Home শিশুতোষ গল্প বিদায় ছোট পাখি

বিদায় ছোট পাখি

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাতের বেলা মা নুসরাতের ঘরে এসে এসে দেখে গেল,সে বই পড়ছে কিনা। সব ঠিক আছে কিনা। সে ঘুমের আগে গল্পের বই পড়ে। তাই মা তাকে মজার মজার বই কিনে দেয়। আজ স্কুলে তার যাওয়া হয়নি। বাবার অসুখ করেছে বলে। অন্য সময় এমন হলে বা বাবার কাজ থাকলে মা নিয়ে যায়। আজ মা নিয়ে যায়নি। বাবার পাশেই ছিল।

নুসরাত ঘুমাতে যাবার আগে ঠিক করল মিনি বিড়ালকে তার কাছে নিবে। কাছে নিতে সে মিনি বিড়ালকে বিছানায় নিয়ে এলো। এতেই মিনি বিড়ালের আপত্তি। নুসরাত যতবারই তাকে বিছানায় উঠায়, মিনি বিড়াল ততোবারই বিছানা থেকে নেমে যায়। মহা মুস্কিলে পরেছে নুসরাত।

আজ মিনি বিড়ালের হয়েছেটা কি? এত দুষ্টমি বা কেন করছে! মাছের পিস দিয়েছে ৩টা, পানি খাইয়েছে। আদর করেছে। আজ তাকে বেশি বেশি করে যত্ন করেছে। আর সে কিনা এমন করছে।

নুসরাত মিনি বিড়ালটাকে আবার বিছানার নিচ থেকে ধরে এনে বলল, ‘একদম চুপ।’

মিনি বিড়াল ‘মিউ’ বলে একটা শব্দ করল।

নুসরাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ওকে। এতেই মিনি বিড়ালের যেন জান যায় যায়। সে বুঝল নুসরাত তাকে ছাড়বে না। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। মিনি বিড়ালকে ঘুমাতে দেখে নুসরাতও ঘুমিয়ে গেল।

মিনি বিড়ালের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখল, নুসরাত ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগ। আর হাতটাও আলগা আছে। কোন রকম হাতের নিচ থেকে বের হতেই লম্বা লাফ দিল। কিন্তু লাফিয়ে যেখানে পড়ল, সেটা ছিল নুসরাতের টেবিল ঘড়ি। ছিটকে সেটা মাটিতে পরতেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে নুসরাতের ঘুম ভাঙ্গাতে সে ভয় পেয়ে লুম্বা একটা চিৎকার দিল। সেই চিৎকারে মিনি বিড়াল ভয়ে আরেকটা লাফ দিয়ে বারিন্দায় চলে এসে দিল প্রচন্ড গতিতে দৌড়। আগামী সাত দিন সে আর এই বাড়িতে আসবে না বলে ঠিক করে নিল, এই অবস্থায়ই।

গুনে গুনে সাত দিন পরেই মিনি বিড়াল এই বাড়িতে এলো। পাশের বাড়িগুলোতে কেউ তাকে আদর করে না, খাবার দেয় না। এই সাত দিনে সে শুকিয়ে যেন কাঠ হয়েছে।

বারিন্দা দিয়ে ঢুকেই সে দেখল নুসরাতের টেবিলে উপরে ঝুলে আছে একটা খাঁচা। আর তাতে আছে একটা ছোট পাখি। মিনি বিড়াল ঘরে ঢুকল। এই নতুন অতিথিটা দেখতে তো বেশ সুন্দর।

আর তখনই নুসরাত ঘরে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই মিতু মিনি বিড়ালকে দেখল। মিনিকে দেখতেই সে তাড়া ফেলল। মিনি বুঝতেই পারল না সে এমন করছে কেন! তখনই মনে হল এত আদর করেছে তাকে। অথচ সে সেই আদরকে অবজ্ঞা করে সাত দিন এই বাড়িতে ফিরেনি।

মিনি একটা লম্বা লাফ দিয়ে বারিন্দায় এলো। তারপর দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল।

বিকালে নুসরাত সাইকেল চালাতে মাঠে যায়। তার ঘরে ঢুকার একটা পথ জানা আছে। জানালার থাই গ্লাসটা সামান্য চাপ দিতেই খানিকটা ফাঁকা হয়। আর তা দিয়ে অনেক সময় সে এই ঘরে ঢুকে। এটা তার গোপন পথ। সে ছাড়া আর কেউ জানে না। নুসরাত ঘরে থাকলে সে কখনো এই পথ দিয়ে আসে না।

মিনি বিড়াল থাই গ্লাসে সামান্য চাপ দিতেই সে ঘরে ঢুকে গেল। তারপর ধীর পায়ে মিতুর টেবিলের কাছে চলে এলো। পাখিটা তাকে সেখতেই শব্দ করল। মিনি বিড়াল ঘাড় উঁচু করে ভাবল,বাহ! কি চমৎকার!

বেশ কিছুক্ষণ বসে বসে পাখিটা দেখল সে। নুসরাতের তেড়ে আসার দৃশ্যটা মনে করল। নুসরাত খুব কষ্ট পেয়েছে। সে এই বাড়িতে সাতটা দিন আসেনি। অথচ কত আদর করেছে তাকে। তাকে আদর করে কাছে নিতে চেয়েছে। সে তো অবহেলা করেছে সেই আদর। অবহেলা কেউ সহ্য করতে পারে না। কাউকে অবহেলা করতে নেই। তাই নুসরাত তার বদলে এই পাখিটা এনেছে। এখন তার আদরটা নিশ্চয়ই পাখিটা পাচ্ছে। অবহেলাত পরিনতি অশুভই হয়, আজ তা হারে হারে টের পাচ্ছে মিনি বিড়াল।

মিনি বিড়াল উঠে পরল। যা সে করেছে তার ফল তো তাকে ভোগ করতে হবে। সে জানালার থাই গ্লাসটার কাছে এলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ছোট পাখিটাকে দেখল। কত সুন্দর একটা পাখি। থাক সব আদর তার জন্যই থাক। সে জানালা দিয়ে বের হবার আগে আবার ছোট পাখিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, বিদাই ছোট পাখি।

 

You may also like

Leave a Comment