Home শিশুতোষ গল্প রাইয়ান আর মিউ বিড়াল

রাইয়ান আর মিউ বিড়াল

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাইয়ান তুমি কি ঘুমাচ্ছ?’ মিউ বিড়ালটা লেজ নাড়াতে নাড়াতে খাটের নীচ থেকে বের হয়ে খুবই উত্তেজিত গলায়  জানতে চাইল।

দুপুর বেলা। স্কুল থেকে এসে খাওয়া দাওয়া করে রাইয়ান বিছানায় শুয়ে ছিল ঠিকই কিন্তু তার চোখ খোলা ছিল। কিন্তু মিউ বিড়ালের কথায় চোখ বন্ধ করে বিরক্ত গলায় বলল, ‘তুমি না আড়ি নিয়েছ? আবার কেন এসেছে? আবার কথাও বলছ আমার সাথে?’

মিউ বিড়াল জোরে জোরে বলল,’ বাসায় ডাকাত এসেছে। আমি নীচে ওদের কথা বলতে শুনেছি।‘

রাইয়ান আড়ির কথা ভুলে গেল। লাফিয়ে মিউ বিড়ালের গলার শব্দটা যেদিক থেকে এসেছিল তা খুঁজে বের করে বলল, ‘সত্যি?’

রাইয়ান ভাবছে, মিউ বিড়াল খাটের নীচেই পালিয়ে ছিল! আবার আড়িও নেয়। ওকে কিছু একটা বলতে পারলে খুব ভালো লাগত। কিছু বলতে গিয়ে রাইয়ান থামল।

মিউ বিড়াল বলল,’ আমি সত্যি বলছি। আমি সব নিজ কানে শুনেছি ওদের সব কথা। ওরা বলছিল, বেল টিপ দিব প্রত্যেক ফ্লাটে। বেলের শব্দে অনেকেই হুট করে দরজা খুলে দেয় সেই সব ফ্লাটে ঢুকে যাব আমরা।’

রাইয়ান বলল,’আগে বলো, ডাকাত দেখতে কেমন? ইয়া বড় শিং আছে? দৈত্যের মতন দেখতে? এক দাঁত আছে ওদের কেবল? মাথাটা মতা? বিকট চেহারা?’

মি বিড়াল বলল, ডাকাতেরা তা হতে ্যাবে কেন! ওরা মানুষের মতনই। তবে ওরা দুষ্ট মানুষ।

মিউ বিড়াল বলল,’ ওরা বলছিল,বাসায় কেউ এলে দরজায় কড়া নাড়লে বা কলিং বেল টিপলে অনেকেই না জিজ্ঞাস করে, দরজার আই ভিউ এর ফুটো দিয়ে না দেখেই দরজা হুট করে খুলে দেয়। আমরা সেই সব বাসায় ঢুকে ডাকাতি করব। যারা হুট করে দরজা খুলে না। তারা হচ্ছে অতি বুদ্ধিমান। ওদের নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। যারা হুট করে দরজা খুলে আমরা তাদের কাছেই যেতে চাই। এই বলে ওরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিল।’

রাইয়ান বলল,’আমিও তো তা করি। হুট করে দরজা খুলে দেই। মা তাই করে, বাবা করে, বুয়া করে।

মিউ বিড়াল বলল,’হায়! আজ জানলাম, এভাবেই তো তাহলে সর্বনাশ করে ওরা! আর আমি যাদের কথা শুনেছি ওদের মনে হচ্ছে বড্ড দুষ্ট। বুঝতে পার ওরা বাসায় ঢুকে যেতে পারলে কি হবে?‘

রাইয়ান বলল,’ আরে আমি তো বেলের শব্দ শুনলে দৌড়ে এসে গেট খুলি। কখনোই প্রশ্ন করি না। এমনকি দরজার আই ভিউ এর ফুট দিয়ে দেখি না, কে এসেছে। কখনই দেখিনা। এমনটি আমি আর করব না। না বাবা না, আর করব না। মাকে করতে দিব না, বাবাকেও না, বুয়াকেও না। কিন্তু এখন কি হবে? আমি তো অনেক অনেক ভয় পাচ্ছি!’

