মোঃ নোমান সরকার

খান, চেঙ্গিস খানের নাম শুনেছ? হুম, আমি জানি তোমরা সবাই চেঙ্গিস খানের নাম শুনেছ। ইতিহাস জানা প্রত্যেকেই তার নাম জানে। কারন তিনি ছিলেন ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত জেনারেল। তিনি জয় করেছিলেন পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি অঞ্চল। কিন্তু সব জয়ের পিছনের গল্প হয় খুব ভয়ানক সব ঘটনা। চেঙ্গিস খানের রাজ্য জয়ের পদ্ধতি ছিল খুবই ভয়াবহ। এই জয় করতে গিয়ে তিনি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন প্রায় ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষ। বলা যায়, তিনি তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১১% মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন।
চেঙ্গিস খান তার মূল নাম নয়। ‘চেঙ্গিস খান’ এই নাম তার উপাধি। তার প্রকৃত নাম তেমুজিন। সেই অঞ্চলে তেমুজিন নামের অর্থ আয়রন ওয়ার্কার।
১১৬২ থেকে ১১৬৭ সালের মধ্যে কোন এক বছরে চেঙ্গিস খানের জন্ম মধ্য এশিয়ার দেশ মঙ্গোলিয়ায়। তোমরা যদি বিশ্ব মানচিত্রটি দেখ, তবে মঙ্গোলিয়া দেশটি দেখতে পাবে বর্তমান চীন আর রাশিয়ার মাঝখানে। তবে দেশটির ১ শতাংশের কম ভূমি চাষাবাদের উপযোগী বলে পৃথিবীর সব এলাকা থেকে এটি ভিন্ন রকমের জনপদ। প্রবল শীত,ধূলিঝড়, খড়া সহ নানা প্রতিকূল অবস্থা সব সময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের উপর ছায়া ফেলে রেখেছে। এখানে হাজার বছর ধরে মানুষ যাযাবর। পশুপালনই তাদের মূল পেশা।
সেই সময় বিশাল সেই তৃণ চরণ ভূখন্ডে একক কোন জাতি বসবাস করত না। মানুষগুলো বিভক্ত ছিল গোত্রে গোত্রে, দলে উপদলে। তাতার, টারকিক, মঙ্গল গোত্রের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে। তেমুজিনের পিতা ছিলেন মঙ্গোল একগোত্র প্রধান। মঙ্গোল রীতি অনুসারে তের বছর বয়সে মঙ্গোলদের আরেক গোত্রের মেয়ে বোর্তে সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় মঙ্গলদের চিরশত্রু উপজাতীয় তাতার গোষ্ঠীর লোকেরা তেমুজিনের বাবা ইয়েসুগিলকে হত্যা করে। তেমুজিন শপথ নেয় চরম প্রতিশোধের এবং নিজেকে ঘোষনা করেন গোত্র প্রধানের। কিন্তু এই বালকে নেতাকে মানতে নারাজ বলে তাদের পরিবারকে বিছিন্ন করে রাখা হয়। চরম অভাব অনটনে অবস্থা এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে খাবার চুরির কারনে নিজের ভাইকে সে হত্যা করে।
চরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তেমুজিন বড় হয়ে উঠে। আর সে হয়ে উঠে দুর্ধর্ষ এক কিশোরে। ১৬ বছর বয়সে তেমুজিন বিয়ে করে নিয়ে আসে বোর্তেকে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শুরু হয় তার বিজয় যাত্রা। তার ডাকে সাড়া দেয় হাজার হাজার মঙ্গোল। তিনি সুসংগঠিত করেন বিশাল এক বাহিনী। উচ্চাভিলাষী তেমিজিন এই বাহিনীকে ১০জন, ১০০ জন, ১০০০জন, ১০,০০০জনের দলে ভাগ করে আধুনিক যুদ্ধ দলে সুসজ্জিত করেন। এই সময় প্রত্যেক সৈনিক নিজেদের রসদ বহন করত।

১১৮৩ সালে মঙ্গলদের এক সমাবেশে তাদের গ্রেট খান ঘোষনা করে নাম দেওয়া হয় চেঙ্গিস খান। সেই থেকে তেমুজিন হয়ে উঠে চেঙ্গিস খান। তাদের ভাষায় এই নামের অর্থ দামি যোদ্ধা। ১২০৬ সালে তাকে অভিহিত কর হয় খান অব খান্স বা কিং অব কিংস। এর পর থেকে চেঙ্গিস খান রাজ্য সম্প্রসারণে মন দেন।