• মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ
Samogro
শিশুতোষ গল্প

আদর যত্ন [শিশুতোষ গল্প-৪]

by Admin June 28, 2019
written by Admin

আদর যত্ন

মোঃ নোমান সরকার

এক ছিল বোকা হাতি ,তার ছিলো না কোন সঙ্গী সাথী। সারাদিন সে বনের গভীরে দল ছুট হয়ে ঘুরে বেড়াত। যেন সে উড়েই বেড়াত। হাতির দলেরও তাকে নিয়ে কোন মাথা ব্যথ্যা ছিল না। কেউ সেদিকে তাই নজর দিত না।

একদিন দুপুরে সে নামতে চাইলো পুকুরে। এমন সময় সে দেখলো, মাথাটাও ঝুঁকালো। একটু দূরে একদল কাঠবিড়ালী, দাঁড়িয়ে। সে খানিকটা এগিয়ে গেলো, কাঠবিড়ালীর দলও ছুটে পালালো। সে এসে দাঁড়ালো সেখানে, দাঁড়িয়ে ছিল কাঠবিড়ালীর দল যেখানে। সে তাকিয়ে দেখলো, সব কাঠবিড়ালীরা গাছে উঠে যেতে লাগলো। আর গিয়ে হাতির দিকে শত শত ফল ছুঁড়ে মারতে লাগলো। আর সেই সাথে জুড়ে দিল কান্না। হাতি বলল, ‘ফল ছুড়ে মেরনা, আর না, আর না। পাই যে ব্যাথা। বলছি, শুনছো কি কথা? হয়েছে কি বলো?  কী হলো, কী হলো?’ ‘  

কাঠবিড়ালীরা এক যোগে বলল, তুমি আমাদের বাগানে ঢুকে পরেছো!  আমাদের তুমি কষ্ট দিয়েছো! তাকাও তো নীচে, যেওনা ভাই পিছে।‘

হাতি ওদের কথা শুনলো আর বোকা বনে গেলো। হাতি পিছনেও গে্লো না, নড়লো না। হা করে নীচে তাকালো আর চারদিক দেখতে লাগলো। সে দেখলো,সে দেখতে পেলো, ছোট ছোট অজস্র গাছের চারা গিয়েছে মারা। তার পায়ের নীচে হয়েছে ভর্তা! যে পথে সে পা ফেলে ফেলে এসেছে, সব চারাই সে মেরেছে!

সে দেখেইনি, জানেই না তবুও হয়েছে এই কাজের কর্তা। হাতি দ্রুত পা উঠালো। আর অমনি কাঠ বিড়ালীরা আবার কান্না জুড়ে দিলো। তা শুনতেই সে চমকে ফিরে তাকালো। তাই দেখে কাঠবিড়ালীরা মাথা ঝাঁকালো।

একটা বড় কাঠবিড়ালী গাছ থেকে নেমে এলো। বলল,’ ভাই, এগিয়ে যেও না। পিছনেও ফিরে যেওনা।’ তারপর একটু চুপ থেকে বলল, সাবধানে ফে্লো পা, দিও না আমাদের মনে ঘা। বাগান করে দিয়েছ শেষ, কি আছে আর অবশেষ!’    

হাতি চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। তারপর নিজেকে কি সব বুঝালো। তারপর একটু সময়ও নিলো। তারপর বলল, ‘চুপ ,চুপ ,চুপ। আমার মনেও কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি সরে যাচ্ছি, যেমন করে এসেছি।‘

হাতি এক পা এক পা করে পিছনে গেলো। যেভাবে এসেছি্লো। হল না কোনই এলোমেলো। ঠিক ঠিক পিছনে সরে গিয়ে বিষয় কি, জানতে চাইলো।  

বড় কাঠবিড়ালী বলল,’ এটা আমাদের বাগান। অনেক যত্ন করে বানানো বাগান।  সৃষ্টিকর্তা বানিয়ে দিয়েছেন জঙ্গল। তিনি সকলের চান মঙ্গল। আর আমরা বানাই বাগান। আর গাই গান। এখানে আমরা আমাদের শিশুদের শেখাই কি করে গড়ে তুলতে হয় বাগান। কি করে গাইতে হয় গান। শেখাই, কি করে নিতে হয় গাছের যত্ন। যদি যত্ন না নিয়ে হই অন্য কাজে মগ্ন তবে মরে যাবে তা, হোক সে যত বড় রত্ন। এই শিক্ষাই বড় দীক্ষা।’

একটু থামলো। সাথে সে ঘামলো। তারপর আবার বলা করলো শুরু,’ প্রত্যেক  শিশু কাঠবিড়ালী একটি করে ছোট গাছ লালন করে, যেমন করে আমরা বলি তেমন করেই পালন করে। শত শত শিশু কাঠবিড়ালী একটা করে গাছের যত্ন করে, এটা তার রত্ন বলেই মনে করে। যত্ন করা শেখে। আর ভবিষৎ নিয়ে কত কিছু লিখে। আর তারা এত কিছুই লিখে। এতে তাতে তাদের জ্ঞান যায় পেকে। আর তখন শিশু কাঠবিড়ালীরা বুঝতে পারে জীবন যে কতটা যত্ন নির্ভর। শিখে মায়া, কি করতে হয়, এই তো টিকে থাকার সবচেয়ে বড় ছায়া। এটা জানতেও শেখে, বুঝতেও শেখে। শিখে বলেই কাঠবিড়ালী বড় হয়ে নিজেদের ভালোবাসতে শিখে। তারা একটুতে যায় না বেঁকে। বুঝে যায় কিভাবে তারা যাবে টিকে। নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে? নিজেকে আর অন্যকে হাসাবে, আনন্দে ভাসাবে? বলো? তুমিই বলো? এবার তুমি কিছু বলো।’    

হাতি বলল,’আমি খুব লজ্জিত, খুবই লজ্জিত। তোমাদের বাগান লন্ড ভন্ড করে  দিবার জন্য। নিজেকে মনে হচ্ছে খুবই নগন্য।’   

কাঠবিড়ালী বলল,’ আচ্ছা তুমি যখন তোমার ভুল বুঝেছো। এখানেই তো তুমি নতুন কিছু শিখছো। তাই তোমাকে আমরা দিলাম ক্ষমা করে, আমরা আমাদের বাগান আবার বানিয়ে নিব একে অন্যের হাত ধরে ধরে। এখন তুমি যদি বুঝে থাকো, তবে আমরাও খুশি। কি আছে আনন্দ এর চেয়ে বেশি। কেউ কিছু শিখেছে। এর চেয়ে আর বড় কিবা এ জগতে হয়েছে।‘

হাতি বলল,’ আমি তো বোকা হাতি তাই আমার নেই সঙ্গী সাথী। বোকা বলে আমি খুবই কমই বুঝি। আমি তাই বন্ধু খুঁজি। আমাকে কি বাগানের বিষয়টা ভালো করে বুঝাবে? এতে বাগানের যে ক্ষতি করেছি, তার দুঃখ হয়ত ঘুচাবে। শেখাবে মন্ত্রটা?’       

