মোঃ নোমান সরকার
নুরেনকে আমি ডেকেছি,
নুরেন বলে আসিছি ,
সে এখন বড্ড ব্যস্ত
যেন কাজ মস্ত।।
যা যা লাগবেঃ
১। ডিম ৬টা
২। পিঁয়াজ ১/২ কাপ (বাটা) ও ২ টেবিল চামচ পরিমান পিঁয়াজ কুঁচি
৩। আদা ১/২ টেবিল চামচ (বাটা)
৪। রসুন ১/২ টেবিল চামচ (বাটা)
৫। দারচিনি ২ টুকরা
৬। এলাচ ৪টা
৭। তেজপাতা ২টা
৮। দুধ ১ কাপ (তরল)
৯। চিনি ১ টেবিল চামচ
১০। লেবুর রস ১/২ টেবিল চামচ
১১। লবন পরিমান মত
১২। তেল ১/৪ কাপ
১৩। ঘি ২ টেবিল চামচ
১৪। কিশমিশ ১৩/১৪
১৫। কাঁচা মরিচ ৮ – ১০টা
১৬। গোল মরিচের গুড়া ১ চা চামচ
যেভাবে রান্না করবেনঃ
১ ডিমগুল সিদ্ধ করে ছিলে নিয়ে কেচিয়ে রাখতে হবে।
২। পাতিলের তেল দিয়ে কুঁচি করা পিঁয়াজগুলো বেরেস্তা করে উঠিয়ে রাখতে হবে।
৩। এই তেলের ভিতর ১ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে কিশমিশগুলো লাল করে ভেঁজে উঠিয়ে রাখতে হবে।
৪। এখন বাকী রেলের মধ্যে এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা, দিতে হবে। তারপর আদা বাটা, রসুন বাটা, পিঁয়াজ বাটা দিয়ে কষাতে হবে যতক্ষণ না তেল উপরে উঠে আসে।
৫। এখন এর মধ্যে গোল মরিচের গুড়া ও লেবুর রস দিতে হবে।
৬। ভালোমতো কষানো হলে এর মধ্যে ডিমগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে হবে।
৭। দুধের মধ্যে চিনি গুলিয়ে এর মধ্যে দিতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য পানি দেওয়া যেতে পারে।
৮। সবশেষে কাঁচা মরিচ ও বাকি ঘি টুকু দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে পাঁচ মিনিট দমে রেখে দিতে হবে।
৯। তেল উপরে উঠে এলে এবং ডিমগুল মাখামাখা হয়ে গেলেই হয়ে যাবে ডিমের কোরমা।
১০। ডিসে ঢালার পর এর উপরে কিশমিশ ও বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
(খুরশিদা আলম)
Md.Nomaan Sarker
(Translated by Rabab Alam)
Everyone calls the cat Mew. She also herself really liked the name. If anyone calls the name Mew express appreciation craning her neck.
One day like every day she came to the balcony and saw that the mischievous boy of the adjacent house is walking and laughing on the wall the surrounds the house. He gets up and runs a bit and jumps outside. Every day he jumps down from really high. He does the work of jumping outside of the wall from great height every noon with great excitement. He jumps and falls on sand.
Mew say a big truck had dumped sands beside the wall of the adjacent house few days ago. The mischievous boy jumps down on that sand. And laughs. Then again comes inside the house. Then again runs on the wall. Again jumps. Like this he does it several time every day. Why he does it Mew can’t understand. Only at noon Mew stares down from the balcony of forth floor. Seeing the boy’s smile only wonders, the boy has fun doing it. It looks good. Probably it’s a really fun game. Watching the game, she also had the urge to play the game herself.
Few days later. Mew came to the balcony and like every day she saw that the boy was about to jump and fall, just at that moment an old woman saying at the adjacent house saw it. The woman screamed as she watched the boy jump which caused few people to come inside the house. Just before jumping the boy heard the scream and looked that way. As if the boy got nervous for a moment. The smile on his face disappeared, he ran passed from his usual place to jump and jumped further from there.
Mew then looked towards the old woman. She saw that the woman had fell on the ground after letting out a piercing scream. And she saw that the boy didn’t fell on the ground like usual but on the ground. The boy didn’t get up laughing like before. It’s clear something is wrong.
Mew reached her place of getting down through the space of balcony. Then came down running. Then reached second floor. Now she has come down taking stairs. She came by the stairs with fear. If someone sees her, they’ll chase her. Why people chase her when they see her, she still can’t understand why. She observed her and quickly came down and stayed away from the places where people may stay or roam. Her luck was good that no one was around.
She knew a shortcut way to go to the adjacent house, Mew went taking that way. She saw from far that some people are trying to pick up the fallen woman. Then two people took her outside the house.
Mew climbed up the wall with one jump. What happened to the mischievous boy, she had to know. She was panting. She saw a person was running towards the roads with the boy in his arms. Then rode a rickshaw with the boy. Rickshaw started to leave slowly. Mew is feeling sad about the boy. She is panting. She is understanding she is feeling bad for him. Something happened to him. Something big.
Few more days later. One afternoon, Mew came to the balcony and saw inside the adjacent house the boy was walking weighting on a stick. Mew never felt this happy before, she started to mew in happiness. She started to look the boy closely. She saw that one leg of the boy was covered with white cloth. That leg was a bit high. He was walking weighting on one stick and one leg. He was looking pale and dull. Seeing that it made her very sad. She always thought him to be mischievous. Maybe because he used to chase her whenever he saw her.
Mew came down quickly. Coming down she climbing that wall. She looked at the sands kept beside the wall. She tried to remember where the boy had fallen so many days. Every place where the boy had jumped had sands raised high. She stepped a little back. If she jumped in so much sand then she’ll sink, one day that boy had also sank in the sands. Many days she saw the boy to jump down here. She stepped more back. She stepped back to that part, where below the wall there are less sand. Jumping down here won’t hurt neither will she sink. Now Mew moved her eyes towards the boy. The boy has hurt his leg that’s why he is unable to do it. He might not be able to get up the wall running. But she can. Mew wanted to jump down like the boy for many days.
Mew started to jump on the wall and started to mew expressing her happiness. She did to attract the attention of the boy. And it worked. Suddenly the boy saw Mew over his place on the wall with wide eyes. Mew saw it is the best moment to let the boy that, someone else has learned the thing what you used to do. Even though you can do the work, other person can do it to give you happiness. Mew is really happy. She started to mew even louder.
Mew took complete preparation for jumping down on sand. She saw the boy’s eyes has widened even more and his jaw has dropped down. He is staring in astonishment. And seeing him it looks like he understood what the cat is going to do. She lifted up her body to jump and glanced to the sands and then towards to the boy like she tried to say, look at me, look at me.
Her body was in air. Now she is going to fall down. She saw, the boy’s eyes were shining. All the dullness in his face disappeared. He is laughing. And that moment she saw that old woman came running behind him. And she screamed loudly and fell down.
Mew saw while falling, listening to the screaming many people came running. And it seems many people had seen the jump of the cat. Many started to run.
After a long time, Mew saw that one by one people are taking her in their arms. Some are caressing her head, some her leg.
Someone said, ‘Few days ago the boy broke his leg falling from this wall. Today this cat fell. This wall has fault. See, see if the cat broke its leg?’
Many people started to check Mew’s leg altogether. And many started to caressed Mew’s head.
