Home কিশোর গল্প দাস (কিশোর গল্প)

দাস (কিশোর গল্প)

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

বহু দিন পর আনেক গুলো হরিণ একত্রে এদিকটায় পানিতে নেমেছিল। কুমিরগুলো তার কয়েকটাকে ধরে খেতে পেরে খুবই আনন্দ করছে। কুমিরদের মাঝে যে বড়। সে বলে উঠল,’হরিণের পালটা সহজে আর এদিকটায় আসবে না। ওদের সাথে যাদেরই দেখা হবে, মানে অন্য প্রানীদের দেখা হবে, তাদেরই ওরা আমাদের কথা বলে দিবে। এদিকে সহজে কেউ আসবে না। চল,আমরা জায়গাটা বদলাই’।

তারা সবাই বড় কুমিরের কথা মেনে নিল । তারা নতুন যে জায়গাটা পছন্দ করল সেখানে পানি খুব একটা গভীর নয়। তবে রোদ পোহাবার জায়গাগুলো বেশ ভালো লেগেছে তাদের। একদিন সেখানে বাঘ এল পানি পান করতে। এসে দেখল কয়েকটা কুমির রোদ পোহাচ্ছে। বাঘ অবাক হল। কুমিরদের এ বনের আশে পাশে আগে কখনও দেখেনি ।

বাঘ বলল,’ আমার রাজ্যে একি আনাচার ! পানির প্রানী তোমরা পানিতেই থাকো, আমার রাজ্য থেকে চলে যাও ‘।

দূর থেকে বয়স্ক কুমির টা বাঘ দেখতেই সামনে চলে এলো। তারপর সাদা মাটা গলায় বলল,তুমি কে? জানতে পারি’?

বাঘ চারদিকে তাকাতে তাকাতে বলল, আমি বনের রাজা ।’

‘রাজা! চমৎকার ! আমরা খুবই আনন্দিত বনের রাজা কে আমাদের মাঝে পেয়ে। তা শুনেছি তোমাদের বনে আনেক গুলো হরিণের দল থাকে। হরিণ আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে ‘।

বাঘ বিস্মিত হল ! ‘তোমরা সবাই পানিতে নামো। নেমে যাও। আমার রাজ্যে এসব হবে টবে না। আমার রাজ্য ত্যাগ কর’।

বয়স্ক কু্মির শান্ত গলায় বলল,’হে মাটির রাজা ! আমাদের রাজ্য হচ্ছে পানি। আর আমি পানির রাজা। আমাকে তুমি মহা রাজা বলে ডাকতে পারো। আমি পানির মহা রাজা ঘোষণা করছি যে এখন থেকে তোমাদের বনের কেউ পানি পান করতে পারবে না, যতক্ষণ প্রতিদিন আমাদের সবার খাবার হরিণের ব্যবস্তা না হবে’।

বাঘ রেগে গেল। ‘এসবের মানে কি !’ হুলুংকার দিয়ে উঠল।

কুমির ভারী গলায় বলল,’তুমি বনের রাজা কিন্তু তুমিও পানি পান কারতে পারবে না। কারন মহা রাজার আদেশ করা হয়ে গেছে। বাঘ কুমিরের কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। বাঘ দেখল আজস্র কুমির পানিতে! চমকে উঠল! এ অবস্তায় পানি পান সম্ভব না। পানি না হলে কি চলে!

বাঘ সরে এলো জায়গা থেকে। এমন অদ্ভুত ধরনের বিপদে আগে কখনই পরেনি! কখনও শোনেনি! ভাবতে ভাবতে কেটে গেল আনেক সময়। প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। বাঘ গেল নদীর অন্য দিক টায় । সেখানেও কুমির ! বাঘ দেখল কুমিরের মহা রাজা কে ভেসে আসতে।

কুমিরের মহা রাজা হাসি ভরা গলায় বলল,’ কি ঠিক করলে?’ ‘ কি?’ বিরক্ত গলায় বাঘ বলল। ‘ যদি চাও পানি তবে দিতে হবে হরিণ ‘।

‘সেটা কি করে সম্ভব’ ? বাঘ উত্তেজিত হয়ে বলল।

‘তুমি হরিণের পালটাকে তাড়িয়ে আনবে, ব্যস’ ।

বাঘ আঁতকে উঠে ভলল,‘কি বকছ তোমরা !’

‘পানি চাইলে আমাদের প্রিয় খাবারতো দিতেই হবে। আরে তুমি তো কেবল হরিনের পালটা তাড়া দিয়ে আমাদের একটু সাহায্য করবে, এর বেশী কিছু কি চাচ্ছি না’।

বাঘ ঘাবড়ে গিয়ে বলল,‘বনের রাজাকে হুকুম করছ’ !

কুমির খুবই শান্ত গলায় বলল,‘এভাবে ব্যপারটা দেখছ কেন ! আমি কি বলেছি যে, এতদিন যে পানি পান করেছ, তার খাজনা দিতে হবে।’

বাঘ অনুরোধের স্বরে বলল,‘ আচ্ছা এখন আমাকে পানি খেতে দাও’।

‘রাজা কি তবে মহা রাজার হুকুম অমান্য করতে চাইছে ! আগে ভোজ তারপর পানি।’

বনের রাজা পানি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বনের চার দিকে ভাল করে দেখলো, গাছগুলোও দেখলো!

আর সেদিন থেকে তাই হল, বনের রাজা বাঘ, কুমীর মহা রাজার গোলাম হয়ে গেলো!

You may also like

Leave a Comment