মিউ বিড়াল বলল,’ ধুর বোকা ,তুমি এখনো তো দরজাই খুলোনি।‘

রাইয়ান ভয়ে ভয়ে, ‘হ্যা! হ্য! তাই তো!‘

তখন কেউ বেল দিল। রাইয়ান ভয়ে সেই শব্দে লাফিয়ে উঠল। সে দরজার আই ভিউ এর ফুটো  দিয়ে দেখল কে এসেছে। সে দেখতে পেল তিন জন বড় মানুষ দাঁড়িয়ে। আর সত্যি সত্যি বিকট চেহারা সেই মানুষদের। ভয়ে রাইয়ান কাঁপতে লাগল।

মিউ বিড়াল বলল, ‘কাঁপছ কেন? তুমি তো এখনো দরজাই খুলনি। দরজা না খুললে ওরা তো ভিতরে ঢুকতে পারবে না। তোমার কোন ক্ষতিও তো করতে পারবে না। তোমার ভয় পাবার কোনই কারন নেই। তবে মনে রেখ কথাটি, কেউ বেল দিলে বা দরজায় কড়া নাড়লে চট করে দরজা খুলে দিবে না। আগে তো জানতে হবে, দেখতে হবে, কে এসেছে। তাই না?

রাইয়ান মাথা দুলাল।

এবার মিউ বিড়াল গম্ভীর গলায় বলল,’ এবার আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো। ধরো, তোমার সামনে একটা বাঘ।

রাইয়ান বলল, আমার সামনে বাঘ হবে কেন?

আরে সত্যি সত্যি বাঘ না, মিথ্যা মিথ্যা বাঘ। আরে, কল্পনা করো, তোমার সামনে একটা বাঘ। তখন কি হবে, বলত?’

রাইয়ান ভয়ে ভয়ে বলল, ‘বাঘটা আমাকে খেয়েই ফেলবে।‘

মিউ বিড়াল বলল, ‘হুম। এবার বল, ধরো তুমি চিড়িয়াখানায় গেছো। আর তুমি খাঁচার বাঘের সামনে আছো। মানে তোমার সামনে আছে খাঁচায় বাঘ। তখন কি হবে?

রাইয়ান এবার হেসে ফেলল, ‘এবার আমার কিছুই হবে না। কারন বাঘটা খাঁচার ভিতরে। আমাকে ধরতেই পারবে না। আমি একোটা সেলফি তুলবো।‘

মিউ বিড়াল আনন্দের সাথে ওর হাসিটা দেখতে লাগল। মানুষ যখনই হাসে তখন কত সুন্দর যে লাগে। মানুষ কেন সব সময় হাসে না? মিউ বিড়াল বলতে চাইল, রাইয়ান তুমি সব সময় হাসবে। যখন মন খারাপ থাকবে তখনো। দেখবে তোমাকে সবাই ভালোবাসবে। কেউ হাসি উপেক্ষা করতে পারে না।

মিউ বিড়াল সেই কথাগুলো বলা হলো না। সে বলল, ‘ এখন আমরা সেই ভাবে ভেবে নিবো। ধরে নিবো, ডাকাতরা এখন আমাদের কাছে খাঁচার বাঘ। দরজার ওপাশে আছে তাই। মানে দরজার ওপাড়ে আছে। মানে খাঁচার বাঘের মতন অবস্থা। আমি এটাই তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি। এসো এবার তোমার মোবাইলটা থেকে তুমি বাবার যে কথাটা রেকর্ড করেছিলে, যেটা নিয়ে আমি আর তুমি খেলেছিলাম গতকাল। সেটি বাজিয়ে শুনাও, ওদের। দেখ না কি হয়!‘