সবার বড় কাঠবিড়ালীটা হেসে ফেললো। তারপর বলতে লাগলো,’ শিশুরা যখন গাছ লালন পালন করে। যেন তারা মন দিয়ে বই পড়ে। তখন এই কাজ করতে করতে শিশুরা জেনে যায়, জীবন কে সুন্দর করতে দায়িত্ব আর কর্তব্য যে সব চেয়ে জরুরী বিষয়। গাছ লালন পালন করতে গিয়েই তারা বুঝে ফেলে, আদর বা যত্ন না করলে কিছুই বাঁচে না, টিকেও না। তাই সুন্দর কিছুই থাকে না। গাছ বড় হয়, তারও বড় হয়। মায়ায় মিলে ছাড়া। হুম, এটাই মন্ত্র।’  

হাতি বলল,’ আরে আরে তুমি যা বলতে চাইছো,আমি ঠিকই বুঝে ফেলেছি। তারমানে আমি তো দেখছি বোকাই না। একেবারেই বোকা না!’

হাতি কাঠবিড়ালীদের কাছে বাগান নষ্ট করার জন্য অনেক অনেক ক্ষমা চাইলো আর নিজ দলে ফিরে গেল। ফিরে গিয়ে হাতি ছোট ছোট গাছের চাড়া নিলো আর  শিশু হাতিদের হাতে দিলো। দিয়ে বলল,’শুনো তবে মন দিয়ে, গাছ আমাদের বন্ধু। গাছই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কেবল নিজেদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে থাকলে তো চলবেনা। নিজেদের কথাই কেবল বলবে না। বন্ধু কে বাঁচাতে হবে। বন্ধু তখন তোমাকেও কাছে নিবে। তবেই না আমরা টিকে থাকব। তখন আমরা  সুগন্ধিও গায়ে মাখব। আর বাঁচাতে হলে আদর করতে হবে আমাদের চারপাশ। হবে না আর সর্বনাশ। দেখো, দেখো গাছের পাতাগুলো দেখো, কি করে হয় বড়? সময়ও লাগে কত! আদর যত্ন ছাড়া কিছুই টিকে থাকতে পারেনা। আদর যত্ন ছাড়া বিপদও ছাড়ে না। তাই গড়তে হবে ভালো সব অভ্যাস। আর যেন না হই আমরা কারো উপহাস।’

হাতির এইসব কথা শিশু হাতিরা তেমন কিছু বুঝলো না। তবে তারা প্রচন্ড খুশি হয়ে গাছের চাড়া নিলো। আর গাছের চাড়া আদর করে লালন পালনের কথা দিলো।

তবে হাতির দলটা ঠিকই বুঝলো হাতির কথা। এতদিন তারা ভেবেছিলো এই হাতিটা ভারী বোকা। কত ছোট ভেবেছে হাতিটা নিয়ে। সেই কথাই আলোচনা হতে লাগলো হাতির দলের ভিতরে।

June 28, 2019 6 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

দৈত্য আর রাজকন্যা (পর্ব–১) [শিশুতোষ গল্প-৩]

by Admin June 27, 2019
written by Admin

দৈত্য আর রাজকন্যা (পর্ব–১)

মোঃ নোমান সরকার

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক বিশাল নির্জন দ্বীপে বাস করত একটা  দৈত্য। বিশাল লম্বা সে। যেন সে আমাদের একটা বড় আর উঁচু গাছের কাছাকাছি লম্বা। দেখতে  অসুন্দর হলে কি হবে , তার হৃদয় ছিল অনেক অনেক ভালো, অনেক বড় । বিনা কারনে দ্বীপের কোন পশুকে হত্যা করত না। কারো সাথে ঝগড়া নেই তার।   সারাদিন সমুদ্র, দ্বীপের নদী, পুকুর থেকে মাছ ধরে মজা করে করে খাওয়াই যেন তার পছন্দের কাজ। আর বিশাল নির্জন দ্বীপটা ঘুরে বেড়াতেই তার ভালো লাগত। দ্বীপের ছোট বড় পাহাড়ের আছে অনেক। দৈত্য আশে পাশে প্রতিদিন নতুন নতুন  জায়গা ভ্রমনের করত। এটাই সবচেয়ে বড় শখ ছিল তার। এভাবেই দিন কাটে তার।

একদিন হল কি, বিশাল নির্জন দ্বীপটায় সে  ভ্রমণে বের হতে গিয়ে অনেক দূরে চলে এসেছিল। কয়ে দিনের পথ পাড়ি দিয়ে দ্বীপের শেষ দিকে যেখানে সমুদ্রের তীর আছে সেই জায়গায় ঘুরতে গেল।  সমূদ্রে সাতার কেটে ডুব দিয়ে অনেক নীচে গিয়ে বড় মাছদের সাথে ঘুরে বেড়াতে লাগল। বেড়াতেই যেন তার সব আনন্দ। কিন্তু পরের দিনই ঝড় শুরু হল, অনেক বড় ঝড়। ঝড়ের দিনে দৈত্য সমূদ্রে নামার সাহস করল না।  ঝড় থেকে বাঁচার জন্য সে পাহাড়ের অনেক নীচে গিয়ে বসে থাকল। যখন তার মনে হল ঝড় থেমে গেছে সে দৌড়ে এল সমুদ্রের তীরে। সে আগেও দেখেছে ঝড় হলে সমুদ্রের তীরে নতুন অজনা অচেনা কিছু না কিছু পাওয়া যায়। সে তীর ধরে হাঁটতে লাগল, হাঁটতেই লাগল। বেলা প্রায় শেষ এমন সময় সে কুড়িয়ে পেল একটা ছোট মেয়েকে। সে অনেকক্ষণ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল। সে বুঝল মেয়েটি মরেনি, বেঁচে আছে। তার আনন্দের সীমা রইল না। সে ছোট মেয়েকে উঠাল তার হাতের তালুতে। তারপর সে তাকে হাতের তালুতে করে নিয়ে ছুটল। তাকে কয়েকদিনের পথ পাড়ি দিতে হবে, তবেই সে ফিরে যাবে তার গুহায়, তার নিজ  বাড়িতে । 

এর আগে এমনি ভাবে সে একবার মানুষ কুঁড়িয়ে পেয়েছিল। তার নাম ছিল জন।  সেও অনেক অনেক আগের কথা।  বহুকাল সেই মানুষটা ছিল  তার সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল। ঝড়ের পরেই এ দ্বীপে সমুদ্রের তীরে তাকেও ঘুমান্ত অবস্থায় পেয়েছিল সে। কিন্তু সে ছিল এই মেয়েটার তুলনায় অনেক লম্বা। দৈত্যটা তাকে নিয়ে এসে আদর যত্ন করে রেখেছিল। জন তাকে শিখিয়েছিল ভাষা। ভাষা শিখার পর অন্য রকম  হয়ে উঠেছিল দৈত্যের জীবন। সে তেমন কথা বলতে না পারলেও কথা বুঝার বিষয়টি শিখেছিল। নতুন নতুন শব্দ শিখায় আর জানায় সে যেন নিজেকে প্রকাশ করতে শিখেছিল।

