• মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ
Samogro
শিশুতোষ গল্প

আমরা তিন বন্ধু

by Admin October 26, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাজা বলল,’রানী, শিকারে যতবারই যাই ততবারই মনে হয়েছে আমাদের চেনা   দুনিয়ার বাইরে আরো বিশাল দুনিয়া আছে যা আমরা দেখিনা। জঙ্গল ঘুরতে ঘুরতে মনে হয়, যিনি আমাদের সৃষ্টি  করেছেন তিনি বানিয়েছেন  লাখ লাখ গাছ , যা দিয়ে গড়া এই জঙ্গল। এর একটা কঠিন আর রুক্ষ সৌন্দর্য আছে যা জঙ্গলে না ঘুরলে কেউ তা বুঝতেই পারবে না। আর এই যে প্রসাদের বাইরের যে বাগান তা আমরা বানিয়েছি।  তিনি মানুষ বানিয়ে মানুষকে জ্ঞান দিলেন, আবেগ  দিলেন, মন দিলেন যে,সেই মানুষ বানালো বাগান, ঘর, পুকুর, এমন আর কত কি।‘

রানী হাসল, ‘আপনি কি আবার শিকারে যেতে চাচ্ছেন? কিন্তু তা তো হবে না। আপনাকে আমরা যেতেই দিব না। আমরা মা মেয়ে আপনাকে আটকে রাখব এইবার।‘

রাজা হাসলো।‘না না আমি শিকারে যাবার কথা তো বলছি না। আমি বলছি, জঙ্গলের কথা। এবার তো জঙ্গলে অনেক দিন থেকেছি শিকারে গিয়ে। মনে হচ্ছে অনেক নতুন কিছু জেনেছি।‘

রানী অভিমানী গলায় বলল,’আমি আপনার জঙ্গল নিয়ে কোন কথাই শুনব না। আপনি এসেছেন চার দিন হয়ে গেল। আর এই চারদিনে চার হাজারবার জঙ্গলের কথাই কেবল বলে যাচ্ছেন।‘

‘হুম’ ,বলে রাজা নিজেকে থামালেন। বাগানের দিকে তাকালেন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মনে হল, যদি এ বাগানের যত্ন ছেড়ে দেওয়া হয় তবে এ বাগান জঙ্গলে রূপ নিবে, জঙ্গল হয়ে যাবে। এর মানে কি? মানুষকে তিনি বানিয়েছেন যেন সে যত্ন করে রাখে নিজের, সংসারের, রাজ্যের? মানুষ হচ্ছে বাগান বা বাগানের মতন। যদি যত্ন না করা হয়, মায়া না করা হয় তবে বাগান জঙ্গলের মতন যেমন হয়, তেমনি মানুষ হয়ে যাবে, কঠিন আর রুক্ষ! তাই না? নিজেই নিজেকে  প্রশ্ন করলেন তিনি। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই যেতেই লাগল।

রাজা রানীর দিকে তাকিয়ে বললেন,‘তবে কি আমি ভুল করছি? আমি রাজা, সব প্রজার দায়িত্ব তো আমারই। আমি কি পেরেছি মানুষের এই বাগানের যত্ন নিতে?আমার রাজ্য কি বাগান হয়ে আছে নাকি জঙ্গল হতে যাচ্ছে?‘

রানী মৃদু হেসে বলল,‘আপনি পেরেছেন। প্রজারা আপনাকে এত ভালোবাসে আপনি  পেরেছেন বলেই। তাদের যত্ন নিতেই আপনি ঘুরে বেড়ান ছদ্রবেশে। এখন আমাদের কথা একটু বলি। আমরা মনে করি, আমাদের মা মেয়ের যত্নে অবহেলা আছে। এখন এর বিচার কি হবে, রাজা? আমরা ত বাগান থেকে জঙ্গল হবার মতনই।’

রাজা হেসে ফেলল। আর তখনই রাজকুমারী দৌড়াতে দৌড়াতে রাজার দিকে ছুটে এলো। আর লাফিয়ে উঠে গেল রাজার কোলে।

‘বাবা! ও, বাবা! তুমি কি আবার শিকারে যাচ্ছ?’

রাজা অনেক আনন্দ নিয়ে বলল,’নারে মা। আগে তো বাগানের যত্ন করি। না হলে আমার এই হাসিখুশি পরিবার বাগান থেকে জঙ্গল হয়ে যাবে।

রাজকুমারি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,’কি বলছ বাবা!’

বাবা হাসতে হাসতে বলল,‘যত্ন না করলে সব বাগানই জঙ্গল হয়ে যায়রে মা।‘

রাজকুমারী অবাক গলায় বলল,’ মা বাবা কি সত্যি বলেছে? নাকি আমার সাথে দুষ্টমি করছে?’

মা এবার হাসতে হাসতে বলল, ‘বাবা সত্যি কথাই বলছে।‘

রাজকুমারী আদর মাখা হলায় বলল,’ মা তুমি কাছে এসো। মা কাছে যেতেই  বাবার কোল থেকে মাকে কাছে ডেকে মায়ের গলা পেচিয়ে ধরে বলল,’আমরা তিন বন্ধু। তাই মা? তাই না বাবা?’

তিনজন এক সাথে হেসে উঠল।

October 26, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

একা

by Admin October 26, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাত নেমে আসতেই অন্ধকার  ছায়া ফেল দিয়েছিল গোটা জঙ্গলে। ঘন জঙ্গলে জোনাকিরা ছাড়া যেন কোথাও কেউ নেই। হেমন্তের বাতাস বইছে খুবই জোরে। সব প্রানী যে যার ঘরে, কেবল একজন ছাড়া। একটা ছোট হাতি, সে পথ হারিয়েছিল শেষ বিকালে।

দল থেকে ছোট হাতিটা পিছিয়ে গিয়েছিল। কারন তার নরম পায়ে একটা কাঁটা বিঁধেছিল। সেটা নিয়ে সে এতটা মনযোগী হয়েছিল যে খেয়ালই করেনি কখন দলটা অনেক এগিয়ে গেছে। যখন সে মুখ তুলে সামনের দিকে তাকাল তখন দেখতে পেল কোথাও কেউ নেই। সে ডানে বায়ে অনেক ছুটে ছিল পায়ের কাঁটা সাথে নিয়ে। প্রচন্ড ব্যাথায় সে বারবার অস্থির হয়ে উঠছিল।

একটা খোলা জায়গায় এসে দাঁড়াতেই সে বুঝল সে একা হয়ে গেছে। তার খুবই মন খারাপ হল। পায়ে কাঁটা বিঁধে থাকার ব্যাথাটা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যাথাটাও যেন সে ভুলে গেছে। তার ইচ্ছে করছে গোটা জঙ্গলটা ঘুরে নিজের দলে ফিরে যেতে। যদি কারো দেখা পায়। কেউ যদি এগিয়ে আসে। যদি…। কেউ না কেউ কি তাকে খুজছে না? কেউ একজন যদি খেয়াল করে যে দলে একজন নেই। সে কি খুঁজতে আসবে না?সে অস্থির হল। অস্থির হয়ে সে ডানে আর বায়ে তাকাতে লাগল।  সামনে পিছনে তাকাতে লাগল।

পা ফেলতে পারছিল না। বলতে গেলে বাকি তিন পায়ের উপর জোর দিয়ে সে অনেক ছুটেছে ডানে বায়ে, সামনে পিছনে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। যেন সবাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটাই তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল কেউ ফিরে এসে তাকে নিয়ে যাবে।

অন্ধকার নেমে আসতেই হেমন্তের মৃদু বাতাসে সে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল। সে বুঝতে পারছিল না এটা কি জোরাল বাতাসের কারনে নাকি তার ভয় ভয় লাগছে বলে। সব মিলিয়ে তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল।

সে কখনো একা থাকেনি। একা থাকাটা যে এতটা কষ্টের, এতটা কঠিন সে আগে বেশ কয়েকবার শুনলেও অনুভব করেনি। তার খুবই কান্না পেল। নিজেকে বারবার বলতে লাগল, ‘আমি একা থাকতে চাই না। আমি আমার দলে দিরে যেতে চাই। কেউ একজন তো এসো।‘

যেন কেউ শুনতে পাচ্ছে না। তার খুবই ঠান্ডা লাগচ্ছে। নিজেকে এত বেশি একা লাগছে যে তার মনে হতে লাগল যেন এই পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কেউ নেই। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে তার চোখ বেঁয়ে পানি নামছে।

 

( এই জগতে একা থাকার কষ্টটা অনেক বড় কষ্ট। মানুষ সহ কোন প্রানী একা থাকে না। দলের মধ্যে থাকে। সমাজের মধ্যেই থাকে। তাই ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক নিজেকে একা হতে দিতে নেই। আমি পরিবারের মধ্যেই আছি বা সমাজের মধ্যই আছি এভাবে না ভেবে, আমি পরিবারের একজন, সমাজের একজন এভাবে ভাবলে নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন বলে মনে হবে বা সমাজের একজন দায়িত্বশীল একজন বলে মনে হবে। এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে জায়গা দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। সুন্দর নরম কথা ,ভালো আচরণ দিয়ে, দায়িত্বশীল আচরণ দিয়ে সবাইকে ধরে রাখতে হয়, সবার মন জয় করা নিতে হয়। নিজের মনকে নরম করে নিতে হয়। মায়া দিয়ে সবাইকে ধরে রাখতে হয়। আর তখন দল ছুটে যাবার ভয় থাকে না। তখন হারিয়ে গেলেও কেউ না কেউ এগিয়ে আসে পরিবারে ফিরিয়ে নিবার জন্য। )

October 26, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
স্বাস্থ্য কথা

পানি সঠিক নিয়মে পান করা

by Admin October 15, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

আজকের শিশু কিশোরদের কাছে এই তথ্য হয়ত থাকতে পারে যে, মানুষের এই সুন্দর শরীরের ৬০% থেকে ৭০% পানি দিয়েই তৈরি। এমনকি হাড়, মস্তিস্ক,পেশির বিশাল অংশ পানি দিয়ে তৈরি। সুস্থ শরীরের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। পানি কেবল তৃষ্ণা মিটানোর বিষয় কেবল না, এটি পানির মাত্রা ঠিক রেখে অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়তে সাহায্য করে। পানির অভাব বা ঘটতি হলেই তাই বড় বিপদ।

কিন্তু শিশু কিশোরদের কাছে এই সব তথ্যগুলো থাকলেও এই বিষয়গুলো পারিবারিক ভাবে অভ্যাস না গড়ে তোলার কারনে বা পানি পানের নিয়মগুলো নিয়ে পারিবারিক ভাবে আলোচনায় ন আসায় বা এই নিয়ে পারিবারিক শিক্ষা না দিবার কারনে আমাদের সঠিক নিয়মে বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে উঠেনি। মনে রাখতে হবে পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় বা যে পাত্রে পানি পান করা হচ্ছে তা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় তবে বিশাল বড় বিপদের কারন হতে পারে। এই বিষয়টি সঠিক নিয়মে বিশুদ্ধ পানি পানের মতনই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এই নিয়ম বা অভ্যাসকে মূল্য দেয় না। ফলে নানান জটিলতার জন্ম হয় ধীরে ধীরে। শরীরকে আমরা মেশিনের মতন ভেবে নিতে পারি। নিয়ম বা অভ্যাসটা এমন ভাবে মুল্য দিতে হবে যেন নিজের প্রতি যত্নের মতন বিষয়টি দাঁড়ায়। যত্নই পারে এই শরীরকে সুস্থ রাখতে। সঠিক নিয়মে পানি পান করাটা শরীরের জন্য তাই অনেক বিষয়।

চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে পানি পান করতে হবেঃ আয়ুর্বেদে আছে, চুমুক দিয়ে দিয়ে পানি পান করাটাই সর্বোত্তম উপায়। আমাদের মুখে প্রচুর লালা থাকে। তাড়াহুড়া বা ঢক ঢক করে বা একবারে পান করলে অথবা পানি গিলে খেলে এই লালা পাকস্থলিতে পৌছাতে পারে না। ফলে আমাদের পেটে হাইড্রলিক এসিড আছে তা কার্যক্ষমতায় তারতম্য দেখা দেয়। তাই ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে পানি পান করতে হবে। খেয়াল রাখবেন পানিটা যেন অল্প সময়ের জন্য মুখের ভিতরে থাকে, লালা যেন পানির সাথে মিশাতে পারে, জিব্বা ভালো করে ভিজে। হাদিসে এসেছে কমপক্ষে তিন শ্বাসে পানি পান করতে হবে এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র মুখ হতে সরিয়ে নেওয়া। [যাতে শ্বাস পানিতে না পরে।] [বুখারী শরীফ]

দাড়িয়ে পানি পান করাঃ আয়ুর্বেদে আছে, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং আরথ্রাইটিস রোগে ভোগার সব চেয়ে বড় কারণ। দাড়িয়ে ঢক ঢক করে পানি পান করলে পানি সরাসরি চলে যায় পাকস্থলীতে এবং দ্রুত প্রসাবের চাপ বাড়ে। এতে কিডনির ক্ষতি হয়। নার্ভ প্রদাহের ক্ষতি হয় এবং ক্ষতি হয় অক্সিজেন সরবরাহের। বসে পানি পান করলে হজম ক্ষমতার ঠিক থাকে। নার্ভাস সিষ্টেম ঠিক থাকে। ফলে অবসাদ, উৎকণ্ঠা, মলিনতার সমস্যা জটিল হয় না।

