চায়। তারা মোটেও ভালো না। তবে কি বাবা আমরা ভালো না?’
কুমির গম্ভীর গলায় বলল,‘তুমি অনেক বেশি দুষ্ট হয়ে যাচ্ছ। শিয়াল মশাই কি এই শিক্ষা দিচ্ছে আজকাল।‘  

‘বাবা, আমি কি অন্যায় কথা বলেছি।‘  

‘হাজারটা অন্যায় বলেছ। চুপ থাকো। এইসব প্রশ্ন আমি পছন্দ করি না।‘

‘আচ্ছা বাবা, আমরা কেন পাখির মতন উড়তে পারি না?’

কুমির আবার চোখ বন্ধ করল। শান্ত গলায় বলল,’আমাদের পাখা নেই। তাই আমরা উড়তে পারি না।‘

কুমিরের ছানা বলল,’আমাদের পাখা থাকলে আমরা উড়তে পারতাম।‘

কুমির চোখ বন্ধ করেই মাথা দুদালো।

কুমির ছানা বলল, ‘আমরা উড়তে পারলে ডাঙ্গায় কেউ থাকতেই পারত না। তাই না বাবা?’    

 কুমির বলল,’কেন থাকতে পারত না কেন?’   

কুমির ছানা বলল, ‘উড়তে পারলে তো আমরা সব প্রানীকে ধরে নিয়ে পানি ফেলতাম আর খেয়ে ফেলতাম। ডাঙ্গায় আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণী থাকত না।‘

কুমির আবার চোখ খুলল। তার চোখ লাল। কুমির বলল,‘তুমি অনেক কথা বলা শিখে গেছো। তোমার শিক্ষক তোমাকে এই সব কি শিখাচ্ছে? আমরা কেবল জুলুম করি! কেউ নদীর তীরে এলেই আমরা তাকে পানি পান করতে দেই না আর টেনে নিয়ে যাই পানির গভীরে। এই সব তুমি কি ভাবছ? কে কে তোমাকে এই সব ভাবাছে? শিয়াল মশাই? আর কে কে? আচ্ছা আজই তার সাথে কথা বলতে হবে।  আর প্রশ্ন না এবার চলো পানিতে। পানিতে থাকলে তোমার কোন প্রশ্ন থাকবে না। ডাঙ্গায় এলেই যত সমস্যা।‘

কুমির আর কুমির ছানা পানিতে নেমে গেল।

August 2, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
Newer Posts
Older Posts

Categories

  • আমার ছোটবেলা
  • আমার ভাবনা
  • কিছু কথা
  • কিশোর গল্প
  • গল্প
  • ছড়া
  • জানা অজানা
  • ভূতের গল্প
  • রান্না ঘর
  • রূপকথা
  • শিশুতোষ গল্প
  • স্বাস্থ্য কথা
  • Facebook
  • Twitter

@2021 - All Right Reserved. Designed and Developed by PenciDesign


Back To Top
Samogro
  • মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