তার কথা বলার উচ্চারণ ছিল ভাঙ্গা ভাঙ্গা, জড়িয়ে যাওয়ার মতনই। সে কথা বললেই তখন জন নামের লম্বা  মানুষটি কেবলই হাসত। জন অনেক গল্প করত বা সারাক্ষণ কথা বলত। দৈত্য মুগ্ধ হয়ে শুনত। দৈত্য প্রতিদিন শিখে নিত নতুন নতুন শব্দ আর নতুন নতুন বিষয়। কিন্তু জন তার কাছে শেষ পর্যন্ত থাকেনি। হঠাত করে একদিন পালিয়ে গিয়েছিল বা এমন হতে পারে সে যে নৌকা বানিয়েছিল তা ডুবে গিয়েছিল।

দৈত্য যখন তাকে খুজে পেল তখন সে দেখল, সমুদ্রে জন নৌকায় করে  যাচ্ছে। দৈত্য ক্রমাগত ডাকছিল। কিন্তু জন ফিরে আসেনি। জনের কাছে নৌকার গল্প অনেক শুনেছিল দৈত্য, তাই সে বুঝেছিল সাহসী মানুষ জন ফিরে আসবে না। নৌকায় করে যখন অনেক দূরে চলে গেল। দৈত্য সমুদ্রে সাতার কেটে তার কাছে পৌঁছানোর অনেক চেষ্টা করেছিল আর কেঁদে কেঁদে ডাকছিল। কিন্তু সে  ফিরেনি। নৌকা এক সময় দৈত্যের দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গিয়েছিল। বহু দিন দৈত্য মন খারাপ করে কেবলই সাড়া দ্বীপ ঘুরে বের বেড়িয়েছে। এই দ্বীপের সব জায়গায় জনকে সে নিয়ে গেছে। কেন সে বলে গেল না? কেন?  বলে গেলে কি হত! বলে গেলে কি আটকে রাখত? খুব কষ্ট পেয়েছিল দৈত্যটা।

জনের কাছে দৈত্য শিখেছে আগুনে ঝলসিয়ে মাছ খাওয়া। জেনেছে কি ধরনের ফল মানুষ পছন্দ করে। আরো কত কি!  তাই সে ছোট মেয়েটার জন্য ফলমূল নিয়ে এল, ঝলসান মাছ একটা কলা পাতায় করে ঠেলে দিল গুহায়। ছোট মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছিল আরো দুই দিন আগে। দৈত্য পথে খাবার রেখে দিয়ে দূরে চলে যেত। সে আড়াল থেকে দেখে ছিল, মেয়েকে কাউকে খুঁজছে। খুঁজে কে তাকে খাবার দিয়ে যায়, তাকে দেখতে চাইছিল, সম্ভবত। সারাদিনের পর যখন মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেত, তখন নিরবে দৈত্যটা বের হত দেখতে আসত মেয়েটিকে।  দেখত মেয়েটা  খাবারের সবটুকু খেয়েছে কিনা। তারপর ঘুমন্ত মেয়েটাকে হাতের তালুতে উঠিয়ে নিয়ে ছুটত নিজের গুহার দিকে। মেয়েটার যেন ঘুম না ভাঙ্গে এভাবেই সে তাকে হাতে নিত, এই কৌশলটা শিখে ছিল জনের কাছে। এভাবেই দুইদিন পরে সে  গুহায় পৌছে ছিল।
দৈত্য বুঝে তাকে হঠাত করে দেখলে ছোট মেয়েটা ভয় পেয়ে যাবে। তার বিকট চেহারার কোন মানূষের মিল নেই আর জন বলেছিল এত বড় দেখতে কোন মানুষই নাকি নেই দুনিয়ায়। তাই তাকে দেখে ভয় পাবে ছোট মেয়েটি। এই ভয়ে সে দূরে দূরেই থাকে।

গুহায় কয়েকদিন পরে দিনে দৈত্য যখন খাবার হাতে এল তখন দৈত্যটাকে মেয়েটি দেখে ফেলল। মেয়েটির যে ঘুম ভেঙ্গেছে বা সে গুহার বাইরে এসেছে দৈত্য সেটা বুঝতেই পারেনি। দেখতেই মেয়েটি প্রচণ্ড জোরে ”অ্যাঁ অ্যাঁ ”,করে এমন চিৎকার দিল যে দৈত্যই ভয়ে বনে পালিয়ে গেল। দৈত্যকে দেখে মেয়েটি যে ভয় পেয়েছে, এর জন্য সে লজ্জায় পড়ে গেল।  সে যেন ভয় পেয়েছে এমনি ভাবে ভয়ে ছুটল বনের দিকে। অনেক খন পরে দৈত্যটা আবার এসে উঁকি দিল কিন্তু সেই একই গলায় চীৎকার ”অ্যাঁ অ্যাঁ! দৈত্য আবার পালিয়ে গেল বনে ।

কুঁড়িয়ে পাওয়া জন তাকে প্রথমে দেখে ভয় পেয়েছিল, পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল। দৈত্য বাধা দেয়নি। কিন্তু মেয়েটি পালিয়ে যেতেও যাচ্ছে না। দৈত্য ভেবে পেল না সে কি করবে।

লাগল । যেন কিছুতেই সে হাসি থামবে না ।

দৈত্য নিজ মনে বার বার বলেছে ,” আমি বন্ধু ,আমি বন্ধু। বন্ধু শব্দটা কি এটা জানতে পেরেছিল ভাষা শিখার পরে। সেটা হয়েছিল অনেক অনেক দিন পর। একটা একটা করে শব্দ শিখেছিল। জনের ছিল অসম্ভব ধরয্য।

পরের দিন সকালে খাবার দিয়ে দূরে এসে খুবই নরম আর সুরেলা গলায় দৈত্য বলতে লাগল , ” আমি বন্ধু ,আমি বন্ধু ”। অনেক বার এই কথা বলে সে আবার বনে পালিয়ে গেল।

পরের দিন গুহায় ফিরে দূর থেকে বলতে লাগল, আমি বন্ধু আমি বন্ধু।  সেই কথা কাজ হল। সে দূর থেকে দেখল  মেয়েটা অবাক হয়ে উঁকি দিয়ে তাকে  দেখছে । নরম গলার কথা বলা মনে হয় মেয়েটার পছন্দ হয়েছে । দৈত্য কলা পাতায় করে মাছ আর ফলমূল দিয়ে বনে পালিয়ে গেল । এভাবে একদিন যায় ,দুই দিন যায় । কয়েকদিন যেতে না যেতে মেয়েটার সাথে দৈত্যের বন্ধুত্ব হয়ে গেল । দৈত্য জানল , এই হচ্ছে রাজার মেয়ে ,রাজকুমারী ননী । দৈত্য রাজকুমারীর দিকে আঙ্গুল তুলে বারবার বলতে লাগল ‘ননী, ননী।‘

রাজকুমারী ননী দৈত্যকে বলেছে, সমুদ্র ভ্রমণে এসে ঝড়ে পরে জাহাজ ডুবে গেছে। সে ভেসে এসেছে এই দ্বীপে।  

দৈত্য তাকে কাঁধে করে সাড়া বন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল । এখানে যায় ওখানে যায় । এখানে যায় ,সেখানে যায় । বড় বড় গাছের সমান হওয়ায় এ ফল খায় ,ও ফল খায়। তার কেবলই জনের কথা মনে পড়ে।

