মোঃ নোমান সরকার
রাজকুমারী দেখতে পেল একটা মানুষ পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। রাজকুমারীর মন ভাল ছিল না। সকালে সখীদের নিয়ে সে এসেছিল নদীর পারে। নদীর পারে এসেই মনে হল, একা থাকলেই তার ভালো লাগবে। তাই সে সবাইকে দূরে চলে যেতে বলল। জায়গাটা ছোট্ট একটা টিলার পাশে। আরো দূরে টিলার উপরের দিকে তার জন্য বিশেষ দেহক্ষীরা আছে। একটা পালকিতে চড়েই প্রতিবার এই জায়গাটায় সে আসে। কেন যেন খুব ভাল লাগে জায়গাটা।
রাজকন্যা খুব জোরে ডাকল,’ মিথিলা! মিথিলা!’
ডাক শুনতেই মিথিলা দৌড়ে এলো।
আমার দেহরক্ষীদের ডাকো। দ্রুত।
মিথিলা প্রচণ্ড বেগে দৌড়ে উপরে উঠে গেল। আর যেন বাতাসের গতিতে দেহরক্ষীরা হাজির হল।
রাজকুমারী কঠিন গলায় বলল,’ঐ মানুষটারে টেনে নিয়ে এসো। মানুষটা ডুবে যাচ্ছে।‘
আট জনের জায়গায় তিনজন দেহরক্ষী পানিতে ঝাঁপ দিল। এই সময়টায় স্রোতের গতি বেশি হয়। তারা ছুটল মানুষটার দিকে প্রচন্ড ক্ষিপ্ততায়। অবশেষে মানুষটাকে নদীর পানি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এলো।
রাজকুমারীর সামনে মানুষটাকে শুয়ে দেওয়া হল। মানুষটার দুই হাত বাঁধা।
রাজকুমারী বলল, ‘ওকে হাকিমের কাছে নিয়ে যাও। এখনই। আমার পালকীটা নিয়ে যাও। ঢেকে নিও। যেন কেউ বুঝতে না পারে। আর হাকিম সাহেবকে আমার সালাম দিবে। যাও।‘
দুইজন শক্ত দেহরক্ষী ছুটোল মৃত প্রায় মানুষটাকে নিয়ে।
[২}
২ দিন পর মানুষটা বেশ সুস্থ বোধ করছে। তাকে মেরেই ফেলেছিল। হাত বেঁধে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। ভালো সাঁতার জানার পরেও স্রোতের টানে সে মরেই যাচ্ছিল। কেউ একজন তাকে বাঁচিয়েছে । তবে কেউ বলতে পারে না, সে কে!
আরো ২ দিন কাটল। তারপর হাকিমের কাছে বিদাই নিয়ে সে কড়া রোদে হেঁটে যেতে লাগল। তাকে যেতে হবে বহু উত্তরে। যদিও যাওয়াটা ঠিক হবে না।
এক অশ্বরহী তার পথ আটকালো। তারপর আরো তিনটি অশ্বরহী।
আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।‘ একজন বলল।
অশ্বরহীর গলার সুর রুক্ষ হলেও চড়া না। তারপর সম্মান দিয়েই কথা বলছে বলেই মনে হল। কিন্তু এদের সাথে যাওয়া কি ঠিক হবে। যদিও সে নিশ্চিত এখানে কেউ তাকে চিনে না।
আমাকে কোথায় যেতে হবে, আমি কি তা জানতে পারি?
না আপনাকে তা বলা যাচ্ছে না।
আমার জানতে ইচ্ছে করছে।
একজন নেমে এলো নীচে। বিষয়টা আমরা নিজেরাও জানি না।
একটা ঘোড়া দেওয়া হল। মানুষটা উঠে বসল তাতে। তিন বার ঘোড়া পরিবর্তন করা হল তিনটা আলাদা আলাদা ফাঁকা জায়গায়। বিষয়টা ভালো লাগছে না।
একটা জঙ্গলের কাছাকাছি আনা হল তাকে। নামতে বলা হল। সে নামল। অন্য তিন অশ্বরহীরাও নামল। তারপরই আচমকা তার মুখে একটা ঘুষি পড়ল। সে ভেবে পেল না কি ঘটছে।
নিজেকে সামিলে নিতে তার একটু সময় নিল। ততক্ষনে বেশ কিছু কিল ঘুষি খেয়ে নিতে হয়েছে তাকে। যখন সামলে নিল, তখন সে ল্যাঙটা মারল কাছের জনকে। তারপরেই সে উড়ে গেল দ্বিতীয় জনের দিকে। তৃতীয় জনও রক্ষা পেল না তার হাত থেকে। যতটা ঘুষি তাকে হজম করতে হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ ফিরত দিতে পারল ওদের। আর তখনই আরেকটা অশ্বরহী বিশাল এক তরবারি হাতে এগিয়ে এসে থামল। খুব শক্ত গলায় বলল, ‘থাম যুবক।‘
মানুষটা থামল।