মোঃ নোমান সরকার
আয়ান চিন্তায় ডুবে গেল ফুফুর কথায়। ফুফু বলছে, ‘তুমি কি খাবে, ঘোড়ার ডিম নাকি মুরগীর ডিম?’
আয়ান রোবট এল এক্স থ্রিকে প্রশ্ন করবে কিনা ভাবছে। রোবট এল এক্স থ্রি হচ্ছে সবচেয়ে চৌকস রোবট এই দুনিয়ায়, সব উত্তরই তার জা্না। পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করা নিয়ে বাবার সাথে কথাটি ছিল। বাবা বলেছিলেন,’ভাল রেজাল্ট করতে পারলে মিলে যাবে তোমার প্রিয় ঘোড়া মানে রোবট এল এক্স থ্রি।’ আয়ান বাবার কথা চমকে উঠেছিল। সেতো অনুভুতি জ্ঞান নিয়ে জন্ম নেওয়া এই শতাব্দীর সেরা রোবট। এটি কি বাবা দিবে তাকে ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই!
আয়ানরা এমেরিকা থেকে বাবা মায়ের সাথে বাংলাদেশে এসেছে তিন দিন হল। খুব ছোটবেলায় এই দেশে একবার এসেছিল। ডিভিওগুলো ছাড়া তার নিজের কিছুই মনে নেই। কারন সে তখন খুব ছোট। বাসায় বাংলায় কথা হয় বলে সেও স্পষ্ট করে না হলেও অনেক কথাই বলতে পারে আর বুঝতে পারে প্রায় সবটা।
আয়ান নীচু গলায় বলল, ‘ফুফু মুরগীর ডিম তো চিনি। তবে ঘোড়ার ডিমটা চিনতে পারছি না।’
ফুফু বলল, ‘তুমি এটাকে আগে দেখনি?’
আয়ান নরম গলায় বলল,’ফুফু আমি এর আগে এই নাম কখনো শুনিনি।’
ফুফু একটা অদ্ভুত সুন্দর মাটির বাটিতে মুরগীর একটা ডিম দিয়ে বলল, ‘এটি ঘোড়ার ডিম।’
আয়ান খানিকটা হেসে বলল, ‘ফুফু এটা তো হাঁস বা মুরগীর ডিম!’
ফুফু হাসল। ‘ধুর বোকা এটাই ঘোড়ার ডিম। ঘোড়ার ডিম চিনে না এ কেমন ছেলে!’
আয়ান ডিম নিয়ে ঘরের বাইরে এলো। সে রীতিমত বোকা হয়ে গেছে। এটি হাঁস ব মুরগীর ডিম, এ ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। কিন্তু ফুফু কি তাকে ভুল বলবে?
এই বাড়িতে তার বয়সী বা কাছাকাছি বয়সী কেউ নেই। সবাই বড়। ভাগ্যিস এল এক্স থ্রি সাথে আছে। যদিও এখানের সবাই খুব ভালো। বড়রাও বন্ধুর মতন আচরণ করছে। সবচেয়ে যেটি অবাক লাগছে তা হচ্ছে এখানকার পোশাক। এত রং, যেন সবাই প্রজাপতি!
আয়ান মাথা নীচু করেই ডাকল,’এল এক্স থ্রি?’
এল এক্স থ্রি বলল,’ বল, আমি শুনছি।’
‘তুমি কি আমাকে বলতে পার,ঘোড়ার ডিম কি?’
‘ঘোড়ার ডিম এটি একটি প্রবাদ বাক্য।’
আয়ান অবাক হওয়া গলায় বলল,’ প্রবাদ বাক্য কি!’
