Home ভূতের গল্প ভূতনি [পর্ব ০১]

ভূতনি [পর্ব ০১]

by Admin
samogro.vutni

মোঃ নোমান সরকার

বিশাল বাড়িতে ফাইজা একা। মা নাস্তা খাইয়ে দিয়ে গেছে। ফ্রিজে রাখা আছে নানান খাবার। মা দেখিয়ে দিয়ে গেছে। যা খেতে চায় বের করে মাইক্রো ওভেনে গরম করে নিতে বলেছে। এ ছাড়াও নানান ধরনের খাবার তো আছেই। মা জানে ফাইজা পারবে। তবুও বারবার বলে গেছে সাবধানে সব করতে। এর আগে ফাইজাকে এভাবে একা রেখে যাওয়া হয়নি বলে মায়ের এত চিন্তা।

মা বাবা বাসার গেট থেকে বের হবার পরেও বারবার একই কথা বলে যায়,’ কোন সমস্যা হলেই যেন ফোন করে।’ যদিও বাবা খুব একটা কথা বলছিল না। ফাইজা তার লম্বা চুলগুলো দুই হাতে সরিয়ে মনে মনে বার বার বলে, আমার মা টা যেন কি! আচ্ছা আমি কি এত ছোট। আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। এতো ছোট্ট তো না।

বাবা ডাক্তার। আর মাও। সকালে দুইজন ফাইজাকে স্কুলে দিয়ে এক সাথে বের হয়ে যায় প্রতিদিন। আর স্কুলও বাসার একদমই কাছে। মিনির মা স্কুল থেকে নিয়ে আসে দুপুর হবার আগেই। মিনির মা এই বাড়িতে গৃহকর্মী। বয়স্ক আর অনেক পুরানো গৃহকর্মী বলে মিনির মায়ের উপর এই পরিবার ভরসা করে। দুপুরে খাওয়ার সময় মিনির মা বসে থাকে পাশে। ফাইজা বিশাল বাড়িতে মিনির মায়ের কাছে থাকে রাত পর্যন্ত। বাবা মা দুইজন ফিরে এলে সে বাসায় যায়। এই দীর্ঘ সময় ফাইজা না ঘুমালে মিনির মা গল্প করে, খেলে। আর ভিডিও গেইম মিনি মা খুব ভালো বুঝে। কিন্তু গতকাল থেকে মিনির মায়ের অসুখ। বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। যাবার পথে মা তাকে দেখে যাবে বলে গেছেন। এই প্রথম মিনির মা এ বাড়িতে এলো না। আর আজ স্কুলও নেই। মা যাবার আগে অনেকখন হাত ধরে বসে রইল। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল বার কয়েক কিন্তু মুখে কিছুই বলল না।

গাড়িতে সম্ভবত উঠেনি, মা ফোন দিয়েছে। গাড়িতে উঠেও। তারপর আরো চার বার। হাসপাতালে ঢুকার আগেও। প্রতিবারই মা বলে যাচ্ছে সে এখন কোথায়। আর কত সময় পরে আসবে। কোন চিন্তাই যেন না করে। বাবা ফোন দেয়নি একবারও। তবুও পাশে থেকে বাবা এটা ওটা বলতে হবে তা মাকে শিখিয়ে দিচ্ছিল সে কথা শুনেছে প্রতিবারই ফাইজা।

ফাইজা এই ঘর সেই ঘর করছে। এত দিনের চেনা জানা এই বাসাটাকে আজ তার আরো বিশাল বলে মনে হচ্ছে। আগে কখনো এমন মনে হয়নি। তার মানে কি? কাছের মানুষরা থাকলে বাকী দৃশ্যগুলো আমাদের কাছে বড় মনে হয় না? কেউ নেই, আর এতে মনে হচ্ছে বাসাটা যেন একটা বড় মাঠ।

আর সময় যেন নড়ছে না। কিন্তু কার্টুন বা অন্য কোন প্রোগামও দেখতে ইচ্ছে করছে না টিভি বা কম্পিউটারে বা গেইম খেলতেও ইচ্ছে করছে না। হোমওয়ার্ক নিয়ে বসলেও হয়। তাও ইচ্ছে করছে না। যেটি ইচ্ছে করছে সেটি সম্ভব না। ইচ্ছে করছে বাইরে যেতে। বাসা থেকে দেখা যায় আইসক্রীমের দোকান, ওখানে গিয়ে আইসক্রীম কিনে খেতে।

ফাইজা জানালার কাছে এলো। তারা পাঁচ তালায় থাকে। সামনের বাম দিকে ছোট একটা মাঠ। তাই এই জানালা দিয়ে আকাশটা ভালো করে দেখা যায়। কত বড় আকাশ! আকাশ এত বড়  কেন? কি আছে আকাশের ওপারে? মেঘের সাথে উড়ে যেতে পারলে কেমন হত? আকাশে পাখি নেই। নেই কেন? একটা পাখিও আকাশে উড়ে যাচ্ছে না। তাদের কি অসুখ করেছে?  নানান ভাবনায় ফাইজা ডুবে গেল।