যা যা লাগবেঃ
১। কাঁকরোল ৫০০ গ্রাম
২। মাছ (রুই/কাতল) ২/৩ টুকরা
৩। পেঁয়াজ ৮ – ৯ টা
৪। কাঁচা মরিচ ৭ – ৮ টা
৫। লেবু ১ টা
৬। লবন পরিমান মত
৭। ময়দা ১/২ কাপ
৮। চালের গুড়া ১/৪ কাপ
৯। তিল ৩ টেবিল চামচ
যেভাবে রান্না করবেনঃ
১। প্রথমে কাঁকরোলের উপরের অংশ ভালো ভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। কাঁকরোল অর্ধেক (লম্বায়) করে কেটে নিতে হবে। এখন কাঁকরোলের ভিতরের সমস্ত অংশ চামচের সাহায্যে বের করে ফেলে দিতে হবে।
২। একটি পাতিলে পানি, লবণ ও কাঁকরোলগুলো দিয়ে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি চালনিতে এর পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে।
৩। মাছের টুকরোগুলো লবন দিয়ে সিদ্ধ করে এর কাঁটাগুলো বেছে নিতে হবে।
৪। পিয়াজগুলো পাতলা করে কেটে নিতে হবে। আর কাঁচা মরিচ কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। ৫। পিয়াজ কুচি + কাঁচা মরিচ কুচি + লবন দিয়ে হাতের সাহায্যে মেখে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস দিয়ে মাখাতে হবে। সবশেষে এর মধ্যে মাছগুলো দিয়ে ভালো ভাবে মাখিয়ে পুর তৈরি করে নিতে হবে।
৬। ময়দা + চালের আটা + পরিমান মত লবন + পানি দিয়ে পাতলা করে গুলে নিতে হবে। এরপর এর মধ্যে তিল মিশাতে হবে।
৭। এখন প্রতিটা কাঁকরোলের মধ্যে মাছের পুর ভরে গোলানো আটার মধ্যে চুবিয়ে ভাঁজতে হবে।
৮। ফ্রাই প্যানের তেল এমন হতে হবে যেন কাঁকরোল অর্ধেক তেলে ডুবে থাকে। ডুবো তেলে ভাঁজলে কাঁকরোল থেকে সব পুর বের হয়ে যাবে।
৯। কাঁকরোলগুলো তেলে দিবার সময় এর কাটা অংশ উপরের দিকে থাকবে। নিচের অংশ ভাঁজা হয়ে এলে উলটে দিয়ে ভাঁজতে হবে। এভাবেই সব কাঁকরোল ভেঁজে নিতে হবে।
(খুরশিদা আলাম)
মোঃ নোমান সরকার
পড়লাম আর শুনলাম এটা ইসলাম নয়। পড়লাম আর মানলাম এটিই ইসলাম। কিন্তু এই দেশের মানুষের কাছে আমলের গুরুত্ব অনেক কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এর মূলে আছে কোরআনের অনুবাদ না পড়া ,হাদিসগুলো না পড়া। আর একটি প্রচার,তা হচ্ছে ”আমরা যত পাপই করি, আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। যত বড় গুনাহ আছে সব আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।” কথাটি ঠিক আছে কিন্তু হাদিসগুলো পড়লেই বুঝা যায়, এই কথাটি সাধারন অপরাধ বা পাপের ক্ষেত্রে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু অন্যের অধিকার নষ্ট করা মহান আল্লাহ কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। সেই মানুষ ক্ষমা করা ছাড়া। অন্যের জমি নিজের ভাবা আর আগুন মুখে দেওয়া একই বিষয়। জমির বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে অন্যের জমি কেড়ে নেওয়ার শাস্তি কেয়ামতের মাঠেই শুরু হয়ে যাবে, আর তা খুবই ভয়াবাহ। হাদিসের এই শাস্তিগুলো উল্লেখ আছে, দয়া করে পড়ে নিবেন, যাদেরই জমি জমা নিয়ে ঝামেলা আছে।
কেবল আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন , কথাটি এত বেশি প্রচার পেয়েছে যে মুল ইসলাম থেকেই আমরা সরে গেছি। বরং ইসলামে অন্যের হক, অন্যের অধিকারই সবচেয়ে বড় বিষয় বলে উল্লেখ রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। অথচ আমরা এই সমাজ আর রাষ্ট্রে উল্টোটাই দেখি। সবচেয়ে বেশি মমলা আছে জমি নিয়ে। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ চলে যায় সেই সব মামলার। ওজনে কম দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। খাদ্যে ভেজাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যায় ভাবে অর্থ আদায়। ঘুষ, সুদ এমন আরো অনেক কিছু। এই দেশে আগে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও মুসলমানদের নৈতিকতা অনেক উঁচু ছিল। মানুষ মানুষকে সহযোগিতা করত। আর এখন করে প্রতিযোগিতা। কিছু কাল আগের হলেও সেই সব গল্প হয়ে গেছে যেন রূপকথা। যাক, অতীত ধুয়ে পানি খেয়ে লাভ নেই। মানুষের জীবনে বর্তমানটাই বড় বিষয়। বর্তমানে এই দেশের মানুষের বিরাট একটা অংশ, কে কাকে ঠকাতে পারবে বা কিভাবে অন্যেরটা কেড়ে নেওয়া বা নিজের করে নিতে হবে এই নীতি নিয়ে চলে। আর যা পারেনি বা পায়নি তা নিয়ে আফসোস এতই বেশি করে যে নিজেকে ঠাকাতে থাকে। আর তাই নিয়ে সময় কাটে বা কাটায় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। এই দেশের মানুষের বিরাট একটা অংশ ভুলে যাচ্ছে, সব ধংসের মূল হচ্ছে ”ঘৃণা আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা”।
কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো এই দেশের মানুষ। এই দেশের মানুষ ইসলামকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। কেবল সঠিক কথাগুলোর প্রচার, সেটি জুম্মার দিনে হোক, সরকারী, বেসরকারী প্রচারে হোক ইসলামের এই আদর্শ গুলো বেশি বেশি প্রচার দরকার। যেমন, মহান আল্লাহ জাতি ধংস করছেন, ওজনে কম দিবার জন্য। কোরআনে এ নিয়ে যে আলোচনা তা মানুষকে জানাতে হবে। একটা বিড়ালকে বেধে রেখে খাবার না দিবার জন্য ভালো আমল থাকার পরেও তার জাহান্নাম হয়েছে। জমি কেড়ে নিলে সেই জমি তার গলায় বেঁধে দেওয়া হবে কেয়ামতের মাঠে। প্রতিবেশী না খেয়ে আছে কিনা এর জন্য কৈফত দিতে হবে প্রত্যেক মুসলমানকে। সে হিন্দু না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান নাকি মুসলমান তা বিবেচনায় আনা হবে না, আনা হবে সে প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর হক অবহেলার শাস্তি খুব কঠিন। তেমনি যে মিথ্যায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা কষ্ট পায়, তার শাস্তিও কঠিন। শাস্তি ভয়াবাহ অন্যকে লাঞ্ছিত করায়, বঞ্চিত করা, অপমান বা অসম্মানিত করায়। এই সব বা অন্যের হক নষ্ট বা অন্যকে কষ্ট দেওয়ার প্রত্যেক অপরাধের ক্ষমা হবে না বলেই হাদিসগুলোতে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। অন্যের হক বা অধিকার মেরে পালিয়ে যাবার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। এই কথাগুলো বারবার আলোচনায় আনতে হবে। এতেই সমাজের কল্যাণ আর রাষ্ট্রের কল্যাণ। এতেই ভালো মানুষ আর যোগ্য মানুষ তৈরি হবে। কারন এই হাদিসগুলোর আলোচনা এড়িয়ে গেলে বা আল্লাহ সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন, কেবল এই কথা প্রচার করলে মানুষ মানবতা আর ইসলাম থেকেই দূরে সরে যাবে। যা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় লোকসানের কারন। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে, বিশ্বের কাছে বড় হতে চাইলে, উন্নত দেশ হিসাবে পরিচিত হতে চাইলে আগে মানুষকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে। ভাই এ ভাই এ ঝগড়া আর অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে ঝগড়া বন্ধ করতে হলে আগে মানুষ বানাতে হবে, নৈতিক শিক্ষার প্রসার করতে হবে, নিজেদের বড় করতে হবে। তবেই কেউ কারো জমি খেয়ে ফেলতে সাহস পাবে না, কেউ কাউকে অপমান করবে না। কেউ কাউকে বঞ্চিত বা লাঞ্চিত করার বিষয়ে সতর্ক হবে। সরকারই পারে মসজিদ কমিটি আর ইমামদের গাইড লাইন দিতে। জুম্মার একটা দিন আসে, যেখানে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারে। তেমনি সরকার চাইলে পারে স্কুল,কলেজকে সতর্ক করতে যাতে তারা তাদের ছাত্রছাত্রীকে গালি দেওয়া, অপ্রত্যাশিত বা আশ্লীল কথা বলার বিষয় সাবধান করতে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেরা পথে ঘাটে উঁচু গলায় একে অন্যকে মা তুলে গালি দিচ্ছে! শব্দ উচ্চারণে অসতর্কতা মানুষকে নীচের দিকে নিয়ে ছুটছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নেশার কবলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও পড়ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছেই। বাড়ছে অপরাধ, বড় বড় অপরাধ। তাই সময় এসেছে ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা না করে সঠিক ভাবে ইসলাম প্রচার বা এই বিষয়গুলো আরো ভালো ভাবে প্রচার করা। এতে কমবে অপরাধ। কমবে মানুষ ঠাকানো ব্যবসা। কমে আসবে ওজনে কম দেওয়া, চড়া মুল্য রাখা, ভেজাল খাবার বানানো আর সব ধরনের প্রতারণা। রাজনীতিবিদদের এ নিয়ে শঙ্কিত হবার যে কিছু নেই, তাও উনারা আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। উনারা জানেন যে, মসজিদগুলোতে কিংবা সরকার নিজে প্রচার করলে সব রাতারাতি বদলে যাবে না বা যায় না, কেবল অপরাধ কমে আসা ছাড়া। এক ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ছাড়া। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ছাড়া।
তবেই বদলে যাবে এই দেশের মানুষ। কেন বদলে যাবে? কারন এই দেশের মানুষ মূলত ভালো মানের মানুষ, ভালো মনের মানুষ। শিক্ষার অভাব থাকতে পারে, দারিদ্রতা থাকতে পারে কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ভালো, এই দেশের। এখন প্রয়োজন পথ দেখানোর। বিশ্বাস করতে হবে। মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস হারানোটাই পাপ।
মোঃ নোমান সরকার
সন্ধ্যা হয়ে এলো। একটা হাতির পায়ে কাঁটা বিঁধেছে। সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পিঁপড়ার বাড়িতে এসে কড়া নেড়ে বলল, পিঁপড়াই ভাই, ‘বাড়িতে আছো ?’