গতকাল রাইয়ান বাবাকে গিয়ে বলেছিল, ‘কে? কে?’ এই বলা কথা বলতে রেকর্ড করার জন্য। বাবার এই কথাটুকু কেবল রেকর্ড করে রাইয়ান আর মিউ বিড়াল খেলেছিল। সেই কথাটি মিউ বিড়াল মনে করিয়ে দিতেই রাইয়ানের মন ভালো হয়ে গেলো। সাহস ফিরে পেলো। সে দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে মোবাইল থেকে রেকর্ডটা অন করলো।

রেকর্ড করা কথাটা বাজল, বাবা বলেছে, ‘কে?  কে?’

রাইয়ান দুই বার বাজিয়ে অফ করলো। আর দরজার আই ভিউ এর ফুটো দিয়ে দেখতে লাগল কি হয়।

মানুষগুলো শব্দটা শুনে একে অন্যের দিকে তাকাল। কোন কথা বলল না। হেঁটে উপরে চলে গেল। তার মানে ডাকাতদের হিসাবে এই বাসার মানুষেরা অতি বুদ্ধিমান, চট করে দরজা খুলেনি। এটা বুঝতে েরেই তারা চলে যাচ্ছে।

রাইয়ান মিউ বিড়ালের দিকে তাকাল। মিউ বিড়াল বলল, ‘কাজ হয়েছে কি?’

রাইয়ান আনন্দে মাথা দুলাল। সে ভাবতে পারছে না ওরা চলে যাবে।

মিউ বিড়াল বলল,’এবার উপরের ফ্লাটের আন্টিকে ফোন দিয়ে বল, ডাকাত এসেছে।‘

রাইয়ান ফোন দিয়ে বলল আন্টিকে সব। আন্টি তাকে খুব আদর করে। তিনি এই কথা শুনতেই বললেন, ‘আমি দরজা খুলে দেখছি, কি হচ্ছে। তুমি কিন্তু দরজা খুলবে না। একদমই না।‘

রাইয়ান বলল, আন্টি প্লিজ দরজা খুলবেন না, ডাকাত এসেছে।

আন্টি কোন উত্তর দিলেন না। ফোনটা কেটে দিতেই আগের ভয়টা আবার ফিরত এলো।

উপর তলার দরজা খোলার শব্দ হলো। রায়ান দ্রুত ফিরে এল দরজার কাছে। দরজার আই ভিউ এর ফুটো দিয়ে দেখতে চেষ্টা করছে। আন্টি সম্ভবত দরজা খুলে বাইরে বের হয়েছে। উপরে কিছু ঘটছে কিনা কে জানে। রাইয়ান শোনার চেষ্টা করতে একবার ডান দিকে কান উঁচু করল। আরেকবার বাম দিকে কান উঁচু করল। হ্যা উপর তলায় ধুরুম ধারুম শব্দ হচ্ছে। পায়ের শব্দ! একই সাথে দরজা লাগানর শব্দ, খুব জোরে।

তখনই আন্টি চিৎকার দিল ,’ডাকাত ডাকাত! ডাকাত, ডাকাত!’

দৌড়া দৌড়ির শব্দ শোনা গেলো। কে যেন দৌড়ে নীচে নামছে বলেই রাইয়ানের মনে হলো। সে খুবই ঘাবড়ে গেছে। মিউ বিড়ালের দিকে তাকালো, সেও খুব ঘাবড়ে গেছে। রাইয়ান বিড় বিড় করে বলল, আমি না দেখে আর চট রে দরজা খুলব না। কখনো না।

যে সিঁড়ি বেয়ে উপর থেকে নেমে এলো সে কিছুখন আগে রাইয়ানদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিন জনের একজন। হাতে বড় একটা দড়ি।

