মোঃ নোমান সরকার
বড় মামা বলল, তুমি যদি ওয়াশরুমের কমোডের কভারটা নামিয়ে না রাখো, তাহলে কমোডের ভিতরের সব ব্যাকটেরিয়াগুলো উঠে আসবে। আর সারা ওয়াশরুমে ছোটাছুটি করবে। ওরা তোমার দাঁতের ব্রাশে এসে শুয়ে থাকবে। এয়্যা! কি বিছরি ব্যাপার। আর সেই ব্রাশ দিয়ে তুমি দাঁত মাজলে…..।” বলেই থামল বড় মামা।
এই কথায় ইরার কান্না পেয়ে গেল। সত্যি সত্যিই দুষ্ট ব্যাকটেরিয়াগুলো ওয়াশরুমে বাস করে? সাইন্স টিচার সেরকম কথা বলেছিলেন একদিন। কিন্তু তখন কেন তিনি বলেননি, কমোড ফ্লাস করেই কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখতেই হবে। ছিঃ ছিঃ ব্যাকটেরিয়াগুলো এতই দুষ্ট…। আর সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্রাশে এসে শুয়ে পরবে। আর সেই ব্রাশ দিয়ে দাঁত……। ইরার চোখে পানি এসে গেল।
বড় মামা এসেছেন কানাডা থেকে। ছোট মামার বাসায় আছেন তিনি। সেখান থেকে আজ সকালে ইরাদের বাসায় এসেছেন। সেই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইরার মা বাবা ঘরের অনেক কিছু বদলে ফেলার কথা ঠিক করেছিল। যার কিছু কিছু ইরা শুনতে পেয়েছিল। এইসব নিয়ে তার আনন্দের সীমা ছিল না। গত রাতে মা আর বাবা বাসা সাজ্জাচ্ছিল। আর সকাল থেকে মা রান্নার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। বাবা একটু পর বাইরের থেকে কি যেন আনেন। মামা এসে তো মহা বিরক্ত, দুইজনের একজনকেও পাচ্ছেন না। ইরা ছোট মানুষ। তার সাথে মামা কি আর কথা বলবে। আর সে কেন যেন বড় মামাকে দেখে ভয়ে সিটকে আছে। ইরা নিজেকেই বুঝতে পারছে না। বড় মামার গল্প এত শুনছে, ছবি দেখেছে, ভিডিওতে দেখেছে। তবুও ইরা মামার সাথে সহজ হতেই পারছে না। মামা পুতুল, খেলনা, চকলেট সহ কত কি দিয়ে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার ভয়ই কাটছে না।
বড় মামা বলল, ইরা তুমি কি তোমার ওয়াশরুমের কমোডের কভারটা নামিয়ে রেখে আসবে? আমি দেখেছি, সেটা খোলা আছে। নাকি আমি এই কাজে তোমাকে সাহায্য করব। বলেই বড় মামা উঠে দাঁড়াল। দাঁড়ালে মামাকে অদ্ভূত সুন্দর দেখায়। ছোট মামার ইয়া বড় ভুঁড়ি। আর বাবাও। কিন্তু বড় মামা এত বড়, অথচ উনার কোন ভূড়ি নেই। সিনেমার নায়কদের মতন। ইরার খুব ভাল লাগল।
বড় মামা হাত বাড়িয়ে বলল, এই যে পিন্স তুমি কি তোমার হাতটা দিবে?