মাটির উঁচু গর্ত থেকে কয়েক হাজার পিঁপড়া বের হয়ে এসে বলল, ‘আছি, আছি।’
হাতি মহা সমস্যায় পড়ে গেল। এদের একজন কেবল তার বন্ধু যাকে সে পিঁপড়া ভাই বলে ডাকে। হাতি হা করে তাকিয়ে রইল। ঠিক তখনই একটি পিঁপড়া এগিয়ে এসে বলল, কি বন্ধু, ‘হঠাত এই পথে!’
হাতি বলল, ‘এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পায়ে একটা কাটা বিঁধল।’
পিঁপড়া বলল, ‘বলো কি!’
হাতি বলল,’আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিবে?’
পিঁপড়া বলল, ‘দিব ,দিব। আমি তো কাউকেই না করতে পারি না। আর তুমি তো আমারই বন্ধু। আগে কিছু খেয়ে নাও। তা কি খেতে চাও?’
হাতি মনে মনে বলল, যে খাবার হোক সেটাও যদি খেতে চাই, তোমাদের মাসের কেন বছরের খাবার শেষ হয়ে যাবে। যাক, পিপড়া যে ভদ্রতা করে যে বলেছে, আমি এতেই খুশি।
হাতি হেসে উঠে বলল, ‘না খিদে নেই। আমাকে পৌছে দিলেই আমি খুশি।’
পিঁপড়া ঘর থেকে হোন্ডাটা বের করে বলল, তুমি কি জানো, তুমি আগের চেয়েও মোটা হয়ে গেছ।
হাতি সেই কথা শুনে হাসল। হাতি বলল, খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। আমি খুব খাই।
পিঁপড়া তার প্রিয় হোন্ডাটা আদর করে একটা ন্যকড়া দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, আমাদের দেখ। আমরা বেশি খাবার খাই না। শীতের জন্য যেমন খাবার জমিয়ে রাখি তেমনি সব খেয়ে ফেলি না। রেখে রেখে খাই। আর যতটুকু শরীর জন্য প্রয়োজন ততোটুকু খাই। গতবার এ নিয়ে তোমাকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম, মনে আছে? সম্ভবত তুমি এখনো ব্যায়াম কর না, তাই না?’
হাতি হাসতে হাসতে বলল, ‘ব্যায়াম আমার ভাল লাগে না। কেবল খাওয়া আর ঘুম আমার প্রিয়।’
পিঁপড়া বলল, ‘এটা একেবারেই ঠিক না। শরীর ঠিক থাকলে সবকিছুই তোমার ভালো লাগবে। অনেক বেশি বেশি ভালো লাগবে। আমি ব্যায়াম করি বা এর বেশি কিছুও করি। দেখত আমাকে কেমন চকচকে লাগছে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করে ফেলতে পার। আসলে অভ্যাস করলেই ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। এর জন্য চাই শক্ত মনবল।’
এই বলে পিঁপড়া হোন্ডা স্টার্ট দিয়ে হাতিকে পিছনে বসিয়ে ছুটল। সন্ধ্যা হয়েই গেছে। সূর্য হারিয়ে গেছে আকাশের ওপারে! তাড়াতাড়ি যেতেই পিঁপড়া একটা সরু পথে ঢুকে হোন্ডা চালাতে লাগল। হাতিকে পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে আসতে হবে বাড়িতে। অনেক হোম ওয়ার্ক বাকি। ছুটে যাচ্ছে ওরা সরু পথ ধরে, কিন্তু পথটা আরো সরু হয়ে যাচ্ছে যেন। হঠাত করে পথ আগলে ধরল ইয়া মোটা একটা টিকটিকি। পিঁপড়া হোন্ডা থামাল। সে বিপদের গন্ধ পাচ্ছে।
হাতি বলল, ‘এই কেরে? সরে যাও। পথ ছাড়ো।’
সরু পথে অন্ধকার যেন আরো ধীরে ধীরে নেমে আসছে। টিকটিকি সরু পথে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে। সে খুব শান্ত গলায় বলল, আমার খুবই খিদে পেয়েছে। হাতি তুমি পিঁপড়াটাকে রেখে চলে যাও।’
কথা শুনে হাতি প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কি বললে! ঝামেলা কর না। সরে দাঁড়াও।’
টিকটিকি বলল, ‘আমার চোখ খুব পরিস্কার। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার পায়ে কাঁটা বিঁধে আছে। তার মানে তুমি যত বড় আর শক্তিশালী হও না কেন, হুলুংকার ছাড়া আর কোন শক্তি তুমি দেখাতে পারবে না। তোমাকে যেটা বলি সেটা হল, হোন্ডা তুমি চালিয়ে যাও বা না চালাতে পারলে আমি তার ব্যবস্থা করে দিব। তুমি পিঁপড়াটাকে রেখে চলে যাও। দয়া করে আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনা।’
টিকটিকিটা খুব ধীরে লেজ নাড়াতে লাগল।
পিঁপড়া এবার হোন্ডা থামিয়ে বলল, ‘আমি কিন্তু ব্লাক বেল্ট। আমার কাছে আসাটা সম্ভবত তোমার জন্য নিরাপদ না। একজন কুংফু মাষ্টারের সাথে ঝামেলায় না জড়ানোটাই তোমার জন্য ভালো। সম্ভবত তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ।’
তা শুনে টিকটিকি এমন ভাবে হেসে উঠল যে হাতিও ভয় পেয়ে গেল। ভয় বন্ধুকে হারাবার ভয়। সে বুঝতে পারছে টিকটিকি ধরে ফেলেছে পায়ে কাঁটার জন্য সে এই বিপদে খুব কিছু করতে পারবে না। কিন্তু জীবন থাকতে সে তো পিঁপড়াকে ওর খাবার হতে দিবে না। হাতি খুব দ্রুত ভাবছে কি করা যায়। সে দেখতে পেল টিকটিকিটা এগিয়ে আসছে। টিকটিকির হাঁটা দেখে মনে হল এটা এবার দৌড়ে আসবে। আর পিঁপড়াকে ছোঁয়ে মেরে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
হাতি চিৎকার করে উঠল, ‘পিপড়া তুমি আমার পিঠে উঠে এস। দ্রুত।’ কথাটা বলেই সে বুঝল, এতে কোন লাভ হবে না। টিকটিকি ঠিকই পিঠে উঠে আসবে।পিঁপড়া তাই করতে গেল, হাতির পিঠে উঠতে চাইল। কিন্তু তার প্রিয় হোন্ডাটা তাকে যেন যেতে দিল না। টিকটিকি হোন্ডাটার ক্ষতি করতে পারে, এই ভেবে সে দাঁড়িয়ে গেল। টিকটিকি ঠিকই ছুটে এলো পিঁপড়ার কাছে। পিঁপড়াকে ধরার জন্য টিকটিকি জিহ্বা বের করে দিয়েছে পিঁপড়ার দিকে।
পিঁপড়া এক লাফ দিয়ে হোন্ডার ডানে গিয়ে আরেক লাফ দিয়ে টিকটিকির কানের কাছে এসে ছয় হাত পায়ে দিল ফ্লাইং কিক। খুব খুব জোরেই ফ্লাইং কিকটা দিতে পেরেছে সে। আসলেই সে ছিল ব্লাকবেল্ড। পিঁপড়া প্রতিদিন প্র্যাক্টিস করে, যাতে বিপদে সে নিজেকে সাহায্য করতে পারে আর নিজের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সাহায্য করতে পারে যে কোন বন্ধুকে বা বিপদে পড়া কোন অসহায়কে। প্রতিদিন অনেক প্রক্টিস করে সে। এতে তার