কখন তৃষ্ণা পেয়েছে এটি বুঝতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবেঃ গরমে ঘামের সাথে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। আবার শীতে ঘাম হয় না। তাই পানি কিছুটা কম হলে সমস্যা হয় না। গবেষকরা জানিয়েছেন, পানির ঘাটতি দেখা দিলে প্রাকৃতিক ভাবেই আমরা তৃষ্ণা অনুভর করি। আর গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে যায়। এটা ছাড়া প্রসাবের রং দেখে বুঝা যায় শরীরের পানির ঘাটতি আছে কিনা। যদি প্রসাবের রং হলুদ, কমলা বা লাল হয় তবে বসে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে প্রচুর পানি পান করতে হবে। অধিকাংশ এই বিষয়টি শিশুরা জানে না। তাই তাদের বলে বুঝাতে হবে। প্রসাব যাতে দেখে এ নিয়েও তাদের সাথে কথা বলতে হবে। ফলে পানি পানের জরুরী বিষয়টি তারা বুঝে ফেলবে।

সময়ঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে চেয়ারে বসে খালি পেটে বা বাসি মুখে তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে ১/ ২/৩ গ্লাস গ্লাস পানি পান করলে সারা রাতের মুখের জমে থাকা লালা বা ক্ষার পাকস্থলীতে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর দিনের বেলায় তাপের কারনে ঘাম হয়। তাই দিনের বেশি করে পানি পান করাটা উত্তম। গবেষকরা বলেন ব্লাডপেসার নিয়ন্ত্রণ রাখতে গসলের আগে এক গ্লাস পানি পান করতএ হবে এবং স্ট্রোক বা হার্ট এট্যাক এড়াতে ঘুমের আগে এক গ্লাস পানি পাওন করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্কুল কলেজে যাবার জন্য রেডি হবার অনেক আগে মানে ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করতে হবে। এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা পেটে জমে থাকা সব ময়লা সহজে বেরিয়ে যেতে পারবে। পেটের নানান রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যাবে।

কতটুকু পানি পান করতে হবেঃ বড়দের সারা দিনে ২ লিটার, মানে ৮ গ্লাস। সেই অনুযায়ি ছোটদের পানি পান করতে হবে। দিনের বেলায় বেশি করে। ঘামলে মনে করে বেশি পানি পান করতে হবে। গরমের দিনে বেশি করে পান করতে হবে ধীরে ধীরে।

খাবারে আগে না পরেঃ ভুলেও খাবারের সাথে বা পরপরই পানি পান করা উচিৎ না। এর বৈজ্ঞানিক কারন আছে। গবেষকদের মতে এতে হজমে সহায়ক পাচক রসের কার্যক্ষমতা ব্যাঘাত ঘটে। বদ হজম আর গ্যাসের সমস্যা বাড়ে। তাই নূন্যতম খাবারের আধা ঘণ্টা আগে পানি পান করা উচিত আর খাবারের নূনুতম আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পরে পান করা উচিৎ।

ঠান্ডা নাকি গরম পানিঃ নিয়মিত ঠান্ডা পানি পেটের চর্বিগুলো শক্ত করে ফেলে। আর নানান রোগ ডেকে আনে। আর গবেষকরা বলছেন কুসুম কুসুম গরম পানি হজম ক্ষমতা সহ অনেকগুলো উপকার ঘটে শরীরের। সকালে নাস্তার আগে কুসুম কুসুম গরম পানি আর সাথে আমরা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে তো অনেক বেশি উপকারে আসে শরীরের। তেমনি রাতে শোবার আগেও কুসুম কুসুম গরম পানির অভ্যাস করতে হবে। এতে টনসিলের সমস্যা সহ গলার ভিতরে সব সময় আরাম পাবে। তাই ঠান্ডা পানির অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ঠান্ডা পানি মানেই অনেক রোগের মা। খাবার না খেয়ে যেমন কেউ মরে যায় না। তেমনি ঠান্ডা পানি পান না করলেও কিছু হয় না। এটি একটি অভ্যাস। শরীরকে, কন্ঠনালী, ফুসফুসের জন্য আমাদের এই কথাটি মাথায় রাখতে হবে।

ফল আর শাক সবজিঃ কাঁচা ফল- মুল এবং শাক- সবজিতে প্রচুর পানি থাকে। তাই সকালের নাস্তার আগে , দুপুরের খাবারের আগে, বিকালের নাস্তায় বা আস্তার আগে আর রাতের খাবারের আগে আমাদের নিয়মিত সালাদ খেতে পারলে খুবই ভালো। কাঁচা ফল- মুল এবং শাক- সবজির সালাদ খেলে পেট ভরে যায়। ফলে ভাত সহ অন্য সব ভারী খাবার কম খাওয়া হয়। এতে স্বাস্থ্য অনেক অনেক ভালো থাকে।

বেশি বেশি পানি পানে আমরা যত্নবান হয়ে নিজের শরীরকে চাপ মুক্ত রাখি। মনে রাখতে হবে, আমি হচ্ছি আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। আমার দেহই আমার নানান সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। আর শরীর ভালো রাখতে একটা নিয়মের ভিতর নিজেকে নিয়ে আসতেই হবে। পানি পানে আরো যত্নবান হলে এই নিয়মের ভিতরে আসা সহজ হয়ে উঠবে।



October 15, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
আমার ছোটবেলা

আমার ছোটবেলা-৩

by Admin October 15, 2019
written by Admin

আরভীন তাহসিন

আমার নাম আরভিন তাসিন। বয়স ১১ বছর। আমি একাডিমিয়া স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ি। আমার ছোটবেলা গল্প যখন সবাই করে আমার খুব ভালো লাগে। ছোটবেলা আমি আমার বড় চ্চাচুর সাথে সাড়াদিন দোতালায় সময় কাটাতাম। আম্মু বা আনিকা আপু নিতে আসলে আমি উপরে যেতে ইচ্ছে করত না। চ্চাচুর সাথে বাইরে যেতে আমার খুব বেশি ভালো লাগত।

আর আমার গ্রামের বাড়িতে গেলে অনেক আনন্দ করতাম আমার বন্ধুদের সাথে। ছোট ছোট ছাগল ছিল, ওদের নিয়ে অনেক অনেক মজা করতাম। পাশে একটা দোকান ছিল, সেখান থেকে অনেক মজার মজার খাবার খেতাম, নিজে কিনতাম। তবে বেশি ভাগ ফ্রি পেতাম চেনা বলে। শহরে নিজে কিনার সুযোগ নেই। গ্রামের বাড়ি থেকে বের হলে সবাই আমাকে নিয়ে যেত তাদের বাড়িতে। তারা সবাই আমাকে অনেক আদর করতেন।

নিজ বাড়িতে আমরা চাচাত ভাই সহ ৪ জন। আমরা এক সাথে খেলাধূলা করতাম। বৃষ্টিতে ছাদে গোসল করতাম। এখনোও করি তবে আগে অনেক বেশি আনন্দ হত। এখন পড়ার অনেক চাপ। আর এখন কেন যেন নিজেকে একটু বড় বড় লাগে।

October 15, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
আমার ছোটবেলা

আমার ছোটবেলা-২

by Admin October 15, 2019
written by Admin

হুমায়ূন

আমি হুমায়ূন। বয়স ৫২ বছর। আমার ছোটবেলা্র অনেক স্মৃতি মনে আছে। অনেক স্মৃতি। খুব ছোটবেলায় শবেবরাতের রাতে আম্মু আমাকে বলেছিল, ‘এই রাতে তুমি আল্লাহর কাছে যা চাইবে তাই পাবে।’ আমি অবাক বিস্ময়ে বলেছিলাম,’আমি একটা পিস্তল চাইলে তাও পাব।’ তখন আমরা চোর-পুলিশ খেলতাম খুব। পুলিশের কাছে পিস্তল থাকত। আমরা কেউ সহজে চোর হতে চাইতাম না। আর পুলিশ হতে পিস্তল তো লাগেই।

একটা কাঠের ঘোড়া কেনা হয়নি বলে আজও মনে হলে মন খারাপ হয়। ছোটবেলায় তিন পায়ের একটি সাইকেল ছিল আমার। এখন এমন সাইকেল দেখলে উঠতে ইচ্ছে করে। আবার ছোট হতে ইচ্ছে করে। কোন সুযোগই নেই ফিরে যাবার, তাই না?

এই সাইকেলে উঠলেই আমি গান করতাম। দুই পায়ের সাইকেলের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না। অনেক ব্যাথা পেয়েছি শিখতে গিয়ে। ছোট বয়সে বড় সাইকেলে শিখতে যাওয়াটা যে বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না, তা এখন বুঝি।

আমার মনে আছে ছোটবেলায় বাড়ির কাছে নতুন নতুন রাস্তা অবিস্কারের নেশাটা অদ্ভুত ছিল ,দেশ জয়ের মতনই ছিল তখন বিষয়টা।

আর টিভির কার্টুন দেখতে পারতাম শুধু মাত্র সন্ধ্যায় ১৫ মিনিটের জন্য। একদিনে এতটুকু সময়ের জন্য কেবল কার্টুন হত। পরের দিনের জন্য আবার অপেক্ষা করা। সেকি অধীর আগ্রহে বসে থাকা। মাত্র ১টি চ্যানেল ছিল। এখন তো হাজারটা।

আমার দাদা দাদী অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। তাই ছোটবেলায় এ নিয়ে আফসোস ছিল। আর সবাই ছিল। তারপর বড় হতেই নানা মারা গেলেন, নানি মারা গেলেন। ফুফা মারা গেলেন, খালা মারা গেলেন, খালু, মামা,মামী, চাচা, চাচী, ফুফু একে একে সবাই চলে গেলেন। যাই হোক , ফিরে যাই ছোটবেলায়।

আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি। তখন আমার ক্লাসের এক চঞ্চল ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। এটি আমার জীবনে প্রথম বন্ধুত্ব। টিফিনে আমরা খাবার ভাগাভাগি করে খেতাম, যার বাসা থেকে যাই আনা হত। এই স্মৃতি আমাকে খুব নাড়া দেয়।

আমি বাম হাতি। আর আমার বয়সীদের চেয়ে বেশ লম্বা ছিলাম বলে কেউ খেলায় নিত না। আমি মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। যেন কেউ ভুলেও আমাকে না নেয়, এমন প্রতিজ্ঞা ছিল সবার। খুব কষ্ট পেতাম। তবুও যেতাম না দাঁড়িয়ে থাকতাম। খুব কাছের বন্ধুদের এই অবহেলা আমাকে আলোমেলো করে দিত।

October 15, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
আমার ছোটবেলা

আমার ছোটবেলা-১

by Admin October 15, 2019
written by Admin

তামজিদ হাসান

আমি তামজিদ হাসান। ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার বয়স ১০ বছর। আমার ছোটবলার কিছু কথা মনে পড়ে। আমি গত বছর আগে ২টি রোজা রেখেছিলাম। আর রোজায় ভিন্ন স্বাদের খাবারগুলো আমার খুব ভাল লেগেছিল। এটি মনে হলে আমার অদ্ভুত লাগে।

মনে পড়ে, নানার বাড়ির স্মৃতি। ওখানে মাঠে অনেক গরু বিচরণ করে। ছাগল ছিল বেশ কিছু। তারা আপন মনে ঘাস খাচ্ছিল। আমি কাছেই বসেছিলাম। ভয় লাগছিল। কিন্তু দূরে যাইনি। মাঠের কাছে আছে একটা ছোট পুকুর। সাঁতার জানি না বলে কেউ নামতেই দেয় না সেখানে। কবে সাঁতার শিখব তা নিয়ে ভাবি। পুকুরের সাথে একটা দোকান যেখান থেকে নানা মজার মজার খাবর কিনে দিত। একবার গাছে উঠেছিলাম। ছোট গাছ। তবে বড় গাছে উঠিনি, ভয় করছিল। গ্রামে অনেক কিছু দেখেছি যা এই শহরে আমি কখনো দেখিনি। যে মজা গ্রামে আছে আসলে তা শহরে নেই। শহরে কেবল পড় পড় আর পড়। বেড়ানর জায়গা নেই।

আমাকে ছোট বেলায় সবাই কোলে নিতে চাইত। যখন আমি কান্না করতাম। তখন কেউ বুঝতে পারত না আমার খিদে লেগেছে। এখন আমি বুঝি এত কাঁদাতাম খিদের জন্য। এখনো খিদে লাগলে কান্নাই পায়। আমার খেতে দারুণ লাগে। আর কিছু মনে নেই। মনে পড়লে আবার বলব।

আমার কম্পিউটার গেইম খেলতে খুব ভাল লাগে। অনেক ছোটবেলা থেকেই আমি গেইম খেলতাম। একদিন আমি নিজে অনেক গেইম বানাব। হব ইউটিউবারও।

দাদা নেই। দাদীর সাথে আমাদের সময়টা ভালো কাটে। অনেক স্মৃতি দাদীর সাথে। ছোটবেলায় কেবল মনে হত, দাদা একদিন ঠিকই আসবে। এখনো মনে হয়। আচ্ছা আসলে কি আসবে না? মরে গেলে কেউ কেন ফিরে আসে না?