একদিন দুপুরে দৈত্য গেছে সমুদ্রে । এসে দেখে রাজকুমারী নেই । নেই নেই কোথাও নেই । দৈত্যটা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল । কাঁদতে কাঁদতে কয়েকদিন কেটে গেল । সে কাঁদে আর সারা বনে রাজকুমারীকে খুঁজে বেড়ায় । একজায়গা শতবার করে খুঁজে যেতে লাগল ।

পরের দিন ভোরে সে ঘুমতে উঠতে গিয়ে দেখল তার হাত , পা ,মাথা গাছের শিকড় দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করছে কেউ।  সে হুলুংকার দিল । সে দেখল কয়েকজন মানুষ। দৈত্য গাছের শিকড়গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলল। তখন লম্বা করে একজন মানুষ এগিয়ে এল। দৈত্যের মনে হল এটা জন। জনের মতনই দেখতে একজন মানুষ এগিয়ে এসে বলল ,” দৈত্যে আমরা তোমাকে বন্দী করেছি। তুমি নাড়াচড়া বন্ধ কর। তুমি নাকি কথা বলতে পার ! আমি জন্মের পর এমন অদ্ভূত কথা কখনো শুনিনি । তুমি কিছু বল ,আমরা একটু শুনি । বল বল বল । কিছু একটা বল ”।

দৈত্য অবাক হয়ে খেয়াল করল আসলেই মানুষটা দেখতে  অনেকটাই জনের মতন। তার মনের মধ্যে জনকে কুঁড়িয়ে পাওয়া আর জনের চলে যাওয়ার স্মৃতি ভেসে এল। তখনই তার ছোট মেয়েটার কথা মনে হল। সে আবার হুলংকার দিল।

লোকটা বলল ,” আমি সেনাপতি বলছি । চেঁচামেচি করে লাভ হবে না । তুমি রাজবন্দী ” । ঠিক তখনই দৈত্য উঠে বসল।

সেনাপতি চেচিয়ে বলল ,”আরে আরে ! এটা কি হল ”?

সেনাপতির সাথে থাকা সৈন্যরা যে যেদিকে পারল পালাতে চাইল ।

দৈত্যটা সেই সুযোগ না দিয়ে অনেকগুলো সৈন্যসহ সেনাপতিকে দুই হাতে চেপে ধরল ।

সেনাপতি তেমনি চেঁচাতে চেঁচাতে বলল, ”শুনেছিলাম তুমি নাকি খুব ভালো । এখন তো তা মনে হচ্ছে না ”!

দৈত্য আরো কয়েকজন সৈন্যকে পা দিয়ে আটকালো ।

দৈত্য বলল, ” কে বলল? ”

সেনাপতি বলল, ”রাজকন্যা ”।

সেই কথা শুনা মাত্রই দৈত্যের চোখে বড় বড় হয়ে গেল।  দৈত্যে তার হাতের মুঠোর ভিতর থাকা অন্য সৈন্যদের ছেড়ে দিল, কেবল সেনাপতি কে রাখল । সেনাপতির দিকে তাকিয়ে বলল ,” নাম ?  জন ?’

 সেনাপতি বলল, আমার নাম এরিক। ‘

দৈত্য বলল, ননী? দাও? । বলে নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল।   

সেনাপতি সাহস করে জোর গলায় হাসল। বলল, সেটা হতে পারে না। তুমি একটা ভয়ানক দৈত্য।  

দৈত্য বলল, ‘ননী? দাও?’ হাত দিয়ে ছোট একটা কিছু বুঝাল। সেনাপতি বুঝল ,দৈত্য রাজকুমারীর কথা বুঝাচ্ছে।  সেনাপতি  নিজেকে দৈত্যের হাতের মুঠ থেকে ছাড়িয়ে নিবার আপ্রান চেষ্টা করতে করতে বলল , ” তুমি দুষ্ট দৈত্য ! তুমি আমাদের রাজকন্যাকে এখানে বন্দী করে রেখেছিলে । এবার তোমাকে আমরা তার সাজা দিব । তোমাকে মজা দেখাব । সেই জন্য আমরা এখানে এসেছি। তোমাকে যে কোন উপায় বন্দী করব ”।

দৈত্য আরেক হাত নিজ গালে রেখে বলল ,” আচ্ছা ”?

সেনাপতি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল, দৈত্যটা আচ্ছা শব্দটা কত সুন্দর করেই না বলল। তারপরে অবিকল মানুষের মতন অবাক হবার ভান করে গালে হাত রাখল। মানুষের কাছে মানুষের মতন করে কত সুন্দর করে না শিখেছে!


সেনাপতির ইচ্ছে করছে তরবারি দিয়ে দৈত্যের লম্বা নাকটা কেটে দিতে । কিন্তু তরবারি আটকে আছে ,বের করার কোন উপায় নেই। সেনাপতি দৈত্যের গালে রাখা হাতটার দিকে তাকিয়ে রেগে চিৎকার করে বলতে লাগল ,” আমাদের রাজকন্যা  মানা করেছে , তা না হলে সেদিনই তোমাকে বাতাস বানিয়ে ফেলতাম। বাতাস বানিয়ে ফেলার মানে বুঝ ?  ,তুমি কি করেই বা বুঝবে ”! দৈত্য না সূচক মাথা নাড়াল ।

দৈত্য বলল ,” ননী?  দাও“?

সেদিন ঝড়ে জাহাজ উল্টে গেলে মোটামুটি সবাই প্রায় বেঁচে গেলেও রাজকন্যাকে তারা খুজে পাচ্ছিল না।  প্রায় নয় দিন পরে তারা রাজকন্যকে খুজে পেয়েছিল সাথে এই দৈত্যটাকে। রাজকন্যা কাঁধে বসা ছিল এই দৈত্যের। কাধে বসে রাজকন্যা ফল খাচ্ছিল। সবাই তা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল।  যাই হোক, শেষ পর্যন্ত  আমরা আমাদের রাজকন্যাকে একটা দুষ্ট দৈত্য থেকে উদ্ধার  করতে পেরেছি। 

দৈত্য আবার চিৎকার করে বলল ,” ননী?  দাও“?

সেনাপতি কাঁদবে না হাসবে বুঝতে পারছে না ।

সেনাপতি বলল, আমরা দেশে ফিরে গিয়ে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ করব। তারপর বড় দল নিয়ে এসে তোমাকে বন্দী করব।

দৈত্য বিরক্ত হয়ে সেনাপতির গলা নকল করে বলল ,” নালিশ। নালিশ?

সেনাপতি দৈত্যের হাতের মুঠা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবার আবার চেষ্টা করল । তারপর কড়া গলায় বলল,” তুমি আমাদের রাজকন্যাকে বন্দি করে রেখেছে । আমাদের রাজকন্যাকে তুমি কাধে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছ ? যদি রাজকন্যা উচু কাধ থেকে যদি পরে যেত ? তাহলে কি হত ? তুমি জান রাজা তোমাকে সিদ্ধ ডিম বানাত ? সিদ্ধ ডিম তো আবার তুমি চিনো না ,নাকি চিনো ?