স্বাস্থ্য ভালো আছে। আর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মন ভা্লো থাকে।
এক ফ্লাইং কিক টিকটিকি ছিটকে পথে একদিকে চলে গেল। কয়েক মুহূর্ত পড়ে রইল। যেন সে ভয় পেয়েছে খুবই। বুঝতেই পারেনি এমনটা হতে পারে। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে বাঁকা হয়ে সে পিছন দিকে দৌড়ে গেল। যেন দৌড়ে পালিয়ে গেল।
হাতি হা হয়ে পুরো ঘটনা দেখল। সে তো ধরেই নিয়েছে এই যাত্রায় সে একজন ভাল বন্ধু হারাতে যাচ্ছে। আর তা তার নিজের জন্য।
পিঁপড়া বলল, ‘হাতি আমাদের দেরী হয়ে গেছে। আমাকে তো আবার ফিরতে হবে। তাই না বন্ধু? উঠে এসো আমার হোন্ডায়।’
হাতি কাচুমাচু হয়ে বলল,’ হ্যা হ্যা তাই তো, তোমাকে আবার ফিরে আসতে হবে।’
হাতি পিঁপড়ার হোন্ডার পিছনে উঠে বসল।
পিঁপড়া বলল, ‘আমি আমার হোন্ডাটাকে নিয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। দুষ্ট টিকটিকিটা ক্ষতি না করে ফেল হোন্ডাটার।’
হাতি উত্তরে কিছু বলল না, চুপ করে আছে। কেন যেন তার খুব লজ্জা লাগছে। এই বিপদে কোন সাহায্য করতেই পারলো না।
পিঁপড়া আপন মনে বলল,’ বল বল আপনা বল। বন্ধু আমি কখনো অন্যের উপর নির্ভর করি না। নিজের বিপদে নিজের বুদ্ধি ,নিজের শক্তি কাজে দেয়। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি আমি আত্ম রক্ষায় ব্লাক বেল্ড পাবার আশায় অনেক পরিশ্রম করেছি।’
হাতি নিজের বিশাল দেহটার কথা ভাবল। তারপর বলল, ‘হ্যা হ্যা তুমি ঠিকই বলেছ।’
যা যা লাগবেঃ
১। মুরগী ১টা (১কেজি)
২। মিষ্টি কুমড়া ১/৪ ভাগ (মাঝারি)
৩। পিঁয়াজ ১০/১২টা (মাঝারি)
৪। রসূন বাটা ১/২ টেবিল চামচ
৫। আদা বাটা ১/২ টেবিল চামচ
৬। হলুদ গুড়া ১ চা চামচ
৭। মরিচ গুড়া ১ চা চামচ
৮। লবন পরিমান মত
৯। দারচিনি ২/৩ টুকরা
১০। এলাচ ৪/৫ টুকরা
তেজপাতা ২টা
১২। মেথী অল্প পরিমান
১৩। কাঁচা মরিচ ৬/৭ টাপ
যেভাবে রান্না করবেনঃ
১। মুরগী ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
২। মিষ্টি কুমড়া একটু বড় টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
৩। একটি পাতিলে মুরগী + আদা বাটা + রসুন বাটা + হলুদ গুড়া + মরিচ গুড়া + পিয়াজ কুচি অল্প পরিমান + লবন + দারচিনি + এলাচ + তেজপাতা + অল্প পরিমান তেল একত্রে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
৪। এখন পাতিলটি চুলায় দিয়ে মুরগীর মাংসের টুকরাগুলো মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে। মুরগী আধা সিদ্ধ হয়ে এলে মিষ্টিকুমড়ার টুকরাগুলো দিতে হবে।
৫। মুরগীর পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে রাখতে হবে।
৬। অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে পিঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পিঁয়াজ হাল্কা লাল হয়ে আসলে এর মধ্যে অল্প পরিমান আস্ত মেথী দিতে হবে। পিঁয়াজ বেরেস্তার মতন লাল হওয়ার সাথে সাথে মুরগীর (তরকারি) ঢেলে দিতে হবে এবং কম জ্বালে কসাতে হবে।
৭। এভাবে কসাতে কসাতে তেল উপরে উঠে এলে অল্প পরিমান পানি + কাঁচা মরিচ দিয়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
( খুরশিদা আলম )
যা যা লাগবেঃ
১। কাঁঠালের বিচি ২০টা
২। কাঁচা মরিচ/ শুকনা মরিচ ৩/৪টা
৩। আদা ১/২ চা চামচ
৪। পিয়াজ ৫টা ( মাঝারি)
৫। লবন পরিমান মত
৬। সরিষার তেল পরিমান মত
যেভাবে রান্না করবেনঃ
১। প্রথমে কাঁঠালের বিচিগুলো ছিলে সিদ্ধ করে নিতে হবে।
২। কাড়াই এ সরিষার তেল অল্প পরিমান দিয়ে কাঁচা/শুকনা মরিচ ভেজে তুলে রাখতে হবে।
৩। ঐ তেলের মধ্যে পিয়াজ আর আদা হাল্কা করে ভেঁজে নিতে হবে।
৪। এখন পাটায় বিচিগুলো বেটে নিতে হবে।
৫। পিয়াজ+ আদা ভাঁজা+ মরিচ+ লবন একসাথে হাল্কা করে বেটে বিচিগুলোর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে সুস্বাদু কাঁঠালের বিচির ভর্তা।
(খুরশিদা আলাম)
রাজা
মোঃ নোমান সরকার
বহুদিন আগের কথা । আমাদের দেশে এক রাজা ছিল । সবাই তাকে আনন্দের রাজা নামে ডাকত । রাজা যেমন ছিল রসিক তেমনি পেটুক । রাজা যেমন উচু লম্বা তেমনি ছিল তার ভুঁড়ি । সারাদিনই বলতে গেল খেত । রাজ দরবারে ,রাজপ্রাসাদে একটু পরপর এক খাচি ফল রাখা আছে । আরও রাখা আছে যত্রত্ত্র খাবার । রাজা হাঁটেন ,ভাবেন আর খান ।
একদিন মধ্যরাতে রাজার ঘুম ভেঙ্গে গেল । তিনি অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলেন । তিনি স্বপ্ন দেখেলেন , তিনি বিশাল একটা মিষ্টি খাচ্ছেন । মিষ্টি টা প্রায় তার সমান ! তিনি তার সমান বড় মিষ্টি টা অতান্ত আয়েশ করে খাচ্ছেন ! ঠিক তখনই ঘুমটা ভাঙ্গল । ঘুম ভেঙ্গে টের পেলেন খুব খিধে লেগেছে । তিনি রানীর ঘুম ভাঙ্গাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবতে লাগলেন । কিন্তু খুব খিদেও লেগেছে । একটু ভেবে , তিনি খুব নরম আর নীচু গলায় রানীকে ডাকলেন ।
রাজার নরম গলার ডাকে রানীর ঘুম ভাঙ্গল । রানী চিন্তিত গলায় বলে উঠল , ‘রাজা আপনার কি হয়েছে ‘? রাজা হেসে ফেলে রানীকে সহজ করল । বলল, ‘রানী খিধে পেয়েছে ‘। রানী বলল, ‘ কি খেতে ইচ্ছে করছে ‘ ? রাজা জিনজির একটু ভাবল । তারপর বলল , ‘ মিষ্টি ‘! একটু থেমে বলল , ‘ সাথে পায়েস ‘। রানী বলল, ‘ রাজা খুব একটা সময় নিবে না ‘ । রানী উঠতে যাবে । রাজা তাকে বসাল । স্বপ্নের কথা জানাল । রানী এত বড় মিষ্টির গল্প শুনে খিল খিল করে হেসে উঠল । সেই হাসিতে রাজার মন অনেক আনন্দে ভরে উঠল ।