ছোটবেলায় বিছানায় লাফাতে খুবই ভালো লাগত। এখনও লাগে। কিন্তু এখন সবাই মানা করে। বলে, বড় হয়েছ না। আমি কি খুব বড় হয়েছি, ভাবি এগুলো নিয়ে।

October 15, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

ঘোড়ার ডিম নাকি মুরগীর ডিম

by Admin October 11, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

আয়ান চিন্তায় ডুবে গেল ফুফুর কথায়। ফুফু বলছে, ‘তুমি কি খাবে, ঘোড়ার ডিম নাকি মুরগীর ডিম?’

আয়ান রোবট এল এক্স থ্রিকে প্রশ্ন করবে কিনা ভাবছে। রোবট এল এক্স থ্রি হচ্ছে সবচেয়ে চৌকস রোবট এই দুনিয়ায়, সব উত্তরই তার জা্না। পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করা নিয়ে বাবার সাথে কথাটি ছিল। বাবা বলেছিলেন,’ভাল রেজাল্ট করতে পারলে মিলে যাবে তোমার প্রিয় ঘোড়া মানে রোবট এল এক্স থ্রি।’ আয়ান বাবার কথা চমকে উঠেছিল। সেতো অনুভুতি জ্ঞান নিয়ে জন্ম নেওয়া এই শতাব্দীর সেরা রোবট। এটি কি বাবা দিবে তাকে ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই!

আয়ানরা এমেরিকা থেকে বাবা মায়ের সাথে বাংলাদেশে এসেছে তিন দিন হল। খুব ছোটবেলায় এই দেশে একবার এসেছিল। ডিভিওগুলো ছাড়া তার নিজের কিছুই মনে নেই। কারন সে তখন খুব ছোট। বাসায় বাংলায় কথা হয় বলে সেও স্পষ্ট করে না হলেও অনেক কথাই বলতে পারে আর বুঝতে পারে প্রায় সবটা।

আয়ান নীচু গলায় বলল, ‘ফুফু মুরগীর ডিম তো চিনি। তবে ঘোড়ার ডিমটা চিনতে পারছি না।’

ফুফু বলল, ‘তুমি এটাকে আগে দেখনি?’

আয়ান নরম গলায় বলল,’ফুফু আমি এর আগে এই নাম কখনো শুনিনি।’

ফুফু একটা অদ্ভুত সুন্দর মাটির বাটিতে মুরগীর একটা ডিম দিয়ে বলল, ‘এটি ঘোড়ার ডিম।’

আয়ান খানিকটা হেসে বলল, ‘ফুফু এটা তো হাঁস বা মুরগীর ডিম!’

ফুফু হাসল। ‘ধুর বোকা এটাই ঘোড়ার ডিম। ঘোড়ার ডিম চিনে না এ কেমন ছেলে!’

আয়ান ডিম নিয়ে ঘরের বাইরে এলো। সে রীতিমত বোকা হয়ে গেছে। এটি হাঁস ব মুরগীর ডিম, এ ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। কিন্তু ফুফু কি তাকে ভুল বলবে?

এই বাড়িতে তার বয়সী বা কাছাকাছি বয়সী কেউ নেই। সবাই বড়। ভাগ্যিস এল এক্স থ্রি সাথে আছে। যদিও এখানের সবাই খুব ভালো। বড়রাও বন্ধুর মতন আচরণ করছে। সবচেয়ে যেটি অবাক লাগছে তা হচ্ছে এখানকার পোশাক। এত রং, যেন সবাই প্রজাপতি!

আয়ান মাথা নীচু করেই ডাকল,’এল এক্স থ্রি?’

এল এক্স থ্রি বলল,’ বল, আমি শুনছি।’

‘তুমি কি আমাকে বলতে পার,ঘোড়ার ডিম কি?’

‘ঘোড়ার ডিম এটি একটি প্রবাদ বাক্য।’

আয়ান অবাক হওয়া গলায় বলল,’ প্রবাদ বাক্য কি!’

এল এক্স থ্রি সাদামাটা গলায় বলল,’আয়ান তোমার কোনটা জানা জরুরী? প্রবাদ বাক্য নাকি ঘোড়ার ডিম? ‘

আয়ান বিরক্ত হয়ে রোবটটার দিকে তাকাল। অবিকল তারই মতন দেখতে রোবটটাকে প্রথম দেখাতে তার পছন্দ হয়নি। অথচ এল এক্স থ্রি নিয়ে কতই না জল্পনা কল্পনা ছিল। বাবা তাকে অবাক করতে এটি হুবাহু তার মতন করে রোবটটা ওয়াডার দিয়েছিল। কিন্তু পেকেট খুলতে এই ব্যাপারটি তার পছন্দ হয়নি। হুবাহু তার মতন দেখতে। যদিও বাবাকে সে বুঝতে দেয়নি বিষয়টা।

আমি ঘোড়ার ডিম নিয়ে জানতে চাই। দয়া করে তুমি আমার উত্তরগুলো সরাসরি দিবে।’ বলেই আয়ান বিরক্ত হয়ে ভাবছে, আর এল এক্স থ্রি কেমন করে যেন কথা বলে, একটু বেশি বুদ্ধি খাটাতে চায়। বাবাকে বলতে হবে, ওকে বদলে দিতে। এর চেয়ে আগের রোবটটাই ভালো ছিল। প্রশ্ন না করলে নিজ থেকে কোন কথা বলত না। আর এর সবকিছুতেই কৌতূহল!

এল এক্স থ্রি বলল,’ঘোড়ার ডিম বলে কিছু নেই।’

আয়ান বিরক্ত গলায় বলল,’আছে।’

‘আছে?’

‘হ্যা আছে। এই আমার হাতের মধ্যেই আছে।’

এল এক্স থ্রি উঁকি দিয়ে দেখল। সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,এটি দেখতে প্রানীর ডিমের মতনই। হাঁস বা মুরগির ডিমের মতনই। আমার কাছে মনে হচ্ছে তুমি ভুল করছ।’

আয়ান ডিমের দিকে তাকিয়ে বলল,’ফুফু বলেছে।’

এল এক্স থ্রি বলল, ‘আমাকে একটু দিবে। আমার হাতে।’

আয়ান রাগ হল। ‘হাতে না নিলে তুমি বলতে পারবে না?’

‘হ্যা পারব। আমি চাইছিলাম…।’

আয়ান রেগে গিয়ে বলল, ‘তুমি বল। তুমি তো সব প্রশ্নের উত্তরই জানো।’

এল এক্স থ্রি হাসল।

আয়ান চোখ নামিয়ে রেগে বলল,’হাসছ কেন?’

এল এক্স থ্রিকে হাসতে দেখলেই সে চোখ নামিয়ে নেয়। তার মাথা ঘুরে। অবিকল তার মতন করে হাসে। বিষয়টা তার ভাল লাগে না।

এল এক্স থ্রি বলল,’এটি মুরগীর ডিম। শুরুতেই আমি বলতে চেয়েও ভেবেছি এটি তোমাকে অস্থির করছে, এটি আমার পছন্দ হয়েছে। ফুফু তোমকে বোকা বানাতে পেরেছে।’

আয়ান বলল,’আমার অস্থিরতা তোমার পছন্দ হয়েছে! এর মানে কি! তুমি বড় বেশি বেশি করছ। আমার খুব রাগ হচ্ছে।’

এলএক্স থ্রি আবার অবিকল তার মতন করে হাসল, ‘কার উপরে রাগ হয়েছে? ফুফুর উপরে, ডিমের উপরে, আমার উপরে?’

‘জানি না।’ বলে আয়ান ডিম মুখে দিল। ডিমের স্বাদ আর ঘ্রাণ একেবারেই আলাদা হলেও তার ভালো লাগল। কারন সে ডিমের ভক্ত। দিনে তার ৩/৪টা ডিম তার খেতেই হবে।

আয়ান ফুফুর কাছে চলে এলো। ‘ফুফু ঘোড়ার ডিম অনেক মজা। আমাকে কি আরেকটা ঘোড়ার ডিম দেওয়া যায়?’

ফুফু হাসল। ‘হে রে বাবা, আরেকোটা দেওয়া যায়।’ বলে ফুফু আরেকটা ডিম দিল।

একটূ সময় যেতে না যেতে আয়ান আবার ফুফুর কাছে হাজির। এবার খুব উচ্ছাসের সাথে বলল,’ফুফু ঘোড়ার ডিম মুরগীর ডিমের চেয়েও মজার। আমাকে আরেকটা কি দিবেন?

ফুফু আবার হেসে আয়ানকে আরেকটা ডিম দিল ।

 

 

October 11, 2019 5 comments
2 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

বিদায় ছোট পাখি

by Admin October 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাতের বেলা মা নুসরাতের ঘরে এসে এসে দেখে গেল,সে বই পড়ছে কিনা। সব ঠিক আছে কিনা। সে ঘুমের আগে গল্পের বই পড়ে। তাই মা তাকে মজার মজার বই কিনে দেয়। আজ স্কুলে তার যাওয়া হয়নি। বাবার অসুখ করেছে বলে। অন্য সময় এমন হলে বা বাবার কাজ থাকলে মা নিয়ে যায়। আজ মা নিয়ে যায়নি। বাবার পাশেই ছিল।

নুসরাত ঘুমাতে যাবার আগে ঠিক করল মিনি বিড়ালকে তার কাছে নিবে। কাছে নিতে সে মিনি বিড়ালকে বিছানায় নিয়ে এলো। এতেই মিনি বিড়ালের আপত্তি। নুসরাত যতবারই তাকে বিছানায় উঠায়, মিনি বিড়াল ততোবারই বিছানা থেকে নেমে যায়। মহা মুস্কিলে পরেছে নুসরাত।

আজ মিনি বিড়ালের হয়েছেটা কি? এত দুষ্টমি বা কেন করছে! মাছের পিস দিয়েছে ৩টা, পানি খাইয়েছে। আদর করেছে। আজ তাকে বেশি বেশি করে যত্ন করেছে। আর সে কিনা এমন করছে।

নুসরাত মিনি বিড়ালটাকে আবার বিছানার নিচ থেকে ধরে এনে বলল, ‘একদম চুপ।’

মিনি বিড়াল ‘মিউ’ বলে একটা শব্দ করল।

নুসরাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ওকে। এতেই মিনি বিড়ালের যেন জান যায় যায়। সে বুঝল নুসরাত তাকে ছাড়বে না। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। মিনি বিড়ালকে ঘুমাতে দেখে নুসরাতও ঘুমিয়ে গেল।

মিনি বিড়ালের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখল, নুসরাত ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগ। আর হাতটাও আলগা আছে। কোন রকম হাতের নিচ থেকে বের হতেই লম্বা লাফ দিল। কিন্তু লাফিয়ে যেখানে পড়ল, সেটা ছিল নুসরাতের টেবিল ঘড়ি। ছিটকে সেটা মাটিতে পরতেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে নুসরাতের ঘুম ভাঙ্গাতে সে ভয় পেয়ে লুম্বা একটা চিৎকার দিল। সেই চিৎকারে মিনি বিড়াল ভয়ে আরেকটা লাফ দিয়ে বারিন্দায় চলে এসে দিল প্রচন্ড গতিতে দৌড়। আগামী সাত দিন সে আর এই বাড়িতে আসবে না বলে ঠিক করে নিল, এই অবস্থায়ই।

গুনে গুনে সাত দিন পরেই মিনি বিড়াল এই বাড়িতে এলো। পাশের বাড়িগুলোতে কেউ তাকে আদর করে না, খাবার দেয় না। এই সাত দিনে সে শুকিয়ে যেন কাঠ হয়েছে।

বারিন্দা দিয়ে ঢুকেই সে দেখল নুসরাতের টেবিলে উপরে ঝুলে আছে একটা খাঁচা। আর তাতে আছে একটা ছোট পাখি। মিনি বিড়াল ঘরে ঢুকল। এই নতুন অতিথিটা দেখতে তো বেশ সুন্দর।

আর তখনই নুসরাত ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই মিতু মিনি বিড়ালকে দেখল। মিনিকে দেখতেই সে তাড়া ফেলল। মিনি বুঝতেই পারল না সে এমন করছে কেন! তখনই মনে হল এত আদর করেছে তাকে। অথচ সে সেই আদরকে অবজ্ঞা করে সাত দিন এই বাড়িতে ফিরেনি।

মিনি একটা লম্বা লাফ দিয়ে বারিন্দায় এলো। তারপর দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল।

বিকালে নুসরাত সাইকেল চালাতে মাঠে যায়। তার ঘরে ঢুকার একটা পথ জানা আছে। জানালার থাই গ্লাসটা সামান্য চাপ দিতেই খানিকটা ফাঁকা হয়। আর তা দিয়ে অনেক সময় সে এই ঘরে ঢুকে। এটা তার গোপন পথ। সে ছাড়া আর কেউ জানে না। নুসরাত ঘরে থাকলে সে কখনো এই পথ দিয়ে আসে না।

মিনি বিড়াল থাই গ্লাসে সামান্য চাপ দিতেই সে ঘরে ঢুকে গেল। তারপর ধীর পায়ে মিতুর টেবিলের কাছে চলে এলো। পাখিটা তাকে সেখতেই শব্দ করল। মিনি বিড়াল ঘাড় উঁচু করে ভাবল,বাহ! কি চমৎকার!

