মোঃ নোমান সরকার
সন্ধ্যা হয়ে এলো। একটা হাতির পায়ে কাঁটা বিঁধেছে। সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পিঁপড়ার বাড়িতে এসে কড়া নেড়ে বলল, পিঁপড়াই ভাই, ‘বাড়িতে আছো ?’
মাটির উঁচু গর্ত থেকে কয়েক হাজার পিঁপড়া বের হয়ে এসে বলল, ‘আছি, আছি।’
হাতি মহা সমস্যায় পড়ে গেল। এদের একজন কেবল তার বন্ধু যাকে সে পিঁপড়া ভাই বলে ডাকে। হাতি হা করে তাকিয়ে রইল। ঠিক তখনই একটি পিঁপড়া এগিয়ে এসে বলল, কি বন্ধু, ‘হঠাত এই পথে!’
হাতি বলল, ‘এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পায়ে একটা কাটা বিঁধল।’
পিঁপড়া বলল, ‘বলো কি!’
হাতি বলল,’আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিবে?’
পিঁপড়া বলল, ‘দিব ,দিব। আমি তো কাউকেই না করতে পারি না। আর তুমি তো আমারই বন্ধু। আগে কিছু খেয়ে নাও। তা কি খেতে চাও?’
হাতি মনে মনে বলল, যে খাবার হোক সেটাও যদি খেতে চাই, তোমাদের মাসের কেন বছরের খাবার শেষ হয়ে যাবে। যাক, পিপড়া যে ভদ্রতা করে যে বলেছে, আমি এতেই খুশি।
হাতি হেসে উঠে বলল, ‘না খিদে নেই। আমাকে পৌছে দিলেই আমি খুশি।’
পিঁপড়া ঘর থেকে হোন্ডাটা বের করে বলল, তুমি কি জানো, তুমি আগের চেয়েও মোটা হয়ে গেছ।
হাতি সেই কথা শুনে হাসল। হাতি বলল, খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। আমি খুব খাই।
পিঁপড়া তার প্রিয় হোন্ডাটা আদর করে একটা ন্যকড়া দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, আমাদের দেখ। আমরা বেশি খাবার খাই না। শীতের জন্য যেমন খাবার জমিয়ে রাখি তেমনি সব খেয়ে ফেলি না। রেখে রেখে খাই। আর যতটুকু শরীর জন্য প্রয়োজন ততোটুকু খাই। গতবার এ নিয়ে তোমাকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম, মনে আছে? সম্ভবত তুমি এখনো ব্যায়াম কর না, তাই না?’
হাতি হাসতে হাসতে বলল, ‘ব্যায়াম আমার ভাল লাগে না। কেবল খাওয়া আর ঘুম আমার প্রিয়।’
পিঁপড়া বলল, ‘এটা একেবারেই ঠিক না। শরীর ঠিক থাকলে সবকিছুই তোমার ভালো লাগবে। অনেক বেশি বেশি ভালো লাগবে। আমি ব্যায়াম করি বা এর বেশি কিছুও করি। দেখত আমাকে কেমন চকচকে লাগছে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করে ফেলতে পার। আসলে অভ্যাস করলেই ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। এর জন্য চাই শক্ত মনবল।’
এই বলে পিঁপড়া হোন্ডা স্টার্ট দিয়ে হাতিকে পিছনে বসিয়ে ছুটল। সন্ধ্যা হয়েই গেছে। সূর্য হারিয়ে গেছে আকাশের ওপারে! তাড়াতাড়ি যেতেই পিঁপড়া একটা সরু পথে ঢুকে হোন্ডা চালাতে লাগল। হাতিকে পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে আসতে হবে বাড়িতে। অনেক হোম ওয়ার্ক বাকি। ছুটে যাচ্ছে ওরা সরু পথ ধরে, কিন্তু পথটা আরো সরু হয়ে যাচ্ছে যেন। হঠাত করে পথ আগলে ধরল ইয়া মোটা একটা টিকটিকি। পিঁপড়া হোন্ডা থামাল। সে বিপদের গন্ধ পাচ্ছে।
হাতি বলল, ‘এই কেরে? সরে যাও। পথ ছাড়ো।’
সরু পথে অন্ধকার যেন আরো ধীরে ধীরে নেমে আসছে। টিকটিকি সরু পথে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে। সে খুব শান্ত গলায় বলল, আমার খুবই খিদে পেয়েছে। হাতি তুমি পিঁপড়াটাকে রেখে চলে যাও।’
কথা শুনে হাতি প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কি বললে! ঝামেলা কর না। সরে দাঁড়াও।’