রানী হাই তুলতে তুলতে স্বর্ণের অতি কারুকাজ করা পালঙ্ক থেকে নামল । তারপর অনেকটা হেটে ঘরের বিশাল বড় জানালার কাছে এসে দাঁড়াল । আহ ! কি চমৎকার তারা ভরা রাতের আকাশ ! কয়েক মুহূর্ত আকাশটার দিকে তাকিয়ে রানী বুক ভরে শ্বাস টেনে নেয় । তারপর ধীর পায়ে ঘরের পূর্ব দিকটায় ছোট্ট একটা জানালার ধারে এসে দাঁড়াল । জানালার কাছে আছে প্রকাণ্ড তিনটা মোমবাতি । রানী তিনটা মোমবাতিতে আগুন ধরাল । তারপর কয়েক মুহূর্ত পরে বহু দূরে এক এক করে তিনটা মশালের আলো জ্বলে উঠতে �
কোকিল আর এক কাক
মোঃ নোমান সরকার
খুব বিরক্ত হয়ে ঘাড় বাকিয়ে ছোট কোকিলটা বড় গাছের নিচে নাপিতের লাগানো নতুন দোকানটা দেখল । সকাল থেকে বসে আছে সে গাছের ডালে ! খাবার খুঁজতে বের হয়নি । সকালে এক নাপিত ঠুক ঠুক করে গাছের গোরায় পেরেক মেরে যখন বড় একটা আয়না ঝুলালো , তা দেখে খুব মন খারাপ হল তার ।
মানুষদের অত্যাচারে প্রতিদিন পাখিরা এই গ্রাম ছাড়ছে । গ্রাম থেকে প্রতিদিনই গাছ আর পাখি দুইটি অদৃশ্য হচ্ছে । কেউ না কেউ গাছ কাটছে । আর সেই সব গাছের পাখিরা শোকে শোকে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে ।
পাশের গাছটা গত সপ্তাহে কাটা হয়েছে। কবে কখন এই গাছ কেটে ফেলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল এই গাছের পাখিরা! সেই থেকে এক এক করে এই গাছের পাখিরাও চলে গেছে। শুধু ছোট কোকিল যায়নি । বয়সে সে অনেক ছোট ,অনেক বেশি উড়তে হলে কষ্ট হবে। তাই তার মা বলে গেছে , ‘’তুমি তো ছোট ,তাই নতুন বাসা খুঁজে বের করার মতন কষ্ট করার তোমার প্রয়োজন নেই। আবার , বয়স এতটাও কম না যে ,আমার সাহায্য তোমার দরকার হবে। তাই তুমি এখানেই থাকো। খুব বেশি একটা দূরে যেও না। কাছাকাছি এলাকা থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিও, কেমন। ভাল আর সুবিধা মতন বাসা পেলে তোমাকে দুই একদিন পর নিয়ে যাব। ‘’
সেই থেকে কোকিলটা একা থাকছে এই গাছে । সকাল থেকে সে দেখতে লাগল নাপিতের দোকান সাজানো। লোকজনের আনাগোনা। মন তার খুব খারাপ হয়েছে ! তবে গাছ কেটে ফেলার চেয়ে এটা ভাল। এসব ভেবে ভেবে আর এসব শব্দ করে করে নিজেকে এটা সেটা বলে শুনিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই সকাল পেরিয়ে দুপুর হল । লোকজন একেবারেই কমে গেল। কোকিলটা এক সময় দেখল আসে পাসে নাপিত ছাড়া আর কেউ নেই। এর একটু পরে নাপিতও দোকানের পাসে ঘুমিয়ে গেল। অনেক ভেবে কোকিলটা নীচে নেমে এল , নাপিতের দোকানে। দোকানের কাছে আসতেই কোকিলের চোখ পরল আয়নায়। নিজেকে আয়নায় দেখে ঘাবড়ে গেল ! ভাবল অন্য কোন কোকিল ! আরে এই কোকিলটা , এখানে কখন এল! তারপর একটু পরেই বুঝল , এটা সে নিজেই ! কোকিলটা আরেক বার ঘুমন্ত নাপিতকে দেখল। তারপর চারপাস দেখে আয়নার কাছাকাছি উড়ে এসে বসলো। তারপর নিজেকে দেখল । দেখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল ! আমি এত সুন্দর ! আরে কি আশ্চর্য ব্যাপার , আমি এতই সুন্দর !
সেই দিন থেকে ছোট কোকিল রোজ কয়েকবার উড়ে যায় আয়নার কাছ দিয়ে । আর চারপাসে কেউ না থাকলে উড়ে এসে বসে । নিজেকে দেখে । গর্বিত চাহনিতে নিজেকে দেখতেই থাকে । যেন নেশা কাটেনা এমনি ভাবে ।
এভাবেই চলল বেশ কয়েকদিন । একদিন কোকিল নীচের এক ডালে বসে আছে । তখন একটা কাক এসে গাছের ডালে বসল । কাককে দেখতেই কোকিল কিছুটা রেগে বলে উঠল ,’একটু দূরে গিয়ে বস , কি বিচ্ছিরি দেখতে ‘!
এ কথায় কাকের মন খারাপ হল । তবে বেশি একটা না । কারন এমন কথা সে আগেও অনেক বার শুনেছে । তার জন্য এটা নতুন কিছু না । কাকটা বিরক্ত হয়ে বলল , ‘ তা ভাই ,তুমি নিজেকে নিশ্চয় অনেক সুন্দর ভাবছ ‘?
কোকিল বিস্ময়ের সাথে বলে উঠল , ‘ তুমি কি আমাকে বলছ ! আমাকে ? আমাকে বলছ কি ‘?
কাক এদিক সেদিক তাকিয়ে কোকিলের দিকে তাকাল এবার । তারপর চাবিয়ে চাবিয়ে , ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলল,‘এখানে সম্ভবত আর কেউ তো নেই ‘!
কোকিলের ভীষণ মন খারাপ হল । মন খারাপ গলায় বলল, ‘ব্যাঙ্গ ছলে বললে বলে মনে হল ‘!
কাক এবার শান্ত গলায় বলল,‘তোমার কি মনে হয় , আমি মিথ্যে কিছু কি বলেছি ‘।
কোকিল উত্তেজিত গলায় বলল,‘তোমার চোখে কোন অসুখ নেই তো ‘।
কাক নিরশ গলায় বলল,‘নাতো ‘! কোকিল অবাক আর নীচু গলায় বলল,‘তবে তো তুমি আমাকে ভাল করে দেখনি ‘!
‘ হতে পারে আমি তোমাকে ভাল করে দেখিনি । ঠিক আছে ,আমি তোমাকে দেখে নেই তবে ‘।
কোকিল বলল , ‘আমাদের এই এলাকায় যত পাখী ছিল ,আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ! যদিও ইদানিং আমি আমার মা কে ছাড়া আর চড়ুইদের ছাড়া কাউকে দেখিনি । তারপরও আমি নিশ্চিত , আমি দেখতে কল্পনাতীত সুন্দর ‘ !
কাক কোকিলের কথায় অনেক বিরক্ত হল । তারপরও অনেকখন কাক কোকিলকে দেখতে লাগল ।
কাকের কথায় কোকিলের মন অনেক খারাপ হয়ে গিয়ে ছিল । অসুন্দর কাক কি অদ্ভুত কথা বলে ! সে নাকি সুন্দর না ! এবার নিশ্চয় ভাল করে দেখে , ঠিক করে বলবে ! কি অদ্ভুত সুন্দর আমি ! কি অপূর্ব সুন্দর চোখ ! কি অপূর্ব সুন্দর ঠোট ! কি অদ্ভুত সুন্দর তার ডানা ,আর ডানা মেলে ধরা ! নিজেকে সে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে অজস্রবার ।
কাক কয়েক পা কোকিলের সামনে এগিয়ে এল । কাক আনন্দহীন গলায় বলল , আমি তো বলিনি , তুমি অসুন্দর । কিন্তু তুমি ততো সুন্দর নও । তোমার চেয়ে ঢের সুন্দর পাখিদের আমি দেখি প্রতিদিন । তাদের কাছে তুমি জৌলুসহীন ! সে কথা যাক ,তুমি ছোট একটা পাখী , সুন্দর নিয়ে তুমি এত মাথা ঘামাচ্ছ কেন ! এতো একটা ফালতু বিষয়‘!