এল এক্স থ্রি সাদামাটা গলায় বলল,’আয়ান তোমার কোনটা জানা জরুরী? প্রবাদ বাক্য নাকি ঘোড়ার ডিম? ‘
আয়ান বিরক্ত হয়ে রোবটটার দিকে তাকাল। অবিকল তারই মতন দেখতে রোবটটাকে প্রথম দেখাতে তার পছন্দ হয়নি। অথচ এল এক্স থ্রি নিয়ে কতই না জল্পনা কল্পনা ছিল। বাবা তাকে অবাক করতে এটি হুবাহু তার মতন করে রোবটটা ওয়াডার দিয়েছিল। কিন্তু পেকেট খুলতে এই ব্যাপারটি তার পছন্দ হয়নি। হুবাহু তার মতন দেখতে। যদিও বাবাকে সে বুঝতে দেয়নি বিষয়টা।
আমি ঘোড়ার ডিম নিয়ে জানতে চাই। দয়া করে তুমি আমার উত্তরগুলো সরাসরি দিবে।’ বলেই আয়ান বিরক্ত হয়ে ভাবছে, আর এল এক্স থ্রি কেমন করে যেন কথা বলে, একটু বেশি বুদ্ধি খাটাতে চায়। বাবাকে বলতে হবে, ওকে বদলে দিতে। এর চেয়ে আগের রোবটটাই ভালো ছিল। প্রশ্ন না করলে নিজ থেকে কোন কথা বলত না। আর এর সবকিছুতেই কৌতূহল!
এল এক্স থ্রি বলল,’ঘোড়ার ডিম বলে কিছু নেই।’
আয়ান বিরক্ত গলায় বলল,’আছে।’
‘আছে?’
‘হ্যা আছে। এই আমার হাতের মধ্যেই আছে।’
এল এক্স থ্রি উঁকি দিয়ে দেখল। সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,এটি দেখতে প্রানীর ডিমের মতনই। হাঁস বা মুরগির ডিমের মতনই। আমার কাছে মনে হচ্ছে তুমি ভুল করছ।’
আয়ান ডিমের দিকে তাকিয়ে বলল,’ফুফু বলেছে।’
এল এক্স থ্রি বলল, ‘আমাকে একটু দিবে। আমার হাতে।’
আয়ান রাগ হল। ‘হাতে না নিলে তুমি বলতে পারবে না?’
‘হ্যা পারব। আমি চাইছিলাম…।’
আয়ান রেগে গিয়ে বলল, ‘তুমি বল। তুমি তো সব প্রশ্নের উত্তরই জানো।’
এল এক্স থ্রি হাসল।
আয়ান চোখ নামিয়ে রেগে বলল,’হাসছ কেন?’
এল এক্স থ্রিকে হাসতে দেখলেই সে চোখ নামিয়ে নেয়। তার মাথা ঘুরে। অবিকল তার মতন করে হাসে। বিষয়টা তার ভাল লাগে না।
এল এক্স থ্রি বলল,’এটি মুরগীর ডিম। শুরুতেই আমি বলতে চেয়েও ভেবেছি এটি তোমাকে অস্থির করছে, এটি আমার পছন্দ হয়েছে। ফুফু তোমকে বোকা বানাতে পেরেছে।’
আয়ান বলল,’আমার অস্থিরতা তোমার পছন্দ হয়েছে! এর মানে কি! তুমি বড় বেশি বেশি করছ। আমার খুব রাগ হচ্ছে।’
এলএক্স থ্রি আবার অবিকল তার মতন করে হাসল, ‘কার উপরে রাগ হয়েছে? ফুফুর উপরে, ডিমের উপরে, আমার উপরে?’
‘জানি না।’ বলে আয়ান ডিম মুখে দিল। ডিমের স্বাদ আর ঘ্রাণ একেবারেই আলাদা হলেও তার ভালো লাগল। কারন সে ডিমের ভক্ত। দিনে তার ৩/৪টা ডিম তার খেতেই হবে।
আয়ান ফুফুর কাছে চলে এলো। ‘ফুফু ঘোড়ার ডিম অনেক মজা। আমাকে কি আরেকটা ঘোড়ার ডিম দেওয়া যায়?’
ফুফু হাসল। ‘হে রে বাবা, আরেকোটা দেওয়া যায়।’ বলে ফুফু আরেকটা ডিম দিল।
একটূ সময় যেতে না যেতে আয়ান আবার ফুফুর কাছে হাজির। এবার খুব উচ্ছাসের সাথে বলল,’ফুফু ঘোড়ার ডিম মুরগীর ডিমের চেয়েও মজার। আমাকে আরেকটা কি দিবেন?
ফুফু আবার হেসে আয়ানকে আরেকটা ডিম দিল ।
5 comments
গল্পটা খুব সুন্দর ! ফুপা। এটাতে আমি আছি ।
অনেক আনন্দ!!!
ফুপা গল্পটা আমাকে নিয়ে তৈরি করার জন্য ধন্যবাদ।
আমি খুবই খুশি!!!
খুব সুন্দর লেখা। তবে বানান গুলো ভাল ভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া ভাল।