মোঃ নোমান সরকার
শিয়াল বলল, ‘তুমি অংক বুঝ?’
ইঁদুর মাথা দুলিয়ে বলল, ‘না। অংক তো বুঝি না।’
শিয়াল বলল, ‘তুমি একটা গরু।’
ইঁদুর চোখ নত করল। সে একটা ইঁদুর। সে কেন গরু হতে যাবে! কিন্তু মুখে কিছু বলল না। শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করা যায় না। শিক্ষক কেন কার সাথেই বেয়াদবি করা যায় না।
শিয়াল বলল, ‘তুমি অংকের কিছু বুঝ না? ‘
ইঁদুর বলল, ‘কিছু বুঝি, খুবই সামান্য।’
শিয়াল বলল, ‘তুমি কি জানো না, অংকই সব। এই যে দুনিয়া সব কিছু অংক দিয়ে আঁকা। বাতাস, পানি, আলো, আমি, তুমি, সে, সবই। মাথার উপরে সূর্যটার দিকে তাকাও তো?’
ইঁদুর সূর্যের দিকে তাকাল।
শিয়াল বলল, ‘সূর্য যদি এর চেয়ে আরো অনেক কাছে হত, সব পুড়ে শেষ হয়ে যেত। আবার যদি বেশি দূরে হত, সব বরফে ঠাণ্ডা হয়ে যেত। পৃথিবীতে প্রাণের কোন অস্তিত্ব থাকত না। আমরা এখন অংক দিয়ে বুঝি যিনি আমাদের বানিয়েছেন তিনি আমাদেরে মুগ্ধ হতেই এমন কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না বা এই বিষয়টি নিয়ে ভাবি না বলেই খেয়াল করি না বা বুঝি না। যিনি আমাদের বানিয়েছেন, তিনি সবকিছুই অংক দিয়ে বানিয়েছেন। তাই অংকের চেয়ে মজার এই দুনিয়ায় আর কিছু নেই। কিচ্ছু নেই।’
ইঁদুর মাথা চুলকালো। তার মাথায় কিছুই ঢুকেনি।
শিয়াল বলল, ‘তুমি কিছুই বুঝনি! তাই না?’
ইঁদুর অযথা হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আমি একটু পানি পান করব।’
শিয়াল বলল, পান কর, পান কর। পানি পান কর। যত ইচ্ছে পানি পান কর। পানি পানে বুদ্ধি বাড়ে। আমি সারা সকাল অংকের গুরুত্ব বুঝিয়েছি কিন্তু গরু কিচ্ছুই বুঝে না।’
ইঁদুর পিঠে ঝোলানো ব্যাগ থেকে পানির বোতল টেনে এনে। সবটুকু পানি খেয়ে নিল। শিক্ষক যখন বলেছেন, যত ইচ্ছে পানি পান করতে। তখন সবটুকু পান করাই ভালো। ইঁদুর এক ঢোকে সবটুকু পানি পান করল।
শিয়াল অন্য দিকে তাকিয়ে আবার বলল,’ গরু!’
ইঁদুরের খুব লাগল। আচ্ছা পন্ডিত মশাই গরু নামে তাকে ডাকে কেন? তার কান্না পেয়ে গেল।
শিয়াল বলল, ‘তুমি কি আমার কথায় মজা পাও না? তাই না? আচ্ছা, আজ থাক। তুমি চলে যাও। আজ আর পড়াব না।’
ইঁদুর চমকে উঠল। ‘না না আমি পড়ব। না পড়লে আমি তো বড় হব না। আমি পড়তে চাই।’
শিয়াল বলল, ‘আগ্রহ না থাকলে এই পৃথিবীতে কিছুই শিখা যায় না। বড় জোর মুখস্ত করা যায়, মুখস্ত করে পাশ করা যায়। কিন্তু মুখস্ত তো শিক্ষা না। আর অংক মুখস্তের বিষয় না। এটা বুঝা আর শিখার বিষয়। না বুঝলে, না শিখলে কোনই কাজে আসবে না। আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলব যেন তিনি তোমার জন্য অন্য টিচার দেখে। আমার কাছে মুখস্ত করে অংক পড়া চলবে না।’
ইঁদুর বলল, ‘আমি পড়তে চাই। আমি যে অনেক বোকা তা তো সবাই জানে। আপনিও জানেন। কিন্তু আমি পাড়ব। আমি অনেক বড় হতে চাই, হাতির চেয়েও বড়।’
শিয়াল বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে বাদ দিলাম না। তবে আজ যাও।’
ইঁদুর শিয়ালের বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আসলো। বাড়ির সামনের মাঠটায় হাঁটতে লাগল এলোমেলো ভাবে। কেন সে এত বোকা! পড়ালেখা ভালো লাগে না। কেন সে শিক্ষকদের কথা বুঝতে পারে না। তার অস্থির লাগল। সে মাঠের ভিতর এলোমেলো হাঁটতেই লাগল।
হাঁটতে হাঁটতে সে মাঠে একটা ছোট্ট বল পড়ে থাকতে দেখল। তখনই সে দেখল বলটা থেকে বেশ দূরে একটা আম গাছ।
ইঁদুর বল নিয়ে আম গাছটার বড় ডালটার দিকে একটা কিক করতেই বলটা গাছের বড় ডালে গিয়ে লাগল। আর তখনই মনে হলো সব অংক। তার চোখ দূরত্ব মেপে নিতে পেরেছে বলেই বলটা সেই ডালে লেগেছে। সে বলটা আবার আগের জায়গায় নিয়ে এলো। এবার ঠিক করল সে বড় ডালের পাশে ছোট ডালে বলটা লাগাবে। সে ভাল করে তাকিয়ে একটা হিসাব কষে নিয়ে মারল কিক। এবার বলটা সত্যি সত্যি ছোট ডালে লাগল।
সে খানিকটা হাঁপাচ্ছে। তার ঠান্ডা লাগায় শ্বাস নিতে আর ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে। গেল বছরও তার ঠাণ্ডা লেগেছিল। ডাক্তার বলেছিল, তুমি একদম ঠান্ডা পানি খাবে না। ঠান্ডা পানির কারনে ছোটদের শ্বাস কষ্ট হতে পারে। আর শ্বাসের একটা অংকের হিসাব আছে। এটা কম বেশি হলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে যায়। আর শ্বাসের সমস্যা হলে বড় রোগ হয়। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে সব রোগের মা। এর জন্যই গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সুপ খেতে হবে। রাতে গরম পানি পান কারার অভ্যাস করতে হবে। এতে গলাটাও আরাম পাবে।
ইঁদুর বলটা আবার কাছে নিল। অবাক হয়ে াবতে লাগল, যিনি আমাদের বানিয়েছেন, তিনি আমাদের কতই বুদ্ধির সাথে বানিয়েছেন। আর কত বুদ্ধিই না আমাদের দিয়েছেন। আর এইসব নিয়ে আমরা ভাবি না! কেন ভাবি না? কি আশ্চর্য, কি আশ্চর্য!
ইঁদুর দৌড়াল শিয়াল পন্ডিতের বাড়িতে। দৌড়ে আসাতে সে হাঁপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে সে শিয়াল পন্ডিতের কাছে পৌছাল আর বলল, সব অংক, আমি বুঝে গেছি, আসলে সব অংক। সবই অংক। এখন আমাকে অংকে আর কেউ হারাতে পারবে না।