কাক অস্থির গলায় বলল,‘ কাক তুমি আমাকে খেপাচ্ছ ‘?
কাক অবাক হয়ে বলল,‘কেন কেন, তোমাকে খেপাতে যাব কেন ‘?
কোকিল রাগ আর অভিমান মিশানো স্বরে বলল ,‘বাহ রে ,তুমি যে ভুল বকে যাচ্ছ ‘! ‘আমি ! আমি তো আর সরাসরি তোমার মতন অসুন্দর বলে গাল দেইনি । আর ভুল বা কি বললাম‘!
কোকিল ভারী গলায় বলল,‘আমি আবার কখন অসুন্দর বললাম ‘ !
কাক গম্ভীর গলায় বলল ,‘ বিচ্ছিরি চেয়ে অসুন্দর শব্দটা অনেক শুনতে ভাল ‘।
‘কাকের কথায় কোকিল লজ্জা পেল । সে অনুতপ্ত গলায় বলল, তোমাকে আঘাত দেবার জন্য আমি দুঃখিত ‘!
কাকটা এবার হেসে ফেলে বলল , ‘ আচ্ছা এবার বল ,তুমি উড়তে পার কেমন ‘?
এই দুইদিনে দেখলাম ভাল উড়তে পারছি ‘।
কাক বলল, ‘ছোটদের বেশি দূরে যেতে নাই । তবুও তুমি আমার সাথে যেতে পার । যেখানে গেলে তোমার সুন্দর আর অসুন্দর নিয়ে ভুল টা ভাঙ্গবে ‘।
কোকিল বিস্ময়ের সাথে বলল , ‘সত্যি কি তুমি বলতে চাচ্ছ ,আমি তেমন সুন্দর নই ‘। কাক হেসে বলল ,আমি উড়ে যাচ্ছিলাম । তোমার অসম্ভব সুন্দর গলার স্বর শুনে এই ডালে বসেছিলাম । একটু থামল কাক । যেন কিসব ভাবছে । তারপর তেমনি হেসে বলল, চল , এই দুই গ্রাম পরে একটা জঙ্গল আছে । সেখানে তোমার উত্তর আছে । যদি সাহস কর ,তবে আমার পিছু নিতে পার‘। এই বলে কাক উড়ে গেল । কোকিল এক মুহূর্ত কিসব ভাবল । তারপর উড়ে গেল কাকের পিছু পিছু ।
তখন বিকাল । যখন ওরা জঙ্গলে পৌছাল । কোকিল বিস্ময়ে আর মুগ্ধতার সাথে দেখল , কত বিচিত্র সব ছোট বড় পাখী ! কি অবিশ্বাস্য সুন্দর সুন্দর রং তাদের ! কি অপূর্ব সুন্দর সুন্দর সেই সব পাখী ! আর নানান ধরনের ছোট বড় অসংখ্য গাছ । হতভাগা দুষ্ট মানুষ কি জানে এই গাছের কথা ! জানলে তো সর্বনাশ ! এই ভাবনাটা ভাবল বটে তবে জঙ্গলের সৌন্দর্য ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল কয়েক মুহূর্ত পরেই ।
সন্ধ্যা নেমে এল । জঙ্গলের একটা গাছে কোকিল আর কাক আশ্রয় নিয়েছে । অচেনা জায়গার অন্ধকার কোকিলকে ভীত করতে পারেনি । তার মাথায় অনেক প্রশ্ন আর বিস্ময় নড়েচড়ে বেড়াতে লাগল !
কোকিল চিন্তার জগতে ডুবে গেল । ভাবতে ভাবতে সে যেন হঠাৎ করে আবিস্কার করল । আমি সুন্দর , কি কম সুন্দর , এসব ভাবনায় কি আসে যায় ! আমি তো আমাকে বানাইনি ! যা কিছু আমার বলে এতদিন ভেবেছি তাতো আসলে আমার নয় । কেবল আমার কথা , কাজ আর আচরণ ছাড়া ! কাক দেখতে কতইনা অসুন্দর । অথচ সুন্দর করে কথা বলে । তবে তো সে ভাল । সে ভাল আমার চেয়ে । কারন আমি অসুন্দর করে ভাবি । বাজে বাজে শব্দে কথা বলি বা রেগে কথা বলি !
অন্ধকারে কাক প্রশ্ন করল , ‘ তুমি কি ভয় পাচ্ছ ‘?
কোকিল অন্ধকারে কাক কে দেখতে পেল না । সে মৃদু হেসে বলল , ‘ না । ভয় কিসের ! আমি ভাবছি ,আমি কি বোকা ছিলাম যে নিজেকে নিয়েই ভাবতে শিখেছিলাম । আমি আজ জেনেছি , নিজের দেখার মধ্যে কোন আনন্দ নেই ‘ ।
কাক হেসে বলল , বাহ্যিক সৌন্দর্য হচ্ছে সৃষ্টকর্তার দান । আর অন্তরের সৌন্দর্য নিজের ! বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই । একটু থমে কাক বলল , ‘এই যে বিশাল পৃথিবী তা আমাকে সব সময় জানায় , এস , দেখ ! উপভোগ কর এই পৃথিবীর যত দুঃখ আর আনন্দগুলো ‘ !
রাজ কবি
মোঃ নোমান সরকার
( বন্দী রাজকবিকে রাজ সভায় রাজার সামনে দাঁড় করানো হল । রাজসভায় মন্ত্রীরা তা দেখে নিজেদের মধ্য কথা বলাবলি করল । সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখছেন রাজকবিকে । লজ্জাহীন চোখে তাকিয়ে আছে রাজকবি ! রাজা হাত তুলতেই সবাই থামল । একেবারে শব্দবিহীন পরিবেশ হয়ে গেল । সবাই ভাবছে এত বোকা কবি হয়! এত বোকা মানুষ হয়!)
রাজা খুব আনন্দ পাওয়া গলায় বলল ,’’ এস ,এস কবি ! তুমি নাকি ভাব নিজেকে রবি ! এখন গেল তো সবই । এই কে আছিস , নিয়ে আয় কবির যত কবিতার ছবি ‘’ !
কবি হাসলেন । যেন কবি আনন্দে ভাসলেন । তাই দেখে রাজা সিংহাসন ছেড়ে আসলেন । কাছে এসে কাশলেন ।
রাজার অবাক বিস্ময়ে বলেন ,তার জোড়া ভ্রু উপরে তুলে,’’ তোমাকে চড়াব শূলে । প্রজাদের উসকে দিবার তুমি যে আছ মুলে ! হায় ! হল কি তোমার ? রাজার কথা গেলে ভুলে ! বিদ্রোহীরা কি নিয়েছিল , তোমায় তুলে ? এখন সবইতো গেল খুলে !
রাজা থামলেন , অনেক ঘামলেন । একটু থেমে বললেন , কত কিনা দিয়েছি তোমায় ? আজ সেই তুমি , প্রজাদের বানালে বোমায় ! দিলে একি হে রাজকবি ? যা চাওনি তাও দিয়েছি সবই ! তবে তুমি কি দিলে আমায় ? বল , বল কি দেইনি তোমায় ?
কবি চুপ । তাই দেখে রাজা খেপলেন খুব । রাজা দিল এক হুলুংকার ! এক হাতে ধরা আছে নিজের গলার মালায় তার । অন্য হাতে ছিড়ে নিলেন কবির গলার হার । যেন আজ কবির নেই ছাড় , কাটবেন ঘাড় । নেই ,আর কোন নিস্তার নেই তার ।
এমনি সময় পহরী কবির কবিতা নিয়ে এল । রাজসভার সবাই মনে মনে বলাবলি করল ,গেল গেল সবইতো গেল । রাজকবির সবই ভুলই ছিল । রাজ্যটারে কবি কিবা দিল ! মান সম্মান সবই গেল ! নিল না এবার ,সবি তো রাজা কেড়ে নিল । গেল না সব ? সবই তো গেল ! বোকা ,মহাবোকা ! রাজা বলল ,মন্ত্রী ! পড় দেখি ,লিখে ছাই তামাশা কি না নাকি ? মন্ত্রী পড়তে শুরু করল রাজ কবির বিদ্রোহের কবিতা ।
সব কিছু চাইতে নেই (রাজা জিনজির’ বই থেকে)
মোঃ নোমান সরকার
রাজা রাজকন্যার সাথে খেলা করছেন। রাজকন্যা খেলা ফেলে বাবার গলা ধরে বলল, বাবা, একটা গল্প বলো না?