দৈত্য মাথা দুলিয়ে না সূচক উত্তর দিল । সেনাপতি মাথা ডানে আর বায়ে নিয়ে চোখ উপরে নিয়ে কি যেন ভাবল । তারপর চঞ্চল গলায় বলল ,” তুমি রাজকন্যাকে মাছের ফ্রাই খাইয়েছ না ”? দৈত্য মাথা দুলিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিল।

সেনাপতি বলল ,” রাজকন্যার কিছু হলে রাজা তোমাকে মাছের ফ্রাই এর মতন করে তোমাকে ভাঁজা ভাঁজা করে বানাত ”।

দৈত্য সে কথা শুনে হা হা হা করে হাসতে  খুব মজার কথা বলেছি । শুন দৈত্য । আমি রাজার সেনাপতি । রাজার লোক । আমাদের দৈত্য দানব ,রাক্ষস মেরে অভ্যাস আছে । তোমার চেয়ে বড় বড় দৈত্যের সাথে আমাদের অনেক অনেক যুদ্ধ হয়েছে । তুমি নিজেও জানো না তুমি কত কত বড় বিপদে আছ ?

সেনাপতি বলেই চলছে ,” তবে দৈত্য কথা বলতে জানে তা আগে কখনো শুনিনি । যাই হোক এখন তুমি ভেবে ঠিক কর ,আমাকে যদি নীচে নামাও , তবে আমি কথা দিচ্ছি , তুমি বেচে যাবে । তোমাকে বন্দি করা হবে না।

সেই কথায় দৈত্য শোনার পরে বার বার তার এক কথাই বলতে লাগল, ‘ননী ননী’?

সেনাপতি অবাক হয়ে দৈত্যেকে দেখতে লাগল।

সেনাপতি অনেক খন চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করতে করতে বলল ,” এবার আমাকে নীচে নামিয়ে দাও তো দেখি ।

দৈত্য অন্য সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে বল, ‘ননী? দাও’? ‘’

বলতে বলতে দৈত্য সেনাপতিকে নীচে নামিয়ে না দিয়ে  এক লাফ দিল। এক লাফে সে বহুদুরের পথ পারি দিল । সেনাপতিকে হাতে নিয়ে এক লাফে অনেক দূরে চলে এল দৈত্য ।

 অন্য সেনারা সব অজ্ঞদের মতন হা করে তাকিয়ে থাকল ।

সেনাপতি বোকাদের মতন চেঁচিয়ে বলল,” এটা কি হল ! আরে ,আরে এটা কি হল ”!

সেনাপতি মন খারাপ করে বারবার বলতেই লাগল ,” কি আশ্চর্য ! কি আশ্চর্য ”!

দৈত্য তাকে নিয়ে এল সমুদ্রের তীরে । তীরের কাছে উঁচু একটা জায়গা । দৈত্য দ্রুত হাত দিয়ে বালি সরিয়ে তার এক হাত সমান গর্ত তৈরি করল । গর্তে সেনাপতিকে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল ” ননী? দাও?

দৈত্যের এক হাত সেনাপতি জন্য তার উচ্চতার তিনগুন প্রায় । সে গর্ত এর অনেক নীচু থেকে চেঁচিয়ে বলল ” তুমি আমাকে আটকে রাখতে পারবে না । আর আমরা তোমাকে বন্দি করে নিয়ে যাব আমাদের দেশে ,সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থেক ”।

দৈত্য আবার গাঢ় গলায় বল, ননী? দাও?

দৈত্য তাকে গর্তে রেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল । আর  অনেক খন পরে ফিরে এল কয়েকজন সৈন্য কে দুই হাতে মুঠো করে । তারপর আগেরটার মতন অনেক গুলো গর্ত করে কয়েকজন সৈন্য রাখল সেখানে । তারপর সেনাপতি কে গর্ত থেকে তুলে এনে আবার বল, ননী? দাও?’’

সেনাপতি বিপদটা বুঝলেন। অন্য সৈন্যরাও বুঝলেন, রাজকন্যকে না দিলে রেহাই নেই।

দৈত্য গর্তের পাশে বসে রইল। অনেক খন পরে বাকী  সৈন্যরা রাজকন্যাকে নিয়ে ফিরে এল। রাজকন্যা দৈত্যকে দেখেই দৌড়ে  ছুটে এল। তখন দৈত্য তাকে কাঁধে নিয়ে ছুটে গেল দূরে। সেনাপতি আর সৈন্যরা হা করে তাকিয়ে রইল।

পরের দিন ভোরে সেনাপতির ঘুম ভাঙ্গতেই দেখল তার পাশে একটা বেশ বড় নৌকা। চোখ ঢলতে ঢলতে লাফিয়ে  উঠে অন্য সৈন্যদের ডেকে তুলতে গিয়ে দেখল দূরে দৈত্য হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আর কাঁধে রাজকন্যা।

রাজকন্য নেমে এল। সেনাপতিও দৌড়ে ছুটে এল রাজকন্যার দিকে। রাজকন্যা বলল, অনেক দিন আগে এই নৌকাটা  দৈত্যটা খুজে পেয়েছিল সমুদ্রের তীরে। দৈত্যের আচরনে যা বুঝেছি, সে এটা আমাদের উপহার দিতে চাচ্ছে। এটা করে এখন আমরা বাড়ি ফিরে যেতে পারব। দৈত্য তাই চাইছে।

সেনাপতি আবাক গলায় বলল, আমরা সবাই তাহলে বাড়ি ফিরে যেতে পারব? এটা অবিশ্বাস। এই দৈত্য তো দেখি ভীষণ ভালো।

সেই দিন আর যাওয়া হল না। দৈত্য মাছ ধরে আনল, মাছের ফ্রাই করল আর সবাই মিল মজা করে খেয়ে পরের দিন সকালে নৌকায় উঠে বসল।

 সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।  রাজকন্যা নৌকায় উঠে বসল। সেনাপতি আর সৈন্যরাও।  দৈত্য ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে। খুব জোরে জোরে সে বলে উঠোল, ‘ননী ননী, জন, জন।‘ নৌকা ছেড়ে দিল। রাজকন্যা চিৎকার করে বলল,আমার বাবা রাজা। তিনি জনকে খুজে বের করবে। আমি জনকে নিয়ে ফিরে আসব। কথা দিলাম। তোমাকে আমি ভুলে যাব না‘   

নৌকা ঢেউ এর ধাক্কায় দূরে সরে যাচ্ছে। দৈত্য এগিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। তার চোখে জল। বৃষ্টি পরছে। দৈত্যের চোখের জলের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে গেছে, সেই জল গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে সমুদ্রের জলে। দৈত্য আবার চিৎকার করে বলল, ‘ননী ননী । জন জন।‘’

June 27, 2019 0 comment
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

গল্প মা [শিশুতোষ গল্প-২]

by Admin June 27, 2019
written by Admin

গল্প মা

মোঃ নোমান সরকার

অনেক অনেক দিন আগের কথা। আমাদের দেশে এক গ্রামে বাস করত এক বুড়ি মা। তিনি একটুতেই রেগে যেতেন। আর একবার রেগে গেলে রাগ থামতই না। রেগে গেলেই মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেন। আর বলতেই থাকতেন। আর কটু কথা রেগে রেগে বলতেন। তিনি তার এক তলা পাকা বাড়িতে একাই থাকতেন। বাড়িটা বাজারের কাছাকাছি হওয়াতে অনেক মানুষ এই পথে যাতাযাত ছিল। বাড়ির সামনে মস্ত বড় বারেন্দা, বুড়ি মা সকালের রোদ পোহাতে বারেন্দায় এসে বসতেন বলে সবাই তাকে চিনত।