টিকটিকি বলল, ‘আমার চোখ খুব পরিস্কার। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার পায়ে কাঁটা বিঁধে আছে। তার মানে তুমি যত বড় আর শক্তিশালী হও না কেন, হুলুংকার ছাড়া আর কোন শক্তি তুমি দেখাতে পারবে না। তোমাকে যেটা বলি সেটা হল, হোন্ডা তুমি চালিয়ে যাও বা না চালাতে পারলে আমি তার ব্যবস্থা করে দিব। তুমি পিঁপড়াটাকে রেখে চলে যাও। দয়া করে আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনা।’
টিকটিকিটা খুব ধীরে লেজ নাড়াতে লাগল।
পিঁপড়া এবার হোন্ডা থামিয়ে বলল, ‘আমি কিন্তু ব্লাক বেল্ট। আমার কাছে আসাটা সম্ভবত তোমার জন্য নিরাপদ না। একজন কুংফু মাষ্টারের সাথে ঝামেলায় না জড়ানোটাই তোমার জন্য ভালো। সম্ভবত তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ।’
তা শুনে টিকটিকি এমন ভাবে হেসে উঠল যে হাতিও ভয় পেয়ে গেল। ভয় বন্ধুকে হারাবার ভয়। সে বুঝতে পারছে টিকটিকি ধরে ফেলেছে পায়ে কাঁটার জন্য সে এই বিপদে খুব কিছু করতে পারবে না। কিন্তু জীবন থাকতে সে তো পিঁপড়াকে ওর খাবার হতে দিবে না। হাতি খুব দ্রুত ভাবছে কি করা যায়। সে দেখতে পেল টিকটিকিটা এগিয়ে আসছে। টিকটিকির হাঁটা দেখে মনে হল এটা এবার দৌড়ে আসবে। আর পিঁপড়াকে ছোঁয়ে মেরে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
হাতি চিৎকার করে উঠল, ‘পিপড়া তুমি আমার পিঠে উঠে এস। দ্রুত।’ কথাটা বলেই সে বুঝল, এতে কোন লাভ হবে না। টিকটিকি ঠিকই পিঠে উঠে আসবে।পিঁপড়া তাই করতে গেল, হাতির পিঠে উঠতে চাইল। কিন্তু তার প্রিয় হোন্ডাটা তাকে যেন যেতে দিল না। টিকটিকি হোন্ডাটার ক্ষতি করতে পারে, এই ভেবে সে দাঁড়িয়ে গেল। টিকটিকি ঠিকই ছুটে এলো পিঁপড়ার কাছে। পিঁপড়াকে ধরার জন্য টিকটিকি জিহ্বা বের করে দিয়েছে পিঁপড়ার দিকে।
পিঁপড়া এক লাফ দিয়ে হোন্ডার ডানে গিয়ে আরেক লাফ দিয়ে টিকটিকির কানের কাছে এসে ছয় হাত পায়ে দিল ফ্লাইং কিক। খুব খুব জোরেই ফ্লাইং কিকটা দিতে পেরেছে সে। আসলেই সে ছিল ব্লাকবেল্ড। পিঁপড়া প্রতিদিন প্র্যাক্টিস করে, যাতে বিপদে সে নিজেকে সাহায্য করতে পারে আর নিজের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সাহায্য করতে পারে যে কোন বন্ধুকে বা বিপদে পড়া কোন অসহায়কে। প্রতিদিন অনেক প্রক্টিস করে সে। এতে তার
স্বাস্থ্য ভালো আছে। আর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মন ভা্লো থাকে।
এক ফ্লাইং কিক টিকটিকি ছিটকে পথে একদিকে চলে গেল। কয়েক মুহূর্ত পড়ে রইল। যেন সে ভয় পেয়েছে খুবই। বুঝতেই পারেনি এমনটা হতে পারে। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে বাঁকা হয়ে সে পিছন দিকে দৌড়ে গেল। যেন দৌড়ে পালিয়ে গেল।
হাতি হা হয়ে পুরো ঘটনা দেখল। সে তো ধরেই নিয়েছে এই যাত্রায় সে একজন ভাল বন্ধু হারাতে যাচ্ছে। আর তা তার নিজের জন্য।
পিঁপড়া বলল, ‘হাতি আমাদের দেরী হয়ে গেছে। আমাকে তো আবার ফিরতে হবে। তাই না বন্ধু? উঠে এসো আমার হোন্ডায়।’
হাতি কাচুমাচু হয়ে বলল,’ হ্যা হ্যা তাই তো, তোমাকে আবার ফিরে আসতে হবে।’
হাতি পিঁপড়ার হোন্ডার পিছনে উঠে বসল।
পিঁপড়া বলল, ‘আমি আমার হোন্ডাটাকে নিয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। দুষ্ট টিকটিকিটা ক্ষতি না করে ফেল হোন্ডাটার।’
হাতি উত্তরে কিছু বলল না, চুপ করে আছে। কেন যেন তার খুব লজ্জা লাগছে। এই বিপদে কোন সাহায্য করতেই পারলো না।
পিঁপড়া আপন মনে বলল,’ বল বল আপনা বল। বন্ধু আমি কখনো অন্যের উপর নির্ভর করি না। নিজের বিপদে নিজের বুদ্ধি ,নিজের শক্তি কাজে দেয়। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি আমি আত্ম রক্ষায় ব্লাক বেল্ড পাবার আশায় অনেক পরিশ্রম করেছি।’
হাতি নিজের বিশাল দেহটার কথা ভাবল। তারপর বলল, ‘হ্যা হ্যা তুমি ঠিকই বলেছ।’