Home কিশোর গল্প বন্ধু (কিশোর গল্প)

বন্ধু (কিশোর গল্প)

by Admin

মোঃ নোমান সরকার

মোরগ দাঁড়িয়ে আছে গাছের উঁচু ডালে। তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে।  সে দেখলো একটা তীব্র আলো, সাথে একজন আকাশ থেকে নীচে নামছে। আর অন্ধকার দূর হচ্ছে। ভোর নেমে আসছে পৃথিবীতে। মোরগ তা দেখতেই ডাকলো, ‘কুক কুরো কুক!
কুক কুরো কুক!’     

শিয়ালের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে চোখ খুলেই জোরে জোরেই বলল, সকাল হয়েছে বলেই কি এমন করে ডাকতে হবে? গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। চুরি করতে যাওয়া এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আর এই মোরগ সকাল হতেই এমন ডাকাডাকি করে, আমার ঘুমটাই দিল ভেঙ্গে। দুনিয়ায় সবাই যদি এভাবে শত্রুতা করে তাহলে চলবে কি করে? আহা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারতাম।

পাস দিয়ে যাচ্ছিল পিঁপড়ার দল। রাণী পিঁপড়া বলল, শিয়ল মশাই সবার দোষ ধরাই তোমার কাজ। মোরগের ডাক না শুনলে আমাদের সকালটাকে সকাল বলে মনে হয় না।        

শিয়াল বলল, তোমাদের যত আজে বাজে চিন্তা। সকাল হচ্ছে আরাম করে ঘুমানোর জন্য। এই সময় কেউ কাউকে বিরক্ত করতে নেই।

রাণী পিঁপড়া বলল, তুমি তোমার ছোট বাবুদের ফেলে দিয়েছ বলে তুমি তাদের স্কুলে নিবার কথা ভুলে গেছে। তুমি একটা পচা বাবা। তা কি তুমি বুঝ?  

শিয়াল বলল, তুমি চুপ থাক,ছোট প্রানী, ছোট ছোট কথা বলো। মোরগ হলো দিনের শত্রু। সে সবারই শত্রু।  

রাণী পিঁপড়া বলল,অযথা অন্যকে শত্রু ভেব না। অহংকার করো না। এই দিন পস্তাতে হবে।     

শিয়াল বলল, জ্ঞান দিতে হবে না, ভাগো এখান থেকে।            

শিয়াল দেখল, পিঁপড়ারা সরে গেল না। এদেরকে ভয়ই করে। খুব ছোট হোক, কিন্তু দলবদ্ধ হয়েই চলে। নিজেদের ভিতর ভুল বুঝাবুঝি নেই ওদের। কেউ কাউকে ছোট করে না, উঁচু নিচু ভাবে না। তাই একে অন্যকে অপমান করে না বলেই এদের নিজেদের ভিতর কোন শত্রুতা নেই। আর মিল থাকে। এদের সাথে শত্রুতা করতে চাইলে এরা তার সাথে শত্রুতা করে। কিন্তু ভদ্র বলেই নিজ থেকে শত্রুতা শুরু করে না। এরা ইচ্ছে করলে তাকে ঘিরে ফেলে খেয়ে ফেলতে পারে। শিয়াল  সরে গেল।  ভয় লাগছে এদের সাথে তর্ক করেছে বলে। কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করল না। সে এমন ভাবে সেখান থেকে সরে এলো যেন কিছুই হয়নি বা পিঁপড়ার রাণীর সাথে তার কোন কথাই হয়নি।

পিঁপড়ার রাণী বলল, তুমি কি চলে যাচ্ছ? তুমি ইচ্ছে করলে ঘুমাতে পার। আমরা  তোমাকে বিরক্ত করব না। আর কেউ এলে তাকে বিরক্ত করতেও দিব না।

শিয়াল হাসলো। না না আমি এখন আর ঘুমাব না। ঘুম ভেঙ্গেছে যখন তখন একটু বেড়িয়ে আসি।  

শিয়াল মনে মনে বলল, দূরে সরে থাকাই ভালো এই দলবদ্ধ প্রাণীদের থেকে। এদের ঘাড় না ভাঙ্গতে চাওয়াই ভালো।

