Home রূপকথা রাজার রাজত্বে

রাজার রাজত্বে

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

রাজা চমৎকার ভাবে দেশ চালাচ্ছিলেন। দেশেও কোন অভাব ছিল না। রাজার সব মনোযোগ ছিল দেশ আর প্রজা নিয়ে। বড় রাজা মারা যাবার আগে বলে গিয়েছিলেন,’ যখন যে কাজ করবে,তা মন আর মনোযোগ দিয়ে করবে। সেই বিষয়ে সজাগ আর সাবধানী থাকবে। যা করবে তা ভালোবাসবে। আর রাজার রাজত্বে প্রজাদের যেন কষ্ট না হয়।’ রাজা বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে সুখেই চলছিল। গতবছর খরা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রাজা প্রজাদের বিষয়ে সব সময় সাজাগ। প্রজাদের সব খবর নিয়ে সাবধানী ছিলেন বাবার কথা মত। আগেই উন্নত মানের সেচ ব্যবস্থা আর খাদ্য মুজদ থাকায় কিছুই ক্ষতি হয়নি খরায়।

সেই রাজা একদিন শিকারে গিয়ে বিপদে পড়লেন। সকালে শিকারে যেতেই তিনি এক বাঘের পাল্লায় পড়লেন। ছোট বেলা থেকে শরীর চর্চার জন্য রাজার শরীরে শক্তি ছিল অসীম আর রাজা ছিল অস্ত্রচালনায় নিপুন। ফলে বাঘটা ঝাঁপিয়ে পরতেই তার অস্ত্রের এক আঘাতে বাঘটাকে কেটে ফেলল। আর তখনই এক ডাইনী দৌড়ে এসে আহাজারি করতে লাগল, সেই বাঘটার তার বলে। ডাইনী ভয়ানক রুপ ধারণ করল। বিকট চেহারার ডাইনি রাজাকে ধরতে এগিয়ে আসতে লাগল। রাজা বুঝল এর সাথে পেরে উঠা মুসকিল হবে। রাজা পিছনে থাকা বিশাল গাছটার পিছন দিকটায় ছুটে গেল। ডাইনি যেন তাকে ধরেই ফেলবে এমনটা মনে হতে লাগল। ডাইনির চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। রাজা আরো দ্রুত গাছটার উপরে উঠা যায় কিনা দেখতে লাগল। রাজা লাফিয়ে উপরে দিকে উঠার চেষ্টা করতেই গাছটার ভিতরে চলে গেল। যেন গাছটা তার ভিতরে জায়গা করে দিল।

রাজা এমনটি দেখেনি, শুনেনি কখনো। সে দেখল বিশাল গাছের ভিতরে অনেক জায়গা আর আলোতে ঝলমলে, রোদ এসে পরেছে উপরের মোটা মোটা শিকড়ের নীচ দিয়ে। এত বেশি ফাঁকা জায়গা যে তার ঘোড়াটাও এখানে নিরাপদে থাকতে পারত। ঘোড়াটার জন্য মায়া হচ্ছে, ঘোড়াটার ভাগ্য কি ঘটেছে কে জানে। কিন্তু গাছ এতটা বিশাল হলেও এত জায়গা এলো কিভাবে এর ভিতরে!

গাছটার যেন সরু পথ বা দরজা খুলে গিয়েছিল বা কিছু একটা হয়েছিল। ব্যাপারটা এত দ্রুত হয়ে গেল যে রাজা বুঝতেই পারেনি কিভাবে গাছের ভিতরে চলে এলো। রাজা অস্থির হয়ে চারদিক দেখতে লাগল, চারদিক গাছের উপরের অংশের মতন ,মনে হচ্ছে অনেকগুলো গাছ তাকে ঘিরে রেখেছে। ডাইনির জন্য কতখন এখানে থাকবে বুঝতে পারছে না বা এখান থেকে বের হবে কিভাবে তাও বুঝতে পারছে না।

চারদিক তাকিয়ে থাকতে থাকতে রাজার ঘুম পেল। আর সে ঘুমিয়ে গেল। যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন দেখল তার চার জন সৈন্যরা তাকে ঘিরে আছে। আর সে সেই বিশাল গাছের বাইরে মাটিতে শুয়ে আছে। রাজা লাফিয়ে উঠে পরল। একজন সৈনিক এসে বলল, আপনার ঘোড়াটা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। এরপর সে থেমে গেল। রাজার মনে পরল তিনি শিকারে এসেছিলেন। সাথে অল্প কিছু সৈনিক।

রাজা বলল, আমাকে কি এখানেই ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছিলে?

