Home গল্প ভুল থেকে আরো ভুলে

ভুল থেকে আরো ভুলে

by Admin

এক বানার গাছের উঁচু ডালে উঠতেই বিকট শব্দ শুনতে পেল। সে কৌতূহলী হয়ে শব্দের উৎসের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্রমেই শব্দটা বাড়ছে, কাছে আসছে।

সে দেখতে পেল একটা হাতি খুব জোরে দৌড়ে এদিকেই আসছে। যেন এই গাছের দিকেই আসছে। হাতিটা কি এই গাছটাকে ধাক্কা দিবে না তো। বানর প্রচণ্ড ভয় পেয় গেল। হতেও পারে। বনের রাজা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় এই বনে যে যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। আরে বুড়ো হয়েছেন, রাজ্য এইবার যুবকদের ছেড়ে দেন। না ক্ষমতা আঁকড়ে থাকবে। এদিকে সারা বন যা ইচ্ছে তাই হয়ে যাচ্ছে। পসুরা অসভ্য হয়ে উঠছে। কেউ কাউকে মানে না। সম্মান তো করেই না। এ যেন যা ইচ্ছে তাই এর রাজ্য।

বানর নিজেকে থামাল। বকা দিল আপন মনে, আরে হাতি কেন গাছকে ধাক্কা দিতে এখানে আসবে? সে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াবে। তবুও সে তীক্ষ চোখে তাকিয়ে রইলো।

হাতি দৌড়ে যখন একদম কাছে আসল, তখন বানর দেখল, হাতির দুই চোখ বন্ধ করা মানে কি? হাতি কি অন্ধ? হুম, হাতি অন্ধ। অন্ধ হাতি এত জোরে দৌড়ায়? সে তো বিপদে পড়ে যাবে! অদ্ভূত বিষয় তো!

বানার হাতি দৌড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছে ঝুলে যহুলে ছুটছে। এক সময় সে হাতির কাছাকাছি আসতে লাফিয়ে হাতির পিঠে নেমে পড়ল। তখন হাতি থামল।

প্রচণ্ড গতিতে সে ধমক দিয়ে জানতে চাইল, আমার পিঠে কেরে?

বানর বিনীত ভাবে বলল, আমি বানর।

কি চাও? কেন তুমি আমার পিঠে এভাবে লাফিয়ে নামলে?

বানর বিনীত ভবে অনেক মায়া নিয়ে বলল, তুমি যে চোখে দেখো না কিন্তু এভাবে প্রচণ্ড গতিতে দৌড়াচ্ছ। তুমি তো বিপদে পড়ে যাবে।

তমার সমস্যা কি? আমার বিপদ নিয়ে তোমাকে কে ভাবতে বলেছে, হতচ্ছরা। তোমার সাহস হল কিভাবে আমার পিঠে লাফিয়ে নামার?

বানর বলল, তুমি দেখতে পাচ্ছ না বলে বুঝতেও পারছ না কত প্রানী তোমার পায়ের নীচে চাপা পড়েছে। অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা বা আহত তো তুমি করতে পার না।

হাতি ব্লল, হতচ্ছরার সাহস দেখো! আমাকে উপদেশ দিচ্ছে! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। বলেই সে তার শুড় দিয়ে বানারকে পেচিয়ে ধরল।

বানার বলল, একি একি কি ক্রছ তুমি। আমি তোমার ভালো চাইতেই তোমার কাছে এসেছিলাম। আর তুমি?

অন্ধ হাতি বলল, আমি কি তোমার কাছে কোন উপকার চেয়েছি? সাহায্য চেয়েছি। যে আমার ভালো তোমাকেই করতে হবে? বেয়াদপ।

বানর প্রচণ্ড ভয় পেয়ছে। হাতি শক্ত ভাবে তাকে ধরে আছে। যে কন সময় বিপদ আসতে পারে।

বানর বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। এভাবে আমাকে অপমান কর না।

হাতি আট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। কি আমার অপমানরে। শরীরে নেই কিছু অথচ লম্বা কথা বলে।

বানর কাতরাতে কতরাতে বলল, অহংকার করো না নিজের শক্তি দেখাতে গিয়ে। আর মনে রেখো তুমি বড় প্রানী হলেও অন্ধ। তোমার খুব ভেবে পথ চলাটাই ভালো ছিল। তুমি তা বুঝতে চাও না। আমাকে এবারের মতন ছেড়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করব না।

হাতি বলল,জ্ঞান দিচ্ছ খুব। দুর্বলরা ই কাজ ভালো পারে। দাড়ো দেখাচ্ছি মজা। এই কথা বলে সে বানার কে ছুড়ে দিল পায়ের কাছে। তারপর পা উচু করে যতটা সম্ভব জোরে পিষে দিল। রক্তে মাটি লাল হলেও অন্ধ হাতি তা না দেখলেও বুঝতে পেরেছে হাতিটাকে সে পিশে মেরেছে। সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।

এর বেশ কিছু ক্ষন পরে অন্ধ হাতি আবার দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু সে দেখতে পেল না সামনে ছিল ছোট্ট পুকুরের আকৃতির এক বড় গর্ত। সে পড়ে গেল।

হাতির তখন বানরের কথাগুল মনে হচ্ছিল।

অন্ধ হাতি ধীরে ধীরে গর্তের ভিতর ডেবে যেতে লাগল। সে প্রান পন চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারলো না।

জ্ঞানীরা যা বলে তাকে অস্বীকার করা সহজ কিন্তু সত্য কখনো মিথ্যা হয় না। সে অন্ধ ,এই বিশাল দেহ টি নিয়ে যতদিন সে সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগিয়েছে সে কখনো বিপদে পড়েনি। কিন্তু আজ সে সকাল থেকে পাগলামি করতে চাইছিল। বারবার নিজেকে বুঝা্ছিল, এই পথ আমার অতি চেনা।

You may also like

Leave a Comment