আদর যত্ন
মোঃ নোমান সরকার
এক ছিল বোকা হাতি ,তার ছিলো না কোন সঙ্গী সাথী। সারাদিন সে বনের গভীরে দল ছুট হয়ে ঘুরে বেড়াত। যেন সে উড়েই বেড়াত। হাতির দলেরও তাকে নিয়ে কোন মাথা ব্যথ্যা ছিল না। কেউ সেদিকে তাই নজর দিত না।
একদিন দুপুরে সে নামতে চাইলো পুকুরে। এমন সময় সে দেখলো, মাথাটাও ঝুঁকালো। একটু দূরে একদল কাঠবিড়ালী, দাঁড়িয়ে। সে খানিকটা এগিয়ে গেলো, কাঠবিড়ালীর দলও ছুটে পালালো। সে এসে দাঁড়ালো সেখানে, দাঁড়িয়ে ছিল কাঠবিড়ালীর দল যেখানে। সে তাকিয়ে দেখলো, সব কাঠবিড়ালীরা গাছে উঠে যেতে লাগলো। আর গিয়ে হাতির দিকে শত শত ফল ছুঁড়ে মারতে লাগলো। আর সেই সাথে জুড়ে দিল কান্না। হাতি বলল, ‘ফল ছুড়ে মেরনা, আর না, আর না। পাই যে ব্যাথা। বলছি, শুনছো কি কথা? হয়েছে কি বলো? কী হলো, কী হলো?’ ‘
কাঠবিড়ালীরা এক যোগে বলল, তুমি আমাদের বাগানে ঢুকে পরেছো! আমাদের তুমি কষ্ট দিয়েছো! তাকাও তো নীচে, যেওনা ভাই পিছে।‘
হাতি ওদের কথা শুনলো আর বোকা বনে গেলো। হাতি পিছনেও গে্লো না, নড়লো না। হা করে নীচে তাকালো আর চারদিক দেখতে লাগলো। সে দেখলো,সে দেখতে পেলো, ছোট ছোট অজস্র গাছের চারা গিয়েছে মারা। তার পায়ের নীচে হয়েছে ভর্তা! যে পথে সে পা ফেলে ফেলে এসেছে, সব চারাই সে মেরেছে!
সে দেখেইনি, জানেই না তবুও হয়েছে এই কাজের কর্তা। হাতি দ্রুত পা উঠালো। আর অমনি কাঠ বিড়ালীরা আবার কান্না জুড়ে দিলো। তা শুনতেই সে চমকে ফিরে তাকালো। তাই দেখে কাঠবিড়ালীরা মাথা ঝাঁকালো।
একটা বড় কাঠবিড়ালী গাছ থেকে নেমে এলো। বলল,’ ভাই, এগিয়ে যেও না। পিছনেও ফিরে যেওনা।’ তারপর একটু চুপ থেকে বলল, সাবধানে ফে্লো পা, দিও না আমাদের মনে ঘা। বাগান করে দিয়েছ শেষ, কি আছে আর অবশেষ!’
হাতি চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। তারপর নিজেকে কি সব বুঝালো। তারপর একটু সময়ও নিলো। তারপর বলল, ‘চুপ ,চুপ ,চুপ। আমার মনেও কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি সরে যাচ্ছি, যেমন করে এসেছি।‘
হাতি এক পা এক পা করে পিছনে গেলো। যেভাবে এসেছি্লো। হল না কোনই এলোমেলো। ঠিক ঠিক পিছনে সরে গিয়ে বিষয় কি, জানতে চাইলো।
বড় কাঠবিড়ালী বলল,’ এটা আমাদের বাগান। অনেক যত্ন করে বানানো বাগান। সৃষ্টিকর্তা বানিয়ে দিয়েছেন জঙ্গল। তিনি সকলের চান মঙ্গল। আর আমরা বানাই বাগান। আর গাই গান। এখানে আমরা আমাদের শিশুদের শেখাই কি করে গড়ে তুলতে হয় বাগান। কি করে গাইতে হয় গান। শেখাই, কি করে নিতে হয় গাছের যত্ন। যদি যত্ন না নিয়ে হই অন্য কাজে মগ্ন তবে মরে যাবে তা, হোক সে যত বড় রত্ন। এই শিক্ষাই বড় দীক্ষা।’
একটু থামলো। সাথে সে ঘামলো। তারপর আবার বলা করলো শুরু,’ প্রত্যেক শিশু কাঠবিড়ালী একটি করে ছোট গাছ লালন করে, যেমন করে আমরা বলি তেমন করেই পালন করে। শত শত শিশু কাঠবিড়ালী একটা করে গাছের যত্ন করে, এটা তার রত্ন বলেই মনে করে। যত্ন করা শেখে। আর ভবিষৎ নিয়ে কত কিছু লিখে। আর তারা এত কিছুই লিখে। এতে তাতে তাদের জ্ঞান যায় পেকে। আর তখন শিশু কাঠবিড়ালীরা বুঝতে পারে জীবন যে কতটা যত্ন নির্ভর। শিখে মায়া, কি করতে হয়, এই তো টিকে থাকার সবচেয়ে বড় ছায়া। এটা জানতেও শেখে, বুঝতেও শেখে। শিখে বলেই কাঠবিড়ালী বড় হয়ে নিজেদের ভালোবাসতে শিখে। তারা একটুতে যায় না বেঁকে। বুঝে যায় কিভাবে তারা যাবে টিকে। নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে? নিজেকে আর অন্যকে হাসাবে, আনন্দে ভাসাবে? বলো? তুমিই বলো? এবার তুমি কিছু বলো।’
