এক বনে বাস করত এক শিয়াল। সে সবাইকে নানান ভাবে কষ্ট দিত। আর সারাক্ষণ ভাবত কাকে কিভাবে ছোট করবে বা বিপদে ফেলবে। একদিন দুপুরে সে এসে পড়ল সিংহ রাজার বাড়ির কাছে। তার ইচ্ছে করল এবার বনের রাজাকে একটু ঝামেলায় ফেলার। এর আগে এমন সাহস করেনি। কিন্তু আজ হলো।
সে সিংহ রাজার বাড়ির কাছে এসে ডাকল। ‘রাজা মশাই বাড়িতে আছেন?’
সিংহ বের হতে হতে হুংকার দিয়ে উঠে বলল, ‘বিশ্রামের সময় কে ডাকে? এই অসময়ে কে ডাকে?’
শিয়াল খুবই বিনীত ভাবে বলল, ‘আমি শিয়াল। খুবই জরুরী বলে এই অসময়ে ডেকেছি।’
সিংহ শিয়ালকে দেখে খুবই বিরক্ত হল। শিয়ালের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ শুনেছে।
শিয়াল বলল, ‘বনের উত্তর দিকটা একটা ঘোড়ার বাবু হয়েছে।’
সিংহ গর্জে উঠে বলল, ‘সে কথা আমাকে জানাতে এই বিশ্রামের সময় কি তুমি ইচ্ছে করে বেছে নিয়েছ?’
শিয়াল বলল, ‘না রাজা। আমি জানাতে এসেছি সেই ঘোড়ার বাবুর পাঁচটি পা হয়েছে।’
সিংহ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শিয়াল বলল, ‘বাবুটা জন্ম হবার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পরেছে। সম্ভবত বাঁচবে না। তাই ঘোড়া বলছিল, তার বাবুটাকে বনের রাজা সিংহকে দেখতে চায়। বাচ্চাটা মারা গেলে তার মাও আসলে বাঁচবে না। তার কথা শুনে এত খারাপ লাগল যে আপনার কাছে এসেছি এই অবেলায়।’
সিংহের মনে দয়া হল। সে বনের রাজা। তাকে দেখতে চেয়েছে। আর বাবুটা মরে যাচ্ছে। সে রাগি গলায় বলল, ‘আচ্ছা চল তবে।’
শিয়াল আর সিংহ রওনা হল। যেতে যেতে সিংহ্ ভাবছে অনেক কিছু। শিয়ালে বিরুদ্ধে অনেক অনেক অভিযোগ। শিয়াল একটা মিথ্যাবাদী। সে কারনে অকারনে মিথ্যা বলে আর সবার মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। এই দুষ্ট শিয়ালের কথা সে বের হয়ে আসল! খবরটা সত্য নাকি মিথ্যা যাচাই দরকার ছিল।
শিয়াল সিংহ নিয়ে ছুটছে তো ছুটছে। পথ আর শেষ হয় না। বিকাল ফুরিয়ে যাচ্ছে। এক সময় শিয়াল থামল এমন একটা জায়গায় যেখানে দুইটি পথের সূচনা। শিয়াল থামতেই সিংহও থামল। শিয়াল সামনের দুটি পথের একটি পথ দেখিয়ে বলল,’রাজা এই পথ দিয়ে গেলে সময় অনেক কম লাগবে। কিন্তু এই পথ দিয়ে যাওয়া হবে না। সমস্যা আছে। আমরা বরং আমরা ঐপথে ঘুরে যাই।’
সিংহ বলল,’ কেন এই পথে গেলে সমস্যা কি?’
শিয়াল বলল, ‘আপনি বনের রাজা সব কথা যেমন আপনার জানা উচিত ,তেমনি কিছু কথা না জানাও ভালো। চলুন আমরা ঐ পথে যাই।’
সিংহ রাগী গলায় বলল,’ ‘আগে আমাকে জানাও কেন যাব না। সেটি আগে বল।’
‘রাজা সব শুনতে না চাওয়াটা ভালো।’
সিংহ হুংকার দিল।
শিয়াল ভয় পাওয়া গলায় বলল, ‘এই পথে এক বিশাল হাতি এসেছে পাশের বন থেকে। সে বলে কিনা, আমি হব এই বনের রাজা। সিংহকে পেলে ওকে এমন আছার দিব। সে মরেই যাবে। তখন আমি হব এই বনের রাজা। পাগলের মতন যাকে পাচ্ছে, তাকেই সে এমন কথাগুলো শুনাচ্ছে।’
সিংহ আরেকটা হুংকার দিল,’ কি এই কথা বলেছে!’