ফাইজার মিনির মায়ের কথা মনে পরল। মিনি মা একসাথে অনেক কথা বলে। কথা বলতে থাকে। আর সে নানান ধরনের গল্পও জানে। ফাইজার বয়সের এই শহরে অন্য কোন ছেলে মেয়ে এতগুলো মাছের নাম জানে না, গাছের নাম জানে না, নদীর নাম জানে না, এটা সে বলতে পারে, বলতে পারে মিনির মায়ের কারনে। সে প্রতিটা গাছ, গাছের পাতা, মাছ, লতাপাতা, নদী, বিলের নামে গল্প বলতে পারে। গল্প শুনতে শুনতেই মুখস্ত হয়ে গেছে সব। ফাইজা স্কুলে গিয়ে সে সব চেক করে দেখেছে। কেউ এই সবের অর্ধেক নাম জানেন না বা জানেই না অনেকেই।

মিনির মা এতখন থাকলে সময়টা কিভাবে কেটে যায়, বুঝাই যেত না। দুপুরে ঘুমের আগে হোম ওয়ার্ক করে তখন মিনির মা একেবারে চুপ। জানালা দিয়ে আকাশ দেখে। এত আকাশ দেখতে পারে মিনির মা। এমনটা সে আর কাউকে দেখেনি। আকাশে কি আছে, এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেও ভালো একটা উত্তর খুঁজে পায়নি ফাইজা। পড়ার ফাঁকে তবুও সে দেখেছে, কেমন উদাস চোখে মিনির মা আকাশ দেখছে। যেন ওখানে তাদের বাড়ি।

ফাইজা জানালা থেকে সরে এলো। তারপর আবার এই ঘর সেই ঘর করতে লাগল। সারা বাড়ি কেমন বড় বড় লাগছে। বাসাটা যেন একটু উঁচুতেও উঠে গেছে! খুব সামান্য হলেও উঁচু হয়ে গেছে বলে মনে হল। যেন ঘরগুলো হঠাত করে বড় হয়ে গেছে বা কেউ টেনে বড় করে দিয়েছে।

ফাইজা ওর লম্বা চুলে হাত দিয়ে ঠিক করল। তখনই আয়নার কাছে যেতে চাইল। তার নিজেকে কেন যেন দেখতে ইচ্ছে করছে। সেদিকে পা বাড়াতেই ঠিক করল গেইম খেলবে। কিন্তু  মোবাইল হাতে নিতেই আর ইচ্ছে করল না। সে হাঁটছে আপন মনে। হ্যা, টিভি দেখা যেতে পারে। রিমোট হাতে নিতেই মনে হল সোফার পাশ দিয়ে কেউ দৌড়ে গেল। ছোট একটা ছেলে কি? নাকি ছোট একটা মেয়ে? নাকি অন্য কিছু! কিন্তু তা কি করে সম্ভব!

ফাইজা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। সে ধীর পায়ে সোফার পিছনের দিকে উঁকি দিতে গেল। সে অতি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বারেন্দার আলোটা সোফার গায়ে পড়ার আগেই থেমে গেছে। খানিকটা আলোহীন পরিবেশ। ফাইজা কেন যেন মনে হল ওখানে কেউ আছে। কেউ টা কে! কি!

ফাইজা এগিয়ে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সে হাঁটতে পারছে না। পা টা কেমন যেন জমে গেছে। নিজেকে টেনেই নিয়ে যাচ্ছে।

[চলবে]

 

 

 

4 comments

Abdullah Alam November 12, 2019 - 10:58 am

নোমান সরকার ভাই লেখাটা সমাপ্ত হলনা। লেখাটা পড়ে আমার মেয়ের কথা খুব মনে পড়ছে। হানিফের মা যদি বাসায় না থাকে তবে আমার বাচ্চাদের অবস্থা ফাইজার মতই হবে। গল্পটা পড়ে আমার বুকের মধ্যে কেমন করে উঠল। ধন্যবাদ নোমান ভাই

Reply
Samogro November 15, 2019 - 9:07 am

পর্ব ১ লেখা হয়েছে। আশা করি পর্ব ২ লেখা হবে। তবে এই গল্প লেখতে আমারও ভয় করছে।

Reply
Nubaid Abdullah (Aayan) November 12, 2019 - 4:18 pm

খুব সুন্দর ও ভয়ংকর গল্প ।

Reply
Samogro November 15, 2019 - 9:06 am

আমিও ভয়ে ভয়ে লেখেছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য।

Reply

Leave a Comment