বেশ কিছুক্ষণ বসে বসে পাখিটা দেখল সে। নুসরাতের তেড়ে আসার দৃশ্যটা মনে করল। নুসরাত খুব কষ্ট পেয়েছে। সে এই বাড়িতে সাতটা দিন আসেনি। অথচ কত আদর করেছে তাকে। তাকে আদর করে কাছে নিতে চেয়েছে। সে তো অবহেলা করেছে সেই আদর। অবহেলা কেউ সহ্য করতে পারে না। কাউকে অবহেলা করতে নেই। তাই নুসরাত তার বদলে এই পাখিটা এনেছে। এখন তার আদরটা নিশ্চয়ই পাখিটা পাচ্ছে। অবহেলাত পরিনতি অশুভই হয়, আজ তা হারে হারে টের পাচ্ছে মিনি বিড়াল।

মিনি বিড়াল উঠে পরল। যা সে করেছে তার ফল তো তাকে ভোগ করতে হবে। সে জানালার থাই গ্লাসটার কাছে এলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ছোট পাখিটাকে দেখল। কত সুন্দর একটা পাখি। থাক সব আদর তার জন্যই থাক। সে জানালা দিয়ে বের হবার আগে আবার ছোট পাখিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, বিদাই ছোট পাখি।

 

October 2, 2019 0 comment
3 FacebookTwitterPinterestEmail
রূপকথা

আকাশের কান্না

by Admin October 2, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

[১]

গাছগুলো অঝোরে কাঁদছে। প্রায় বিশ পঁচিশটা গাছ একসাথে কাঁদছে। যেন বৃষ্টি হচ্ছে। রাজকুমারী খাদিজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনেকখন ধরেই। গাছগুলো কাঁদতে পারে এমনটা কেবল না, ওরা কথাও বলতে পারে। কি অদ্ভূর ব্যাপারটা!

কান্না জড়িত গলায় একটা গাছ বলল, ‘তুমি রাজকুমারী, আমরা তা জানি। তুমি কি আমাদের হয়ে রাজার কাছে নালিশ করবে না? আমাদের খুব কষ্ট। দুষ্ট লোকগুলো প্রতিদিন শতশত গাছ কেটে ফেলছে। পাখিরা ঘর হারাচ্ছে। ঘর হারাচ্ছে অসংখ্য ছোট বড় প্রাণী।’

রাজকুমারী খাদিজা নিচু গলায় বলল, ‘আমি এ নিয়ে কথা বলব বাবার সাথে। কেউ গাছ কাটবে না আর। কিন্তু তোমরা কথা বলতে পার,এটি আমাকে অবাক করছে!’

আরেকটা গাছ বলল, আমরা প্রায় সব গাছই কথা বলতে পারি। আর আমাদের গাছদের একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ আছে গোটা পৃথিবীতেই। তবে খুব অল্প মানুষ আমাদের কথা শুনতে পায়, শুনতে পারে। খুব অল্প মানুষের সাথে আমাদের যোগাযোগ। পৃথিবীতে তারাও ছড়িয়ে আছে। তাদের ভিতরও আমাদের মতন নিজেদের ভিতর যোগাযোগ আছে।’

রাজকুমারী খাদিজা চঞ্চল গলায় বলল, আমার সাথে কারো কোন যোগাযোগ নেই তো।

গাছটা বলল, সময় হলেই হবে।

[২]

রাজকুমারী খাদিজা প্রাসাদে ফিরে এলো।

[চলবে]

October 2, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
গল্প

ছোট পৃথিবী

by Admin October 1, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

নিতুকে বললাম, ‘চুলা জ্বালানো যাবে?’

নিতু বলল, ‘না। এখন না।’

আমি বললাম, ‘পানি গরম করতে হবে। আর তেজপাতা কোথায় রেখেছ, বলত?

‘ নিতু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘পানি গরম করতে হবে মানে? এত ঠান্ডা তো পরেনি। নরমাল পানিতেই গোসল করো। আর তেজপাতা দিয়ে কি হবে?’

‘তেজপাতা পানিতে ডুবিয়ে সেই পানি গরম করে গোসল করব?’ আমি কথাটা বলতে বলতে মুগ্ধ চোখে নিতুকে দেখলাম। সে নীল রং এর একটা শাড়ি পরেছে। নিতু আজকাল সহজে শাড়ি পরে না। ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি চোখ সরালাম না।

নিতু অবাক হয়ে বলল, ‘তোমার মাথা টাথা ঠিক আছে তো।’

আমি হাসলাম, ‘গায়ে ঘামের বাজে গন্ধ, সারাদিন আজ রোদেই কেটেছে। আর তেজপাতার পানিতে মরা চামড়া উঠে যায় সহজে। ত্বক নরম হয়। সতেজ লাগে। নেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পার। কেবল রান্নায় না শতশত বছর ধরেই গসলের পানিতে এর ব্যবহার হচ্ছে।’

নিতু রেগে গিয়ে বলল, ‘এত সাজগোছ! বিষয় কি! আরেকটা বিয়ে করার মতলব হয়েছে। তাই না? বিয়ের বিষ নামানোর মন্ত্র আমার কাছে আছে।’

আমি কিছুক্ষন হাসলাম, ‘তেজপাতা কোথায় রেখেছ?’

নিতু তেড়ে এলো, ‘একটু আগে আমি রান্না ঘর পরিস্কার করেছি। তুমি আমার রান্না ঘর নোংরা করবে না,প্লিজ। আমার সবকিছু জায়গা মত রাখা। সংসার শুরু করার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন একটা জিনিশ এদিক সেদিক হয়নি। আর তুমি রান্না ঘরে ঢুকা মানেই সব এলোমেলো। আমি কিছুতেই দিব না। তুমি সরো।’

আমি বুঝে গেছি আজ আর হবে না তেজপাতা পাওয়া। আরেকটা কাজ করা যায়। কিছুক্ষন অপেক্ষা করা যায়। নিতু রাতে সব কাজ সেরে কম্পিউটারে অন লাইনে খবরের কাগজ পড়ে। খরচ বাঁচাতে দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করেছে নিতু গত মাস থেকে। আমি বাসা থেকে সকালে বের হই, তাই এই নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। দৈনিক পত্রিকা অফিসেই পড়া হয়। কিন্তু নিতু তো পড়ে। মনটা এই নিয়ে খারাপ ছিল। যদিও এ নিয়ে কথা হয়নি। বলতে ইচ্ছেও করছিল না। কাগজে পাতা আর কম্পিউটারের পড়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। সকালের খবরের কাগজের ঘ্রাণ একেবারেই তো আলাদা।

আমি ঠিক করলাম নিতু কম্পিউটারে কাছে বসলেই সেই ফাঁকে রান্না ঘর হানা দেওয়া যাবে। আমি রান্না ঘর থেকে শোবার ঘরে ঢুকতেই নিতুও ঢুকল।

আমি নীচু গলায় বললাম, দেরি করে ফেললাম। মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। ধ্যাত!

নিতু বলল, ‘বাবা! বাবা! করতে করতে ঘুমালো।’

আমি বললাম, আহ! মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে গেছে। হুম। তোমার সাথে ছাড়া গল্প করার কেউ নেই। এসো গল্প করি। গল্পের শুরুতে তোমাকে ছুঁয়ে দেই।’

না। এই ময়লা হাতে তুমি আমাকে ছুবে না। যাও, আগে গোসল সেরে নাও।’

আমি বললাম, ‘হুম। আচ্ছা ঠান্ডা পরেছে না খুব?’

নিতু সাদামাটা গলায় বলল,’স্যারের এখন চা লাগবে। তাই না? ওসব হবে না। এখন থেকে ২কাপ চা। নাস্তার পরে আর সন্ধ্যার পর তুমি এলে। আগামী বছর থেকে ইলা যাচ্ছে স্কুলে। বাজে অভ্যাস সব ছাড়তে হবে। একটা নিয়মের ভিতর আসতেই হবে।’

আমি খানিক ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘সব নিয়ম কি আজ থেকে পালন করতে হবে?’

নিতু বলল, ‘গসল সেরে আসো। তারপর নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আর আজ থেকে শুরু করলে কেমন হয়? চা দিয়ে শুরুটা করা যাক।’

আমি বিরক্ত গলায় বললাম,’খুবই বাজে চিন্তা ভাবনা তোমার। আচ্ছা চায়ের দরকার নেই। একটু পানি গরম করি, কফি খাই।’

নিতু অবাক গলায় বলল,’কফি ফুরিয়েছে দেড় মাস আগে।’

আমিও অবাক হলাম,’বলনি তো!”

নিতু বলল,’বাজারের লিস্টে লেখা আছে। আমি বাজারের লিস্ট তোমাকে মেইল করেছি তাও ৩ দিন আগে।’

আমি পকেট থেকে দ্রুত মোবাইল ফোনটা বের করে মেইল চেক করলাম। বাজারের লিস্ট দেখে আঁতকে উঠলাম, ‘আরে চা পাতাও নেই!’

নিতু গলা নামিয়ে বলল,’তুমি চা খেতে চেয়েছ। আমি দেইনি এমনটা কি হয়েছে? আমি বলতে গিয়েও বলিনি। ভাবলাম যখন লিস্ট দেখবে সেটা তো দেখবেই।’

আমার খুব খারাপ লাগল। তার মানে সকালে আমি আজ চলে গেছি তাড়াহুড়া করে নাস্তা না খেয়ে, দেরি হয়েছিল বলে। তাহলে সকালের চা নিতু খেতে পারেনি।

নিতু পরিবেশটা হাল্কা করতে একটু অভিনয় করে বলল, ‘স্যারের আজকাল শরীরের ঘ্রাণ আর মরা চামড়া নিয়ে ভাবা হয়। কিভাবে ঘরের খবর রাখবে? সুখে আছো বাবু।’

আমি ভারী লজ্জা পেলাম। বারেন্দায় এসে দাঁড়ালাম। বারেন্দার গ্রীল্টাকে খামচে ধরে রাতের আকাশের দিকে তাকালাম। রাতের আকাশটা মেঘে ঢেকে আছে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়েই রইলাম। আচ্ছা,আকাশটা কত বড়। আকাশ এত বড় কেন? আর আমাদের মাটির পৃথিবীটা এত ছোট কেন? এই প্রশ্নের ভিতর আমি ডুবে গেলাম।

নিতু এসে পাশে দাঁড়াল। একটা হাত রাখল আমার কাধে। আমি খুব নীচু গলায় বললাম, আকাশটা এত বড়! আর পৃথিবীটা কত ছোট! ছোট পৃথিবী!

October 1, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

লহরীর বায়না

by Admin October 1, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

লহরী দৌড়ে মায়ের কাছে ছুটে এলো। সে হাঁপাচ্ছে।

মা বল,’আরে থাম থাম। কি হয়েছে?’

লহরী বলল, ‘মা তোমার কাছে নুপুর আছে? আমি পায়ে দিব। পরলে সুন্দর লাগবে না মা?’

মা বলল, ‘হুম সুন্দর লাগবে। পরীর মতন লাগবে।’

লহরী বলল,’ মা? ওমা, তখন কি পরীরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে?’

মা বলল, ‘আমি কি তোমাকে পরীর সাথে যেতে দিব?’

লহরী হেসে দিল। আর রহস্য ভরা গলায় বলল,’মা, সেদিন তুমি বলেছিলে পরী বলে কিছু নেই। আজ যে বললে পরী নিয়ে যাবে, তার মানে পরী আছে। তাই না মা?’

মা চুপ করে থাকতে দেখে, লহরী বলল, ‘পরী এলে আমি সত্যি সত্যি পরীর সাথে চলে যাব। দেখো কিন্তু। আচ্ছা আদরের মা আমার আগে নপুর তো দাও?’

মা আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে সেখান থেকে একটা নুপুর বের করল। লহরী বয়স এখন ৬। নুপুরটা হাতে নিয়ে মা আনন্দ নিয়ে নুপুরটা দেখতে লাগল। ওর জন্য বানানো। অনেক কারুকাজ করা কিন্তু সরু। খুবই অদ্ভুত সুন্দর। বড় হলে পরবে আর রূপার দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই ভাবনা থেকেই নুপুরটা বানানো হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে আমার বড় হবার আগেই নুপুর চাইছে। তার চোখে পানি এসে গেল। মা ভাঁজ করে নুপুর নিয়ে এসে লহরী দুই পায়ে পরিয়ে দিল। বাহ! অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। সত্যি মেয়েকে পরী পরী লাগছে।

নুপুর পেয়ে লহরী সাড়া ঘরে হেঁটে বেড়াতে লাগল আর হাসতে লাগল। বাবাটা যে কি, এই সময় কেউ বাইরে থাকে? মেয়ে নুপুর পরেছে মা কি ফোনে বলেনি বাবাকে। বাবা আসে না কেন? কখন আসবে? মাকে তাও প্রশ্ন করল না। কেবল ঘড়ি দেখল বারবার। বিকাল পেরিয়ে যায়। লহরী জানে বাবা সন্ধ্যার পরেই আসে। তবুও। মা কি বলেনি লহরী নুপুর পরেছে। বাবাটা না যেন কেমন! তবে বাবা দুষ্ট আছে। বাবা এখনো চোখে হাত দিয়ে বলে আমি লুকিয়েছি। বাবা বুঝেই না আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। তবুও বাবাকে বুঝতে দিতে চায় না লহরী সে যে অনেক বড় হয়ে গেছে। চোখে হাত দিয়ে লুকানোটা তো ছোটদের খেলা। বাবা এই সব বুঝে না। বুঝেই না সে আর ছোট নেই। বাবা একটু বোকাও আছে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। লহরী পড়তে বসছে নিজে নিজে। হঠাৎ কি হলো, সে মায়ের কাছে এসে বলল, ‘মা আমাকে তোমার একটা শাড়ি পরিয়ে দাও তো। বাবা দেখুক তার মেয়ে অনেক বড় হয়েছে। সে কি ছোট? মোটেও ছোট না। দাও তো মা শাড়ি পরিয়ে।’

লহরী জন্য একটা লাল শাড়ি কিনেছিল পহেলা বৈশাখে। মা হাসতে হাসতে সেই শাড়ি ওকে পরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু সে সেই শাড়ি পরবে না। সে বায়না ধরেছে মায়ের শাড়ি পরবে।

মা অনেকগুলো শাড়ি বিছানা মেলে দিল। লহরী ঝামেলায় পরে গেল। মায়ের সবগুলো শাড়ি তো সুন্দর। কোনটা পরবে?

