Home রূপকথা ছদ্রবেশে রাজা

ছদ্রবেশে রাজা

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

ছদ্রবেশে রাজা মানুষের সুখ দুঃখে খবর নিতে বের হয়েছেন। সামনে এক জঙ্গল পড়ল। জঙ্গলে ঢুকতেই রাজা কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঘ আক্রমণ করে বসল। বাঘের আক্রমণে ঘোড়াটা হারাতে হলেও রাজা বেঁচে গেল। রাজা তবুও ক্ষুধার্ত বাঘটাকে মারল না। তীর ধনুক নামিয়ে নিয়ে রাজা পায়ে হেঁটে ছুটলেন।

প্রচন্ড খিদে লেগেছে রাজার। ঘোড়ার পিঠে খাবার ছিল। কিন্তু বাঘটা আয়েশ করে ঘোড়াটা খাচ্ছিল বলে সাথে থাকা খাবারের আশা বাদ দিয়েছিল। জঙ্গলে রাজা দেখলেন দূরে একটা কুঁড়ে ঘর। আগুনের আশায় সেখানে যেতেই দেখলেন সেই ঘরে বাস করে একটি দরিদ্র পরিবার। তারা দুপুরের খাবার জুটাতে পারেনি বলে না খেয়ে আছে। তাদের থেকে রাজা জানলেন এই জঙ্গলে বাস করে তাদের মতন হাজার দরিদ্র পরিবার। কথাটা রাজার যেন বিশ্বাস হলো না।

রাজা তাই সেখানে থাকা অজস্র পরিবারের কাছে গেলো। বলল, আমি রাজার লোক। তোমাদের খবর নিতে এসেছি। যাকে বলে সেই ভয় পেয়ে তাকিয়ে থাকে। অনেক কষ্টে তাদের থেকে জানা গেলো, তারা আছে ভয়য়াবাহ কষ্টে। তাদের খাবার নেই, কাপড় কিনার সামর্থ্য নেই, ঘর ঠিক করার মতন অবস্থা নেই,শিক্ষা নেই। রাজা প্রচণ্ড হতাশা অনুভব করলেন। তার রাজ্য মানুষের এত কষ্ট! এ যে ভাবাই যায় না, মানাই যায় না।

জঙ্গলের পাশে পাহাড়। সেখানে বাস করে শত শত পরিবার। সেখানেও একই অবস্থা। রাজা কেবল ভাবতে লাগল, এটা আমার রাজ্য! হায় এটা আমার রাজ্য!

পাহাড় আর জঙ্গলের মানুষের কষ্ট দেখে দেখে রাজা ক্লান্ত। সেখান থেকে বের হয়ে রাজা নদীর তীরে এলেন। জঙ্গল আর পাহাড় ঘিরে আছে ছোট্ট একটা নদী। কি অপূর্ব দৃশ্য। কিন্তু সব ম্লান হয়ে গেলো প্রজাদের অবস্থা জেনে। তিনি জঙ্গলের পাশের নদীর ওপারের বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার দুখী প্রজারা বাস করে সারা জঙ্গল জুড়ে। মনটা তার কষ্টে ডুবে গেল।

রাজা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজা ফিরে এলেন প্রসাদে। প্রাসাদে কত খাবার। খেতে বসে রাজা কিছুই খেতে পারলেন না। তার চোখে ভেসে উঠল সেই পরিবারের মানুষগুলোর চেহারা।

রাজা ডেকে পাঠালেন সেই ছোট রাজ্যের দায়িত্বে আছেন সেই মন্ত্রীকে।

মন্ত্রী এলেন। রাজা প্রশ্ন করল,’ কি হে মন্ত্রী, তুমি যে আমাকে দেখতে এলে, যে জাকজমক অবস্থা, বিশাল হাতি বাহিনী সাথে করে এত হাতি তো রাজারও নেই।

মন্ত্রী লজ্জা পাওয়া গলায় বললেন, ‘ রাজার অনেক দয়া।’

হাতিগুলো স্বর্ণ দিয়ে ভালো সাজিয়েছ। তমার কাজ পছন্দ হয়েছে।’

মন্ত্রী বলল, রাজার অনেক দয়া।”

রাজা হেসে বলল, এবার রাজ্যের প্রজাদের গল্প বলল,খাজনা ঠিক মতন আদায় হচ্ছ তো?’

মন্ত্রী বলল,’ হুজুর আমি তো ঠিক মতন খাজনা দেই। এতটুকু কম হয় না কোন বছর।’

রাজা বললেন, তোমার এলাকার মধ্যে ঐ কালো পাহাড় আর জঙ্গলও আছে। তা সেখানে আমার প্রজারা কেমন আছে সেখানে?’

মন্ত্রী বলল, ‘ওরা আছে মহা সুখে। স্বর্ণ আর অলংকারে ডুবে থাকে প্রত্যেক প্রজা। এমনকি জঙ্গলে যে প্রজারা থাকে তারাও এত ধনী যে বিলাসিতা করে তারা জঙ্গলে থাকে। মহা আনন্দেই তাদের দিন কাটে।’

রাজা বলল, ‘না খেয়ে থাকে কয় জনা?’

মন্ত্রী অবাক হয়ে বলল, ‘একটিও না, একটিও না। আপনি নিজে এসে একবার বেরিয়ে যান।’

রাজা তাকে বরখাস্থ করলেন, কালো পাহাড়ে প্রজাদের সামনে তাকে ফাঁসির ব্যবস্থা করলেন। আরেকজনকে বানালেন মন্ত্রী সেখানের। তাকে ডেকে দেখালেন আগের মন্ত্রীর মিথ্যা বলার পরিনিতি আর প্রজাদের প্রতি অবহেলার প্রতিশোধ।

সন্ধ্যায় রাজা প্রাসাদে ফিরতেই রানী এসে বললেন, ‘মহারাজ আমাদের প্রজাদের মনে অনেক কষ্ট। অথচ আমরা কেন সেটা জানতে পারলাম না। এটা আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে।’

রাজা বললেন, ‘বছরের পর বছর একজন অযোগ্য মন্ত্রীর জন্য আমার প্রজারা কি ভয়াবাহ কষ্টই না করেছে। প্রজাদের জন্যই আমি রাজা।’

রানী বললেন, ‘এর জন্য রাজ্যের প্রত্যেক প্রজাই আপনাকে এত ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে।’

রাজা বললেন, আমি খুবই লজ্জিত প্রজাদের কাছে। আমার প্রজারা না খেয়ে থাকে! রানী! প্রজারা কেমন আছে, এই খবর আরো ভালো ভাবে নিতে হবে। তখনই হব আমি প্রজাদের জন্য যোগ্য একজন রাজা।

You may also like

2 comments

Chatok pakhi November 3, 2019 - 10:02 am

Matha katar moto Raja hole ki r proja na kheye thake vai😊

Reply
Samogro November 12, 2019 - 6:49 am

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য পেয়ে আমি কথাগুলো পরিবর্তন করেছি। আশা করি এবার ভালো লাগবে। মন্তব্য করবেন, এতে গল্পের মান আরো বেড়ে যাবে। আমি গল্প লেখে যাচ্ছি। কিন্তু লেখা প্রকাশের পর গল্প তো মুলত পাঠকের। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Reply

Leave a Comment