Home শিশুতোষ গল্প মিউ [শিশুতোষ গল্প-১]

মিউ [শিশুতোষ গল্প-১]

by Admin

মিউ

মোঃ নোমান সরকার

বিড়ালটাকে সবাই মিউ বলে ডাকে। এই নামটা তার নিজেরও অনেক পছন্দ হয়েছে। কেউ এই নামে ডাকলে মিউ ঘাড় ঘুড়িয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

একদিন দুপুরে প্রতিদিনের মতন সে বারেন্দায় এসেই দেখতে পেল পাশের বাড়ির দুষ্ট ছেলেটা বাড়ির চারপাশে যে দেওয়াল আছে তার উপর দিয়ে হাঁটছে আর হাসছে। সে
দেওয়ালের উপর উঠে কিছুটা দৌড় দিয়ে দেওয়ালের বাইরে নীচে লাফিয়ে পড়ল। সে অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রতেকটা দিনেই। অতি উঁচু দেওয়ালের উপর থেকে দেওয়ালের বাইরে প্রতিদিন দুপুরে সে লাফিয়ে পড়ার এই কাজটি করে অতি উৎসাহে। লাফিয়ে পড়ে সে বালুর উপর।

পাশের বাড়ির এই উঁচু দেওয়ালের পাশে কিছু দিন আগে একটা বড় ট্রাককে উঁচু করে বালু ফেলতে দেখেছিল মিউ। সেই বালুতেই দুষ্ট ছেলেটি লাফিয়ে পড়ে। আর হি হি করে হাসে। তারপর আবার বাড়ির ভিতরে আসে। এসে দৌড়ে উঠে আসে উঁচু দেওয়ালের উপরে। আবার লাফায়। এভাবে অনেক বার প্রতিদিন সে এই কাজটি করে। কেন করে বুঝতে পারে না মিউ। কেবল দুপুরে চার তলার বারেন্দা থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে মিউ দেখে। ছেলেটার হাসি দেখে কেবল মনে হয়, এই কাজে ছেলেটি ভালো মজা পায়। ভালোই লাগে দেখতে। সম্ভবত এটি খুবই মজার খেলা। খেলাটি দেখতে দেখতে তার নিজের খুব ইচ্ছে করে এই খেলাটি খেলতে।

কয়েক দিন পরের কথা। মিউ বারেন্দায় এসে দেখল প্রতিদিনের মতন দুষ্ট ছেলেটা লাফিয়ে পড়তে যাবে ঠিক তখনই পাশের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা মহিলাটা তা দেখে ফেলল। ছেলেটিকে লাফিয়ে বাইরে পড়ে যেতে দেখে তিনি এমন জোরে চিৎকার দিলেন যে আশেপাশে কিছু মানুষ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। ছেলেটি লাফিয়ে পড়ার ঠিক আগে চিৎকার শুনে সেদিকে তাকাল। তাতেই ছেলেটিও কিছুটা ঘাবড়ে গেল। তার মুখের হাসিটা মুছে গেছে, সে দৌড়ে যে জায়গা থেকে লাফটা দেয় তারও আরো পরে চলে গেল। আর আরো দূরে দৌড়ে ছুটে গেল আর লাফ দিল।

মিউ এবার তাকাল বৃদ্ধা মহিলার দিকে। দেখল বৃদ্ধা মহিলা খুব জোরে চিৎকার দিবার পর লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। সম্ভবত এর আগে কখনো বৃদ্ধা মহিলার ছেলেটিকে এখান থেকে লাফিয়ে পরতে দেখেননি। তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। দেখেননি বলে তিনি এভাবে ভয়ে চিৎকার দিয়েছেন।

মিউ আবার দেওয়ালের ওপাশে কি হয়েছে তা দেখতে চোখ ঘুরালো। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখল প্রতিদিনের মতন ছেলেটি বালুতে না পড়েছে মাটিতে। ছেলেটি আর অন্য দিনগুলোর মতন হেসে উঠল না। বুঝাই যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।

