মোঃ নোমান সরকার
পড়লাম আর শুনলাম এটা ইসলাম নয়। পড়লাম আর মানলাম এটিই ইসলাম। কিন্তু এই দেশের মানুষের কাছে আমলের গুরুত্ব অনেক কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এর মূলে আছে কোরআনের অনুবাদ না পড়া ,হাদিসগুলো না পড়া। আর একটি প্রচার,তা হচ্ছে ”আমরা যত পাপই করি, আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। যত বড় গুনাহ আছে সব আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।” কথাটি ঠিক আছে কিন্তু হাদিসগুলো পড়লেই বুঝা যায়, এই কথাটি সাধারন অপরাধ বা পাপের ক্ষেত্রে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু অন্যের অধিকার নষ্ট করা মহান আল্লাহ কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। সেই মানুষ ক্ষমা করা ছাড়া। অন্যের জমি নিজের ভাবা আর আগুন মুখে দেওয়া একই বিষয়। জমির বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে অন্যের জমি কেড়ে নেওয়ার শাস্তি কেয়ামতের মাঠেই শুরু হয়ে যাবে, আর তা খুবই ভয়াবাহ। হাদিসের এই শাস্তিগুলো উল্লেখ আছে, দয়া করে পড়ে নিবেন, যাদেরই জমি জমা নিয়ে ঝামেলা আছে।
কেবল আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন , কথাটি এত বেশি প্রচার পেয়েছে যে মুল ইসলাম থেকেই আমরা সরে গেছি। বরং ইসলামে অন্যের হক, অন্যের অধিকারই সবচেয়ে বড় বিষয় বলে উল্লেখ রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। অথচ আমরা এই সমাজ আর রাষ্ট্রে উল্টোটাই দেখি। সবচেয়ে বেশি মমলা আছে জমি নিয়ে। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ চলে যায় সেই সব মামলার। ওজনে কম দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। খাদ্যে ভেজাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যায় ভাবে অর্থ আদায়। ঘুষ, সুদ এমন আরো অনেক কিছু। এই দেশে আগে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও মুসলমানদের নৈতিকতা অনেক উঁচু ছিল। মানুষ মানুষকে সহযোগিতা করত। আর এখন করে প্রতিযোগিতা। কিছু কাল আগের হলেও সেই সব গল্প হয়ে গেছে যেন রূপকথা। যাক, অতীত ধুয়ে পানি খেয়ে লাভ নেই। মানুষের জীবনে বর্তমানটাই বড় বিষয়। বর্তমানে এই দেশের মানুষের বিরাট একটা অংশ, কে কাকে ঠকাতে পারবে বা কিভাবে অন্যেরটা কেড়ে নেওয়া বা নিজের করে নিতে হবে এই নীতি নিয়ে চলে। আর যা পারেনি বা পায়নি তা নিয়ে আফসোস এতই বেশি করে যে নিজেকে ঠাকাতে থাকে। আর তাই নিয়ে সময় কাটে বা কাটায় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। এই দেশের মানুষের বিরাট একটা অংশ ভুলে যাচ্ছে, সব ধংসের মূল হচ্ছে ”ঘৃণা আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা”।
কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো এই দেশের মানুষ। এই দেশের মানুষ ইসলামকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। কেবল সঠিক কথাগুলোর প্রচার, সেটি জুম্মার দিনে হোক, সরকারী, বেসরকারী প্রচারে হোক ইসলামের এই আদর্শ গুলো বেশি বেশি প্রচার দরকার। যেমন, মহান আল্লাহ জাতি ধংস করছেন, ওজনে কম দিবার জন্য। কোরআনে এ নিয়ে যে আলোচনা তা মানুষকে জানাতে হবে। একটা বিড়ালকে বেধে রেখে খাবার না দিবার জন্য ভালো আমল থাকার পরেও তার জাহান্নাম হয়েছে। জমি কেড়ে নিলে সেই জমি তার গলায় বেঁধে দেওয়া হবে কেয়ামতের মাঠে। প্রতিবেশী না খেয়ে আছে কিনা এর জন্য কৈফত দিতে হবে প্রত্যেক মুসলমানকে। সে হিন্দু না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান নাকি মুসলমান তা বিবেচনায় আনা হবে না, আনা