এমন সময় বাবা এলো। কলিং বেল টিপতে মা ছুটে যাচ্ছে দরজার দিকে। লহরী খুব জোরে বলল, মা এই ঘরে বাবাকে ঢুকতে দিবে না। আমি এই ঘরে শাড়ি পরব। কাপড় পাল্টানোর সময় কেউ কার ঘরে ঢুকতে হয় না। বাবা তো বোকা। এই সব নিয়ে বাবা হয়ত ভাবে না। বাবাকে এই ঘরে আসতে দিবে না।

লহরী ঘরের দরজা লাগিয়ে অনেক রাগ হলো। বাবা যখন দেরি করছে। আর একোটু দেরি করলে কি হত। মা এখন বাবাকে দেখবে নাকি তাকে শাড়ি পরাবে। আর বাবার সাথে মায়ের এত কি গল্প। বাবা এলে মা যেন আমাকেই চিনে না। পরীরা আসুক সত্যি সত্যি আমি চলে যাব। একবারে যাব না। এই দুই দিন পরীদের সাথে থেকে বাবাকে আর মাকে ভয় দেখাব। তখন আমাকে বেশি মূল্য দিতে হবে। বাবা এলেও মা আমাকে সময় বেশি দিবে।

মা তাকে নীল রং এর শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শাড়িটা মোটা মোটা লাগছে। মাপে হবে না বলে মা কয়েক ভাঁজ করিয়ে পরিয়েছে। তবে এই শাড়িটাই তার ভালো লেগেছিল। রাতের বেলায় ঘরের ভিতর নীল আকাশ। শাড়িটা একটূ মেঘ বা সাদা সাদা থাকলে ভালো হত। সে যখন বাবার মতন অফিস করবে, তখন নিজে নিজেই এমন শাড়ি কিনে ফেলবে।

শাড়ি পরে সে বাবার কাছে এলো। আরে বাবাকে দেখে এত লজ্জা লাগছে কেন! শাড়ি পরেছে বলে?

বাবা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। বাবা কিছু বলার আগে লহরী বলল, ‘দেখ বাবা আমি বড় হয়ে গেছি।’

র

October 1, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
গল্প

মুসা [পর্ব ১]

by Admin September 30, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

মুসা খুবই বিরক্ত হয়ে বাসে উঠল। বৃষ্টিতে তার সার্ট প্যান্ট, জুতার অনেক খানি ভিজে গিয়েছে।  আজ চাকরি ইন্টারভিটটা দিতে আসতেই ইচ্ছে করছিল না। খামখা আসা। চাকরির সাথে ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নের কোন মিল নেই।

আজ বৃষ্টি আর জোরাল বাতাসের মাখামাখি। আজকের দিন ছিল কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার দিন। মুড়ি, চানাচুর পিয়াজ ,ভাজা রসূন আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে খাবার দিন। মেসে অবস্থা মুসার জানাই আছে। সারিষার তেল নেই, চানাচুর নেই, পিয়াজ ফুরিয়েছে,রসূন আছে সম্ভবত। মেস মেম্বার বলতে গতকাল থেকে সে একা। মোট তিন জন মিলে ছিল তারা মেসে অনেক দিন ধরে। হঠাৎ করেই দুইদিন আগে তারা একযোগে মেস ছেড়েছে। এ নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়েছে নিজেদের ভিতর। তিনজনের চমৎকার সম্পর্কটা কয়েক ঘণ্টায় বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল। মানুষের সম্পর্কটা মানুষের চেয়েও আর বেশি অদ্ভুত আর জটিল। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমনটা কখনো তার জীবনে ঘটেনি। মানুষ আসলেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিখে। গল্প উপন্যাসে কত কথা এমন পড়েছে। অথচ এই অনুভূতি একেবারেই ভিন্ন। যেন নতুন ভাবে নিজেকে অবিস্কার করতে পেরেছে।

বাসে ৮/৯ জন পেসেঞ্জার। মুসা বাসের জানালার পাশে বসে আছে। বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টিতে বাস জায়গায় জায়গায় দাঁড়াচ্ছে অনেক সময় নিয়ে যাত্রী নিবার জন্য। এ নিয়ে সামনে বসা যুবকের সাথে বাস কণ্টেকটারের বার বার কথা কাটাকাটি হচ্ছে। মুসার এই সব ভাল লাগছে না। কিছুই ভাল লাগছে না। সে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। অথচ মনে হচ্ছে কিছুই দেখছে না।

বাস কন্টেকটারের চিৎকারে সে যেন অন্য কোথাও থেকে ফিরে এলো। বাস কণ্টেকটার তার সামনে বসা বয়স্ক লোকটাকে রীতিমত ধমকাচ্ছে। আজকাল মানুষের যে কি হয়েছে বয়স্ক মানুষের সাথে অনেক মন্দ আচরণ করে। তার বাবার বয়সী একজন মানুষের সাথে কি বেয়াদবি আচরণ করছে। মুসা বিরক্ত হয়ে বাস কণ্টাকটারের দিকে তাকল। তারপর বয়স্ক মানুষটির দিকে। লোকটার চাহনি, চুল কাঁটা , সার্ট দেখে রুচীরশীল মানুষ মনে হচ্ছে। আভিজাতের একটা ছাপ আছে চেহারায়। সেই বয়স্ক লোকটি বাস কন্টেকটার রীতিমত ধমকের সাথে কথা বলছে!

বাসের কণ্টেকটার বলছে , ভাড়া ১০ টাকাই। ৫ টাকা ভাড়া আমি নিব না, আপনাকে এই পর্যন্ত দশবার বলে গেছি। আরে বুঝেন না ক্যান আপনি আগে নামলে সমস্যা ছিল না। এখন কাউন্ট হয়ে গেছে, লেইখা দিচ্ছে কয়জন।

মানুষটা শান্ত ভাবে বলল,’আমার কাছে আর নেই। ৫টাকাওই আছে, এটাই নিতে হবে।’

‘৫ টাকা ভাড়া অনেক আগে ছিল। অনেক দিন হইছে ভাড়া বাড়ছে। ৫টাকা দিলে হইব না। আচ্ছা ঠিক আছে আপনি পরের ইষ্টেশনে আপনাকে নেমে যেতে হইব। বানানীর ভাড়া ১০টাকাই। এক টাকাও কম নিব না।

আমি নামব না। আমার কাছে তো ৫টাকাই আছে। তুমি বললেই হল, সামনের ইষ্টেশনে নেমে যেতে হবে। আমি নামব না। তোমাকে ৫টাকা দিলে, নেমে আমি কি হেঁটে যাব বানানী?  আর তুমি বললে, ভাড়া তো ৫টাকা ছিল। যখন খুশি বাড়াবে। মানুষের যে কষ্ট হয় এ নিয়ে কি তোমরা ভাব।’  

কন্টেক্টার অধরয্যের গলায় বলল,’আমি তার কি জানি। আপনি এই সব মালিককে কন। আমরা চাকরী করি। আর আপনাকে নেমে যেতেই হবে। আর না হলে ১০টাকা দিতেই হবে।’

‘আমি নামব না। ৫ টাকাই আছে আমার কাছে।’

‘নামতেই হবে। তা না হলে ১০টাকা দিতে হবে।’

বয়স্ক লোকটা খুব শান্ত গলায় বলল, ‘১০টাকা ভাড়া তো বেশি নিচ্ছ।’

বেশি নিব কেন? অন্য পেসেঞ্জারদের জিগান? এই যে নম্বর আছে ফোন করেন। 

হ্যা আমি ফোন দিব। আচ্ছা বললাম তো আমি ফোন দিব। ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা বলছ। যখন তখন  ভাড়া বারাবে। বললাম ১০টাকা নাই ৫ টাকা আছে। ‘ বলে মোবাইল বের করল। মুসাও ভাবল উনি ফোন করবে। তিনি তা করলেন না। তিনি মবাইলে অন লাইনে গিয়ে ইংরেজীতে লেখা কিছু একটা পড়তে লাগলেন। মুসা চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে তাকাল।

কন্টেক্টার সামনের দিকে গেল। মুসা আবার বয়স্ক লোকটার দিকে তাকাল, তিনি মনযোগ দিয়ে ইংরেজীতে লেখা আর্টিকেল বা এমন কিছু একটা পড়ছেন। মুসা বাইরের দিকে তাকাল। খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘরে একটা ডিম আছে। একটাই আছে। ডিম দিয়ে ভাত খেতে ভাল লাগবে। মুসা আবার ভাবনার জগতে চলে গেল।

কন্টেকটারের চিৎকারে আবার সে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।

‘আপনি এখানে নামেন।’

মুসা দেখল বাসটা থেমেছে।

‘আমি তো বলেছি আমি নামব না। আর বৃষ্টির মধ্যে আমি নামবই না।’

‘আরে আপনারে এই খানেই নামতে হইব। ১০ টাকা না দিলে আমি আপনারে যাইতে দিমু না। আছে আপনার কাছে টাকা। আর ফোন দিছিলেন?’

বয়স্ক মানুষটা কিছু বলল না।

‘আমি আগেই বুঝছি ফোন দিবেন না। বয়স হইছে, মিছা কথা বলইলেন না। ৫টাকার জন্য আপনি এমন করতাছে কেন, এমনিতেই পেসেঞ্জার নাই। আমার চাকরি থাকব না। গুওইনা গেছে ৯ জন পেসেঞ্জার।’

ড্রাইভার বলল, ‘বাবারে কেন খমকা ঝামেলা করতাছেন। গুনে গেছে ৯ জন। টাকা আপনাকে দিতেই হবে বাবা। দিয়া দেন তো।’

মুসা বুঝল ড্রাইভার কথা বলায় কন্টেকটার আরও বেয়াদবি করবে, মুসা ইশারা করল কন্টেকটারকে। হাত দিয়ে ইশারায় বুঝাল, বয়স্ক লোকটার থেকে টাকা নিবার দরকার নাই, আমি দিচ্ছি।

ইশারা করায় কণ্টেকটার যেন খেপে গেল। সে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, ‘আরে ভাই আপনি দিবেন কেন? আপনি কি উনার আত্মীয়? আর এতখন কৈ ছিলেন। এইখন ধইরা যে বকবক করলাম তখনই কইতেন টাকাটা আপনি দিবেন।’

মুসা বিরক্ত গলায় বলল,’ ভুল হতেই পারে। ম্যনিব্যাগে টাকা উঠাতে আমারই প্রতিদিন ভুল হয়। ৫০০টাকার জায়গা ১০০টাকা নিয়ে বের হই। এমন বিপদ আমারও অনেকবার হয়েছে। নাও ১০টাকা।’

বয়স্ক লোকটা বলল, ‘আরে আপনি কেন টাকা দিবেন? ৫টাকাই ভাড়া। ৫ টাকাই নিবে।’

কন্টেকটার আবার চিৎকার করে উঠে।

মুসা বলল, ‘টাকা পকেটে বা ম্যানিব্যগে নিতে ভুলে গেছেন হয়ত। সমস্যা নাই। আমার একবার এমন হয়েছে। আমার বাসের টাকা আরেকজন দিয়েছিল। আমি আজ আপনারটা দিলাম। আরেকদিন আপনি কার দিবেন। হয়ে গেল।’

কণ্টেকটার ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়ে গেল। বয়স্ক লোকটা উঠে মুসার পাশে এসে বসে বলল, ‘আমি বনানী যাব। আপনি? ‘

মুসা বলল, ‘আমিও বানানী যাব। একজনের সাথে দেখা করতে হবে।’

বয়স্ক লোকটা বলল, ‘আজকাল কেউ কার বিপদে এগিয়ে আসে না।’

মুসা বলল, ‘আমি এভাবে দেখি না। আমার মনে হয়, এগিয়ে আসার মানুষই বেশি।’

বয়স্ক মানুষটা বলল, ‘আমার বয়স হয়েছে। অভিজ্ঞতাও বেশি। আমি অনেক বেশি দেখেছি, আর অনেক বেশি দেখতেও পাই।’

মুসা বলল, জীবন হচ্ছে তাই, ‘যেভাবে আমরা দেখি, যেভাবে আমরা ভাবি, বুঝি। জীবন এর বাইরে না। দেখবার উপরই সবকিছু নির্ভর করে।’

বয়স্ক লোকটা অবাক গলায় বলল, ‘বাবা তোমার কথা আমাকে অভিভুত করল। কিছু মনে কর না, আমি তোমাকে তুমি বললাম।’

মুসা হেসে বলল, ‘আমি আপনার ছেলের বয়সী।’

বয়স্ক লোকটা বলল, ‘তোমার কথা ভালো লেগেছে। তা তুমি কোথায় থাক।’

মুসা বলল, ‘উত্তরখানে, উত্তরার পিছন দিকটায়।’

বয়স্ক লোকটা বলল, ‘হ্যা আমি চিনি। আরে আমরা অনেকখন ধরেই কথা বলছি। তা তোমার নাম কি?’