শিয়াল হাঁটতে লাগল। তার ঘুমের প্রয়োজন। আজ রাতে আবার তাকে মুরগী চুরি করতে বের হতে হবে। কিন্তু কৃষকরা অনেক চালক হয়ে উঠেছে। এরা খাঁচা ভাঙ্গাবার কোন সুযোগ রাখেনি। কিন্তু মুরগী তো তার চাই ই চাই।

শিয়াল নদীর তীরে যেতেই দেখল কুমিরের দল। তারা বলল, আরে শিয়াল ভাইয়া যে, ‘এসো এসো।‘  

শিয়াল হাসি মুখে তাদের এড়িয়ে চলে গেলো গভীর বনে। কিন্তু সেখানে বাঘ শুয়ে আছে। সেও বলল, ‘এসো এসো।‘

শিয়ালের চোখ ছোটছোট হয়ে এসেছে সে আর পারছে না। ঘুমে মনে হয় পড়েই  যাবে।  

এমন সময় সে দেখল হরিণের দল। সে তাদের বলল যে গত রাতে পিঁপড়াদের যন্তণায় সে ঘুমাতে পারেনি। আর ভোর হতেই মোরগের ডাক। সে একের পর এক মিথ্যা বলেই যেতে লাগলো। অবশেষে তার কথা বিশ্বাস  করল হরিণের দল। তারা তাকে ঘিরে রাখল। আর গভীর ঘুমে তালিয়ে গেল শিয়াল।    

একটা ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গল। সে টের পেল প্রচন্ড রোদ তাকে ঘিরে আছে। তাকে ধাক্কাচ্ছে একটা হরিণ। সে বলল, ‘হায়নারা তাদের ঘিরে ধরতে যাচ্ছে, এখনই পালাতে হবে।‘  

শিয়াল দেখল নিমিশেই হরিনের পাল অদৃশ্য হয়ে গেল। সে শুনতে পেল হায়নাদের ডাক। 

শিয়াল দৌড়াল। হায়নারাও। ছুটতে ছুটতে সে এক সময় হাঁপিয়ে উঠল। সে  দেখল, হায়নার দল তাকে ঘিরে ফেলেছে। আর তখনই সে দেখতে পেল সে দিনের শুরুতে যে জায়গাটায় শুয়ে ছিল সেখানেই এসে দাড়িয়েছে বলা যায়।

হায়নারা তাকে ঘিরে ফেলে ধীরে ধীরে কাছে চলে আসছে। বৃত্ত ক্রমেই ছোট হচ্ছে। ঠিক তখন শিয়াল দেখল গাছের উপর থেকে মোরগটা ডেকে উঠল। একি! হায়নারা হঠাত করেই সরে যাচ্ছে।

মৃত্যু ভয় শিয়ালকে খেয়েই ফেলেছিল। কিন্তু হঠত করে হায়নাগুলো সরে যেতেই যেন জীবনের স্বাদ তাকে প্রচণ্ড আনন্দে ভাসালো। সে দেখতে পেলো হায়নাগুলো দ্রুত সরে যাচ্ছে, যেন তারা পালাচ্ছে! আর তখনই সে দেখলো অজস্র পিঁপড়া তাড়া করছে হায়নাদের। প্রতি নিয়ত পিপড়াদের রাজ্য বড় হচ্ছে। হায়ানাদের দৌড় আর দেখে কে!

শিয়াল কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে গাছে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোরগটাকে দেখল। আর তখন শুনতে পেলে রাণী পিঁপড়া বলছে, বললাম তুমি ইচ্ছে করলে ঘুমাতে পারো। আমরা তোমাকে বিরক্ত করব না। আর কেউ এলে তাকে বিরক্ত করতেও দিব না।

শিয়াল লজ্জিত হয়ে ভাবলো, যাকে বন্ধু বলতে লজ্জা হতো সে কিনা আজ জীবন বাঁচালো! সে মুখে কিছু বলল না। আর শুয়ে পড়ল। পরম নিশ্চিন্তে সে চোখ বন্ধ করলো।   

You may also like

4 comments

Humaun September 10, 2019 - 9:34 am

Nice.

Reply
Samogro September 29, 2019 - 12:01 pm

অনেক আনন্দ!

Reply
Humaun September 10, 2019 - 9:37 am

Valo laglo.

Reply
Samogro September 29, 2019 - 12:02 pm

আমার খুব ভাল লাগল মন্তব্য পেয়ে।

Reply

Leave a Comment