মিউ বারিন্দায় ফাঁকাটা দিয়ে দৌড়ে তার নীচে নামার জায়গাটিতে পৌছাল। তারপর দৌড়ে নীচে নামল। তারপর দোতালায় পৌছাল। এবার নামতে হবে তাকে সিঁড়ি বেয়ে। সে নীচে নামাল সিঁড়ি বেয়ে ভয়ে ভয়ে। কেউ দেখলে দিবে তাড়া। মানুষগুলো তাকে দেখলেই কেন এভাবে তাড়া দেয়, আজো বুঝা হয়নি তার। সে চারদিকে তাকিয়ে খুব দ্রুত নেমে এলো সেখানে, যেখানে মানুষ থাকতে পারে বা চলা ফেরা করে তার থেকে দূরে সরে এলো।। ভাগ্য ভালো আশেপাশে কেউ নেই।

পাশের বাড়িতে যাবার একটা সর্ট কার্ট রাস্তা জানা আছে, মিউ সেই পথ ধরে চলে গেল। গিয়ে দূর থেকে দেখল কয়েকজন মিলে পড়ে থাকা মহিলাটাকে উঠানোর চেষ্টা করছে। তারপর উনাকে কোলে করে দুইজন মানুষ বাড়ির বাইরে নিয়ে গেল।

মিউ এক লাফে প্রাচীরের উপরে উঠল। দুষ্ট ছেলেটার কি হল, তা তাকে দেখতেই হবে। তার খুব অস্থির লাগছে। দেখল একজন মানুষ কোলে করে দুষ্ট ছেলেটাকে নিয়ে দৌড়াচ্ছে রাস্তায়। তারপরে একটা রিক্সায় উঠে গেল ছেলেটাকে নিয়ে। রিক্সা চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে দূরে। ছেলেটির জন্য মন খারাপ লাগছে মিউ এর। তার মনে হলো সে হাঁপাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে ছেলেটির জন্য তার খুবই খারাপ লাগছে। কিছু একটা হয়েছে তার! বড় কিছু একটা!

আরো কিছু দিন পরের কথা। বিকাল হয়নি এমন একটা সময়। মিউ বারেন্দায় এসে দেখল পাশের বাড়ির ভিতরে ছেলেটি একটা লাঠি ভর দিয়ে হাঁটছে। ছেলেটিকে নিয়ে সে অনেক চিন্তিত ছিল বলেই ছেলেটিকে দেখতে পেয়েই মিউ এতো খুশি হলো যে মনে হলো কোনদিনও সে এত খুশি হয়নি। সে অনেক আনন্দে মিউ মিউ করে উঠল।

সে খুঁটিয়ে খুটিয়ে ছেলেটিকে দেখতেই লাগল। সে দেখল ছেলেটির এক পায়ে সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। সেই পা কিছুটা উঁচু করা। একটা লাঠি আর এক পায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে। তাকে খুব মলিন দেখাচ্ছে। দেখে তার খুবই খারাপ লাগল। সে সব সময় এই ছেলেটিকে দুষ্ট বলেই ভাবত। তাকে দেখলেই ছেলেটা তাড়া দিত বলেই হয়ত তার এমন মনে হত।

হঠাত মিউ এর কিছু একটা মনে হলো। মনে হতেই মিউ দ্রুত নেমে এলো। নেমে এসে সে সেই উঁচু দেওয়ালের উপর উঠল। উঠে সে দেওয়াল ঘেঁসে রাখা বালুর দিকে তাকাল। ছেলেটি দেওয়ালের উপর থেকে কোন কোন জায়গা থেকে লাফিয়ে পড়েছে এতদিন, মনে করার চেষ্টা করল। ছেলেটি যেখানে যেখানে লাফিয়ে পড়ে সেখানে উঁচু করে রাখা বালু। সে সরে এলো। এত বালুর উপর লাফিয়ে পড়লে সে ডুবে যাবে, একদিন ছেলেটিও ডুবে গিয়েছিল এই বালুর ভিতর। অনেক অনেক দিন সে ছেলেটিকে এখান থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখছে। সে আরো সরে এলো। সে সরে এসে দাঁড়াল দেওয়ালের সেই অংশে, যেখানে দেওয়ালের নীচে এই জায়গাটায় বালু কম। এতে লাফিয়ে পড়লে ব্যাথাও পাবে না আবার বালুর ভিতর ডুবেও যাবে না।

এবার মিউ চোখ সরিয়ে তাকাল ছেলেটির দিকে। ছেলেটি পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। সম্ভবত সে আর কখনোই উঁচু দেওয়ালে উঠতে পারবে না। দৌড়াতে পারবে না। কিন্তু সে তো পারবে। হ্যা, সে পারবে। আর মিউ এর অনেক দিনের ইচ্ছেও ছিল ছেলেটির মতন করে লাফিয়ে পড়ার।