শিয়াল বলল,’রাজা মশাই,আমি এই জন্যই এই কথা বলতেই চাইনি, আরে পাগলে এমন অনেক কথাই বলে বেড়ায়। থাক রাজা, আমরা এই পথ বাদ দেই। চলুন ঘোড়ার বাবুকে আগে দেখে আসি।’
সিংহ বলল, ‘না চল আমার সাথে। আমি তোমার সেই বিশাল হাতি আর তার ক্ষমতা দেখব। এত বড় সাহস আমার বনে এসে বনের রাজা হতে চায়।’
দুইজনই ছুটল। তারপর শিয়াল একটা সরু খাল পাড়ের কাছাকাছি এসে থামল। থেমেই শিয়াল সিংহকে দূরে বিশাল হাতিটাকে দেখিয়ে বলল, রাজা মশাই ঐ যে দূরে বিশাল হাতিটা ঘাস খাচ্ছে, সে আজ সকালে এখানে যাকে পেয়েছে বলেছে ,তাকে যেন সবাই রাজা মানে। এখন থেকে সেই বনের রাজা।’
সিংহ একটা হুংকার দিয়ে প্রচন্ড বেগে ছুটে গেল বিশাল হাতিটার দিকে। গিয়ে হাতির পিঠে উঠল এক লাফে। তারপর বড় একটা কামড় বসিয়ে দিল।
হাতিটা মনেরা আনন্দে ঘাস খাচ্ছিল। হঠাত এমন ঘটনায় চমকে উঠেছে। সিংহ যখন পিছন থেকে পিঠে উঠে কামড় বসাল। তখন প্রচন্ড ব্যাথায় সে কাকিয়ে উঠে শুর দিয়ে সিংহকে ধরার চেষ্টা করতেই পেয়েও গেল। আর পেছিয়েই ছুড়ে ফেলে দিল সিংহটাকে। সিংহ উড়ে গিয়ে অনেক দূরে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ল।
সিংহ গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়তেই হাতি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে আবাক বিস্ময়ে বলল, আমি লজ্জিত রাজা, আমি বুঝতে পারিনি, আমার পিছনে আপনি! আমি খুবই দুঃখিত আমার আচরণের জন্য।’
সিংহ হাতির ব্যবহারে বুঝতে পারল শিয়াল তাকে বোকা বানিয়েছে।
সিংহ তবুও জানতে চাইল, তুমি নাকি নিজেকে রাজা বলে দাবি করেছ?’
হাতি বলল, আমি? আমি কেন এই কাজ করতে যাব? আমার বনে আগুন লাগায় খাবার কমে গেছে বলে এই বনে খাবারের খোঁজে এসেছিলাম। সকালে শিয়ালের সাথে দেখা। সে বলল, বনের রাজার অনুমতি না নিয়ে যারা এই বনের বাইরে থেকে এসে খাবার খাবে তাদেরকে মেরে ফেলতে বলেছে রাজা। কিন্তু আমি এতই ক্ষুধার্ত রাজা যে আপনার অনুমতি নিতে যেতে পারিনি। এখন আমি এই বনের অনেক খাবার খেয়েছি, তাজা ঘাস খেয়ে ফেলেছি ক্ষুধায়। আমি অপরাধ করেছি, এখন আপনি যে শাস্তি দিবেন, তাই মেনে নিব।’
সিংহ বলল, আমি বনের রাজা, আমি তোমাকে বলছি, এমন কোন আইন নেই আমার। এমন মিথ্যা আইনের কথা শিয়াল তোমাকে বলেছে? হুম ,আর আমাকে তোমার কথা কি বলেছে জানো? বলেছে, তুমি বনের রাজা হতে চাও। ওকে বড় একটা শাস্তি দেওয়া উচিত।’
হাতি বলল, ‘আপনি অনুমতি দেন, ওকে আমি ভর্তা বানিয়ে দেই।’
সিংহ বলল, এসো, আমি তোমাকে এই বিষয়ে কিছু সাহায্য করি। বলে দুইজনই ছুটল শিয়ালের দিকে।
এদিকে শিয়াল দূর থেকে ওদের কথা বলা থেকেই নিজের বিপদের কথা বুঝতে পেরেছিল। সে দৌড়াতে শুরু করল। কাছেই একটা খাল থাকায় সে সিংহ আর হাতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারল। বিপদের কথা আগে থেকে মাথায় রেখেই সে খাল পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
আর সেই থেকে শিয়াল সিংহ আর হাতিদের এড়িয়ে চলে।