একদিন বুড়ি মায়ের অসুখ হল। কিন্তু কেউ  তাকে দেখতে এলো না। একদিন যায়, দুই দিন যায়। কেউ যখন দেখতে এলো না তখন বুড়ি মা বুঝলেন তার রাগের জন্য আর কটু কথা বলার জন্য কেউ তাকে পছন্দ করে না। তাই কেউ তাকে দেখতে আসেনি, খবর নেয়নি।

অসুখের দ্বিতীয় দিন থেকে তিনি অস্থির হয়ে গেলেন। আর অধীর হয়ে গেলেন কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্য। তিনি চেষ্টা করলেন খুব অল্প সময়ের জন্য বাইরে যেতে। কিন্তু নিজের শরীরটাকে এত ভারী মনে হচ্ছিল যে বেশীক্ষণ বাইরে থাকা হলো না। তিনি কুঁজো হয়ে বারেন্দায় হাঁটলেন, যাতে মানুষ বুঝে তিনি অসুস্থ। তাকে এভাবে হাঁটতে দেখেও কেউ এগিয়ে এলো না। তিনি ঘরে ফিরে আয়নার কাছে এসে বসলেন। অনেকক্ষণ বসে থেকে তিনি আয়ানার মানুষটিকে বললেন, ‘’ভালোকে সবাই ভালোবাসে। মন্দকে না।‘’

তার মনে হতে লাগল কত কথা। তিনি কারো সাথে ভালো আচরণ করেননি। কষ্ট দিয়েছেন, কষ্ট দিয়ে কথা বলেছেন কেবল। তাই তার বিপদে কেউ আসেনি। কেউ খবর নেয়নি। তিনি নিজেকে বললেন, আহা! আমি কি এতটা খারাপ, এতটা খারাপ কাজ করে ফেলেছি যে মানুষ আমাকে এড়িয়ে চলে! তিনি মনে মনে ঠিক করলেন,আর কখনো তিনি রেগে যাবে না, কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবেন না। আর কটু কথা বলবেন না। সব বিষয়ে তিনি ধরয্য ধরবেন। নিজের সাথে তিনি অনেক কথা বললেন। তিনি নিজেকে এ নিয়েও অনেক বুঝালেন।

তৃতীয় দিনের দিন সেই গ্রামের একজন মানুষ তাকে দেখতে এলো। বুড়ি মা তাকে চিনেন। তিনি একজন জ্ঞানী লোক, নাম লোকমান। তিনি বুড়িমাকে দেখতে আসছে্ন। বুড়ি মায়ের চোখে পানি চলে এলো।

বুড়িমা দেখে লোকমান সাহেব খুব কষ্ট পেলেন। তিনি খাবার সাথেই নিয়ে এসেছিলেন। সেই খাবার বের করে তিনি নিজেই তা খাইয়ে দিলেন। তখন বুড়ি মা নিজ থেকে নরম গলায় বলতে গিয়ে কিছু বলতে পারলেন না। চুপচাপ সময় কেটে যেতে লাগল। তারপর অতি ধীরে ধীরে বুড়ি মা বললেন,’আমি আর কাউকে কটু কথা বলব না।‘

জ্ঞানী লোক লোকমান সাহেব তা নিয়ে কিছু বললেন না। খাবারের শেষে তিনি বললেন, আপনি তো একা থাকেন। সময় কাটানোটা কঠিন। আচ্ছা, আপনি কি বই পড়তে পছন্দ করেন?’

বুড়ি মা না  সূচক মাথা ঝাঁকাল। লোকমান সাহেব বললেন,’সুস্থ হলে আপনি  বই পড়বেন। আপনি যদি বই পড়েন তখন সবাই আপনাকে অনেক ভালবাসবে। আমি আপনার জন্য খাবার আর বই নিয়ে এসেছিলাম।‘

বুড়ি মা অবাক হলেন। যে বই পড়ে তাকে মানুষ ভালবাসে! এটা অদ্ভূত কথা তো! এমন কথা কখনো তিনি শুনেননি। বুড়ি মা তাই মনের কথাটি বলে ফেললেন অবাক বিস্ময়ে,’ এমন আদ্ভুত কথা কখনো তো শুনিনি। যে বই পড়ে তাকে মানুষ ভালবাসে!’ ‘ জ্ঞানী মানুষ বুড়িমাকে সব বুঝিয়ে বললেন।   

জ্ঞানী মানুষ প্রতিদিন উনাকে সকাল বিকাল দেখে যায়। কি কি  লাগবে, তা এনে দিয়ে যায়। দুই দিন পরেই বুড়ি মা সুস্থ হলেন। সুস্থ হতেই তিনি ঘরের বারেন্দায় একটা আরাম কেদরায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়তে লাগলেন সকাল বিকাল।

বলতে গেলে সেই দিন থেকে সারাদিন বই নিয়েই থাকেন তিনি। বুড়ি মা বাড়ির সামনের পথ দিয়ে আসা যাওয়ার পথের মানুষেরা সবাই তা কাছে বা দূর থেকে দেখতে লাগল। এভাবে  প্রতিদিন বারান্দায় বসে বুড়ি মাকে বই পড়তে দেখে একজন একজন করে সবাই ভয়ে ভয়ে এলেন। কিন্তু কেউ কথা বললেন না। পাছে বুড়ি মায়ের কটু কথা যদি শুনতে হয়। তাই সেই পথের কাছ দিয়ে যেই যায়, সে বুড়ি মায়ের বারান্দার কাছে এসে কিছুক্ষন দাঁড়ায়। তারপর এমন চুপিচুপি এসেছিল,তেমন করে চলে যায়।

এভাবে অনেক দিন কেটে যাবার পর সবাই খেয়াল করল বুড়ি মা কাউকে কিছু বলেন না, কটু কথা তো দূরে থাক বিরক্ত হয়ে তাকায়ও না। সবাই এতে সাহস পেল। একে একে একজন দুইজন করে সবাই জানতে চাইলেন,‘বুড়িমা এই কয়দিন কোথায় ছিলেন? কেমন আছেন? কি করেন? কি পড়েন?’  প্রতিবারই বুড়ি মা সবাইকে অবাক করে দিয়ে হেসে উঠে অতি নরম গলায় সবাইকে জানিয়ে দিলেন, তিনি এখন বই পড়েন। বই পড়েন বলে ঠিক মতন কারো সাথে কথা বলতে পারছেন না। আর সবাইকে তিনি বই পড়তে বললেন। বার বার সবাইকে বলেন,’বই হচ্ছে বন্ধু।‘

সবাই বেশ অবাক হয়ে দেখল বুড়িমা এত টুকু রাগ করে কথা বলছে না। ধীরে ধীরে  সবাই সেই কথা জেনে গেল। আর তাকে দেখতে মানুষ আসতে লাগল। আসতেই লাগল। কেউ ফল আনে তো, কেউ ফুল। শিশুরাও এল। কিশোর আর কিশোরীরাও।  