মিউ দেওয়ালের উপরে লাফাতে লাগল আর মিউ মিউ বলে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। সে ছেলেটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমনটা করল। আর এতেই কাজ হল। হঠাত ছেলেটা দেওয়ালের উপর তার জায়গাটিতে মিউকে দেখতে পেয়ে চোখ বড় করে তাকাল। মিউ দেখল এটাই সব চেয়ে ভালো সময় ছেলেটাকে জানানোর যে, যা তুমি করতে তা দেখে আরেকজন শিখে নিয়েছে। হ্যা শিখে নিয়েছে। আজ তুমি না পারলেও সেই কাজ অন্য একজন করে তোমাকে আনন্দ দিবে। মিউ অসম্ভব খুশি হয়ে গেল। সে আরো জোরে জোরে মিউ মিউ করে উঠল।

মিউ নিচের বালুতে লাফিয়ে পড়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিল। সে দেখল ছেলেটির চোখ আরো বড় হচ্ছে, তার মুখটা খুলে গেছে। অবাক বিস্ময়ে সে তাকিয়ে আছে। আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে বুঝতে পেরেছে বিড়ালটা কি করতে যাচ্ছে। এই দেখে মিউ আরো খুশি হয়ে উঠল। সে লাফ দিবার জন্য নিজের দেহটাকে উঁচু করে বালুর জায়গাটা আবার দেখে নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলতে চাইল, আমাকে দেখ, আমাকে দেখ!

তার দেহ শূন্যে উঠে গেছে। এখন সে নীচে পড়তে যাচ্ছে। সে দেখল, ছেলেটার চকচকে চোখ। তার মুখের সমস্ত মলিনতা চলে গেছে। সে হাসছে। আর ঠিক তখনই সে দেখল ছেলেটির পিছনে দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেই বৃদ্ধা মহিলা। আর তিনি খুব জোরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

লাফিয়ে পড়তে পড়তে মিউ দেখল, বৃদ্ধা মহিলার চিৎকার শুনে অনেক মানুষ দৌড়ে আসতে লাগল। আর যেন অনেকেই দেখে ফেলেছে বিড়ালে লাফিয়ে পড়াটাও। দৌড়াতে শুরু করল অনেকেই।

বেশ কিছুখন পর মিউ দেখল তাকে কোলে নিচ্ছে মানুষ এক এক করে। কেউ মাথায় আদর করছে, কেউ পায়ে।

কেউ একজন বলল, কিছু দিন আগে এই দেওয়াল থেকে পড়ে একটা ছেলের পা ভেঙেছে। আজ এই বিড়াল পড়ল। এই দেওয়ালের দোষ আছে। দেখ, দেখ বিড়ালের পা ভেঙ্গেছে কিনা?

অনেক মানুষ এক সাথে মিউ এর পা দেখতে লাগল। আর অনেকেই মিউ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

You may also like

6 comments

Mohd. Shafiul Bashar June 27, 2019 - 12:30 pm

Noman Dosto…..
Tor lekha !?
Ami nijye o oi ball tar moto dosto shilam, chotobelaye.

Reply
Samogro June 27, 2019 - 3:33 pm

বাশার, এই ওয়েব সাইডটিতে সব আমার লেখা থাকবে। শিশুতোষ গল্প দিয়ে শুরু করলাম। আশা করি তোমার বাবু সহ পরিচিত বাবুদের গল্পগুলো পড়তে দিবে। শিশুরা গল্প পড়লে তাদের মনের নতুন নতুন জানালা খুলে যাবে। দোয়া করো, আগামীতে আরো অনেক পছন্দের বিষয় নিয়ে লিখব।

Reply
Obaid June 27, 2019 - 4:04 pm

Wowww. Nice concept and beautifuly emphesaized. Hope to see more…

Reply
Samogro July 3, 2019 - 12:49 pm

অনেক আনন্দ আমার!!!

Reply
Ripon June 30, 2019 - 7:16 am

Khub sundor hoise amer maye khub moja paise.
Next aro notun kisu likbeben
Onek onek suvo kamona roilo apnar abong liza apar jonno.

Reply
Samogro July 3, 2019 - 12:47 pm

অনেক অনেক আনন্দ আমার যে বাবু মজা পেয়েছে গল্পটায়। এখানে আরো কয়েকটি গল্প আছে। হ্যা, লিখব। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আর পরিবারের সকলে।

Reply

Leave a Comment