হাতি বলল,’আমি খুব লজ্জিত, খুবই লজ্জিত। তোমাদের বাগান লন্ড ভন্ড করে দিবার জন্য। নিজেকে মনে হচ্ছে খুবই নগন্য।’
কাঠবিড়ালী বলল,’ আচ্ছা তুমি যখন তোমার ভুল বুঝেছো। এখানেই তো তুমি নতুন কিছু শিখছো। তাই তোমাকে আমরা দিলাম ক্ষমা করে, আমরা আমাদের বাগান আবার বানিয়ে নিব একে অন্যের হাত ধরে ধরে। এখন তুমি যদি বুঝে থাকো, তবে আমরাও খুশি। কি আছে আনন্দ এর চেয়ে বেশি। কেউ কিছু শিখেছে। এর চেয়ে আর বড় কিবা এ জগতে হয়েছে।‘
হাতি বলল,’ আমি তো বোকা হাতি তাই আমার নেই সঙ্গী সাথী। বোকা বলে আমি খুবই কমই বুঝি। আমি তাই বন্ধু খুঁজি। আমাকে কি বাগানের বিষয়টা ভালো করে বুঝাবে? এতে বাগানের যে ক্ষতি করেছি, তার দুঃখ হয়ত ঘুচাবে। শেখাবে মন্ত্রটা?’
সবার বড় কাঠবিড়ালীটা হেসে ফেললো। তারপর বলতে লাগলো,’ শিশুরা যখন গাছ লালন পালন করে। যেন তারা মন দিয়ে বই পড়ে। তখন এই কাজ করতে করতে শিশুরা জেনে যায়, জীবন কে সুন্দর করতে দায়িত্ব আর কর্তব্য যে সব চেয়ে জরুরী বিষয়। গাছ লালন পালন করতে গিয়েই তারা বুঝে ফেলে, আদর বা যত্ন না করলে কিছুই বাঁচে না, টিকেও না। তাই সুন্দর কিছুই থাকে না। গাছ বড় হয়, তারও বড় হয়। মায়ায় মিলে ছাড়া। হুম, এটাই মন্ত্র।’
হাতি বলল,’ আরে আরে তুমি যা বলতে চাইছো,আমি ঠিকই বুঝে ফেলেছি। তারমানে আমি তো দেখছি বোকাই না। একেবারেই বোকা না!’
হাতি কাঠবিড়ালীদের কাছে বাগান নষ্ট করার জন্য অনেক অনেক ক্ষমা চাইলো আর নিজ দলে ফিরে গেল। ফিরে গিয়ে হাতি ছোট ছোট গাছের চাড়া নিলো আর শিশু হাতিদের হাতে দিলো। দিয়ে বলল,’শুনো তবে মন দিয়ে, গাছ আমাদের বন্ধু। গাছই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কেবল নিজেদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে থাকলে তো চলবেনা। নিজেদের কথাই কেবল বলবে না। বন্ধু কে বাঁচাতে হবে। বন্ধু তখন তোমাকেও কাছে নিবে। তবেই না আমরা টিকে থাকব। তখন আমরা সুগন্ধিও গায়ে মাখব। আর বাঁচাতে হলে আদর করতে হবে আমাদের চারপাশ। হবে না আর সর্বনাশ। দেখো, দেখো গাছের পাতাগুলো দেখো, কি করে হয় বড়? সময়ও লাগে কত! আদর যত্ন ছাড়া কিছুই টিকে থাকতে পারেনা। আদর যত্ন ছাড়া বিপদও ছাড়ে না। তাই গড়তে হবে ভালো সব অভ্যাস। আর যেন না হই আমরা কারো উপহাস।’
হাতির এইসব কথা শিশু হাতিরা তেমন কিছু বুঝলো না। তবে তারা প্রচন্ড খুশি হয়ে গাছের চাড়া নিলো। আর গাছের চাড়া আদর করে লালন পালনের কথা দিলো।
তবে হাতির দলটা ঠিকই বুঝলো হাতির কথা। এতদিন তারা ভেবেছিলো এই হাতিটা ভারী বোকা। কত ছোট ভেবেছে হাতিটা নিয়ে। সেই কথাই আলোচনা হতে লাগলো হাতির দলের ভিতরে।
6 comments
চমৎকার লিখেছ । বোকা থেকে জ্ঞানী হবার সব বন্দোবস্ত সর্বশক্তিমান করেছেন । সৃষ্টির সেরা মানুষের সেটা উপলব্ধি অতি জরুরী ।
সেলিম তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,ভাই। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগল। আরো লেখা আশা করছি। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো।
তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগল। আরো লেখা আশা করছি।অভিনন্দন,শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
মুল্যবান মন্তব্য পেয়ে আমিও খুব খুশি। ইন শা আল্লাহ, আরো শিশুতোষ গল্প লিখব। হাতে প্রায় ১৫/ ১৬টা লেখা আছে আমার। তমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।