রাইয়ান ভয়ে ভয়ে ফিস ফিস করে বলল, ‘ডাকাতের হাতে দড়ি।’

মিউ বিড়াল বলল,’এই দড়ি কথাও ওরা বলছিল নীচে দাঁড়িয়ে। এইগুলো দিয়ে ওরা মানুষদের হাত পা বাঁধেবে! কত দুষ্টের দুষ্ট ওরা। ওদের পুলিশে দিতে হবে।’

রাইয়ান দরজার আই ভিউ এর ফুটো দিয়ে মানুষটাকে দেখতে দেখতে আন্টির মতন করে চিৎকার দিল,’ ডাকাত!  ডাকাত!’ বলেই বাসার সবগুলো জানালার কাছে দৌড়ে গিয়ে বলতে লাগল, ‘ডাকাত! ডাকাত!‘

রাইয়ান জানালা দিয়ে দেখল, চারদিক থেকে অনেক মানুষ দৌড়ে তাদের বাড়ির দিকে ছুটে আসছে। সম্ভবত আন্টির চিৎকার তারা শুনতে  পেয়েই দৌড়ে আসছে অনেক অনেক মানুষ।

হঠাত করে রাইয়ান যেন সাহস ফিরে পেল। তার মনে হতে লাগল, আর ভয় নেই। অনেক মানুষ মানেই তো তাহলে সাহস! অনেক মানুষ মানে অনেক সাহস! সে হেসে ফেললো।

মিউ বিড়াল আবার রাইয়ানকে হাসতে দেখতেই বলল, হাসছো কেন!

রাইয়ান মন খুলে হাসছে। এভাবেই তো হাসবে। হাসতেই থাকবে। ভাবতে ভাবতে মিউ বিড়াল উত্তেজিত গলায় জানতে চাইল, ’কি ঘটছে? কি ঘটছে?’

রাইয়ানও প্রবল আনন্দে উত্তেজিত গলায় বলল,’মানুষেরা ছুটে আসছে।‘

মিউ বিড়াল বললম,’এখনো কি তোমার ভয় করছে?’

রাইয়ান বলল, ‘আরে না। এখন আর ভয় করছে না।  অনেক অনেক মানুষ আমাদের বাড়ির দিকে ছুটে আসছে। অনেক মানুষ মানেই হলো সাহস। অনেক মানুষ মানে অনেক অনেক সাহস। এই বিষয়টি আগে জানতাম না। আজ জানা হলো, শিখা হলো। এখন বাঘ খাঁচায় ঢুকে গেছে। ওদের আর কিছু করার নেই, ধরা পড়া ছাড়া।‘

মিউ বিড়াল বলল, ওদের পুলিশে দিতে হবে। আরে আইন আছে না।’ বলে মিউ বিড়াল আনন্দে লাফাতে লাগল।

মিউ বিড়াল লাফানো দেখে রাইয়ানও লাফাতে লাগল আর হাসতে লাগল। লাফাতে লাফাতে রাইয়ান বলল,‘আরে আমি তো ভুলেই গেছি, তোমার সাথে তো আমার আড়ি!‘

মিউ বিড়াল লাফানো থেমে গেল। যেন সে কখনো কোনদিন লাফায়নি, এমন ভাবে চুপ হয়ে বসে গেলো। তারপর সে মন খারাপ করে এক দৌড়ে আলমারির পিছনে পালিয়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে রাইয়ান আর জোরে হাসতে লাগল আর লাফাতে লাগল।

You may also like

4 comments

Shumi November 5, 2019 - 9:53 am

Khub sundor akti golpo..

Reply
Samogro November 12, 2019 - 6:49 am

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Reply
আব্দুল্লাহ্ আলম November 11, 2019 - 12:24 pm

খুব সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ নোমান সরকার এত সুন্দর লেখার জন্য।

Reply
Samogro November 12, 2019 - 6:50 am

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন।

Reply

Leave a Comment