সৈনিকরা এক যোগে বলল, হ্যা।

রাজা গাছটার দিকে তাকাল। আর তখনই বহু দূরে ডাইনির ভয়ংকর ডাকি ডাকি শুনতে পেল। সৈনিকরা সেই চিৎকারে নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাহি করতে লাগল।

রাজা প্রজাদের কথা ভাবলেন। তার ফিরে যাওয়া উচিত। আবার ভাবললেন এই ডাইনীটা তার প্রজাদের হত্যা করতেই থাকবে। কে জানে সে কতজনকে হত্যা করেছে আমার রাজত্বে। বাঘটা তার সঙ্গি ছিল। ওটা থাকাতে হয়ত তার এই হত্যাগুলো আরো সহজ ছিল। রাজা অনেক কিছু ভাবলেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন ফিরে যাবার।

রাজদরবারে তিনি ফিরে গেলেন। জঙ্গলটাকে ভালো করে চিনে এমন মানুষদের খবর দিলেন রাজদরবারে আসার জন্য। বৃদ্ধ অবসরে থাকা যোগ্য সৈনিকদেরও ডাকলেন। ডাকলেন আরো অনেককে। যেন যুদ্ধ শুরু হবে এমন একটা অবস্থা হল রাজদরবারের। ‘ শক্রকে ছোট করে দেখতে নেই’, রাজার এই বক্তব্য দিয়ে শুরু হল বৈঠক। এভাবে রাজদরবারে সাত দিন সাত রাত ডাইনীটাকে কিভাবে ধরা যায় বা মারা যায় এ নিয়ে আলোচনা করলেন। যুদ্ধ যূদ্ধ ভাব চলে এলো সবার ভিতর। রাজা কিন্তু গাছটার বিষয় এড়িয়ে গেলেন।কারো সাথে এই নিয়ে আলাপ করলেন না। অতি উৎসাহ বিপদের কারন হয়। গাছের বিষয়টা জানাজানি হলে দেখা যাবে সেই পুরানো বিশাল গাছটার ভিতরে ঢুকতে চেয়ে গাছটাকেই মানুষ কেটে ফেলছে বা পূজা করা শুরু করে দিয়েছে। এ নিয়ে আরেকদিন যাওয়া যাবে বিশাল গাছের কাছে। এই রহস্যের কোন কূল কিনারা না করতে পারলেও রাজার এ নিয়ে দুঃখ থাকবে না। বড় বিপদে গাছটাকে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। আর এ জগতে কত জাহার রহস্যের বিষয় ঘটে যাচ্ছে জানা আর অজানায়, দেখা আর না দেখায়।

কয়েক সপ্তাহ পরেই শুরু হল ডাইনী মারার অভিযান। যেন যুদ্ধ সাজে সেজেছে সবাই। জঙ্গলে চলে এলো সবাই। কি নেই সাথে কামান, গোলা বারুদ, সৈনিক, অভিজ্ঞ মানুষেরা। জঙ্গলের একদিক থেকে অভিযান শুরু হল। দুই দিন পরেই ডাইনীর মুখমুখি হল সবাই। ডাইনীটা যেন খুব কাছেই ছিল। যেন সেও তাদের গতিবিধি দেখে দেখে এগিয়ে এসেছিল। ডাইনীটা খুব কাছে এসেই ভয়ানক মূর্তি ধরন করে চিৎকার জুড়ে দিল। ডাইনীর বীভৎস চিৎকারে ভড়কে গেল সবাই। প্রচন্ড ভয়ে ভুলে গেল কামান দাগাতে বা বুন্দুক থেকে গুলি ছুটতে। যেন প্রত্যেকেই একা হয়ে গেছে, এমন মানুষিক অবস্থা দাঁড়াল সেই সেনা অভিযানের প্রত্যেকের। ঠিক তখনই রাজা ঘোড়ায় ছুটে এসে ডাইনীর দিক কামান তাক করে গোলা দাগাল। আচমকা সব থেমে গেল। থেমে গেল সব চিৎকার। সবাই তাকিয়ে দেখল ডাইনীর মাথাটা বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে গেল।

গাছের পাতাগুলর শব্দ ছাড়া কোথাও কোন কথা নেই। জঙ্গলে এমনকি পাখির ডাকটাও নেই। স্তব্দ হয়ে গেছে চারদিক। যেন কিছুই হয়নি। সবাই কুকুড়ে আছে যেমনটা ডাইনীর বীভৎস ডাকে হয়েছিল।

রাজা চিৎকার করে বলল, ‘এই বিজয় আমাদের সবার’।


You may also like

2 comments

আহমেদ রব্বানী September 28, 2019 - 9:35 am

শুভকামনা রইল ভাইজান।

Reply
Samogro September 29, 2019 - 12:03 pm

আহামেদ রব্বানী ভাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ। খুব ভাল লাগল আপনাকে এখানে পেয়ে। আশা অরি আরো গল্প পড়বেন আর মন্তব্য দিবেন।

Reply

Leave a Comment