‘আমার নাম মুসা।’

‘আরে আমার নামও মুসা। মুসা বিন শমসের।’

‘নামটা খুব চেনা চেনা লাগছে।’

‘আরে হ্যা চেনা চেনা লাগবে না। এই নামে যে বাংলাদেশের সেরা ধনী একজন আছে। ভালোই লাগে নিজের নামের জন্য।’

মুসা হাসল। মুসা বিন শমসের। হ্যা মনে পড়েছে। তার নামেও নাম।

এর মধ্যে বনানী চলে এসেছে গাড়ি। বৃষ্টি থেমে গেছে। দুইজনই বাস থেকে নামবে। মুসা আগে নামল। আর মুসা বিন শমসের পরে। মুসা জানল না কি ঘটে গেল। সে উল্টো দিকে তাকাচ্ছে রাস্তা পার হতে হবে। মুসা বিন শমসের বাস থেকে নামার সময় কণ্টেকটারের হাতে চার ভাজ করা এক হাজার টাকার নোট দ্রুত গুজে দিয়ে নীচু গলায় বললেন, ফাজিল, বিপদে পরা বয়স্ক মানুষের সাথে এমন আচরণ করে? ৫ টাকার বেশি ভাড়া না দিয়া বনানী নেমে দেখতাম তুই কি করিস। আছার দিয়া তরে……।’ এই টুকু বলে তিনি নামলেন। নেমেই তিনি কণ্টেকটারের দিকে তাকালেন। কন্টেকটার হ্যা করে তাকিয়ে আছে হাতের নোটটার দিকে। কণ্টেক্টারের বিশ্বাসই হচ্ছে না কেউ তাকে এক হাজার টাকার নোট বকশিশ হিসাবে দিতে পারে, তাও তার খারাপ ব্যবহারের কারনে! তার সারা জীবনে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটতে দেখেনি।

মুসা বিন শমসের ডাকল মুসাকে। চল আগে রাস্তা পার হই। বলে দুইজনে রাস্তা পার হল। তারপর তিনি বললেন,’ তুমি আমার থেকে ১০টাকা পাও। সেটা এবার দিবার সুযোগ হয়েছে। চল আমি যে অফিসে কাজ করি। খুবই সাধারণ চাকরি। চল, এক কাপ চা ত খাওয়াতে পারব তোমাকে।’

মুসা বলল, না না এটা আর দিতে হবে না। আপনি বিপদে পরেছেন। এটা তো যে কার দায়িত্বের মধ্যেও পরে। আমি কাছে ছিলাম। আমি আসি। দেখা হবে আবার।’

আরে না না বলছ কেন? তুমি তো দিয়েছ। আমি ঋণে থাকবই বা কেন? তোমার তাড়া নেই তো? আরে আমার লাগবে ১০ মিনিট। প্লিজ।’

বয়স্ক মানুষ প্লিজ বলছে মুসা বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আমার তাড়া নেই। একজনের সাথে কেবল দেখা করা।’


September 30, 2019 0 comment
2 FacebookTwitterPinterestEmail
রূপকথা

রাজার রাজত্বে

by Admin September 28, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাজা চমৎকার ভাবে দেশ চালাচ্ছিলেন। দেশেও কোন অভাব ছিল না। রাজার সব মনোযোগ ছিল দেশ আর প্রজা নিয়ে। বড় রাজা মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিলেন,’ যখন যে কাজ করবে,তা মন আর মনোযোগ দিয়ে করবে। সেই বিষয়ে সজাগ আর সাবধানী থাকবে। যা করবে তা ভালোবাসবে। আর রাজার রাজত্বে প্রজাদের যেন কষ্ট না হয়।’ রাজা বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে সুখেই চলছিল। গতবছর খরা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রাজা প্রজাদের বিষয়ে সব সময় সাজাগ। প্রজাদের সব খবর নিয়ে সাবধানী ছিলেন বাবার কথা মত। আগেই উন্নত মানের সেচ ব্যবস্থা আর খাদ্য মুজদ থাকায় কিছুই ক্ষতি হয়নি খরায়।

সেই রাজা একদিন শিকারে গিয়ে বিপদে পড়লেন। সকালে শিকারে যেতেই তিনি এক বাঘের পাল্লায় পড়লেন। ছোট বেলা থেকে শরীর চর্চার জন্য রাজার শরীরে শক্তি ছিল অসীম আর রাজা ছিল অস্ত্রচালনায় নিপুন। ফলে বাঘটা ঝাঁপিয়ে পরতেই তার অস্ত্রের এক আঘাতে বাঘটাকে কেটে ফেলল। আর তখনই এক ডাইনী দৌড়ে এসে আহাজারি করতে লাগল, সেই বাঘটার তার বলে। ডাইনী ভয়ানক রুপ ধারণ করল। বিকট চেহারার ডাইনি রাজাকে ধরতে এগিয়ে আসতে লাগল। রাজা বুঝল এর সাথে পেরে উঠা মুসকিল হবে। রাজা পিছনে থাকা বিশাল গাছটার পিছন দিকটায় ছুটে গেল। ডাইনি যেন তাকে ধরেই ফেলবে এমনটা মনে হতে লাগল। ডাইনির চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। রাজা আরো দ্রুত গাছটার উপরে উঠা যায় কিনা দেখতে লাগল। রাজা লাফিয়ে উপরে দিকে উঠার চেষ্টা করতেই গাছটার ভিতরে চলে গেল। যেন গাছটা তার ভিতরে জায়গা করে দিল।

রাজা এমনটি দেখেনি, শুনেনি কখনো। সে দেখল বিশাল গাছের ভিতরে অনেক জায়গা আর আলোতে ঝলমলে, রোদ এসে পরেছে উপরের মোটা মোটা শিকড়ের নীচ দিয়ে। এত বেশি ফাঁকা জায়গা যে তার ঘোড়াটাও এখানে নিরাপদে থাকতে পারত। ঘোড়াটার জন্য মায়া হচ্ছে, ঘোড়াটার ভাগ্য কি ঘটেছে কে জানে। কিন্তু গাছ এতটা বিশাল হলেও এত জায়গা এলো কিভাবে এর ভিতরে!

গাছটার যেন সরু পথ বা দরজা খুলে গিয়েছিল বা কিছু একটা হয়েছিল। ব্যাপারটা এত দ্রুত হয়ে গেল যে রাজা বুঝতেই পারেনি কিভাবে গাছের ভিতরে চলে এলো। রাজা অস্থির হয়ে চারদিক দেখতে লাগল, চারদিক গাছের উপরের অংশের মতন ,মনে হচ্ছে অনেকগুলো গাছ তাকে ঘিরে রেখেছে। ডাইনির জন্য কতখন এখানে থাকবে বুঝতে পারছে না বা এখান থেকে বের হবে কিভাবে তাও বুঝতে পারছে না।

চারদিক তাকিয়ে থাকতে থাকতে রাজার ঘুম পেল। আর সে ঘুমিয়ে গেল। যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন দেখল তার চার জন সৈন্যরা তাকে ঘিরে আছে। আর সে সেই বিশাল গাছের বাইরে মাটিতে শুয়ে আছে। রাজা লাফিয়ে উঠে পরল। একজন সৈনিক এসে বলল, আপনার ঘোড়াটা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। এরপর সে থেমে গেল। রাজার মনে পরল তিনি শিকারে এসেছিলেন। সাথে অল্প কিছু সৈনিক।

রাজা বলল, আমাকে কি এখানেই ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছিলে?

সৈনিকরা এক যোগে বলল, হ্যা।

রাজা গাছটার দিকে তাকাল। আর তখনই বহু দূরে ডাইনির ভয়ংকর ডাকি ডাকি শুনতে পেল। সৈনিকরা সেই চিৎকারে নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাহি করতে লাগল।

রাজা প্রজাদের কথা ভাবলেন। তার ফিরে যাওয়া উচিত। আবার ভাবললেন এই ডাইনীটা তার প্রজাদের হত্যা করতেই থাকবে। কে জানে সে কতজনকে হত্যা করেছে আমার রাজত্বে। বাঘটা তার সঙ্গি ছিল। ওটা থাকাতে হয়ত তার এই হত্যাগুলো আরো সহজ ছিল। রাজা অনেক কিছু ভাবলেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন ফিরে যাবার।

রাজদরবারে তিনি ফিরে গেলেন। জঙ্গলটাকে ভালো করে চিনে এমন মানুষদের খবর দিলেন রাজদরবারে আসার জন্য। বৃদ্ধ অবসরে থাকা যোগ্য সৈনিকদেরও ডাকলেন। ডাকলেন আরো অনেককে। যেন যুদ্ধ শুরু হবে এমন একটা অবস্থা হল রাজদরবারের। ‘ শক্রকে ছোট করে দেখতে নেই’, রাজার এই বক্তব্য দিয়ে শুরু হল বৈঠক। এভাবে রাজদরবারে সাত দিন সাত রাত ডাইনীটাকে কিভাবে ধরা যায় বা মারা যায় এ নিয়ে আলোচনা করলেন। যুদ্ধ যূদ্ধ ভাব চলে এলো সবার ভিতর। রাজা কিন্তু গাছটার বিষয় এড়িয়ে গেলেন।কারো সাথে এই নিয়ে আলাপ করলেন না। অতি উৎসাহ বিপদের কারন হয়। গাছের বিষয়টা জানাজানি হলে দেখা যাবে সেই পুরানো বিশাল গাছটার ভিতরে ঢুকতে চেয়ে গাছটাকেই মানুষ কেটে ফেলছে বা পূজা করা শুরু করে দিয়েছে। এ নিয়ে আরেকদিন যাওয়া যাবে বিশাল গাছের কাছে। এই রহস্যের কোন কূল কিনারা না করতে পারলেও রাজার এ নিয়ে দুঃখ থাকবে না। বড় বিপদে গাছটাকে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। আর এ জগতে কত জাহার রহস্যের বিষয় ঘটে যাচ্ছে জানা আর অজানায়, দেখা আর না দেখায়।

কয়েক সপ্তাহ পরেই শুরু হল ডাইনী মারার অভিযান। যেন যুদ্ধ সাজে সেজেছে সবাই। জঙ্গলে চলে এলো সবাই। কি নেই সাথে কামান, গোলা বারুদ, সৈনিক, অভিজ্ঞ মানুষেরা। জঙ্গলের একদিক থেকে অভিযান শুরু হল। দুই দিন পরেই ডাইনীর মুখমুখি হল সবাই। ডাইনীটা যেন খুব কাছেই ছিল। যেন সেও তাদের গতিবিধি দেখে দেখে এগিয়ে এসেছিল। ডাইনীটা খুব কাছে এসেই ভয়ানক মূর্তি ধরন করে চিৎকার জুড়ে দিল। ডাইনীর বীভৎস চিৎকারে ভড়কে গেল সবাই। প্রচন্ড ভয়ে ভুলে গেল কামান দাগাতে বা বুন্দুক থেকে গুলি ছুটতে। যেন প্রত্যেকেই একা হয়ে গেছে, এমন মানুষিক অবস্থা দাঁড়াল সেই সেনা অভিযানের প্রত্যেকের। ঠিক তখনই রাজা ঘোড়ায় ছুটে এসে ডাইনীর দিক কামান তাক করে গোলা দাগাল। আচমকা সব থেমে গেল। থেমে গেল সব চিৎকার। সবাই তাকিয়ে দেখল ডাইনীর মাথাটা বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে গেল।

গাছের পাতাগুলর শব্দ ছাড়া কোথাও কোন কথা নেই। জঙ্গলে এমনকি পাখির ডাকটাও নেই। স্তব্দ হয়ে গেছে চারদিক। যেন কিছুই হয়নি। সবাই কুকুড়ে আছে যেমনটা ডাইনীর বীভৎস ডাকে হয়েছিল।

রাজা চিৎকার করে বলল, ‘এই বিজয় আমাদের সবার’।


September 28, 2019 2 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
কিশোর গল্পজানা অজানা

