মোঃ নোমান সরকার
রাত নেমে আসতেই অন্ধকার ছায়া ফেল দিয়েছিল গোটা জঙ্গলে। ঘন জঙ্গলে জোনাকিরা ছাড়া যেন কোথাও কেউ নেই। হেমন্তের বাতাস বইছে খুবই জোরে। সব প্রানী যে যার ঘরে, কেবল একজন ছাড়া। একটা ছোট হাতি, সে পথ হারিয়েছিল শেষ বিকালে।
দল থেকে ছোট হাতিটা পিছিয়ে গিয়েছিল। কারন তার নরম পায়ে একটা কাঁটা বিঁধেছিল। সেটা নিয়ে সে এতটা মনযোগী হয়েছিল যে খেয়ালই করেনি কখন দলটা অনেক এগিয়ে গেছে। যখন সে মুখ তুলে সামনের দিকে তাকাল তখন দেখতে পেল কোথাও কেউ নেই। সে ডানে বায়ে অনেক ছুটে ছিল পায়ের কাঁটা সাথে নিয়ে। প্রচন্ড ব্যাথায় সে বারবার অস্থির হয়ে উঠছিল।
একটা খোলা জায়গায় এসে দাঁড়াতেই সে বুঝল সে একা হয়ে গেছে। তার খুবই মন খারাপ হল। পায়ে কাঁটা বিঁধে থাকার ব্যাথাটা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যাথাটাও যেন সে ভুলে গেছে। তার ইচ্ছে করছে গোটা জঙ্গলটা ঘুরে নিজের দলে ফিরে যেতে। যদি কারো দেখা পায়। কেউ যদি এগিয়ে আসে। যদি…। কেউ না কেউ কি তাকে খুজছে না? কেউ একজন যদি খেয়াল করে যে দলে একজন নেই। সে কি খুঁজতে আসবে না?সে অস্থির হল। অস্থির হয়ে সে ডানে আর বায়ে তাকাতে লাগল। সামনে পিছনে তাকাতে লাগল।
পা ফেলতে পারছিল না। বলতে গেলে বাকি তিন পায়ের উপর জোর দিয়ে সে অনেক ছুটেছে ডানে বায়ে, সামনে পিছনে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। যেন সবাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটাই তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল কেউ ফিরে এসে তাকে নিয়ে যাবে।
অন্ধকার নেমে আসতেই হেমন্তের মৃদু বাতাসে সে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল। সে বুঝতে পারছিল না এটা কি জোরাল বাতাসের কারনে নাকি তার ভয় ভয় লাগছে বলে। সব মিলিয়ে তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল।
সে কখনো একা থাকেনি। একা থাকাটা যে এতটা কষ্টের, এতটা কঠিন সে আগে বেশ কয়েকবার শুনলেও অনুভব করেনি। তার খুবই কান্না পেল। নিজেকে বারবার বলতে লাগল, ‘আমি একা থাকতে চাই না। আমি আমার দলে দিরে যেতে চাই। কেউ একজন তো এসো।‘
যেন কেউ শুনতে পাচ্ছে না। তার খুবই ঠান্ডা লাগচ্ছে। নিজেকে এত বেশি একা লাগছে যে তার মনে হতে লাগল যেন এই পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কেউ নেই। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে তার চোখ বেঁয়ে পানি নামছে।
( এই জগতে একা থাকার কষ্টটা অনেক বড় কষ্ট। মানুষ সহ কোন প্রানী একা থাকে না। দলের মধ্যে থাকে। সমাজের মধ্যেই থাকে। তাই ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক নিজেকে একা হতে দিতে নেই। আমি পরিবারের মধ্যেই আছি বা সমাজের মধ্যই আছি এভাবে না ভেবে, আমি পরিবারের একজন, সমাজের একজন এভাবে ভাবলে নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন বলে মনে হবে বা সমাজের একজন দায়িত্বশীল একজন বলে মনে হবে। এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে জায়গা দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। সুন্দর নরম কথা ,ভালো আচরণ দিয়ে, দায়িত্বশীল আচরণ দিয়ে সবাইকে ধরে রাখতে হয়, সবার মন জয় করা নিতে হয়। নিজের মনকে নরম করে নিতে হয়। মায়া দিয়ে সবাইকে ধরে রাখতে হয়। আর তখন দল ছুটে যাবার ভয় থাকে না। তখন হারিয়ে গেলেও কেউ না কেউ এগিয়ে আসে পরিবারে ফিরিয়ে নিবার জন্য। )