ইরা বিস্মিত হল ঠিকই তবুও হাত এগিয়ে দিল। বড় মামা ইরার ছোট্ট হাত হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো।
ওয়াশরুমের কমোডের ঢাকনা খোলা। বড় মামা বলল, “ইরা কমোডের ঢাকনাটা বন্ধ করে এসো। প্রয়োজন ছাড়া এটা খুলবে না, ঠিক আছ? কমোডের ভিতরে অগনিত ব্যাকটেরিয়া বসবাস। খোলা পেলেই ওরা খেলতে নামবে। আর ওরা তোমার ব্রাশও দখলে নিবে।”
”হ্যা, মামা আমার মনে থাকবে। ঐ দুষ্টদের আমি কখনো সুযোগ দিব না।” বলতে বলতে ইরা নিজেই অবাক হল, বড় মামার সাথে সে সুন্দর করে কথা বলতে পারছে বলে।
বড় মামার হাত ধরে ইরা ফিরে এলো ড্রইং রুমে। তার এমন হল যে মনে হচ্ছে বড় মামা এ বাড়িতে থাকে। আর সে সব সময় গল্প করে, খুবই ভাব।
“বড় মামা আমি একটা প্রশ্ন করতে পারি?”
বড় মামা আনন্দিত গলায় বলল, “হাজার বার প্রশ্ন করতে পারো।”
ইরা বলল, “আমার আরবী টিচার যে আমাদের ওয়াশরুমে প্রবেশের আগে একটা দোয়া পড়া শিখিয়েছেন, সেটা কি এই ব্যাকটেরিয়াদের জন্য। এরা কি জিন?”
বড় মামা বলল, “না বাবা, এরা জিন না। এরা অতি ক্ষদ্র এক প্রানী। এ নিয়ে আমি তোমাকে অনেক অনেক গল্প বলব। এদের সমন্ধ আমাদের অনেক বেশী জানার আছে।”
ইর বলল,”টিচার বলেছেন, “ওয়াশরুমে কিছু দুষ্ট জিন থাকে, ওদের জন্য এ দোয়া পড়তে হয়।”
বড় মামা বলল, “ব্যাকটেরিয়াদের যেমন আমরা দেখতে পাই না, তেমনি ওয়াস রুমের দুষ্ট জিনদেরকে আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু ওরা ঠিকই আমাদের দেখতে পায়, যেমন ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের দেখতে পায়। আমরা কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে দিলে ওদের আর কিছুই করার থাকে না, আটকে ফেলি ওদের। তাই না? তেমনি দোয়াটা পরলেই আমরাও জিনদের কাছে অদৃশ্য হয়ে যাই। দোয়া পড়লে দুষ্ট জিনরাও আমাদের খুঁজে পায় না। আর তুমি বৃষ্টির দিনের কথা ভাবো তো। একটা ছাতা আমাদের কত বড় বন্ধু। তাই না? বৃষ্টির দিনে ছোট্ট একটা ছাতা যেমন করে আমাদের বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচায় ঠিক তেমনি এই দোয়াটা দুষ্ট জিন থেকে আমাদের বাঁচায়। এই দোয়াটাও আমাদের বন্ধুর মতন। এসো আমরা ওয়াস রুমের ব্যাকটেরিয়ারদের বিষয় ভালো করে জানি। জীবনের প্রয়োজনেই এই বিষয়গুলো জেনে রাখতে হবে।”
ইরা মাথা ঝুকালো। যেন সে কথা খুব বুঝেছে।
বড় মামা ঘরের ছাদের দিকে তাকালো। ইরা ও।
এবার বড় মামা ইরার দিকে তাকিয়ে বলল, “ফ্লাস করার সময় ব্যাকটেরিয়া কমোড থেকে বেশ উপরে উঠে আসে। উঠে আসতে পারলেই ওরা ছরিয়ে পরে ওয়াস রুমে। তাই ফ্লাস করার সময় কভার বন্ধ করে নিতেই হবে। বলে বড় মামা থামাল। থেমে জোর গলায় বলল, যেন ইরা শুনতেই পায়নি। “কভার ফেলেই ফ্লাস করতেই হবে, মনে থাকবে ইরা।”
ইরা লাফিয়ে উঠে বলল, “হ্যা মামা মনে থাকবে। ওদের দুষ্টুমি করতে দেওয়া যাবেই না।”
তখনই পিছন থেকে বাবা এসে বলল, “কিরে ইরা, মামার সাথে অনেক গল্প হচ্ছে। আয়, আমরা বারেন্দায় গিয়ে বসি। মিষ্টি রোদ আছে সেখানে।”