মোঃ নোমান সরকার
কুমির আর কুমির ছানা নদীর তীরে সকালের রোদ পোহাচ্ছে। চারদিক শান্ত। কুমির ছানা বলল,‘বাবা একটা প্রশ্ন করি?’
কুমির চোখ বন্ধ করেই বলল,‘করো।‘
কুমির ছানা বলল,‘বাবা আমরা কিছুদিন আগে একটা হাতির বাবুকে খেতে ফেলেছিলাম। সে নদীর তীরে পানি খেতে এসেছিল। আমরা তাকে টেনে নামিয়ে ছিলাম পানিতে। অনেক হাতি ছুটে এসেছিল। কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে নদীর ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম।‘
কুমির বলল, ‘হুম।‘
‘বাবা হাতিরা আমাদের একা পেয়ে কি, এভাবে খেয়ে ফেলবে?’
কুমির বলল,’ওরা তৃণ ভুজি ,ওরা মাংস খায় না।‘
‘বাবা আমরা ওদের বাচ্চা খেয়ে ফেলছি। অরা প্রতিশোধ নিবে না।‘
‘ওরা প্রতিশোধ নিতে পারে না।‘
‘কেন?’
‘ওরা ভদ্র।‘
‘তাহলে বাবা আমরা?’
এবার কুমির চোখ খুললো। রাগে তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। কুমির রেগে বলল, ‘সব প্রশ্ন করতে নেই।‘
বাবা, মাষ্টার মশাই বলেছেন,যারা প্রশ্নের উত্তর দেয় না,’তারা আসলে উত্তর লুকাতে চায়। তারা মোটেও ভালো না। তবে কি বাবা আমরা ভালো না?’
কুমির গম্ভীর গলায় বলল,‘তুমি অনেক বেশি দুষ্ট হয়ে যাচ্ছ। শিয়াল মশাই কি এই শিক্ষা দিচ্ছে আজকাল।‘
‘বাবা, আমি কি অন্যায় কথা বলেছি।‘
‘হাজারটা অন্যায় বলেছ। চুপ থাকো। এইসব প্রশ্ন আমি পছন্দ করি না।‘
‘আচ্ছা বাবা, আমরা কেন পাখির মতন উড়তে পারি না?’
কুমির আবার চোখ বন্ধ করল। শান্ত গলায় বলল,’আমাদের পাখা নেই। তাই আমরা উড়তে পারি না।‘
কুমিরের ছানা বলল,’আমাদের পাখা থাকলে আমরা উড়তে পারতাম।‘
কুমির চোখ বন্ধ করেই মাথা দুদালো।
কুমির ছানা বলল, ‘আমরা উড়তে পারলে ডাঙ্গায় কেউ থাকতেই পারত না। তাই না বাবা?’
কুমির বলল,’কেন থাকতে পারত না কেন?’
কুমির ছানা বলল, ‘উড়তে পারলে তো আমরা সব প্রানীকে ধরে নিয়ে পানি ফেলতাম আর খেয়ে ফেলতাম। ডাঙ্গায় আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণী থাকত না।‘
কুমির আবার চোখ খুলল। তার চোখ লাল। কুমির বলল,‘তুমি অনেক কথা বলা শিখে গেছো। তোমার শিক্ষক তোমাকে এই সব কি শিখাচ্ছে? আমরা কেবল জুলুম করি! কেউ নদীর তীরে এলেই আমরা তাকে পানি পান করতে দেই না আর টেনে নিয়ে যাই পানির গভীরে। এই সব তুমি কি ভাবছ? কে কে তোমাকে এই সব ভাবাছে? শিয়াল মশাই? আর কে কে? আচ্ছা আজই তার সাথে কথা বলতে হবে। আর প্রশ্ন না এবার চলো পানিতে। পানিতে থাকলে তোমার কোন প্রশ্ন থাকবে না। ডাঙ্গায় এলেই যত সমস্যা।‘
কুমির আর কুমির ছানা পানিতে নেমে গেল।