হালাকু খান আর আরব্য রজনীর বাগদাদ [পর্ব – ১]

by Admin September 24, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

গল্পটা শুরুর আগে কিছু কথা বলতে চাই আমার কিশোর বন্ধুদের। আমাদের  শিক্ষার্থী বন্ধুদের ভিতরে প্রায়ই কিছু প্রশ্ন জাগে যে, জ্ঞান বিজ্ঞানের বড় বড় সব অবদানই তো পশ্চিমাদের।  আমাদের এশিয়ানদের ভুমিকা কি কিছু আছে? আমরা তো কেবল তাদের অবিস্কার  ভোগই করে যাচ্ছি, এখানে আমাদের অবদান কি? এই সভ্যতা এতে আমাদের এশিয়ানদের কি  কিছু নেই! সবই দিক থেকে ফাষ্ট তো এমেরিকা, ইউরোপ। সব আবিষ্কারই তারাই করে যাচ্ছে। বিষয়টা আসলে  তেমন না। এর যথেষ্ট উত্তর আছে  আমাদের কাছে। ইতিহাস এর লাখো উত্তর রেখে  দিয়েছে। তোমাদের কেবল জেনে নিতে হবে ইতিহাস থেকে, আমরা কারা। ইতিহাস পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের মানুষিক ভাবে দুর্বল যেমন ভাব না। তেমনি নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। আর আজ এই উত্তরের একটি অংশ আমরা খুঁজে পাব হালাকু খান দ্বারা বাগদাদ পতনের ঘটনা জানার মধ্য দিয়ে।

আজ এমেরিকার বড় বড় শহর বা ইউরোপের দেশগুলোর বড় বড় শহর যেমন,  তেমনি ছিল একদিন ইরাকের বাগদাদ, যুগের পর যুগ। ৭৬২ সালে খলিফা মনসুর  আরব্য রজনীর এই নগরীটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযোয়ী বাগদাদ ছিল সম্পূর্ণ বৃত্তকার এবং চতুর্দিকে পরিখা বেষ্টিত। পরিখা মানে বুঝ তো বন্ধুরা? পরিখা মানে শক্রদের হামলা থেকে নিজ ভুমিকে বাঁচাতে সামরিক ঘাঁটির চারদিকে চওড়া আর গভীর ভাবে গর্ত তৈরি করে রাখা।

যাই হোক বন্ধুরা, ৭৬২ থেকে ১২৫৮ সাল, এই সময়টায় বাগদাদ ছিল ইসলামী স্বর্ণ যুগের প্রানকেন্দ্র, পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগর, মুসলিম বিশ্বের রাজধানী। জ্ঞান বিজ্ঞানে, শিল্প সাহিত্য, সম্পদ, প্রাচুর্যে সাড়া দুনিয়ার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নগর। জ্ঞান, বিজ্ঞানে উজ্জ্বল এক তারায় পরিনত  হয়েছিল এই নগর। দুনিয়ার সব জ্ঞানীরা ছুটে এসেছিল এখানে। আর জ্ঞানীরা ছুটে আসবেনা বা কেন। সারা দুনিয়া থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের বই এনে জমা করা হয় এখানে। আবার সেই সব বই অনুবাদ হত এখানে। অনেক অনেক দুর্লভ বই এর সংগ্রহ ছিল সেই বাগদাদে। দারুল হিকমা লাইব্ররী সহ অগনিত ছোট বড় লাইব্ররী হয়ে উঠেছিল জ্ঞানের ভিন্ন এক সমুদ্রে। দুনিয়ার বিভিন্ন ভাষার বই অনুবাদের জন্য বিখ্যাত কেবল না, আমরা বলতে পারি যে, দুনিয়া আজকের জায়গায় পৌঁছাতে পারত না এই বইগুলোর অনুবাদ না হলে,জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা না হলে। আমাদের আজকের সভ্যতা কতটা ঋণী যখন ইতিহাস পড়বে তখন আরো আরো জানবে। জেনে কেবল অবাক আর বিস্মিত হতে হবে।

 জৌলুসে ডুবে থাকা স্বপ্নের বাগদাদ নির্মাণ হওয়ার পর কেটে গেছে ৫০০ বছর। এর জৌলুস কেবলই বেড়েছে। এর উচ্চতা আর গৌরব সমুজ্জ্বল ছিল হালাকু খানের আক্রমণে ধ্বংস হবার পূর্ব পর্যন্ত। পৃথিবী থমকে গিয়েছিল মধ্যযুগে হালাকু খানের  এক অভিযানে। সাত দিনে যোল লক্ষ মানুষ হত্যা করে আর লাইব্ররীগুলোর সমস্ত বই পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল মোঙ্গলা।  

হালাকু খানের পরিচয় (১২২৮- ১২৬৫), তিনি দুর্ধর্ষ বিজেতা চেঙ্গিস খানের নাতি। চেঙ্গিস খানের চার পুত্রের এক পুত্র তোলুইয়ের সন্তান। মা সোরগাগতিক ছিলেন একজন প্রভাবশালী কেরাইত শাহাজাদি। তিনি ছিলেন নেস্টরিয়ান খ্রিষ্টান। আর হালাকু খানের স্ত্রী দকুজ খাতুন এবং তার ঘনিষ্ট বন্ধুও সেনাপতিও খ্রিষ্টান ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন বলে জানা যায়। তার ভাই ছিলেন আরিক খান, মংকে খান ও কুবলাই খান। হালাকু খানের আপন ভাই মংকে গ্রেট খান থাকা অবস্থায় তাকে মোঙ্গল সম্রজ্যের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সেই রাজ্যের পাশেই ছিল আব্বাসীয় খিলাফতের সীমানা। ১২৫৫ সালে  ভাই মংকে গ্রেট হালাকু খানকে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম অঞ্চল জয়ের জন্য  প্রেরণ করেন। তবে ইতিহাসের এই বেদনাদায়ক ঘটনা বলে দেয়, এই শেষ সময়টা বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের প্রাণ কেন্দ্র জৌলুসে ডুবে থাকা বাগদাদ তখন ভোগ বিলাস আর অন্তরকোন্দলে ক্ষতবিক্ষত ছিল। ধর্মীয় বিষয়তেও নানান ভ্রান্ত ধ্যান ধারণার এত জোরাল হয়ে উঠে যে চরম বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে নানান মতভেদ সমাজকে প্রবল অস্থিরতা নিয়ে গিয়েছিল। আর সেই সময় আরব রাজ্যো পরিনত হয়ে ছিল যেন ছোট ছোট রাজ্যে। আর ছিল  অন্তকোন্দল, চরম ভোগবিলাসে মত্ত। সকল ধরনের বাড়াবাড়ির যে অশুভ পরিনতি আছে তা আমরা বাগদাদের পতনের ভিতর দিয়ে জানতে পারি। এই সময়ে বাগদাদের খলিফা ছিলেন নখ বিহীন সিংহ খলিফা আল  মুস্তাসিম বিল্লাহ।    

মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপে নিষ্ঠুর মোঙ্গলরা তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। হালাকু খান সামরিক অভিযানেরমূল কারন ছিল, পারস্যের ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে  উঠা রাজনৈতিক আততায়ীয়র দল গুপ্তঘাতক সম্প্রদাইয়কে দমন। এরা এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল আর গুপ্ত হত্যা এতটাই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল যে মোঙ্গলরাও এদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থের অশংকা করছিল এবং আব্বাসীদের রাজধানী বাগদাদ দখলের আগ্রহ।  বাগদাদের জৌলুস, সম্পদের প্রতি বহুকাল থেকে মোঙ্গলদের লোভ ছিল। তাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তারা। অন্তঃকলহে দুর্বল ছিল বাগদাদ, এই তথ্যগুলোই বাগদাদ আক্রমণের জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠে মোঙ্গলদের কাছে। এদিকে গুপ্তঘাতক  সম্প্রদাইয়ের চল্লিশটির বেশি খুবই শক্তিশালী দুর্গ আক্রমণে কোন এক সময় বাগদাদের সাহায্য আশা করলে বাগদাদের খলিফা হালাকু খানকে সাহায্য প্রদানে বিরত থাকে। এতে প্রবল আক্রেশের জন্ম নেয় বাগদাদের প্রতি।   

জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, বিত্ত বৈভবে অন্যন্য বাগদাদ কেবল দুর্বল হয়ে উঠে আব্বাসীদের নিজেদের ভিতরের অন্তঃকোন্দলে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা এত দুর্বল হয়ে উঠে যে সৈনিকেরা বেতন ঠিক মত পেত না। ফলে সমস্যায় জর্জরিত সেনাবাহিনী। আর ধর্মীয় বিষয় নিয়ে মতভেদ আর পাশাপাশি শিয়া সুন্নী বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল।    খলিফার শিয়া উজির বিশ্বাসঘতকাতা করে মঙ্গলদের বাগদাদ আক্রমণের আহ্বান করে নিজ দেশের সকল তথ্য প্রদান করে যান। বিলাসী জীবনে ডুবে থাকা দুর্বল খলিফা বুঝতেই পারেননি কি ঘটতে যাচ্ছে।

হালাকু খান খলিফাকে কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে মঙ্গলদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা চিঠি পাঠিয়ে আত্ম সমর্পণ করতে বললে খলিফা তা প্রত্যাখান করেন। আর খলিফার শিয়া উজির খলিফাকে বুঝাতে সক্ষম হয়, অর্ধেক সৈন্যকে মঙ্গলদের প্রতিহত করতে। বিষয়টি আমাদের সিরাজদৌল্লাহ প্রধান সেনাপতি মীরজাফরকে বিশ্বাস করার মতনই ঘটনা ঘটে। বন্ধুরা জানত,১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে  যখন বাংলার ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছিল, তখন  বাংলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের আদেশে পলাশীর যুদ্ধে ৫০ হাজার সৈনিক নিস্ক্রিয় ছিল। তারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল, কি নির্মম ভাবে ক্ষুদ্র একটি দলের কাছে বাংলার শেষ নবাব  সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজয় বরন করেন। আসলে সকল নিষ্ঠুর পরিনতির পিছনে নিজেদের মানুষই কাজ করে। পিছন থেকে তারাই ছুরি মারে। তাই বন্ধু নির্বাচন বা যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু, সেই মানুষকে নির্বাচিত করতে হয় অনেক বুদ্ধি, বিবেচনার মাধ্যমে।  মনে রাখতে হবে পরিবার হল ক্ষুদ্র রাষ্ট। আর পরিবার মানে বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধব মিলে। এরা প্রত্যেকেই পরিবারের অংশ। তাই বিনয়, শ্রদ্ধা, মমতা, ভালোবাসা, আদর, সহানূভুতি দিয়েই প্রত্যেককে দেখতে হবে। যাতে অন্তকোন্দলের কোন সুযোগ না থাকে।  

আচ্ছা আমরা ফিরে যাই ইতিহাসে আবার। ১২৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে হালাকু খান পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে বাগদাদ  আক্রমণ করে বাগদাদের নগর ফটক অবরোধ করে। তার বাহিনীর তাতার, চীনা এবং মধ্য এশিয়ার সৈন্যদের দিয়ে অগ্নি গোলক নিক্ষেপ করে দুর্গ আর উঁচু প্রাচীর ধংস করে ফেলে। খলিফার ক্ষুদ্র ও দুর্বল সেনাবাহিনী হালাকু খানের যোগ্য বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় অতি সহজেই এবং খলিফা তার সমস্ত ধন সম্পদ দিয়ে পরিবারবর্গ , আত্মীয়স্বজন এবং অনুচরবর্গ সহ আত্মসম্পরণ করতে বাধ্য হয়। তবে এতে রেহাই পায়নি কেউ। প্রত্যেককে হত্যা করা হয় এবং খলিফাকে কম্বলে পেঁচিয়ে মোঙ্গলিয়ান তেজি ঘোড়ার পা আঘাতে হত্যা করা হয়।   

হালাকু খানের মোঙ্গল বাহিনী হত্যা করতে থাকে সাত দিনে অথবা তের দিনে বিশ লাখ নগরবাসীর   মধ্যে ষোল লাখের মতন নগরবাসীকে। এদের হাজার হাজার নাগরিকদের হত্যা  করে তাদের মাথার খুলি দিয়ে  পিরামিড বানান হয় মঙ্গোলরা।  বিশ লক্ষ  নগরবাসীর মধ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিল হালাকু খানের স্ত্রী ডোজুজ খাতুনের কারনে। আর মোঙ্গলদের গুপ্তচর হিসাবে থাকা দুই জন শিয়া মন্ত্রীদের কারনে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেঁচে যায়। ইতিহাস বলে শিল্পী, চিত্রকর, শিয়া সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান সম্প্রদাইয়ের মানুষ জন এই আক্রমন থেকে রেহাই পেয়েছিল, আর মরতে হয়েছিল কেবল মূলত সুন্নী মুসলমানদের।