শিশুদের দেখে বুড়িমা বলল, তোমরা আমার কাছে গল্প শুনবে? শিশুরা সবাই এক যোগে রাজী হয়ে গল্প শুনতে বসে পড়তে লাগল। বড়রা তো অবাক।  আরে কি করে বুড়িমা বদলে গেল! বই এর এত ক্ষমতা! যে বুড়ি মাকে সবাই এড়িয়ে চলত, আজ তাকে কেবল শ্রদ্ধাই করতে ইচ্ছে করে। কত  সুন্দর করেই না তিনি কথা বলেন! কত মুল্যবান কথা বলেন! কতই না গুরুত্বপূর্ণ! বই এর তাহলে এত ক্ষমতা! পড়তে হবে আমাদেরও, সবাই প্রতিজ্ঞা করে যে যার বাড়ি ফিরে।  

বই পড়ে কি তাহলে বদলে যাওয়া যায়! কাছে বা বহু দূর থেকে মানুষ বুড়িমাকে বারেন্দায় বই পড়তে দেখেন আর ভাবেন। আর অবাক বিস্ময়ে মানুষগুলো দেখে তাদের অতি চেনা অসম্ভব রাগী বুড়িমা বই এর ছোঁয়ায় বদলে গেছে। তিনি গল্প বলছেন আর শিশুরা মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনছে! তিনি হাসছেন, শিশুরাও।  

আস্তে আস্তে বুড়ি মার নাম বদলে গেল। কেউ আর বুড়িমা বলে ডাকে না। এখন সবাই ডাকে গল্প মা বলে।

June 27, 2019 2 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
শিশুতোষ গল্প

মিউ [শিশুতোষ গল্প-১]

by Admin June 26, 2019
written by Admin

মিউ

মোঃ নোমান সরকার

বিড়ালটাকে সবাই মিউ বলে ডাকে। এই নামটা তার নিজেরও অনেক পছন্দ হয়েছে। কেউ এই নামে ডাকলে মিউ ঘাড় ঘুড়িয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

একদিন দুপুরে প্রতিদিনের মতন সে বারেন্দায় এসেই দেখতে পেল পাশের বাড়ির দুষ্ট ছেলেটা বাড়ির চারপাশে যে দেওয়াল আছে তার উপর দিয়ে হাঁটছে আর হাসছে। সে
দেওয়ালের উপর উঠে কিছুটা দৌড় দিয়ে দেওয়ালের বাইরে নীচে লাফিয়ে পড়ল। সে অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রতেকটা দিনেই। অতি উঁচু দেওয়ালের উপর থেকে দেওয়ালের বাইরে প্রতিদিন দুপুরে সে লাফিয়ে পড়ার এই কাজটি করে অতি উৎসাহে। লাফিয়ে পড়ে সে বালুর উপর।

পাশের বাড়ির এই উঁচু দেওয়ালের পাশে কিছু দিন আগে একটা বড় ট্রাককে উঁচু করে বালু ফেলতে দেখেছিল মিউ। সেই বালুতেই দুষ্ট ছেলেটি লাফিয়ে পড়ে। আর হি হি করে হাসে। তারপর আবার বাড়ির ভিতরে আসে। এসে দৌড়ে উঠে আসে উঁচু দেওয়ালের উপরে। আবার লাফায়। এভাবে অনেক বার প্রতিদিন সে এই কাজটি করে। কেন করে বুঝতে পারে না মিউ। কেবল দুপুরে চার তলার বারেন্দা থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে মিউ দেখে। ছেলেটার হাসি দেখে কেবল মনে হয়, এই কাজে ছেলেটি ভালো মজা পায়। ভালোই লাগে দেখতে। সম্ভবত এটি খুবই মজার খেলা। খেলাটি দেখতে দেখতে তার নিজের খুব ইচ্ছে করে এই খেলাটি খেলতে।

কয়েক দিন পরের কথা। মিউ বারেন্দায় এসে দেখল প্রতিদিনের মতন দুষ্ট ছেলেটা লাফিয়ে পড়তে যাবে ঠিক তখনই পাশের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা মহিলাটা তা দেখে ফেলল। ছেলেটিকে লাফিয়ে বাইরে পড়ে যেতে দেখে তিনি এমন জোরে চিৎকার দিলেন যে আশেপাশে কিছু মানুষ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। ছেলেটি লাফিয়ে পড়ার ঠিক আগে চিৎকার শুনে সেদিকে তাকাল। তাতেই ছেলেটিও কিছুটা ঘাবড়ে গেল। তার মুখের হাসিটা মুছে গেছে, সে দৌড়ে যে জায়গা থেকে লাফটা দেয় তারও আরো পরে চলে গেল। আর আরো দূরে দৌড়ে ছুটে গেল আর লাফ দিল।

মিউ এবার তাকাল বৃদ্ধা মহিলার দিকে। দেখল বৃদ্ধা মহিলা খুব জোরে চিৎকার দিবার পর লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। সম্ভবত এর আগে কখনো বৃদ্ধা মহিলার ছেলেটিকে এখান থেকে লাফিয়ে পরতে দেখেননি। তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। দেখেননি বলে তিনি এভাবে ভয়ে চিৎকার দিয়েছেন।

মিউ আবার দেওয়ালের ওপাশে কি হয়েছে তা দেখতে চোখ ঘুরালো। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখল প্রতিদিনের মতন ছেলেটি বালুতে না পড়েছে মাটিতে। ছেলেটি আর অন্য দিনগুলোর মতন হেসে উঠল না। বুঝাই যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।

মিউ বারিন্দায় ফাঁকাটা দিয়ে দৌড়ে তার নীচে নামার জায়গাটিতে পৌছাল। তারপর দৌড়ে নীচে নামল। তারপর দোতালায় পৌছাল। এবার নামতে হবে তাকে সিঁড়ি বেয়ে। সে নীচে নামাল সিঁড়ি বেয়ে ভয়ে ভয়ে। কেউ দেখলে দিবে তাড়া। মানুষগুলো তাকে দেখলেই কেন এভাবে তাড়া দেয়, আজো বুঝা হয়নি তার। সে চারদিকে তাকিয়ে খুব দ্রুত নেমে এলো সেখানে, যেখানে মানুষ থাকতে পারে বা চলা ফেরা করে তার থেকে দূরে সরে এলো।। ভাগ্য ভালো আশেপাশে কেউ নেই।

পাশের বাড়িতে যাবার একটা সর্ট কার্ট রাস্তা জানা আছে, মিউ সেই পথ ধরে চলে গেল। গিয়ে দূর থেকে দেখল কয়েকজন মিলে পড়ে থাকা মহিলাটাকে উঠানোর চেষ্টা করছে। তারপর উনাকে কোলে করে দুইজন মানুষ বাড়ির বাইরে নিয়ে গেল।

মিউ এক লাফে প্রাচীরের উপরে উঠল। দুষ্ট ছেলেটার কি হল, তা তাকে দেখতেই হবে। তার খুব অস্থির লাগছে। দেখল একজন মানুষ কোলে করে দুষ্ট ছেলেটাকে নিয়ে দৌড়াচ্ছে রাস্তায়। তারপরে একটা রিক্সায় উঠে গেল ছেলেটাকে নিয়ে। রিক্সা চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে দূরে। ছেলেটির জন্য মন খারাপ লাগছে মিউ এর। তার মনে হলো সে হাঁপাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে ছেলেটির জন্য তার খুবই খারাপ লাগছে। কিছু একটা হয়েছে তার! বড় কিছু একটা!