বাবা হেসে বলল, কিসের গল্প বলব?’
রাজকন্যা একটু ভেবে বলল, হরিণের গল্প বলতে হবে, বাবা।‘
রাজা খুব খুশি হয়ে রাজকন্যাকে গল্প শোনাতে শুরু করলেন,’এক বনে বাস করত হরিণ আর তার ছানা।
ছানাটিকে হরিণ আদর করে বাবু বলে ডাকত। বাবুটা ছিল অনেক ছোট আর আর খুবই চঞ্চল। মাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না সে। আর মা তো সারাক্ষণ বাবুর চারপাশেই থাকত। ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল হারিণের ছোট ছানাটি।
একদিন মায়ের শরীর খারাপ। আর সেই দিনই বাবু মাকে রেখে একটু দূরে গেল বন্ধুদের সাথে খেলতে। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ডাকালো, ‘মা! ওমা!’
মা হরিণছানার ডাক শুনে বলল, ‘কী হয়েছে আমার মানিক?’
হরিণছানা আদুরে গলায় বলল,’মা আমি বনের রাজাকে দেখব? মা, আমি বনে রাজাকে দেখতে চাই।‘
মা হরিণ তার বাবুর কথা শুনে ভয়ে লাফিয়ে উঠল। ভুলে গেল তার শরীর খারাপের কথা। হরিণ ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘আমার বাবু! এইসব বলে না! একদম না!’
দিন যায়, মাস যায়, বছরও। শিশু হরিণ বেশ বড় আর লম্বা হয়ে ওঠে। কিন্তু সে বনের রাজাকে দেখতে চাওয়ার কথা কিছুতেই ভোলে না। এ নিয়ে কথা হলেই মা এটা বুঝায় সেটা বুঝায়। কিন্তু কিছুতেই সে ভোলে না।
আরো একটু বড় হবার পর একদিন সে তার মাকে বলল, মা, তুমি যদি বনের রাজাকে দেখাতে নিয়ে না যাও। তবে আমি একা একাই বনের রাজাকে দেখতে চলে যাব।‘
মা অনেক বোঝাল। অনেক কাঁদল মা। কিন্তু বাবু কিছুতেই বুঝল না।
এইটুকু বলার পর রাজা থামলো। তখন রাজকন্যা বাবার গালে হাত রেখে দুশ্চিন্তায় ডুবে গিয়ে বলল, তারপর কি হলো বাবা?’
রাজা আবার বলা শুরু করল,’তারপর নিরুপায় হয়ে মা ঠিক করল, নিয়ে যাবে তার ছানাকে রাজা দেখাতে। তারপর একদিন ভোরে নিজ এলাকা ছেড়ে বের হল তারা দুজনে।
পথে শিয়ালের সাথে দেখা। শিয়াল ওদের দেখে খুব খুশি হয়ে বলল,’বাহ! খুব ভালো লাগছে মা আর বাচ্চাকে একসাথে দেখে। তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?’
মা সব খুলে বলল তাকে।
শিয়ালের মুখে হাসিটা পালিয়ে গেল। শিয়াল গম্ভীর গলায় বলল,’তুমি তোমার সন্তানকে বুঝাও, যে সব চাইতে নেই।‘
মা হরিণ বলল,’আমি নিজেও এভাবে কখনো ভাবিনি।‘
শিয়াল ক্লান্ত গলায় বলল, তুমি কি তোমার সন্তানকে বলোনি, সব কিছু চাইতে নেই।‘
মা হরিণ বলল, আসলে ও তো অনেক ছোট!’
শিয়াল মন খারাপ করে বলল,’আমি বলছি তোমরা ফিরে যাও।‘
শিয়াল অনেক বুঝাল। তাতে কোনই লাভ হল না। হারিণছানার এক কথা-‘ তবে আমি একা একাই যাব।‘
পথে আরো অনেকের সাথেই দেখা হল। হাতি,মহিষ, গণ্ডার, ভাল্লুক। সবাই তাদের মানা করল। এমনকি খরগোশ পর্যন্ত। কিন্তু হরিণছানার একই কথা, সে রাজাকে দেখতে যাবেই, যাবে।
অবশেষে তারা সেই জায়গাটায় এলো যেখানে বনের রাজা বাস করত। তারা কাছাকাছি এলো ঠিকই কিন্তু নিরাপদ দূরত্ব রেখে রাজাকে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কিন্তু কোথাও বাঘের দেখা নেই। অন্য কোথায় যেতে পারে, তা নিয়েও ভাবল তারা। এমন সময় মা হরিণ দেখল বাঘটাকে। খুব কছে না হলেও বেশি দূরে নয় বাঘ। কাছেই একটা পাহাড়ী পানির ছড়া থেকে বাঘটা পানি পান করছে। হরিণ বলল,’বাছা আমার! ঐ দেখো আমাদের রাজা পানি পান করছেন। ঐ দেখো’
হরিণছানা সেদিকে লক্ষ করে বনের রাজাকে দেখতে পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সে প্রচণ্ড খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে উঠল,’কী অদ্ভূত সুন্দর আমাদের রাজা! তাই না মা!’
এই কথা বলেই সে আরো ভালো করে দেখতে দৌড়ে বাঘের কাছাকাছি চলে গেল।
পিছন থেকে মা ডাকছে,’বাবু আমার! এত সামনে যাসনে।‘
ততোক্ষনে বাঘ তাদের কথার শব্দ শুনে ফেলেছিল। বাঘ ফিরে তাকিয়েছে তাদের দিকে। হারিণছানা থামল এবার। তার চোখে কেবলই মুগ্ধতা!
বনের রাজাকে মন ভরে দেখতে দেখতে হরিণছানা শুনতে পেল, বনের রাজা তার দিকে তাকিয়ে অদ্ভূত গলায় একটা চিৎকার দিল। কেন যেন চিৎকারটা তার ভালো লাগল না।
চিৎকার দিবার পরেই দৌড়ে দৌড়ে তার দিকেই আসছে বনের রাজা! কী অদ্ভুত সুন্দর বনের রাজা! কী অদ্ভুত সুন্দরই না তাকে লাগছে। কিন্তু বাঘ যতই কাছে আসতে লাগল ততই বাঘের ভয়ঙ্কর চেহারা আর ক্ষিপ্ত গতিতে তারই দিকে আসার বিষয়টা মিলিয়ে তার ছোট মনে ভয়ের উদ্রেক হতে লাগল। আর তখনই কেন যেন একে একে সবার মানা করার বিষয়টা তার মনে পড়ে যেতে লাগল।
বাঘের ক্ষিপ্ত গতিতে দৌড়ে আসতে দেখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মা হরিণের কেবল মনে পড়ল শিয়ালের সেই কথাটি, ‘তুমি কি তোমার সন্তানকে বলোনি, সব কিছু চাইতে নেই।‘
আদর যত্ন
মোঃ নোমান সরকার
এক ছিল বোকা হাতি ,তার ছিলো না কোন সঙ্গী সাথী। সারাদিন সে বনের গভীরে দল ছুট হয়ে ঘুরে বেড়াত। যেন সে উড়েই বেড়াত। হাতির দলেরও তাকে নিয়ে কোন মাথা ব্যথ্যা ছিল না। কেউ সেদিকে তাই নজর দিত না।
একদিন দুপুরে সে নামতে চাইলো পুকুরে। এমন সময় সে দেখলো, মাথাটাও ঝুঁকালো। একটু দূরে একদল কাঠবিড়ালী, দাঁড়িয়ে। সে খানিকটা এগিয়ে গেলো, কাঠবিড়ালীর দলও ছুটে পালালো। সে এসে দাঁড়ালো সেখানে, দাঁড়িয়ে ছিল কাঠবিড়ালীর দল যেখানে। সে তাকিয়ে দেখলো, সব কাঠবিড়ালীরা গাছে উঠে যেতে লাগলো। আর গিয়ে হাতির দিকে শত শত ফল ছুঁড়ে মারতে লাগলো। আর সেই সাথে জুড়ে দিল কান্না। হাতি বলল, ‘ফল ছুড়ে মেরনা, আর না, আর না। পাই যে ব্যাথা। বলছি, শুনছো কি কথা? হয়েছে কি বলো? কী হলো, কী হলো?’ ‘
কাঠবিড়ালীরা এক যোগে বলল, তুমি আমাদের বাগানে ঢুকে পরেছো! আমাদের তুমি কষ্ট দিয়েছো! তাকাও তো নীচে, যেওনা ভাই পিছে।‘
হাতি ওদের কথা শুনলো আর বোকা বনে গেলো। হাতি পিছনেও গে্লো না, নড়লো না। হা করে নীচে তাকালো আর চারদিক দেখতে লাগলো। সে দেখলো,সে দেখতে পেলো, ছোট ছোট অজস্র গাছের চারা গিয়েছে মারা। তার পায়ের নীচে হয়েছে ভর্তা! যে পথে সে পা ফেলে ফেলে এসেছে, সব চারাই সে মেরেছে!