 মোঙ্গলরা শুরুতেই নগরে প্রবেশ করে নগরবাসিকে অস্ত্র সমর্পণের আদেশ দেন। আর নগরবাসীর অস্ত্র সমর্পণের পরেই শুরু হয় হত্যা। নারী, পুরুষ, শিশু,বৃদ্ধ কেউ পালিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি। হত্যাকাণ্ড এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তিন দিন ধরে নগরীর পথে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাইগ্রীস নদীর পানি মাইলের পর মাইল রক্তে লাল হয়ে ছিল। কেবল হত্যাই করেনি, নগরীতে থাকা  প্রতিটা দালান, হাসপাতাল, প্রতিটা  লাইব্রেরি, মসজিদ সব পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল। পুড়ে ফেলা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন সব ভবন। পুড়ে দেওয়া হয়েছিল শতশত বছরের গড়া উঠা শিল্প সাহিত্য, মুসলিম জ্ঞান- বিজ্ঞান , শিক্ষা সংস্কৃতির উজ্জলতম  যা কিছু নিদর্শন ছিল, সব কিছু। ফলে চিকিৎসা সহ জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান গবেষনামূলক অমূল্য সব বই আর সব লাইব্রেরিতে থাকা ৫০০ বছরের সংগ্রহে থাকা হাজার হাজার বছরের সব বই পুড়ে ফেলা হয়। ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যকলায় গড়ে উঠা ৫০০ বছরের বাগদাদকে পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে এমন ভুতরে নগরীতে পরিনত হয়ে এটি এমন ভাবে ধংস করা হল যে এর কোন একটি স্মৃতি চিহ্ন রাখা হয়নি। আজ অব্দি এটি আর দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষিত বাগদাদবাসী আজও অশিক্ষা আর কুশিক্ষায় ডুবে আছে।

বাগদাদ শংস নিয়ে ঐতিহাসিক ব্রাউন বলেন,’ সম্ভবত কখনোই এত বড় ও সমৃদ্ধশালী একটা সভ্যতা এত দ্রুত অগ্নিশিখায় বিধ্বস্ত ও রক্তধারায় নিশ্চিহ্ন হয়নি।‘

মৃত্যুর আগে হালাকু খান তার সময়কালে এত মৃত্যুর জন্য অনুতপ্ত হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন সম্রাট অশোকের মত।  ১২৬৫ সালে জালিম অহংকারী হালাকু খান মৃত্যুবরণ করেন। এর আগেই মোঙ্গল বাহিনীর পতন ঘটে মিশরের মামলুক সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের এলিট সেনাবাহিনীর কাছে। এই পতনের মধ্য দিয়ে মোঙ্গলরা দুর্বল হয়ে যায়।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে মোঙ্গলরা ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। ফিলিস্থিনির আইনজালুতের ঐতিহাসিক প্রান্তরে যদি সেদিন হালাকু খান হেরে না যেত তবে উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপ পরিনত হত বাগদাদ,সমরখন্দ,বেইজিং এর মত ধ্বংসস্তূপে। হালাকু খানের মৃত্যুর কারনে পতন থেকে বেঁচে গিয়েছিল উত্তর আফ্রিকা আর ইউরোপ। এক বাগদাদ ধংস করে গোটা মানব সভ্যতার যে ক্ষতি মোঙ্গলরা করে গেছে মধ্যযুগে সেই ক্ষত আর হাজার বছর বয়ে নিতে হবে আমাদের প্রত্যেককে। আমরা ধারণাই করতে পারি না বাগদাদ ধংস না হলে আজকের সভত্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত।

ঐতিহাসিক ইবনুল আমীর বলেন,’পৃথিবী এবং বিশেষত মুসলমানদের ওপর যে সব বিরাট বিপর্যয় ও ভয়াবাহ ধ্বংসলীলা সংগঠিত হয়েছিল তার মধ্যে তাতার জাতির আক্রমণই অন্যতম।‘

মূলত বাগদাদ আক্রমণের পরে মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান ক্রমাগত হ্রাস পায়। পতন হয় মধ্য এশিয়ার। বন্ধুরা আমরা তাই এই কারনে দেখতে পাই না জ্ঞানে বিজ্ঞানে এশিয়ানদের অনেক বড় সব অবদান।

এসো এবার পুরো লেখাটা নিয়ে পর্যালোচনা করি। আগে কিছু কথা তোমাদের জেনে রাখা দরকার যে, আমরা সময়ে আমরা যখন ইতিহাস পড়তাম তখন স্কুলে একটা ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকত আর কলেজে উঠে পেতাম পুরো ইতিহাস। শত শত বছর কিন্তু এভাবেই চলেছে। কিন্তু তোমাদের এই সময়টা ভিন্ন। অন লাইনের কল্যাণে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ইতিহাসের একই বিষয় নানান ভাবে জানার সুযোগ হচ্ছে আজ। ফলে কখনো কখনো নিজের ভিতরেও বিতর্ক বাড়ছে।

এবার আমি মূল পর্যালোচনায় আসি। আমি উপরে উল্লেখ করেছি বিশ লক্ষ  নগরবাসীর মধ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিল হালাকু খানের স্ত্রী ডোজুজ খাতুনের কারনে। হালাকু খানের স্ত্রী ডোজুজ খাতুন যদি প্রক্ষাপটে না থাকত তবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভাগ্য তাই হত যা সুন্নী মুসলমানদের ক্ষেত্রে হয়েছে। আর শিয়া মন্ত্রীদের নিজ রাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে মোঙ্গলদের সাথে যোগাযোগ যদি না থাকত তবে তাদের ভাগ্যেও তাই হত। বাগদাদ আক্রমণের আগে পারস্য আক্রমণে মোঙ্গলরা পারস্যের শিয়াদের হত্যা করে এসেছিল। মোঙ্গলরা কাউকে রেহাই দেয় না, এটি তাদের চরিত্র। তাহলে পুরো ঘটনায় মূল ব্যর্থতা কার? ব্যর্থতা মুলত খলিফার। অথচ আমরা সেই বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশীদ,আল মনসুর, আল মামুন রাজ্যের কল্যাণে ঘুরে বেড়াত, কিসে রাজ্যের মঙ্গল হয় এই নিয়ে তারা ছিলেন বলে বাগদাদ আরব্য রজনীর দেশ হতে পেরেছিল। বাগদাদ তৈরি হয়েছিল বহু শ্রমে আর ঘামে। অথচ আমরা জানলাম সেই আব্বাসীয় বংশের খলিফা হয়েও নখ বিহীন সিংহ খলিফা আল  মুস্তাসিম বিল্লাহ ছিল আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত। সে একজন খলিফা বা রাজা এ নিয়ে দায়িত্বশীল কোন আচরণ তার ছিল না। সৈনিকরা তার সময় বেতন ঠিক মত পেত না অথচ রাজকোষে অর্থের কোন ধরনের অভাব ছিল না। এই উঁচু একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দরকারি বা কি এমন অভেলা তাদের মধ্যে কাজ করছিল। খলিফার কোন গুপ্ত অনুচর বা নিজের গুপ্ত বাহিনী ছিল না। ছিল না বলে শিয়া মন্ত্রী যে তথ্য মোঙ্গলদের নিকট পাঠাচ্ছিল বা রাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতে ছিল তা তিনি জানাতে পারেননি। এমনকি মোঙ্গল্রা যখন অপমান জনক চিঠি পাঠায় তারপরেও সে বলতে গেলে অর্ধেক সৈন্য মোতয়ায়ন করে শিয়া মন্ত্রীর পরামর্শে। মোঙ্গলরা যখন পারাস্য আক্রমণে তার সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তারপর যখন মোঙ্গলরা বাগদাদের দিকে এগিয়ে আসছিল তখন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাহায্য চাওয়া উচিত ছিল। সামরিক বিষয়ে আরো শক্ত পদক্ষেপের দরকার ছিল। খলিফার তো স্পষ্ট করে জানার কথা মোঙ্গল কারা। হালাকু খানের দাদা চেঙ্গিস খানের হিংস্রতা না জানার কথা তো না। মোঙ্গলরা ছিল অপ্রতিরোধ্য আর বাগদাদের সেনাবাহিনী ভঙ্গুর অবস্থার বিবেচনায় খলিফাকে আর অনেক দায়িত্ববান হওয়া উচিত ছিল।

বন্ধুরা মনে রাখবে, অন্যকে দোষারোপ করে কোন সমস্যা থেকে বের হওয়া মানে নিজের বা নিজেদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়ার মানুষিকতা থাকে। তাতে সাময়িক লাভ হলেও অন্য সময় এর খেসারত দিতে হয়। বিষয়টা এমন যে, ‘সে খারাপ’ বলা মানে হচ্ছে আমি খুব ভালো। এটি খুব পুরানো একটা খেলা কিন্তু এই খেলার ভিতরে আগুন লুকিয়ে থাকে যা এক সময় নিজেকে পুড়িয়ে দেয়। যাই হোক, বন্ধুরা আমরা এই ইতিহাস থেকে কি শিখলাম, সেটি ভেবে বের করবে। তবে আমি আমারটা বলি, আমি শিখলাম, যাকে যখন যে দায়িত্ব দেওয়া হয় বা আমরা যারা যে দায়িত্ব নিব সেটি ফেলে অন্য কাজে মন দিব না। নিজ দায়িত্ব বা নিজের কাজ কখনো অন্যজনকে দিয়ে হয়না বা নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেই দায়িত্ব অন্যকে দিয়ে করাতে চাইলে এর ফলাফল সব সময় মন্দ। কারন এতে যেটি হয় যখন কোন সমস্যা এসে দাঁড়ায় তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে যায়। এতে নিজের আর চারপাশের অনেকের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতেও পারে। তাই আমরা যে দায়িত্ব নিব সেই দায়িত্ব বা কাজকেই ভালোবাসব। তবে তাতে আমরা প্রাণ খুজে পাব, মনযোগী হতে পারব। আর সেই কাজে মায়া আসবে, মায়া বাড়বে। মায়া ছাড়া কোন কাজ সফল হয়না। মায়াই নিজের ভিতর যন্ত্রশীলের মানুষিকতা তৈরি করে। আর যত্ন ছাড়া কোন জিনিস বা বিষয় টেকসই হয় না। জগতে যত্ন আর মায়াই যে কোন কাজকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে। এখানে একটি বড় বিষয় কিন্তু আমরা শিখে নিলাম বা জেনে নিলাম তা অন্তঃকোন্দলই হচ্ছে সব পারিবারিক সর্বনাশের মুল। তাই একে কখনো প্রশয় দেওয়া যাবে না। যে কম উপায় আমাদের ঝগড়া এড়াতে হবে। তবেই আমরা নিজেদের বেশি বেশি শ্রদ্ধা করতে পারব।

এই লিংকে থেকে সেই সময়ের বাগদাদ সমন্ধে আরো বেশি জানতে পারবে। এখানে বেশ চমৎকার কিছু তথ্য আছে। https://www.youtube.com/watch?v=ImqEg9zRyrQ

September 24, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

বনের আজব রাজা

by Admin September 24, 2019
written by Admin

মোঃ নোমান সরকার

এক বনে এক বাঘ ছিল। সে ছিল বনেরর রাজা। রাজা ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের। বলতে গেলে তার কোন রাগ ছিলনা। তাই বনের সব পশুরা তাকে একজন ভাল বনের রাজা হিসাবে জানত। কারনে অকারনে সবাই রাজার কাছে আসত, গল্প করে যেত। প

একদিন অন্য বন থেকে আরেকটি বাঘ এই বনে এল। এসে তো প্রচন্ড অবাক ! এই বনের কেউ তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে না! একদমই না ! অদ্ভুদ ব্যাপার তো! যেদিকে যায়, যে প্রানীর সাথে দেখা হয় যেন কেউ তাকে দেখেইনি ! এত বড় সাহস ! সে প্রচন্ড রেগে গেল। রেগে হুংকার দিল। সেই শব্দে সবাই চমকে গেল ! ভড়কে গেল! ছুটে পালাল। তাই দেখে বাঘটা মনে মনে হেসেই খুন।

অন্য বনের বাঘের চিৎকারে বনের রাজা তাকে দৌড়ে এসে দেখতে এল । দেখতে এসে মুখমুখি হতেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ! তারপর চারপাশে হেঁটে বেড়াল । তখন সেই অন্য বনের বাঘ বিরক্ত আর রাগী গলায় বলল,’তুমি এই বনের কে হে ? বিড়াল নাকি ?’

বনের রাজা তখন বাঘটার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল । তারপর হুংকার দিল । যেন মেঘ গর্জে উঠল । সেই শব্দে অন্য বনের বাঘটা ভয়ে , ‘বাবরে!’ বলে দৌড়ে ছুটে পালাল ।

রাজার চেনা হুংকারে সবাই ছুটে এল । এসে তারা সেই বাঘটাকে পালিয়ে যেতে দেখল। সবাই তখন এসে রাজার গায়ের সাথে গা ঘেষতে লাগল। আর আনন্দ করতে লাগল। করতেই লাগল !

(২০১১ সালের লেখা গল্পটা আমি বলেছিলাম তাসিনকে। সে আমার ছোট ভায়ের ছেল, যার বয়স তখন ছিল তিন। সে প্রাই এসে বলত , ‘চাচ্চু একতা গল্প বলতো?’ আমি হাসতে হাসতে বলি ,কি ধরনের গল্প বলব,কার গল্প বলব ?’ ও আগ্রহ নিয়ে লাফাতে লাফাতে বলেছিল , ‘বাঘের !’

September 24, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
Newer Posts
Older Posts

Categories

  • আমার ছোটবেলা
  • আমার ভাবনা
  • কিছু কথা
  • কিশোর গল্প
  • গল্প
  • ছড়া
  • জানা অজানা
  • ভূতের গল্প
  • রান্না ঘর
  • রূপকথা
  • শিশুতোষ গল্প
  • স্বাস্থ্য কথা
  • Facebook
  • Twitter

@2021 - All Right Reserved. Designed and Developed by PenciDesign


Back To Top
Samogro
  • মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