Home শিশুতোষ গল্প হাতির নাম ইলং

হাতির নাম ইলং

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

হাতির ছোট বাবুর নাম ইলং। হাতি তার সেই ছোট বাবু ইলংকে নিয়ে এসেছে শহর দেখাতে। শহর দেখে মুগ্ধ ইলং। তার ইচ্ছে হলো এই শহরেই থেকে যেতে। শহরে  এসে ইলং ইচ্ছে হলো একটা গাড়িতে উঠার। হাতি বলল, তুমি গাড়িতে কিভাবে উঠবে! গাড়িতে উঠতে টাকা লাগে। আমার কাছে তো কোন টাকা নেই।  

ইলং বলল, মা টাকা লাগে কেন?

হাতি বলল, তা তো জানি না। অধিকাংশ কেনর কোন উত্তর আমার জানা নেই। এই সব মানুষেরাই ভালো  জানে। তবে সব মানুষেরা জানে না। কিছু মানুষ জানে।

ইলং বলল, এটা আবার কেমন কথা! মানুষেরাই যদি জানে, তবে তো সব মানুষেরই তো জানার কথা। কিছু মানুষ জানবে কেন মা?         

হাতি বলল, আমি তো সেটাও জানি না। যা জানেছি তাই তোকে বললাম। তবে একজন মানুষের সাথে কথা হয়েছিল তো। সে বলছিল উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ যারা থাকে কেবল তারাই সব জানে।

ইলং মাথা উঁচু করে উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ দেখতে লাগল।  আরে এ যে পাহারের চেয়েও বড়! তারপর সে মায়ের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, তার মানে কি! উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ যারা থাকে কেবল তারাই সব জানে। তাহলে উঁচু উঁচু বিল্ডিংএ থাকা মানুষেরা ইচ্ছে করে অন্য সবাইকে সব কিছু জানতে দিচ্ছে না।    

হাতি বলল, চুপ থাকো। এই সব মানুষের বিষয়। এ নিয়ে আমরা জঙ্গলে ফিরে গিয়ে কথা বলবো। 

মা! আমার মনে তো অনেক প্রশ্ন!

হাতি বলল, তোমাকে আমার শহরে নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে, দেখছি।

ইলং বলল, মা আমি উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ থাকব।

হাতি খুবই বিরক্ত হলো। হাতির তার বাচ্চাদের সব বায়নাই মিটায় কিন্তু ইলং যা চাচ্ছে তা কি করে সম্ভব!

হঠাত হাতি দেখল বিশাল বড় একটা কুমির পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে।  

হাতি কিছুটা দৌড়ে গিয়ে তাকে থামালো।

কুমির বলল, আরে আরে আমাকে থামালে কেন? আমার খুব তাড়া আছে।

হাতি তাকে সব খুলে বলল।

কুমির বলল, ছোট বন্ধু, তুমি এদিকে এসো। আমি তোমার বায়না মিটাব। বলেই সে একটা টেক্সি ডাকল।

হাতি আর কুমির দৌড়াচ্ছে টেক্সির সাথে সাথে। হাতির ধারনা যে কোন সময় বাচ্চাটা আমার পড়ে যেতে পারে। কুমির যেদিকে যাবার কথা ছিল ,সেই দিকেই টেক্সিটা যাচ্ছে। 

একটা বিশাল বড় বিল্ডিং এর সামনে থামল টেক্সিটা। সাথে হাতি আর কুমিরও।

হাতি বলল, এখানে কি?

কুমির বলল, এটা আমি বানিয়েছি। এটা হচ্ছে এই দেশের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং। আর এখানেই থাকে এই দেশের সেরা সেরা জ্ঞানী মানুষেরা। যারা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।  

ইলং বলল, আমিও এই বিডিং এ থাকতে চাই।

কুমির হাসল। তারপর বলল, জ্ঞানীরা ছাড়া এখানে কেউ যে থাকতে পারে না। তুমিও এখানে থাকতে পারবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর এর জন্য আগে তোমাকে স্কুলে ভর্তি হতে হবে। আর পড়ালেখা খুবই মন দিয়ে শিখে নিতে হবে।

ইলং খুশি হয়ে রাজী হয়ে গেল। কিন্তু সে রাজী হলেই ত হবেনা, মাকে তো আগে রাজী হতে হবে।

হাতি বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, আগে জ্ঞান অর্জন, তারপর বাকী সব। ঠিক আছে আমি আজই তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিব। তবে শহরের স্কুলে না। আমাদের  জঙ্গলের স্কুলে। যেখানে আমার ছোঁয়া পেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাবে। আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। আমিও জেনে নিব কি কি শিখেচ্ছে তোমাকে।

কুমির বলল, সেটাই সবচেয়ে ভালো। যে শিশু কিশোরেরা মা বাবার ছোঁয়া পায় না তাদের অনেক বেশি কষ্ট। আর তারা অন্য সবার মতন আদর থেকে বঞ্চিত হয়। আদর ছাড়া বড় মাপের কেউ হতে পারে না। আগে মনকে তো বড় করতে দিতে হবে, তবেই মূল শিক্ষাটা মাথায় ঢুকবে।

ইলং খুশি হয়ে মায়ের গা ঘেঁসে দাঁড়াল।  

মা সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিংটার দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে বলল, কুমির তুমি দেখে নিও, একদিন ইলং এই বিল্ডিং থাকবে।

You may also like

Leave a Comment