হবে সে প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর হক অবহেলার শাস্তি খুব কঠিন। তেমনি যে মিথ্যায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা কষ্ট পায়, তার শাস্তিও কঠিন। শাস্তি ভয়াবাহ অন্যকে লাঞ্ছিত করায়, বঞ্চিত করা, অপমান বা অসম্মানিত করায়। এই সব বা অন্যের হক নষ্ট বা অন্যকে কষ্ট দেওয়ার প্রত্যেক অপরাধের ক্ষমা হবে না বলেই হাদিসগুলোতে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। অন্যের হক বা অধিকার মেরে পালিয়ে যাবার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। এই কথাগুলো বারবার আলোচনায় আনতে হবে। এতেই সমাজের কল্যাণ আর রাষ্ট্রের কল্যাণ। এতেই ভালো মানুষ আর যোগ্য মানুষ তৈরি হবে। কারন এই হাদিসগুলোর আলোচনা এড়িয়ে গেলে বা আল্লাহ সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন, কেবল এই কথা প্রচার করলে মানুষ মানবতা আর ইসলাম থেকেই দূরে সরে যাবে। যা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় লোকসানের কারন। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে, বিশ্বের কাছে বড় হতে চাইলে, উন্নত দেশ হিসাবে পরিচিত হতে চাইলে আগে মানুষকে নৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে। ভাই এ ভাই এ ঝগড়া আর অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে ঝগড়া বন্ধ করতে হলে আগে মানুষ বানাতে হবে, নৈতিক শিক্ষার প্রসার করতে হবে, নিজেদের বড় করতে হবে। তবেই কেউ কারো জমি খেয়ে ফেলতে সাহস পাবে না, কেউ কাউকে অপমান করবে না। কেউ কাউকে বঞ্চিত বা লাঞ্চিত করার বিষয়ে সতর্ক হবে। সরকারই পারে মসজিদ কমিটি আর ইমামদের গাইড লাইন দিতে। জুম্মার একটা দিন আসে, যেখানে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারে। তেমনি সরকার চাইলে পারে স্কুল,কলেজকে সতর্ক করতে যাতে তারা তাদের ছাত্রছাত্রীকে গালি দেওয়া, অপ্রত্যাশিত বা আশ্লীল কথা বলার বিষয় সাবধান করতে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেরা পথে ঘাটে উঁচু গলায় একে অন্যকে মা তুলে গালি দিচ্ছে! শব্দ উচ্চারণে অসতর্কতা মানুষকে নীচের দিকে নিয়ে ছুটছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নেশার কবলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও পড়ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছেই। বাড়ছে অপরাধ, বড় বড় অপরাধ। তাই সময় এসেছে ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা না করে সঠিক ভাবে ইসলাম প্রচার বা এই বিষয়গুলো আরো ভালো ভাবে প্রচার করা। এতে কমবে অপরাধ। কমবে মানুষ ঠাকানো ব্যবসা। কমে আসবে ওজনে কম দেওয়া, চড়া মুল্য রাখা, ভেজাল খাবার বানানো আর সব ধরনের প্রতারণা। রাজনীতিবিদদের এ নিয়ে শঙ্কিত হবার যে কিছু নেই, তাও উনারা আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। উনারা জানেন যে, মসজিদগুলোতে কিংবা সরকার নিজে প্রচার করলে সব রাতারাতি বদলে যাবে না বা যায় না, কেবল অপরাধ কমে আসা ছাড়া। এক ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ছাড়া। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ছাড়া।
তবেই বদলে যাবে এই দেশের মানুষ। কেন বদলে যাবে? কারন এই দেশের মানুষ মূলত ভালো মানের মানুষ, ভালো মনের মানুষ। শিক্ষার অভাব থাকতে পারে, দারিদ্রতা থাকতে পারে কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ভালো, এই দেশের। এখন প্রয়োজন পথ দেখানোর। বিশ্বাস করতে হবে। মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস হারানোটাই পাপ।