সে দেখেইনি, জানেই না তবুও হয়েছে এই কাজের কর্তা। হাতি দ্রুত পা উঠালো। আর অমনি কাঠ বিড়ালীরা আবার কান্না জুড়ে দিলো। তা শুনতেই সে চমকে ফিরে তাকালো। তাই দেখে কাঠবিড়ালীরা মাথা ঝাঁকালো।
একটা বড় কাঠবিড়ালী গাছ থেকে নেমে এলো। বলল,’ ভাই, এগিয়ে যেও না। পিছনেও ফিরে যেওনা।’ তারপর একটু চুপ থেকে বলল, সাবধানে ফে্লো পা, দিও না আমাদের মনে ঘা। বাগান করে দিয়েছ শেষ, কি আছে আর অবশেষ!’
হাতি চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। তারপর নিজেকে কি সব বুঝালো। তারপর একটু সময়ও নিলো। তারপর বলল, ‘চুপ ,চুপ ,চুপ। আমার মনেও কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি সরে যাচ্ছি, যেমন করে এসেছি।‘
হাতি এক পা এক পা করে পিছনে গেলো। যেভাবে এসেছি্লো। হল না কোনই এলোমেলো। ঠিক ঠিক পিছনে সরে গিয়ে বিষয় কি, জানতে চাইলো।
বড় কাঠবিড়ালী বলল,’ এটা আমাদের বাগান। অনেক যত্ন করে বানানো বাগান। সৃষ্টিকর্তা বানিয়ে দিয়েছেন জঙ্গল। তিনি সকলের চান মঙ্গল। আর আমরা বানাই বাগান। আর গাই গান। এখানে আমরা আমাদের শিশুদের শেখাই কি করে গড়ে তুলতে হয় বাগান। কি করে গাইতে হয় গান। শেখাই, কি করে নিতে হয় গাছের যত্ন। যদি যত্ন না নিয়ে হই অন্য কাজে মগ্ন তবে মরে যাবে তা, হোক সে যত বড় রত্ন। এই শিক্ষাই বড় দীক্ষা।’
একটু থামলো। সাথে সে ঘামলো। তারপর আবার বলা করলো শুরু,’ প্রত্যেক শিশু কাঠবিড়ালী একটি করে ছোট গাছ লালন করে, যেমন করে আমরা বলি তেমন করেই পালন করে। শত শত শিশু কাঠবিড়ালী একটা করে গাছের যত্ন করে, এটা তার রত্ন বলেই মনে করে। যত্ন করা শেখে। আর ভবিষৎ নিয়ে কত কিছু লিখে। আর তারা এত কিছুই লিখে। এতে তাতে তাদের জ্ঞান যায় পেকে। আর তখন শিশু কাঠবিড়ালীরা বুঝতে পারে জীবন যে কতটা যত্ন নির্ভর। শিখে মায়া, কি করতে হয়, এই তো টিকে থাকার সবচেয়ে বড় ছায়া। এটা জানতেও শেখে, বুঝতেও শেখে। শিখে বলেই কাঠবিড়ালী বড় হয়ে নিজেদের ভালোবাসতে শিখে। তারা একটুতে যায় না বেঁকে। বুঝে যায় কিভাবে তারা যাবে টিকে। নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে? নিজেকে আর অন্যকে হাসাবে, আনন্দে ভাসাবে? বলো? তুমিই বলো? এবার তুমি কিছু বলো।’
হাতি বলল,’আমি খুব লজ্জিত, খুবই লজ্জিত। তোমাদের বাগান লন্ড ভন্ড করে দিবার জন্য। নিজেকে মনে হচ্ছে খুবই নগন্য।’
কাঠবিড়ালী বলল,’ আচ্ছা তুমি যখন তোমার ভুল বুঝেছো। এখানেই তো তুমি নতুন কিছু শিখছো। তাই তোমাকে আমরা দিলাম ক্ষমা করে, আমরা আমাদের বাগান আবার বানিয়ে নিব একে অন্যের হাত ধরে ধরে। এখন তুমি যদি বুঝে থাকো, তবে আমরাও খুশি। কি আছে আনন্দ এর চেয়ে বেশি। কেউ কিছু শিখেছে। এর চেয়ে আর বড় কিবা এ জগতে হয়েছে।‘
হাতি বলল,’ আমি তো বোকা হাতি তাই আমার নেই সঙ্গী সাথী। বোকা বলে আমি খুবই কমই বুঝি। আমি তাই বন্ধু খুঁজি। আমাকে কি বাগানের বিষয়টা ভালো করে বুঝাবে? এতে বাগানের যে ক্ষতি করেছি, তার দুঃখ হয়ত ঘুচাবে। শেখাবে মন্ত্রটা?’
সবার বড় কাঠবিড়ালীটা হেসে ফেললো। তারপর বলতে লাগলো,’ শিশুরা যখন গাছ লালন পালন করে। যেন তারা মন দিয়ে বই পড়ে। তখন এই কাজ করতে করতে শিশুরা জেনে যায়, জীবন কে সুন্দর করতে দায়িত্ব আর কর্তব্য যে সব চেয়ে জরুরী বিষয়। গাছ লালন পালন করতে গিয়েই তারা বুঝে ফেলে, আদর বা যত্ন না করলে কিছুই বাঁচে না, টিকেও না। তাই সুন্দর কিছুই থাকে না। গাছ বড় হয়, তারও বড় হয়। মায়ায় মিলে ছাড়া। হুম, এটাই মন্ত্র।’
হাতি বলল,’ আরে আরে তুমি যা বলতে চাইছো,আমি ঠিকই বুঝে ফেলেছি। তারমানে আমি তো দেখছি বোকাই না। একেবারেই বোকা না!’
হাতি কাঠবিড়ালীদের কাছে বাগান নষ্ট করার জন্য অনেক অনেক ক্ষমা চাইলো আর নিজ দলে ফিরে গেল। ফিরে গিয়ে হাতি ছোট ছোট গাছের চাড়া নিলো আর শিশু হাতিদের হাতে দিলো। দিয়ে বলল,’শুনো তবে মন দিয়ে, গাছ আমাদের বন্ধু। গাছই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কেবল নিজেদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে থাকলে তো চলবেনা। নিজেদের কথাই কেবল বলবে না। বন্ধু কে বাঁচাতে হবে। বন্ধু তখন তোমাকেও কাছে নিবে। তবেই না আমরা টিকে থাকব। তখন আমরা সুগন্ধিও গায়ে মাখব। আর বাঁচাতে হলে আদর করতে হবে আমাদের চারপাশ। হবে না আর সর্বনাশ। দেখো, দেখো গাছের পাতাগুলো দেখো, কি করে হয় বড়? সময়ও লাগে কত! আদর যত্ন ছাড়া কিছুই টিকে থাকতে পারেনা। আদর যত্ন ছাড়া বিপদও ছাড়ে না। তাই গড়তে হবে ভালো সব অভ্যাস। আর যেন না হই আমরা কারো উপহাস।’
হাতির এইসব কথা শিশু হাতিরা তেমন কিছু বুঝলো না। তবে তারা প্রচন্ড খুশি হয়ে গাছের চাড়া নিলো। আর গাছের চাড়া আদর করে লালন পালনের কথা দিলো।
তবে হাতির দলটা ঠিকই বুঝলো হাতির কথা। এতদিন তারা ভেবেছিলো এই হাতিটা ভারী বোকা। কত ছোট ভেবেছে হাতিটা নিয়ে। সেই কথাই আলোচনা হতে লাগলো হাতির দলের ভিতরে।