মোঃ নোমান সরকার
লহরী দৌড়ে মায়ের কাছে ছুটে এলো। সে হাঁপাচ্ছে।
মা বল,’আরে থাম থাম। কি হয়েছে?’
লহরী বলল, ‘মা তোমার কাছে নুপুর আছে? আমি পায়ে দিব। পরলে সুন্দর লাগবে না মা?’
মা বলল, ‘হুম সুন্দর লাগবে। পরীর মতন লাগবে।’
লহরী বলল,’ মা? ওমা, তখন কি পরীরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে?’
মা বলল, ‘আমি কি তোমাকে পরীর সাথে যেতে দিব?’
লহরী হেসে দিল। আর রহস্য ভরা গলায় বলল,’মা, সেদিন তুমি বলেছিলে পরী বলে কিছু নেই। আজ যে বললে পরী নিয়ে যাবে, তার মানে পরী আছে। তাই না মা?’
মা চুপ করে থাকতে দেখে, লহরী বলল, ‘পরী এলে আমি সত্যি সত্যি পরীর সাথে চলে যাব। দেখো কিন্তু। আচ্ছা আদরের মা আমার আগে নপুর তো দাও?’
মা আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে সেখান থেকে একটা নুপুর বের করল। লহরী বয়স এখন ৬। নুপুরটা হাতে নিয়ে মা আনন্দ নিয়ে নুপুরটা দেখতে লাগল। ওর জন্য বানানো। অনেক কারুকাজ করা কিন্তু সরু। খুবই অদ্ভুত সুন্দর। বড় হলে পরবে আর রূপার দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই ভাবনা থেকেই নুপুরটা বানানো হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে আমার বড় হবার আগেই নুপুর চাইছে। তার চোখে পানি এসে গেল। মা ভাঁজ করে নুপুর নিয়ে এসে লহরী দুই পায়ে পরিয়ে দিল। বাহ! অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। সত্যি মেয়েকে পরী পরী লাগছে।
নুপুর পেয়ে লহরী সাড়া ঘরে হেঁটে বেড়াতে লাগল আর হাসতে লাগল। বাবাটা যে কি, এই সময় কেউ বাইরে থাকে? মেয়ে নুপুর পরেছে মা কি ফোনে বলেনি বাবাকে। বাবা আসে না কেন? কখন আসবে? মাকে তাও প্রশ্ন করল না। কেবল ঘড়ি দেখল বারবার। বিকাল পেরিয়ে যায়। লহরী জানে বাবা সন্ধ্যার পরেই আসে। তবুও। মা কি বলেনি লহরী নুপুর পরেছে। বাবাটা না যেন কেমন! তবে বাবা দুষ্ট আছে। বাবা এখনো চোখে হাত দিয়ে বলে আমি লুকিয়েছি। বাবা বুঝেই না আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। তবুও বাবাকে বুঝতে দিতে চায় না লহরী সে যে অনেক বড় হয়ে গেছে। চোখে হাত দিয়ে লুকানোটা তো ছোটদের খেলা। বাবা এই সব বুঝে না। বুঝেই না সে আর ছোট নেই। বাবা একটু বোকাও আছে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। লহরী পড়তে বসছে নিজে নিজে। হঠাৎ কি হলো, সে মায়ের কাছে এসে বলল, ‘মা আমাকে তোমার একটা শাড়ি পরিয়ে দাও তো। বাবা দেখুক তার মেয়ে অনেক বড় হয়েছে। সে কি ছোট? মোটেও ছোট না। দাও তো মা শাড়ি পরিয়ে।’
লহরী জন্য একটা লাল শাড়ি কিনেছিল পহেলা বৈশাখে। মা হাসতে হাসতে সেই শাড়ি ওকে পরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু সে সেই শাড়ি পরবে না। সে বায়না ধরেছে মায়ের শাড়ি পরবে।
মা অনেকগুলো শাড়ি বিছানা মেলে দিল। লহরী ঝামেলায় পরে গেল। মায়ের সবগুলো শাড়ি তো সুন্দর। কোনটা পরবে?
এমন সময় বাবা এলো। কলিং বেল টিপতে মা ছুটে যাচ্ছে দরজার দিকে। লহরী খুব জোরে বলল, মা এই ঘরে বাবাকে ঢুকতে দিবে না। আমি এই ঘরে শাড়ি পরব। কাপড় পাল্টানোর সময় কেউ কার ঘরে ঢুকতে হয় না। বাবা তো বোকা। এই সব নিয়ে বাবা হয়ত ভাবে না। বাবাকে এই ঘরে আসতে দিবে না।
লহরী ঘরের দরজা লাগিয়ে অনেক রাগ হলো। বাবা যখন দেরি করছে। আর একোটু দেরি করলে কি হত। মা এখন বাবাকে দেখবে নাকি তাকে শাড়ি পরাবে। আর বাবার সাথে মায়ের এত কি গল্প। বাবা এলে মা যেন আমাকেই চিনে না। পরীরা আসুক সত্যি সত্যি আমি চলে যাব। একবারে যাব না। এই দুই দিন পরীদের সাথে থেকে বাবাকে আর মাকে ভয় দেখাব। তখন আমাকে বেশি মূল্য দিতে হবে। বাবা এলেও মা আমাকে সময় বেশি দিবে।
মা তাকে নীল রং এর শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শাড়িটা মোটা মোটা লাগছে। মাপে হবে না বলে মা কয়েক ভাঁজ করিয়ে পরিয়েছে। তবে এই শাড়িটাই তার ভালো লেগেছিল। রাতের বেলায় ঘরের ভিতর নীল আকাশ। শাড়িটা একটূ মেঘ বা সাদা সাদা থাকলে ভালো হত। সে যখন বাবার মতন অফিস করবে, তখন নিজে নিজেই এমন শাড়ি কিনে ফেলবে।
শাড়ি পরে সে বাবার কাছে এলো। আরে বাবাকে দেখে এত লজ্জা লাগছে কেন! শাড়ি পরেছে বলে?
বাবা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। বাবা কিছু বলার আগে লহরী বলল, ‘দেখ বাবা আমি বড় হয়ে গেছি।’
র