আরো কিছু দিন পরের কথা। বিকাল হয়নি এমন একটা সময়। মিউ বারেন্দায় এসে দেখল পাশের বাড়ির ভিতরে ছেলেটি একটা লাঠি ভর দিয়ে হাঁটছে। ছেলেটিকে নিয়ে সে অনেক চিন্তিত ছিল বলেই ছেলেটিকে দেখতে পেয়েই মিউ এতো খুশি হলো যে মনে হলো কোনদিনও সে এত খুশি হয়নি। সে অনেক আনন্দে মিউ মিউ করে উঠল।

সে খুঁটিয়ে খুটিয়ে ছেলেটিকে দেখতেই লাগল। সে দেখল ছেলেটির এক পায়ে সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। সেই পা কিছুটা উঁচু করা। একটা লাঠি আর এক পায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে। তাকে খুব মলিন দেখাচ্ছে। দেখে তার খুবই খারাপ লাগল। সে সব সময় এই ছেলেটিকে দুষ্ট বলেই ভাবত। তাকে দেখলেই ছেলেটা তাড়া দিত বলেই হয়ত তার এমন মনে হত।

হঠাত মিউ এর কিছু একটা মনে হলো। মনে হতেই মিউ দ্রুত নেমে এলো। নেমে এসে সে সেই উঁচু দেওয়ালের উপর উঠল। উঠে সে দেওয়াল ঘেঁসে রাখা বালুর দিকে তাকাল। ছেলেটি দেওয়ালের উপর থেকে কোন কোন জায়গা থেকে লাফিয়ে পড়েছে এতদিন, মনে করার চেষ্টা করল। ছেলেটি যেখানে যেখানে লাফিয়ে পড়ে সেখানে উঁচু করে রাখা বালু। সে সরে এলো। এত বালুর উপর লাফিয়ে পড়লে সে ডুবে যাবে, একদিন ছেলেটিও ডুবে গিয়েছিল এই বালুর ভিতর। অনেক অনেক দিন সে ছেলেটিকে এখান থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখছে। সে আরো সরে এলো। সে সরে এসে দাঁড়াল দেওয়ালের সেই অংশে, যেখানে দেওয়ালের নীচে এই জায়গাটায় বালু কম। এতে লাফিয়ে পড়লে ব্যাথাও পাবে না আবার বালুর ভিতর ডুবেও যাবে না।

এবার মিউ চোখ সরিয়ে তাকাল ছেলেটির দিকে। ছেলেটি পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। সম্ভবত সে আর কখনোই উঁচু দেওয়ালে উঠতে পারবে না। দৌড়াতে পারবে না। কিন্তু সে তো পারবে। হ্যা, সে পারবে। আর মিউ এর অনেক দিনের ইচ্ছেও ছিল ছেলেটির মতন করে লাফিয়ে পড়ার।

মিউ দেওয়ালের উপরে লাফাতে লাগল আর মিউ মিউ বলে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। সে ছেলেটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমনটা করল। আর এতেই কাজ হল। হঠাত ছেলেটা দেওয়ালের উপর তার জায়গাটিতে মিউকে দেখতে পেয়ে চোখ বড় করে তাকাল। মিউ দেখল এটাই সব চেয়ে ভালো সময় ছেলেটাকে জানানোর যে, যা তুমি করতে তা দেখে আরেকজন শিখে নিয়েছে। হ্যা শিখে নিয়েছে। আজ তুমি না পারলেও সেই কাজ অন্য একজন করে তোমাকে আনন্দ দিবে। মিউ অসম্ভব খুশি হয়ে গেল। সে আরো জোরে জোরে মিউ মিউ করে উঠল।

মিউ নিচের বালুতে লাফিয়ে পড়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিল। সে দেখল ছেলেটির চোখ আরো বড় হচ্ছে, তার মুখটা খুলে গেছে। অবাক বিস্ময়ে সে তাকিয়ে আছে। আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে বুঝতে পেরেছে বিড়ালটা কি করতে যাচ্ছে। এই দেখে মিউ আরো খুশি হয়ে উঠল। সে লাফ দিবার জন্য নিজের দেহটাকে উঁচু করে বালুর জায়গাটা আবার দেখে নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলতে চাইল, আমাকে দেখ, আমাকে দেখ!

তার দেহ শূন্যে উঠে গেছে। এখন সে নীচে পড়তে যাচ্ছে। সে দেখল, ছেলেটার চকচকে চোখ। তার মুখের সমস্ত মলিনতা চলে গেছে। সে হাসছে। আর ঠিক তখনই সে দেখল ছেলেটির পিছনে দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেই বৃদ্ধা মহিলা। আর তিনি খুব জোরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

লাফিয়ে পড়তে পড়তে মিউ দেখল, বৃদ্ধা মহিলার চিৎকার শুনে অনেক মানুষ দৌড়ে আসতে লাগল। আর যেন অনেকেই দেখে ফেলেছে বিড়ালে লাফিয়ে পড়াটাও। দৌড়াতে শুরু করল অনেকেই।

বেশ কিছুখন পর মিউ দেখল তাকে কোলে নিচ্ছে মানুষ এক এক করে। কেউ মাথায় আদর করছে, কেউ পায়ে।

কেউ একজন বলল, কিছু দিন আগে এই দেওয়াল থেকে পড়ে একটা ছেলের পা ভেঙেছে। আজ এই বিড়াল পড়ল। এই দেওয়ালের দোষ আছে। দেখ, দেখ বিড়ালের পা ভেঙ্গেছে কিনা?

অনেক মানুষ এক সাথে মিউ এর পা দেখতে লাগল। আর অনেকেই মিউ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

June 26, 2019 6 comments
0 FacebookTwitterPinterestEmail
Newer Posts
Older Posts

Categories

  • আমার ছোটবেলা
  • আমার ভাবনা
  • কিছু কথা
  • কিশোর গল্প
  • গল্প
  • ছড়া
  • জানা অজানা
  • ভূতের গল্প
  • রান্না ঘর
  • রূপকথা
  • শিশুতোষ গল্প
  • স্বাস্থ্য কথা
  • Facebook
  • Twitter

@2021 - All Right Reserved. Designed and Developed by PenciDesign


Back To Top
Samogro
  • মূলপাতা
  • সাহিত্য
    • কিশোর গল্প
    • শিশুতোষ গল্প
    • ছড়া
  • কিছু কথা
    • আমার ছোটবেলা
    • স্বাস্থ্য কথা
    • জানা অজানা
    • বিবিধ
  • তুলির আঁচড়
    • গ্যালাক্সি
  • কেনাকাটা
  • রান্না ঘর
    • রান্না ঘর

      স্পাইসি চিকেন গোজন্স

      November 16, 2019

      রান্না ঘর

      বাটার কেক

      November 11, 2019

      রান্না ঘর

      ডিমের কোরমা

      July 31, 2019

      রান্না ঘর

      কাঁকরোলের দোলমা

      July 27, 2019

      রান্না ঘর

      মিষ্টি কুমড়া দিয়ে মুরগী রান্না

      July 19, 2019

  • আমাদের কথা
  • যোগাযোগ